সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়-- আমার ক্লোজ বন্ধু রাসেল (ছদ্ম নাম) ভার্সেস কালি ম্যাডাম প্রসঙ্গ--আমাদের স্কুলে সবে মাত্র শিক্ষিকাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে-- যাহাদের সাথে আমাদের অভ্যেস্ততা ছিলনা -- যাই হোক তাদেরই একজন কালি ম্যাডাম । বরাবরের মতই সিংহীর হুঙ্কারে কালি ম্যাডাম এসে ঢুকলেন--- সুপারিতে এমনিতেই মুখ লাল এর মধ্যে হয়তোবা ঘরে কোন গড়বর ছিল -- মেজাজ ছিল চরমে। আমাকে বললেন নৈব্যত্তিক গাইড দিতে--আমি এগিয়ে দিলাম। ওই গাইড থেকেই সবাইকে পড়াতেন এবং টাস্ক দিতেন। পড়া ধরানো শুরু করলেন। রাসেল কে কি একটা জিজ্ঞেস করায় ও উত্তর দিতে পারলনা-- জবাবদিহিতার এক পর্যায়ে সে বলে ফেলল ''ম্যাডাম আমি তো ছিলাম না তবে জানব কি করে?? গলায় কিছুটা সম্ভবত ঔদ্ধত্য ছিল--ম্যাডাম হুঙ্কার ছাড়লেন-- নিরাপরাধ রাসেল গোবেচারার মত তাকিয়ে রইল। প্রসঙ্গত রাসেল ছিল ক্লাসের সবচেয়ে মিশুক এবং ইজিগইং একটা ছেলে। তার কথাবার্তায় ছটফটে ভাব সবসময়ই ছিল-- ওকে ডেকে টেবিলের কাছে নিয়ে গেলেন-- বেত্রাঘাত শুরু করলেন-- সামান্য প্রতিবাদ বেরিয়ে আসলো ওর কণ্ঠে-- আর যায় কোথায়-- জায়ান্ট ভার্সেস গোলিয়াথ !! বেয়াদব !! সমস্ত ক্লাসের ওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো কালি ম্যাডামের কণ্ঠস্বর। বেত্রাঘাত করতে করতে মাটিতে শুইয়ে ফেললেন আমার ক্লোজ বন্ধুটিকে--- গলা, বুক থেকে উনার শাড়ি খশে পড়েছে ---সে দিকে উনার খেয়াল নেই--সম্পূর্ণ অর্ধ নগ্ন--- কি বিভৎস! ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা হত বিহবল-- শিক্ষিকার বিপক্ষে গিয়ে যে আমরা প্রতিবাদ করবো সেটাও আমরা শিখিনি-- এ যে কঠিন শিষ্টাচার !! সবাই যার যার জায়গায় বোবার মত বসে রইলাম। লঘু পাপে গুরু দণ্ডে দণ্ডিত বন্ধুকে যে আমরা সান্তনা দেব সে সাহসটুকু ও আমাদের কারো ছিলনা।
উল্লেখ্য এই লিখাটা আমার ক্লোজ বন্ধু কে নিয়ে হাস্যরসের জন্যে লিখিনি অথবা ওকে খাট করার জন্যেও নয়, যদিও ওর কোন দোষই ছিলনা -- লিখেছি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু কুৎসিত ব্যপারকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে। একজন শিক্ষক অথবা শিক্ষিকার পারিবারিক সামাজিক তথা সামগ্রিক মানসিক অবস্থার দায় কোমল মতি শিশুরা কেন ভোগ করবে--???!! ওই দিন রাসেলের উপর চড়াও হওয়া কালি ম্যাডামের এহেন বিকট রুপ প্রমান করে উনি মানসিক বিকার গ্রস্থ রুগী ছিলেন। মানসিক বিকার গ্রস্থ ওই সব শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা অধিদপ্তর কি প্রমান করে! আসলে ওরা সবাই যে বিকার গ্রস্থ !
আজ ২০ বছর পরেও আমার এই ঘটনা মনে দাগ কেটে আছে।( রাসেলের হয়তোবা মনে নেই, না থাকাই ভালো)--- এটা নিশ্চয়ই ভালো কিছু নয়।
আমি এখন চিন্তা করি আমার ছেলেকে যদি এরকম কেউ করে তাহলে আমার কেমন লাগবে??-- তবে হা শাসন লাগবে,কিন্তু ভিন্য পথ ও তো আছে-- এরকম অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন যারা শিশু অধিকার সংরক্ষণ আইনের কোন তোয়াক্কাই করেন না।
শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই শিক্ষক শিক্ষিকার সিআরবি চেক অথবা যাকে বলে উনার ব্যক্তি/পারিবারিক/ সামাজিক জীবনকে পর্যালোচনা করতে হবে নচেৎ আমার মত অনেককেই এহেন শাসনের নামে বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে বা হচ্ছে।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:২৪