somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুসর ক্যানভাস এবং আমার ছবি আঁকা---

০১ লা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস টু তে পড়ি । আমাদের ড্রইং টিচার একটা হেলিকাপটার এর ছবি অঙ্কন করতে দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। বন্ধু শাহেদ। খুব জেদাজেদি আবার অসম্ভব ভাল বন্ধু । সবকিছুতেই তার সাথে আমার প্রতিযোগিতা। সে তার টা এঁকে আমার ছবির দিকে উকি দিতে লাগল । বুঝতেই পারছিলাম তার মনের অবস্থা।অবশ্য মুখে তার চিরাচরিত সেই নির্লিপ্ততা যেন কিছুই দেখেনি।এমন ভান করল যেন আমি একটা তেলাপোকা এঁকে ফেলেছি। টিচার আসলেন মাত্র ১০ মিনিট পর । সবার খাতা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন ।শাহেদ তার খাতা আগ বাড়িয়ে দিতে লাগল মনে হচ্ছিল লিওনারদ দা ভিঞ্ছির মত কিছু একটা এঁকে ফেলেছে । ম্যাডাম ওর খাতা দেখে দশের মধ্যে সাত দিলেন। সে তো মহা খুশি। আর দুজনের খাতা দেখে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন । অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলেন তারপর খাতা নিয়ে টেবিলে চলে গেলেন। আমাকে ডেকে বললেন ''তুমি তো হুবুহু এঁকে ফেললে,কোথাও আর্ট শিখতে যাও নাকি??''আমি দুপাশে মাথা নাড়ালাম ।তিনি আমাকে দশে দশ দিয়ে দিলেন। সবাইকে দেখাতে লাগলেন। শাহেদ এর মুখটা আজও আমার চুখের সামনে ভেসে উঠে । হতা, নির্লিপ্ত ,কালো বিস্বাদ এ পরিপূর্ণ । সেই থেকেই শুরু । দিগুণ উথসাহে ড্রয়িং করা শুরু হল। যেখানে পারি ছবি আকি। অত্যন্ত যত্ন সহকারে । ড্রয়িং এ আমিই হলাম অবিসংবাদিত উত্তম ।

govt pilot school এ ভর্তি হলাম। সে কি পড়াশুনার চাপ। খুদে খুদে এটুকুন বাচ্চাদের উপর এত চাপ মনে হলে আজ পর্যন্ত শিওরে উঠি। কানে ধরে বেঞ্ছের উপর দাড়িয়ে থাকা,ঐ অবস্থায় পায়ে বেত্রাঘাত, neal down, ক্লাসের বাহিরে দাড়িয়ে রাখা আর কত কি ! ভাগ্য ভাল মুটামুটি ভাল ছাত্র ছিলাম বলে রক্ষা। তবে এরই মাঝে একজন স্যার এর ক্লাস এ ভীষণ মজা পেতে শুরু করেছি । আমাদের মজুমদার স্যার । উনিও নতুন ছিলেন। ড্রয়িং ক্লাস খুব মজা করে করাতেন। মনে হত ঐ ক্লাসটা হয় না কেন প্রত্যেকদিন । অল্প কয়দিনের মধ্যেয়ই সবার নজরে পড়ে গেলাম ভাল ছবি আকি বলে। ঐ এই পর্যন্তই। কারন আমদের স্কুল এ আর্টের উপর কোন আলাদা পরীক্ষা ছিলোনা ।শিক্ষকের বাহবা পেতাম। বন্ধুবান্ধবের অজস্র প্রশংসা আসত কিন্তু প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র ছিলোনা আমাদের কথিত ঐ উত্তম বিদ্যাপিটে। খেলাধুলায় পর্যন্ত বাধা ছিল। কাজেই প্রতিভার বীণা নিজের চেষ্টায় বাজাতে লাগলাম। অনেক কষ্ট হত । মনে আছে, স্পষ্টই মনে আছে একবার ক্লাস সেভেন এ horse আঁকতে বলা হল। কয়েকজন অতীব বন্ধু স্যার কে ডেকে আমারটা দেখাতে লাগলো। স্যার অতি উদাসীন ভঙ্গিতে বললেন ,ভাল হয়েছে । তারপর আর এটা নিয়ে কথাই বললেন না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বুঝলাম এখানে হবে না। এখানে শুধু কিভাবে স্ট্যান্ড করা যায় এই চিন্তাটাই মোক্ষ ব্যাপার ।। curricular activities নিয়ে কারো মাথা বেথা নেই। দিন যায় মাস যায় । ছবি আঁকতে থাকি। কি যেন এক নেশায় পেয়ে বসতো । প্রাণের নেশা । সে এক অদ্ভুথ নেশা। নতুন কিছু সৃষ্টি করার আনন্দ...বলে বুঝানো যাবে না। মায়ের কোলে একটি শিশু,সুন্দর বনে হরিনের দল,কবি কাজি নজরুল ইসলাম,আর কত কি ! সঠিক মনে পরছেনা এই মুহূর্তে ।

এস এস সি, পরীক্ষা দিয়ে স্কুলের চার দেওয়ালের দম বন্ধ করা শাসন আর কথিত রীতিনীতির আঙ্গিনা পেরিয়ে চলে আসি কলেজ এর সবুজ চত্বরে । মনে হল যেন খাঁচার পাখিটার এতো দিনের ডানা ঝাপটানো অঙ্গে অঙ্গে বৃথা যায়নি।। তাকে এখন মুক্ত করাই যায় ..দিলাম মুক্ত করে।। এতো বড় নীল আকাশ পেয়ে অচীন পাখিটা খেই হারিয়ে ফেলল। জড়িয়ে পড়লো নোংরা রাজনীতিতে । এখন নোংরা বলতে পারছি সেটা একটা বিস্ময়ই বা কম কিসে !! আসলে সময়ই মানুষকে বদলে দেয়। টানা দুই বছর অথবা তিন বছর ছবি আঁকা ভুলে গেলাম। অস্রের ঝনঝনানি, অন্যের মুণ্ডুপাত করে মিসিল। গুলার আওাজ । হই হই রই রই অমুক তমুক গেল কই। আমার শিল্পিত শ্বেত শুভ্র হৃদিটাকে করে তুলল বিষাক্ত। আমিও হয়ে গেলাম তাদের একজন। আজ প্রচন্ড ঘৃণা হয় নিজের উপর। কেন, কেন এই ছাত্র রাজনীতি ??? বিভীষিকাময় ঐ দিনগুলি আর মনে করতে চাই না....

মডার্ন কোচিং সেন্টার নামের এক কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই । পরীক্ষায় কিছু ভাল ফলের প্রত্যাশায় । শুরু হল পড়াশুনা । hsc পরীক্ষা অতি সন্যিকটে । রাজনীতি থেকে কোন এক কারনে মনটা উঠে গেল। নিয়মিত প্রোগ্রামে আর যাই না।। তবে আমদের হাওজিং এস্টেটে ভাঙ্গা ছাদের আড্ডাটা ঠিক চলতে লাগল। সে এক দুর্নিবার আকর্ষণ। বন্ধুরা আমার সুপ্ত প্রতিভার কথা জানত না। আর কেমন করেই বা জানবে?? ঐসব আলাপের আড্ডাই ছিলোনা এটা । এই প্রসংগে যাচ্ছিনা আর।।
মডার্ন সেন্টারে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হল। আমার বোন আর আমি একসাথে পড়তে যাই। তো আমাদের দুজনের সাথেই ওর ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সে আমদের বাসায় প্রায়ই আসতো ।জানতে পারলাম একদিন , সে নাকি ছবি আঁকে ।জিজ্ঞেশ করতেই বলল দেখাবে। তারপর একদিন দেখলাম ,আর অবাক হই জল্ রঙ্গের ছবি এতো সুন্দর হয় কি করে !! জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে এতো সুন্দর ছবি আঁকে । হাসতে হাসতে উত্তর দিল দেখে দেখে অর্থাৎ কপি করে। ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম আমিও ছবি আঁকি । বল্‌ল, সে জানে। দিগুন উথসাহে আমার কিছু ড্রয়িং তাকে দেখালাম...পরক্ষনেই তার মুখচ্ছবি উজ্জ্বল হয়ে গেল ।। বলল, এতো ভাল ড্রয়িং তুমি করতে পার তাহলে ছবি আঁক না কেন?? আমি তো মহা খুশি । একজন আঁকিয়ে আমার ড্রয়িং এর প্রশংসা করছে।। কত বড় ব্যাপার আমার জন্মে ! তারপর একদিন চলে গেলাম সবকিছু ছেড়ে, অনিশ্চয়তা কে সঙ্গী করে ,কোন এক আর্টের দোকানে... কিনে আনলাম আমার জলরঙ। ও হ্যাঁ প্রথম জল-রঙের ছবিটা একেছিলাম ওঁর কাছ থেকে ধার নিয়েই । দারুন প্রশংসা পেলাম। নতুন এক ভুবন খুলে গেল আমার সামনে। একটা কথা বলা হইনি আমার হাতের লিখা ছিল ভীষণ artistic। আমার হাতের লিখা ওঁর খূব পছন্দ ।বলল , আমার লিখা সে অনুকরণ করবে। একদিন আবিষ্কার করলাম মেয়েটার হাতের লিখা ঠিক আমার ই মতো হয়ে যাচ্ছে । আর ঊল্টোপথে আমি ও ওঁর মতো জলরঙের ছবি আঁকতে শুরু করি ...। ওকেই বলব আজকের artistic biplob এর অনুপ্রেরণাদাত্রী ...সে হচ্ছে তন্বী খান। সুখে থেক তন্বী ।

hsc পরীক্ষা শেষ । ১৯৯৭...। বিপুল বিক্রমে ছবি আঁকা শুরু করি।।ছাত্র রাজনীতির অধ্যায় আপাতত শেষই বলা যায়। অখণ্ড অবসর ...শুধুই ছবি আঁকি । যা পারি তাই আঁকি । প্রশংসা পাই। ভাল লাগে। কিন্তু এটাকে career হিশেবে যে নিব সেই উৎসাহ বা সাপোর্ট কারো কাছ থেকে পাইনি।। তন্বী বলল শিল্পকলায় ভর্তি হতে। কথটা আমার খুব মনে ধরল।
রেজাল্ট বাহির হল। ব্যাস্ত হয়ে গেলাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি রীক্ষা নিয়ে। একটি বার ও মনে হলনা চারুকলা তে পরীক্ষা দেই...সময় গড়িয়ে যায়।। কালের হাওয়ায় এবং প্রয়োজনে accounting কেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিলাম। মাথা খারাপ ।! পরক্ষনেই ভুল বুঝতে পারলাম। যেখানে হাত যায় না সেখানে চুলকাতে গিয়েছি । কিন্তু ছবি আঁকা বন্ধ হল না।
১৯৯৯ এর শেষের দিক হবে হয়ত। কি মনে করে শিল্পকলায় গিয়েছিলাম। ভাল লেগে গেল। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢুকে পরি । পেলাম এক নতুন জীবন। শুধু শিল্প আর শিল্প । শিল্পকলায় কলা নেই কিন্তু শিল্পের ছুঁয়া সবদিকে । আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরু অরবিন্দু দাস স্যার ,পরিতুশ দা,প্রানপ্রিও বন্ধুপ্রতিম আর্টিস্ট এবং গুরু শাহ আলম ভাই। সবার সান্নিদ্ধে কেমন যেন স্বপ্নের দিন।
সহপাটি এনাম,সুমি,রুনা,দিনা,গওতম,রাজিব,স্রাবনি,ঝুমা এবং প্রিয় বন্ধু মাহবুব,সুহেল। এদের কি কখনো ভুলা যায়??? outdoor/ indoor e boshe ছবি আঁকা । নির্জন প্রকৃতি ,ঘাসিটুলত্য সুরমা নদীর তীরে বসে প্রানের আলাপ।।সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা। আহা রে একটি বার যদি ঐ সোনালি দিনের সোনালি মানুষদের সাথে গিয়ে আগের মত করে প্রান খুলে হাসতে পারতাম !! হয়ত অনেকের সাথেই সম্ভব। শুধু নেই আজ দু'জন। আমার প্রিয় বন্ধু মাহবুব এবং বন্ধু প্রতিম শাহ্‌ আলম ভাই। ওরা চলে গেছেন ঐ না ফেরার দেশে।
বন্ধু প্রসঙ্গ ঃ আমার প্রিয় বন্ধু মাহিন।খুব ভাল বন্ধু ।ছোটবেলার বন্ধু সে। অসম্ভব রকম ভক্ত ছিল আমার আর্টের। সবসময় বলত এক্সহিবিশন হলে সেই ফটোগ্রাফি করবে। এখন পর্যন্ত তার বসার ঘরে আমার আঁকা ছবি সৃতি চিহ্ন হয়ে জানান দিচ্ছে সে এখনও আছে আমাদের মাঝে। কবির। আরেক বন্ধু। ভাল উৎসাহ পেয়েছি ওঁর কাছ থেকে।মজার ব্যাপার হল ওকে যতটা আর্ট দিয়েছি অন্য কাউকে এরকম দেইনি।

একবার শিল্পকলায় exhibition হলো ।।আমি ফার্স্ট ও হয়ে গেলাম...দারুন ব্যাপার । সবদিকে আলোড়িত হয়।। আন্দোলিত হয়। আমার পরিবারের সদস্যরা এসবের বাইরে থেকে গেলেন সবসময় । নিজের সাহসে যে ঢাকায় গিয়ে আর্টে পড়াশুনা করব এটা ছিল কল্পনাতীত । আর আর্থিক সাপোর্ট একটা বড় ব্যাপার ছিল। আর বয়স ই বা ছিল কত যে নিজে সাহস করব ! কিন্তু এই আক্ষেপটা হয়ত বেশি হতনা যদি না শিল্পকলায় না ঢুকতাম । সবাই বলত ঢাকায় গিয়ে চারুকলায় ভর্তি হতে। স্বপ্ন দেখত একদিন অনেক বড় নামকরা আর্টিস্ট হব। পরিতুশ দা প্রায়শই বলতেন। স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। দু' তিন বছর পর সিলেট থেকে graduation কমপ্লিট করে ঢাকাতে চলে আসি। ততদিনে অনেক বড় হয়ে গিয়ছি । icma তে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে যাই। ফল স্বরূপ দাদা কর্তারা খুশি হয়ে ঢাকায় পড়তে সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। পড়াশুনা পড়াশুনা । ভীষণ জটিল পড়াশুনা। আর্টিস্ট হওয়া আমার দারা হলো না আর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেম্পাসে আড্ডা দেই বন্ধুদের সাথে। চারুকলার ছাত্রদের ব্যস্ত আনাগুনা। গাছের ছায়ায় বসে ছবি আঁকা । মনটাকে কেমন যেন বিষিয়ে তুলত। কয়েক জন চারুকলার ছাত্রদের সাথে পরিচয় হল। জানতে পারলাম ওরা আর্ট শিখার পাশাপাশি tution করে দিব্যি খরচ চালিয়ে যেতে পারছে। নিজের প্রতি ঘৃণা আরো বেড়ে গেল। কেন যে inter এর পর রিস্ক নিলাম না। cost accountancy তে আর মন বসে না।। ভাবলাম এই দেশে আর থাকা যাবে না। কিছুদিন সিলেটে গিয়ে চাকরি বাকরি করে সব বন্ধন ছেড়ে চলে আসলাম uk । উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশায় । কি ভীষণ অমানিশার রাত্রি আমার জন্য অপেক্ষা করছিল তখনও জানা ছিলনা। জানলে হয়তবা এই দেশে কক্ষনো পা দিতাম না।। মগের মুল্লুক নাকি !! লন্ডন ...কেউ নেই কোথাও...। শত সহস্রে মানুষ ।কেউ কারো না।। ধুসর স্বপ্ন ।অস্থির গন্তব্য । মলিন কাগজের টুকরো । তবু ক্ষান্ত নই । উধভ্রান্ত পথচলা। অমানিশা বিদিশার নেশায়। শুধু দাঁড়িয়ে থাকি জুবুথুবু ভেজা কাকের ন্যায় ।কন্ঠস্বর স্মিত হয়ে আসে । কনকনে শীত । কারো কি দয়া হয়না একটুকরো দেয়াসলাইএর আগুন এনে আমার হাতে দিয়ে বলে '' বেঁচে থাক ভাই '' ।

ভালবাসি বলেই দুঃখ আমার দুরের কোন অসীম সীমান্তের কালো সীমারেখায় আবর্তমান । ভালবাসি বলেই আমি এক দুঃখ বিলাসী স্বপ্ন কাতুরে অভিলাষী মূর্ত মানব।। যার কোন স্বপ্ন নেই তবুও স স্বপ্নলোকের মেঘালয়ে অবাধ বিচরণ ...। তবে দুঃখ দুঃখ ভাব বেশিদিন আর রাখা যায়নি। ২০০৩...বিয়ে করে ফেললাম । স্বদেশ গিয়ে বিয়ে । ব্যস্ত ব্যস্ত আর ব্যস্ততা । এরপর যে কিভাবে দিন কাটতে লাগল টেরই পাচ্ছিলাম না । স্টাডি, কাজ, সংশার। মহা ঝামেলা। ছবি আঁকার কথা আর মাথায়ই আসতো না। লোহা লক্কড়ের যান্ত্রিক মটরের মতো চলাফেরা । একটু ক্ষন নিজের ভুবনে যে বেড়িয়ে আসব সে উপায় ছিল না...আস্তে আস্তে নিজের আসল সত্তাটা কে ভুলে বসলাম ।

২০০৯...। ঋণের দায়ে জর্জরিত ।ইউরেকা ইউরেকা।। আবিষ্কার করলাম একদিন, ইন্টারনেটে ছবি এঁকে বিক্রি করার উপায়। লেগে যাই। বিক্রয় কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করি। আলাপ আলোচনা মনে ধরে। তিনটা আর্টিস্ট কোম্পানিতে যোগদান করি। ওদের ওয়েবসাইট এ নিজের পোর্টফলিও বানানো শুরু করি।https://artgallery.co.uk/artist/artistic-biplob-asm-ambia রেজিস্টার্ড হওয়ার পর শুরু করি ছবি আঁকা । অনেক দাম জিনিসপত্রের । ক্লান্ত হয়ে যাই। ভয় জেঁকে ধরে । যদি লাভবান না হই। তা হলে কি করব? আস্তে আস্তে ২৫ টি সব ধরনের ছবি এঁকে ফেললাম। কাজের ফাঁকে ফাকে।।দিনে রাত্রে। ঘুম নেই। ঘরের নিচের সেলার এ বসে। প্রচন্ড শীতে পীঠ জমে জেত। তারপর ও ক্ষান্ত হইনি । ছবি জমা দেওয়া শুরু হল। ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইট হওয়ায় আমার ছবিগুলো পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই গ্রাহকরা দেখার সুবিধা পায়। আমার পোর্টফলিও এর বিশেষ দিক ছিল আমার কুনো প্রাতিস্টানিক ডিগ্রী ছিলনা । লেখা ছিল শিরোনামে বর্ণ আর্টিস্ট। অপেক্ষার পালা। প্রহর গুনতে লাগলাম।। পুলকিত হই সুদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে পর্যন্ত গ্রাহকরা ছবির নীচে সমালোচনা করছে এবং ক্রয় করার উদ্দেশ্যে হিট করছে।। ভাল লক্ষন। খুশিতে মনটা ভরে যায়। তিন মাস পর, খুশিকে তিন মাত্রায় রুপ দিয়ে একটি অর্ডার চলে আসল । ইউকে থেকেই।। ''পিজিওন্স ড্রিমস'' ৬ ফুট বাই ৪ ফুট। ৪৭৫ পাউন্ড !!!! আকাশে উড়তে লাগলাম। পোস্ট করলাম। এ ভাবে আস্তে আস্তে আরো কয়েকটি আর্ট বিক্রি হয়ে গেল। প্রথম বছরেই বাজিমাৎ , ভাল ভাল, বেশ ভাল। পরের বছর অর্থনৈতিক মন্দা আসায় আর তেমনটা হল না।।

দু বছর হয়ে যায়। অক্টোবর ২০১০। একদিন সকালে দরজার নীচে পেলাম বড় একটা পোস্ট । অবহেলা করে হাতে নিলাম। অনেক কাগজ পত্র ভিতরে। কিন্তু একি ! এক খণ্ড কাগজে আমার চক্ষু যুগল আটকে গেল। যা পড়ছি তা নিজের চক্ষু কেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।। পত্রটি এসেছে ইতালিয়ান ওয়ার্ল্ড আর্ট অর্গানাইজেশন থেকে। আমাকে মনোনীত করা হয়েছে । লেটার এর অনেক কিছু বুঝতে পারছিলাম না। টেলিফোনে কথা বলে জানলাম তারা ওয়ার্ল্ডের সব আর্টিস্টদের পোর্টফলিও রিসার্চ করে । ঐসব আর্টিস্ট সেলিং কোম্পানি তাদের সাথে যৌথ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই এক্সহিবিটেড সব আর্ট ই তাদের দৃষ্টিগুচরে আসে রেন্ডম ভিত্তিতে সমালোচকদের ভোটে । হাজার হাজার আর্ট। যেসব আর্টের উপর সমালোচকদেরদের ভোট বেশি জমা পড়ে সেগুলো তারা বিশেষ পদ্ধতিতে database এ ঢুকিয়ে দেয়। জানতে পারি অনেকদিন ধরেই ওরা আমার প্রদর্শনীকৃত আর্ট নিয়ে গবেশনা করছে। সে যাই হোক , আমাকে আমার পোর্টফলিও জমা দিয়ে তার সাথে সেরা তিনটি ছবি জমা দিতে বলল চূড়ান্ত কম্পিটিশন এর জন্য।। ঐ দিকে পরীক্ষা ।। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। সময় বাহির করে তিনটি ছবি আর রেজিস্ট্রেশন ফরম পুরন করে জমা দিয়ে দিলাম। ওরা আমন্ত্রন জানাল জাঁকজমকপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য।। সেটা ছিল ১১ ডিসেম্বর ২০১০। পরীক্ষা ছিল যেতে পারিনি। সাথে ভিসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতা । পরে ইমেইল করে জানিয়ে দেওয়া হল আমি পুরষ্কারটা জিতেছি। অসম্ভব আনন্দ নিয়ে এই কয়টা দিন কাটিয়েছি। তারা আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলল যে পুরষ্কারটা পাঠিয়ে দিচ্ছে পোস্ট করে...অগত্তা কি আর করা...মনের দুঃখ মনের ভিতরই রেখে ঘুমাতে লাগলাম।। ইতালি দর্শন আর হল না...এত বড় একটি প্রোগ্রামের মধ্যমণি হলাম আমি অথচ ......।।

কারো সাথে কিছু বলি নি। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা...তারপর সেই কাঙ্খিত পোস্টটি আসলো দুয়ারে।
মাঝে মাঝে ভাবি বসে , ওরা কি পাগল??!! এতো বড় বড় আর্টিস্ট থাকতে আমার মতো আনকোরা এক্জন মানুষ কে অ্যাওয়ার্ড দিল কিভাবে! ভাগ্যিস বাংলাদেশ হলে তো ওদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হতো নতুবা আমাকে পলটনের চত্বরে দাঁড় করিয়ে গলায় একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তাতে লিখা হত ''উনাকে যত খুশি থুথু দিন''। পাপ আমার কোন academic degree নেই আর্টের । আমি কেন অ্যাওয়ার্ড পাব?????!! আপাত দৃষ্টিতে কথাটা বেঙ্গাত্তক মনে হলেও কথাটা সত্যি। কারন আমি এর শিকার। শিল্পী এস এম সুলতান কে কয়জন ই বা স্বীকৃতি দেয়। আড়ালে আবডালে নাক উঁচু করে বলে বেড়ায় উনার তো কোন একাডেমীক শিক্ষা নেই ! সহজাত প্রতিভা অথবা ঈশ্বর প্রদত্ত একটা ব্যাপার আছে তা অনেকেই মানতে চায় না...।।

এরই ধারায়--- আমেরিকান আর্ট কোম্পানি ফাইন আর্ট আমেরিকাতে ও http://asm-ambia.artistwebsites.com/ আমার প্রদর্শিত ছবিগুলো নিয়ে একটা পোর্টফলিও ছিল--
একদিন একটা ইমেইল আসে বিশ্ববিখ্যাত হলিউডের ফিল্ম প্রোডাকশন ইউনিভারসেল আর্ট স্টুডিও থেকে।। মানে কি, বুঝতে পারছিলাম না--- কি হতে যাচ্ছে !! ওরা '' ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৭'' সিরিজের একটা ফিল্ম ক্লিপ এ ব্যাবহারের জন্যে আমার একটা ক্যালিগ্রাফির ইমেজ রাইট চায় ! সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলাম.। লম্বা প্রসেস আর ইমেইল চালাচালির পর ওরা আমার অ্যাকাউন্ট এ টাকা পাঠিয়ে দিল.।
পরে যখন ছবিটি রিলিজ হয় শুধুমাত্র 'ব্লিঙ্ক অফ আই'' মুহূর্তের জন্যে একটা ক্লিপ এ দেখা যায় !

পরিশেষে বলব...আমি বাস করি কল্পলোকে ...। নিঃশ্বাস নেই অসীম শূন্যতায় । আঁকি ছবি মনের রঙিন ক্যানভাসে ।। কবিতা লিখি ভালবাসার গদ্যলোকে...। আমি গান গেয়ে যাই নিজ সুর অলিন্দে । তবুও বলি করতে পারিনি স্পর্শ আমার আমিকে... মানবের মাঝে বহুকাল আছি সুখ তো পেলাম না...কিভাবে পাব?? আমি যে নিজের সৃষ্টি সুখের উপর দাঁড়িয়ে প্রলয় নাচন নাচি। উন্মতাল হয়ে যাই ।।দলিত মথিত করে নিষ্পেষিত করি ।। হায় মানব ।!

আমার আর্টিস্ট সাইট এ একটু ঘোরে আসার আমন্ত্রণ রইল।

https://artgallery.co.uk/artist/artistic-biplob-asm-ambia
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×