somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন ও সুন্নার আলোকে এইচআইভি/ এইডস প্রতিরোধে তরুণদের করণীয়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
কুরআন ও সুন্নার আলোকে
এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে তরুণদের করণীয়
ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
ভূমিকাঃ
বিশ্ব মানবতার ভাবনায় রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের পথে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এইচআইভি/ এইডস। দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নারী বা পুরুষ, শিশু কিংবা বৃদ্ধ কেউই এর সংক্রমণ ও আক্রমণ তথা প্রাণসংহারের করাল থাবা থেকে আজ আর মুক্ত নয়। কেননা এইচআইভি থেকে পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়া যায় বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন এমন কোন চিকিৎসা অদ্যাবধি আবিস্কার হয়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখনো পর্যন্ত এর নেই কোন নিরাময়, নেই কোন টিকা বা প্রতিষেধক। ধীরে ধীরে হিমশীতল  মৃত্যুর পরশ বুলিয়ে মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়াই এর শেষ সর্বনাশা অভিলাষ।
 
এইচআইভি (HIV) কি?
এইচআইভি এক ধরনের লেন্টি ভাইরাস যা মানব দেহে প্রবেশ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় এবং মানুষকে এইডসে আক্রান্ত করে। ‘‘লেন্টি ভাইরাস’’ একটি ধীরগতি সম্পন্ন ভাইরাস। এ ভাইরাসগুলো আক্রমণের দীর্ঘদিন পরে দেহে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। নিউক্লিক এসিডের গঠনের উপর ভিত্তি করে ভাইরাসকে আবার ডিএনএ ভাইরাস (DNA- Deoxyribonucleic Acid) এবং আরএনএ ভাইরাস (RNA- Ribonucleic Acid) এ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এইচআইভি এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস। এ ভাইরাসটি গোলাকৃতির এবং এর আবরণী ঝিল্লিতে রয়েছে বিশেষ ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন (Glycoprotein) যা ভাইরাসটির দেহের CD4 নামক শ্বেতকণিকার সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে। HIV= Human (মানুষ) Immunodeficiency (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব) Virus (জীবানু) বেশী পরিমাণে থাকে রক্ত, বীর্য ও যোনীরসে। শরীরের অন্য তরল পদার্থেও যেমন বুকের দুধ ও মুখের লালায় খুব অল্প পরিমাণে এ ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রধানত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য ও যোনীরস সুস্থ্য ব্যক্তির মিউকাস মেমব্রেনের সংস্পর্শে আসলে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়।
 
এইডস (AIDS) কি?
এইচআইভি কয়েকটি উপায়ে মানব দেহে প্রবেশ করে দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ লোপ পায়। এইচআইভি সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায় হল এইডস। এইডস এর অর্থ হচ্ছে - A= Acquired (অর্জিত), I= Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা), D= Deficiency (অভাব/ স্বল্পতা), S= Syndrome (লক্ষণসমূহ)। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্য যে কোন রোগে আক্রান্ত হয়। এ বিভিন্ন  রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলোকে এইডস নামকরণ করা হয়। কোন কার্যকর প্রতিষেধক না থাকায় মৃত্যুই এইডস রোগের অনিবার্য পরিণতি।
 
বিশ্বব্যাপী এইচআইভি/এইডস এর সামগ্রিক পরিস্থিতিঃ
এইচআইভি/এইডস এর কারণে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এক চরম হুমকির সম্মুখীন। এ নীরব ঘাতক মহামারীতে আক্রান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একের পর এক দেশ। ডিসেম্বর ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৭২ লক্ষ এবং ১৫ বছরের কম বয়সী ছেলে মেয়েদের সংখ্যা ২৩ লক্ষ। শুধুমাত্র ২০০৬ সালে নতুন করে প্রায় ৪৩ লক্ষ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইডস রোগী সনাক্ত হওয়ার পর  থেকে এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখেরও লোকের বেশী লোকের। [তথ্যসূত্র : UNAIDS/ WHO, ২০০৬] ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এইচআইভি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বিশ্বে প্রতিদিন ১১ হাজার নারী পুরুষ নতুনভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এইচআইভিতে সংক্রমিত ব্যক্তি সনাক্ত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এইচআইভিতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা সরকারী হিসাব মতে ৭৫০০ জন। সরকারী তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৭৪ জন। এদের মধ্যে ২৪০ জন এইডস এ আক্রান্ত এবং এইডস এ মারা গিয়েছে ১০৯ জন। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ১% এর নিচে। [ANSP, ২০০৬] সার্বিকভাবে বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার যদিও অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় কম, কিন্তু এতে আত্মতুষ্টির কোন অবকাশ নেই। কেননা, সংক্রমণের সকল ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও ভৌগলিক অবস্থানগত কারণ বিদ্যমান থাকায় মহামারী আকারে যে কোন সময় অতি দ্রুত এইচআইভি/এইডস এদেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অতি প্রবল।
 
এইচআইভি/এইডস ও আমাদের তরুণ সমাজঃ
তারুণ্যকে যতটা নিয়ামত দিয়ে আল্লাহ ভরপুর করে দিয়েছেন, মানুষের বয়সের আর কোন পর্যায়কে আল্লাহ ততটা নেয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেন নি। তাইতো এটিই জীবনের সর্বোত্তম সময় বলে বিবেচিত হয়। তারুণ্যের মেধা, শক্তি, সততা ও নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়েই অতীতে বহু জাতি উন্নত হয়েছে, বিশ্বের দরবারে সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাই তরুণ সমাজের উপর আজো সকল মানুষের রয়েছে বিপুল আশা, আকাংখা ও আস্থা। কিশোর এবং যুবকেরাই এ তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে। কৈশর এবং যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলেও অন্য বিবেচনায় তাকে বলা যেতে পারে মানুষের জীবনের ঝড়-ঝঞ্ঝার সময়। কেননা এ সময়ে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে মনোজগতেও ঘটে বৈপ্লবাত্মক পরিবর্তন। UNAIDS-২০০৬ এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর নতুনভাবে এইচআইভি সংক্রমিতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী হচ্ছে ২৫ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী। অল্প বয়স, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং আর্থিক নির্ভরশীলতাসহ নানাবিধ কারণে কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতীরা এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে, যার অর্ধেকই যুবসমাজ। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের অমিত সম্ভাবনার যে বিশাল যুবসমাজ রয়েছে, যারা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১.২৭ শতাংশ (৩.৮ কোটি), তারাও হতে পারে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের নির্মম শিকার।
 
এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে তরুণ সমাজের করণীয়ঃ
তারুণ্যের ক্রান্তিকাল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরুণদের বিশেষভাবে মর্যাদা দিতেন। ইসলামের প্রথম যুগে তরুণ সাহাবাগণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই তরুণরাই আজকের প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এইচআইভি ভাইরাস ও এইডস প্রতিরোধে তরুণদের দায়িত্ব তাই অনেক। তারুণ্যের শক্তি, অভিজ্ঞা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তারা আমাদের দেশে এইচআইভি/এইডস আক্রমণের ঝুঁকি কমানোর ব্যাপারে বিশাল অবদান রাখতে পারে। সেজন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তারা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচীকে একটি কার্যকর রূপ দিতে পারে।
1.      এইচআইভি/এইডস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ও তরুণদের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলাঃ
2.         এইডস সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ সমসাথীদের সুশিক্ষাদান, স্বেচ্ছা পরামর্শ কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সকলের আচরণে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ব্যাপক যোগাযোগ, সঠিক তথ্য প্রদান ও প্রচারণার মধ্য দিয়ে নারী, পুরুষ ও যুবসমাজে কাঙ্খিত সামাজিক নৈতিকতার মানদন্ড ও মনোভাব সুদৃঢ় করা যায়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেও আত্মসাক্ষ্যদানের মাধ্যমে অন্যের আচরণ সংশোধন করতে সাহায্য করতে পারে। এ পর্যন্ত এইডস নিয়ে যে সব উল্লেখযোগ্য ও অনুকরণীয় সেবাকাজ শুরু হয়েছে এবং নানাবিধ রচনা প্রকাশিত হয়েছে তরুণরা তা Communication এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে।
3.         ইসলামী অনুশাসন মেনে চলাঃ তরুণদের সবারই উচিত হল সকল ক্ষেত্রেই ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে অভ্যস্থ হওয়া এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। কেননা ইসলামী অনুশাসন যে মানুষকে শুধু অসততা থেকেই রক্ষা করে তা নয়, বরং যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখে এইচআইভি/এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও প্রবলভাবে হ্রাস করে। এজন্য সকলের উচিত শিশুকাল থেকে প্রতিটি ছেলে মেয়েকে ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে গড়ে উঠতে সার্বিকভাবে সহায়তা করা। যৌন জীবন বিষয়ক ইসলামী বিধিনিষেধ যেন তারা কঠোরভাবে মেনে চলে, সে ব্যাপারে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা পরিবারের সকলের দায়িত্ব। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য যৌন আচরণে ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এর সম্ভাব্য উপায়সমূহ হতে পারে নিম্নরূপঃ
·        বিবাহপূর্ব যৌনমিলন থেকে একেবারে বিরত থাকা। যৌন প্রবৃত্তি যদিও প্রাণী মাত্রেরই স্বভাবজাত, কিন্তু সামাজিক নৈতিকতা ও ইসলামী মূল্যবোধ এ শিক্ষা ও স্বীকৃতি দেয় যে, নর-নারী প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হওয়ার পর শুধুমাত্র বিবাহের মধ্য দিয়ে বিশ্বস্ত দাম্পত্য জীবন যাপন করবে।
·        বিশ্বস্ত দাম্পত্য মিলনঃ শুধুমাত্র বিশ্বস্ত দাম্পত্য জীবন এইচআইভি প্রতিরোধে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বর্তমান সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে দাম্পত্য জীবন বহির্ভূত যৌনতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বহু পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দেখা দিয়েছে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি। সমাজের প্রাথমিক ভিত্তি ও পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন Sexually Transmitted Diseases এবং এইচআইভি/ এইডস এর ভয়ংকর প্রাদুর্ভাব।
·        অপ্রত্যাশিত যৌন সম্পর্ক হতে পারে এমন সম্পর্ক যেমন খারাপ বন্ধুদের সাথে চলা-ফেরা করা, আড্ডা দেয়া, মাদকাসক্ত হওয়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।
4.   এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে মা-বাবা ও দম্পতিকে গর্ভধারণ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং করা, যাতে মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
5.   রক্তের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য রক্ত গ্রহণে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারেঃ
·        দেহে অন্যের রক্ত গ্রহণ না করেই ম্যালেরিয়া ও রক্তশূন্যতার জন্য দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।
·        পুষ্টিকর খাবার যেমন আমিষ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করে রক্তের উপাদান তৈরীর পদ্ধতিকে কার্যকর করা।
·        প্রতিষ্ঠিত ও সরকার অনুমোদিত স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট দ্রুত চিকিৎসা সেবা নেয়া।
·        সম্ভাব্য ও রক্তদানকারীকে কাউন্সিলিং করা।
·        সকল প্রকার দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য জীবনের নিরাপত্তা সম্মন্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন, যাতে দেহে অন্যের রক্ত গ্রহণ করতে না হয়।
·        ত্বক বা স্কিন কাটতে পারে এমন ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যেমন ব্লেড, ছুরি ইত্যাদি নিজের শরীরে ব্যবহার না করা।
·        চিকিৎসা ও অস্ত্রপাচারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নিরাপদভাবে নষ্ট করা।
·        যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা।
·        প্রতিবারই ইনজেকশানে নতুন সুঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
·        কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কিনা তা অবশ্যই পরীক্ষা করে নেয়া।
6.      এইচআইভি/এইডস এ আক্রান্তদের যত্ন ও সহায়তা দানঃ যারা এইচআইভি/এইডস এ আক্রান্ত, তরুণরা তাদেরকে মানসিক বলে বলীয়ান করতে পারে, তাদের পাশে থেকে দিতে পারে নানা ধরনের সহায়তা। একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে - বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের যে ধরনের মনোভাব ও আচরণ থাকে এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিও আমাদের সকলের একই ধরনের মনোভাব থাকা উচিত। এ ব্যাপারে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারেঃ
·        এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা।
·        তার প্রতি সহনুভূতিশীল ও যত্নবান হওয়া এবং কখনো ঘৃণা প্রকাশ না করা।
·        এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করা এবং আক্রান্ত হওয়ার জন্য দোষারোপ না করা।
·        এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য সবার মত সমান সুযোগ দেয়া এবং বৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ না করা।
·        এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে চাকুরী ও অন্যান্য কাজ থেকে বঞ্চিত না করা।
·        আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
 
তরুণ সমাজের প্রতি ইসলামের আহবান ও অনুশাসন - যা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকরঃ
1.      শুধুমাত্র বৈধ ও বিশ্বস্ত দাম্পত্য জীবন যাপনের প্রতি ইসলামের আহবানঃ ইসলাম দাম্পত্য জীবনকে মানুষের জন্য একটি বড় নেয়ামত ও আল্লাহর একটি নিদর্শন বলে ঘোষণা দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা  ইরশাদ করেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [الروم:21]
 ‘‘তাঁর নিদর্শনের একটি এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে সুখ-শান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে’’। [আর-রূম : ২১]
 
উত্তম নারীদের প্রশংসায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤﴾ [النساء:34]
‘‘সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং আল্লাহর হেফাযতে তারা স্বামীর অনুপস্থিতিতে (নিজেদের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে।’’ [আন-নিসা : ৩৪]
 
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য মিলনই শরীয়তের  দৃষ্টিতে একমাত্র বিশ্বস্ত মিলন। এ দাম্পত্য মিলনের প্রতি আস্থা সৃষ্টির জন্য একে সাওয়াব অর্জনের একটি পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে এসেছে :
»يَقُولُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْه وَسَلَّمَ : وَفِى بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِى أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِى حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِى الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ«.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘‘তোমাদের লজ্জাস্থানের বৈধ ব্যবহারেও রয়েছে সওয়াব’’। সাহাবাগণ অবাক হয়ে বললেন, (দাম্পত্য মিলনের মাধ্যমে) আমাদের কেউ তার কামনা পূরণ করলে সে সাওয়াব পাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি লক্ষ্য করনি, যদি সে হারাম পন্থায় তার লজ্জাস্থান ব্যবহার করে তাহলে কি এতে পাপ হবে না? তেমনি হালালভাবে এর ব্যবহারে সাওয়াব রয়েছে’’। [সহীহ মুসলিম-১৬৭৪]
 
বৈধ দাম্পত্য মিলনের সার্বিক স্বাধীনতা প্রদান করে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে ইরশাদ করছেন,
 ﴿نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡۖ وَقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُمۡۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُم مُّلَٰقُوهُۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٢٣﴾ [البقرة:223]
‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্য ক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর এবং তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু কর। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হবে’’। [আল-বাকারাহ : ২২৩]
﴿هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ﴾ [البقرة:187]
‘‘স্ত্রীরা তোমাদের পোষাক এবং তোমরা তাদের পোষাক’’। [আল-বাকারাহ : ১৮৭]
 
দাম্পত্য জীবনের আস্থা ও বিশ্বস্ততা যাতে কোন মতেই ক্ষুন্ন না হয়, সেদিকে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«ألا إن لكم على نسائكم حقا ولنسائكم عليكم حقا فأما حقكم على نسائكم فلا يطئن فراشكم من تكرهون ولا يأذن في بيوتكم لمن تكرهون ألا وحقهن عليكم أن تحسنوا إليهن في كسوتهن وطعامهن»
‘‘সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে। আর তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে। আর স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার হল - তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে আসতে দেবে না যাদের তোমরা অপছন্দ কর এবং তোমাদের গৃহে এমন লোকদেরকে অনুমতি দেবে না যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর না। সাবধান তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে তোমরা তাদেও ভরণ-পোষণে তাদেও প্রতি সদাচারণ করবে’’। [সুনান তিরমিযি-১০৮৩]
 
স্ত্রীর সাথে বিশ্বস্ত দাম্পত্য সম্পর্কই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরী করে। এতে স্বাভাবিকভাবেই স্বামী হয়ে উঠে স্ত্রীর কাছে অত্যন্ত আস্থাভাজন ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব। বিষয়টিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর চিরন্তন বাণীতে, 
«خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي»
‘‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীর নিকট উত্তম’’। [সুনান তিরমিযি-৩৮৩০]
আল-কুরআন ও হাদীসের আলোকে স্বামী এবং স্ত্রী যদি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাভাজন হয়, তাহলেই তাদের দাম্পত্য জীবন হবে মধুর এবং সম্ভব হবে বিশ্বস্ত দাম্পত্য মিলনের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস এর ঝুঁকি কমানোর।
 
2.      ইসলামে বিবাহের প্রতি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্বঃ ইসলাম পরিণত বয়সে বিবাহের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে। তরুণদেরকেও যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিবাহের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। কেননা বিবাহের মাধ্যমেই দ্রুত ইতিবাচক আচরণিক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব, যা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে বিশাল ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢﴾ [النور:32]
‘‘আর তোমাদের মধ্যে যারা আয়্যিম (অবিবাহিত, বিপত্নীক, বিধাবা) তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী’’। [আন-নূর : ৩২]
তরুণদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উদাত্ত আহবান হলঃ
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
‘‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের (দৈহিক ও আর্থিক) সামর্থ রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটাই তার দৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশী সংযত করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে (অবৈধ মিলন থেকে) বেশী হেফাযত করবে। আর যে বিয়ের সামর্থ রাখে না তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা তার (যৌনকামনা নিয়ন্ত্রণের) জন্য ঢাল স্বরূপ’’। [সহীহ বুখারী-৪৬৭৮, সহীহ মুসলিম-২৪৮৫ ও ২৪৮৬]
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহের প্রয়োজনীয়তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বিবাহের প্রতি অনাগ্রহীদের  উদ্দেশ্যে নিজের উদাহরণ পেশ করে বলেছিলেন,
«أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي»
‘‘আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়েও বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়েও বেশী তাকওয়া অবলম্বনকারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি, আবার বিরতি দেই, সালাত আদায় করি ও রাতে নিদ্রা যাই এবং নারীদের বিবাহ করি। অতএব যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগভাজন হবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়’’। [সহীহ বুখারী-৪৬৭৪, সহীহ মুসলিম-২৪৮৭]
 
3.      অবৈধ যৌনমিলন/ যৌনাচার থেকে একেবারেই বিরত থাকাই ইসলামের নির্দেশঃ ইসলাম বিশ্বস্ত দাম্পত্য মিলনের বাইরে সকল প্রকার যৌনাচারকে স্পষ্টভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 ﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾[الإسراء:32]
‘‘তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ’’। [বনী ইসরাঈল : ৩২]
যেনার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী সকল প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য অশ্লীল কর্মকান্ডকেও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে এবং এগুলোর ধারে কাছে যেতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 ﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ﴾[الأنعام:151]
‘‘প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজের নিকটেও যেয়ো না’’। [আল-আনআ’ম : ১৫১]
 
অবাধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকা ঈমানের লক্ষণ। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧﴾ [المؤمنون:5-7]
‘‘আর (সফলকাম মুমিন তো তারা) যারা নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসী ছাড়া অন্যদের সাথে যৌনমিলন থেকে নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে (যৌনকাজে) কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী’’। [আল-মু‘মিনূন : ৫-৭, আল-মা‘আরিজ : ২৯-৩১] এ আয়াতে নিজ মালিকানাধীন দাসী, যার প্রচলন বর্তমানে নেই, এবং নিজ স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে,যৌনাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যেনা ও ব্যভিচারের মাধ্যমে দৈহিক ও সামাজিক নানাপ্রকার সমস্যা দেখা দেয়। অধিকন্তু যেনায় লিপ্ত হওয়ার ফলে সংশ্লিষ্টরা একদিকে যেমন এইচআইভি ও এইডসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায় প্রবলভাবে, অন্যদিকে তেমনি মুসলিম সমাজে তাদের মর্যাদাও ক্ষুন্ন হয় ভীষণভাবে। এজন্য ইসলাম একে ভয়াবহ অপরাধ ও চরিত্র বিধ্বংসী বৈশিষ্ট্য বলে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা যেনার শাস্তি বর্ণনায় বলেন,
 ﴿ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢﴾ [النور:2]
‘‘ব্যভিচারী নারী পুরুষ উভয়কে একশত বেত্রাঘাত কর। তাদের উভয়ের প্রতি আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন অনুকম্পা যেন তোমাদেরকে স্পর্শ না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর মুমিনদের এটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ্য করে’’। আন-নূর : ২]
 
কেউ যেন ‘যেনা’য় উদ্বুদ্ধ না হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের সৌন্দর্য অবলোকন যেন কাউকে যেনার প্রতি প্ররোচিত না করে সে দিকে মুমিন নর-নারীকে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ﴾[النور:30-31]
‘‘আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটিই তাদের জন্য পবিত্রতম। তারা যা করছে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। আর আপনি মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’’। [আন-নূর : ৩০-৩১]
সমকামিতাকেও ইসলাম একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এবং যাতে কেউ এ নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত না হয় সেজন্য এর শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছে। মুসলিম পন্ডিতদের অনেকের মতে সমকামিতার শাস্তি ব্যভিচারের শাস্তিরই অনুরূপ। আবার অনেকের মতে এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড। দলীল হচ্ছে নিম্নবর্ণিত হাদীসটিঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ فِي عَمَلِ قَوْمِ لُوطٍ»
‘‘ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা লূত আ. এর সম্পদায়ের কাজ (তথা সমকামিতা) কাউকে করতে দেখলে এ কাজে লিপ্ত উভয়কে হত্যা কর’’। [আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযি, ইবন মাজাহ ও বায়হাকী]
 
4.      মাদকদ্রব্য সেবন ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধঃ এইচআইভি ও এইডস এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো - সুঁই সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা। আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে সকল প্রকার মদ ও নেশাজাত বস্ত্তর ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন,
﴿يَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِۖ قُلۡ فِيهِمَآ إِثۡمٞ كَبِيرٞ وَمَنَٰفِعُ لِلنَّاسِ وَإِثۡمُهُمَآ أَكۡبَرُ مِن نَّفۡعِهِمَاۗ﴾[البقرة:219]
‘‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, এ দু'টোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকারিতা। তবে এ দু'টোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা ভয়াবহ’’। [আল-বাকারাহ : ২১৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائدة:90]
‘‘ হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব এগুলো পরিহার কর যেন তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পার’’। [আল-মায়িদাহ : ৯০]
মাদকতা ও নেশাগ্রহণ যে শরীর ও স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সেটি আজ স্বীকৃত সত্য। অতএব এ সব ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণের অর্থ হল ধীরে ধীরে নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস ও মৃত্যুর মুখোমুখি করা, যা শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة:195]
‘‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’’। [আল-বাকারাহ : ১৯৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল নেশাজাত দ্রব্যকেই মাদক বলে অভিহিত করেছেন এবং সকল নেশাজাত দ্রব্যকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ»
‘‘সকল নেশাজাত দ্রব্যই মাদক এবং সকল নেশাজাত দ্রব্যই হারাম’’। [সহীহ মুসলিম- ৩৭৩৩, ৩৭৩৪]
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ»
‘‘সকল নেশাজাত দ্রব্যই মাদক এবং সকল মাদকদ্রব্যই হারাম’’। [সহীহ মুসলিম- ৩৭৩৫]
ইসলামে মাদকদ্রব্য মাত্রই হারাম ঘোষিত হয়েছে, এ ব্যাপারে তার পরিমাণ কম বেশী হওয়ার উপর মোটেই দৃষ্টি দেয়া হয়নি। কাজেই তার পরিমাণ কম হোক কি বেশী, উভয় অবস্থায়ই তা হারাম। এ অনৈতিক পথে পা বাড়িয়ে মানুষ যেন ধীরে ধীরে তার জীবনকে বিপন্ন না করে তোলে সে জন্যই এ ব্যবস্থা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট করে বলেছেন,
«مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَام»
‘‘বেশী পরিমাণ গ্রহণ করলে যা নেশাগ্রস্ত করে, তা কম পরিমাণ গ্রহণ করাও হারাম’’। [সুনান আবি দাঈদ-৩১৯৬, সুনান তিরমিযি-১৭৮৮, মুসনাদ আহমাদ-৫৩৯০, ৬৩৮৭, ৬২৭১, ১১৬৫৬, ১৪১৭৬]
আনাস ইবনু মালিক রা. এর হাদীসে এসেছে,
«لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم في الخمر عشرة عاصرها ومتعصرها وشاربها وحاملها والمحمولة إليه وساقيها وبائعها وآكل ثمنها والمشتري لها والمشتراة له»
‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশ ব্যক্তিকে মদসংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে অভিশাপ দিয়েছেন। তারা হল : মদ উৎপাদনকারী, যে উৎপাদন করায়, মদ্যপায়ী, বহনকারী, যার কাছে বহন করে নেয়া হয়, যে মদ পরিবেশন ও পান করায়, মদ্যবিক্রেতা, বিক্রয়মূল্য ভোগকারী, ক্রেতা এবং যার জন্য ক্রয় করা হয়’’। [সুনান তিরমিযি-১২১৬, সুনান ইবন মাজাহ-৩৩৭২]
ইবনে হাজার রহ. বলেন, ‘‘((সকল নেশাজাত দ্রব্যই হারাম)) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ বাণীর ব্যাপকতা থেকে বোঝা যায় - যা মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে, তা যদি সুরা নাও হয়, তাহলেও তা হারাম। সুতরাং আফিম ও অন্যান্য জিনিস এ বিধানের অন্তর্ভূক্ত হবে’’। [ ফাতহুল বারী শরহ সহীহ আল-বুখারী, খন্ড ১০ পৃ. ৩৮]
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেন,‘‘নেশা সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত আফিম অন্য সকল নেশাজাত দ্রব্যাদির স্থলাভিষিক্ত। সকল আলেমদের ঐকমত্যে নেশাকর সব কিছু হারাম। বরং মানুষের আকল ও বিবেককে নষ্ট করে এমন সব বস্ত্ত যদি নেশাকর নাও হয় যেমন ভাঙ, তা ভক্ষণ করাও হারাম’’। [মাজমু’ ফাতাওয়া ইমাম ইবনি তাইমিয়াহ খন্ড ৩৪ পৃ. ২০৪]
 
5.      এইচআইভি প্রতিরোধে ইসলামী খৎনার উপকারিতাঃ
সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, খৎনা করা ব্যক্তিদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক কম। এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে International AIDS Society (IAS) এবং UNAIDS/WHO (World AIDS Conference 2006) খৎনা করাকে এইচআইভি এবং এইডস প্রতিরোধের একটি কার্যকরী ব্যবস্থা হিসাবে মনে করে। তবে খৎনা করার সময় সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি অবশ্যই জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে। খৎনা করাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি শ্রেষ্ঠ স্বভাবের একটি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,
«الْفِطْرَةُ خَمْسٌ - أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ - الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ»
‘‘সুস্বভাব পাঁচটি : খৎনা করা, স্বামীর মৃত্যু পরবর্তী শোক, মোচ ছাঁটা, নখ কাটা, বোগলের নীচের পশম উপড়ে ফেলা’’। [সহীহ বুখারী-৫৪৪১, সহীহ মুসলিম-৩৭৭]
 
6.      আক্রান্তদের প্রতি যতণ ও সহায়তা দানে ইসলামের উৎসাহ প্রদানঃ প্রাণাঘাতি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদল মানুষের করুণ আর্তনাদ শুনে সভ্য মানব সমাজের সদস্য হয়ে কোন ব্যক্তি নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে চুপচাপ হয়ে বসে থাকবেন এবং এর প্রতিকারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা চালাবেন না, তা হতে পারে না। ইসলামের মহান শিক্ষা হল, যখন কেউ বিপদগ্রস্ত হয় কিংবা কোন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তখন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব হয়ে যায় বিপদগ্রস্ত সে সকল মানব সন্তানের পাশে এসে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য সাধ্যানুযায়ী যোগান দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَة»
‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসল, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সমস্যা দূর করবে আল্লাহ তার কিয়ামত দিবসের সমস্যা দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন’’। [সহীহ বুখারী-২২৬২]
শুধু মুসলিমদের প্রতিই নয়, বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা ইসলামের মহান শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«لَا يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ»
‘‘যে ব্যাক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না’’। [সহীহ বুখারী-৬৮২৮, সহীহ মুসলিম-৪২৮৩]
শুধু মানুষই নয়, বরং পৃথিবীবাসী সকল প্রাণীর প্রতি দয়া ও করূণা করা ইসলামের নির্দেশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«ارْحَمُوا مَنْ فِى الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ»
‘‘পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে আকাশে যিনি রয়েছেন (সে আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’’। [সুনান তিরমিযি-১৮৪৭, সুনান বায়হাকী ৯/৪১]
এইচআইভি এবং এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যেহেতু রোগী হিসাবে বিবেচিত, তাই তাদের দেখতে যাওয়া এবং সেবা করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ وَفُكُّوا الْعَانِيَ قَالَ سُفْيَانُ وَالْعَانِي الْأَسِيرُ»
‘‘ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থকে দেখাশুনা কর এবং কেউ অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ হলে তাকে মুক্ত
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×