কল্যাণপুরে একটি বাসায় পুলিশের বিশেষ ফোর্স সোয়াতের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলমান এই অভিযানে আহত একজনসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সোয়াতের এই অভিযানকে সরকার প্রধান ও প্রশাসন সফল অভিযান বললেও এই অভিযান নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। এবং এসব প্রশ্ন খুবই যৌক্তিক।
বিশেষ করে পুলিশের তোলা যেসব ছবি গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে এবং যেসব বক্তব্য তারা দিয়েছেন সেগুলোই বেশি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সবমিলে যেসব প্রশ্ন এই অভিযানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে সেগুলো হলো-
১। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে এখানকার কথিত জঙ্গিদেরকে গ্রেপ্তার না করে হত্যা করা হলো কেনো? এরা তো গুলশানের মত কাউকে জিম্মি করেনি যে জঙ্গিদের হত্যা না করলে জিম্মিদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়!! কিংবা তাদের হাতের ছুরি এবং উদ্ধার করা অস্ত্র অতটা ভয়ংকর নয় যে তাদেরকে হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিলো না!!
২। পুলিশের তোলা ছবিতে ছুরি হাতে নিহত জঙ্গির দুটি ছবিতে দুরকম দেখা যাচ্ছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে ছুরির ধার উপরের দিকে, অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে ছুরির ধার নিচের দিকে(নিজের ছবিতে দেখুন)। তাহলে কি মৃত্যুর পর তাদের হাতে ছুরি ধরিয়ে দিয়ে কয়েকবার ছবি তোলা হয়েছে??
৩। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত করে তোলা হয়েছিল৷ শব্দের ব্যাপকতায় কমপক্ষে বিশ থেকে ২৫ জন একসঙ্গে এরকম শব্দ করেছে বলে মনে করছেন তারা৷ সেটা যদি হয়, নিহতের সংখ্যা শুধু নয়জন কেন? তাদের সহযোগী আরো কেউ কি ছিল যাদের ধরা যায়নি/হয়নি?
৪। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনার পর পরই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিহতদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ তবে এরা সবাই জঙ্গি ছিল, তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এবং তাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত, এমনকি গুলশান হামলায় অংশ নেয়ারাও এই একই গ্রুপের সদস্য৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো পুলিশ জানে না, তাদের জঙ্গি পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলো পুলিশ?
৫। রাতভর জঙ্গিদের সাথে পুলিশের পাল্লাপাল্টি মুহুর্মুহু গোলাগুলি হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জঙ্গিরা মাত্র ৪টি পিস্তল দিয়ে কিভাবে এতক্ষণ গোলাগুলি করতে পারে কিংবা ৪ পিস্তল দিয়ে মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া কি সম্ভব?? যদিও নিহত অবস্থায় তাদের হাতে কেবল ছুরিই পাওয়া গিয়েছে।
৬। পুলিশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নিহত একজন জঙ্গি হাতে আপেল কাটার ছুরি মুষ্ঠিবদ্ধ করে আছে। আইজিপির কথামতে প্রত্যেকের হাতেই ছুরি ছিলো। প্রশ্ন হলো, একজনকেও পিস্তল মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেলো না কেনো?? তাদের কাছে কি আসলেই পিস্তল ছিলো? পুলিশের ভয়ংকর অস্ত্রের কাউন্টারে আপেল কাটার ছুরি নিয়ে প্রতিরোধ করা কতটা হাস্যকর?
৭। পুলিশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিদের সবার গায়ে আইএসের কালো পোশাখ, জিন্সের প্যান্ট এবং মাথায় পাগড়ি। প্রশ্ন হলো জঙ্গিরা কি রাতে এগুলো পরেই ঘুমায়?? এগুলা কি তাদের রাতের পোশাখ?? বিশেষ করে ঘুমানোর সময় মাথায় পাগড়ি থাকাটা কত হাস্যকর!!
৮। পুলিশ জঙ্গিদেরকে জেএমবি বললেও তাদের পরনের আইএসের পোশাখ এবং ঘরে টানানো আইএসের পতাকার ছবি ফলাও করে প্রচার করছে কেনো? আর এত গোলাগুলি আর রক্তের হোলিখেলাতেও পতাকাটিতে তার কোনো ছাপ নেই কেনো?? পতাকাটি কি আসলেই সেখানে ছিলো? নাকি পরে টানানো হয়েছে??
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এই অভিযানকে আমি সফল অভিযান বলতে নারাজ। আটক হওয়া জঙ্গি হাসান কোথায় পড়ে কোন ভার্সিটিতে পড়ে সেসবের সন্ধান না করে সে কোন কালে রেটিনায় কোচিং করেছিলো সেটা যদি অনুসন্ধান করা হয় তাহলেতো রহস্য আরো বেড়ে যায়!! এমনকি এই সংবাদে বগুড়ায় রেটিনা ও ফোকাসের কার্যালয়ে আওয়ামী ক্যাডার কর্তৃক হামলা অগ্নিসংযোগ দেয়াটাও দু:খজনক। গুলশানের ঘটনায় যে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে জড়িত ছিলো, তখন কি আওয়ামী লীগের অফিস কিংবা আওয়ামী নেতার উপর কোনো হামলা হয়েছিলো?? এমনকি এটা কি ভাবা যায় যে এতে আওয়ামী লীগ জড়িত? তাহলে রেটিনা ফোকাসে হামলা কেনো?? এটা কি পরিকল্পিত??
গুলশান হামলাতেও জনমনে ব্যপক প্রশ্ন, এবারের কল্যাণপুরের অভিযানেও প্রশ্নের অন্ত নেই। সরকার এসবে কেনো এত প্রশ্নে জন্ম দিচ্ছে?? জঙ্গি নির্মুলই যদি টার্গেট হয় তাহলেতো এসব রহস্য থাকার কথা নয়। গুলশানের হাসনাতকে এতদিন পুলিশ অস্বীকার করলেও এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন তিনি পুলিশি হেফাযতে আছেন। পুলিশ ও রাষ্ট্রের এমন রহস্যময় আচরণের কারন কি?? জনমনে এমন রহস্য আর ধোঁয়াশা রেখে আর বিরোধী পক্ষকে দোষারোপ করে কস্ষিন কালেও কি জঙ্গি নির্মুল সম্ভব??
কল্যাণপুর সংশ্লিষ্ট উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি সরকার খোলাশা না করে তাহলে এসব অভিযানকে সাজানো ভাবতে আমরা বাধ্য হবো। প্রত্যক্ষদর্শিদের বর্ণনামতে প্রকম্পিত আল্লাহু আকবার স্লোগানের উৎস কি জঙ্গি না পুলিশ সেটাও আমাদের ভাবায়। জনমনের এসব অসংলগ্ন ভাবনা আর প্রশাসন তথা সরকারের রহস্যপূর্ন কর্মকান্ড দেশের কল্যাণ নয় কেবল অকল্যাণই বয়ে আনবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৭