somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্যাণপুর অভিযানে অকল্যাণের ইঙ্গিত !

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কল্যাণপুরে একটি বাসায় পুলিশের বিশেষ ফোর্স সোয়াতের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলমান এই অভিযানে আহত একজনসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সোয়াতের এই অভিযানকে সরকার প্রধান ও প্রশাসন সফল অভিযান বললেও এই অভিযান নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। এবং এসব প্রশ্ন খুবই যৌক্তিক।

বিশেষ করে পুলিশের তোলা যেসব ছবি গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে এবং যেসব বক্তব্য তারা দিয়েছেন সেগুলোই বেশি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সবমিলে যেসব প্রশ্ন এই অভিযানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে সেগুলো হলো-

১। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে এখানকার কথিত জঙ্গিদেরকে গ্রেপ্তার না করে হত্যা করা হলো কেনো? এরা তো গুলশানের মত কাউকে জিম্মি করেনি যে জঙ্গিদের হত্যা না করলে জিম্মিদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়!! কিংবা তাদের হাতের ছুরি এবং উদ্ধার করা অস্ত্র অতটা ভয়ংকর নয় যে তাদেরকে হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিলো না!!

২। পুলিশের তোলা ছবিতে ছুরি হাতে নিহত জঙ্গির দুটি ছবিতে দুরকম দেখা যাচ্ছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে ছুরির ধার উপরের দিকে, অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে ছুরির ধার নিচের দিকে(নিজের ছবিতে দেখুন)। তাহলে কি মৃত্যুর পর তাদের হাতে ছুরি ধরিয়ে দিয়ে কয়েকবার ছবি তোলা হয়েছে??



৩। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত করে তোলা হয়েছিল৷ শব্দের ব্যাপকতায় কমপক্ষে বিশ থেকে ২৫ জন একসঙ্গে এরকম শব্দ করেছে বলে মনে করছেন তারা৷ সেটা যদি হয়, নিহতের সংখ্যা শুধু নয়জন কেন? তাদের সহযোগী আরো কেউ কি ছিল যাদের ধরা যায়নি/হয়নি?

৪। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনার পর পরই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিহতদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ তবে এরা সবাই জঙ্গি ছিল, তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এবং তাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত, এমনকি গুলশান হামলায় অংশ নেয়ারাও এই একই গ্রুপের সদস্য৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো পুলিশ জানে না, তাদের জঙ্গি পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলো পুলিশ?

৫। রাতভর জঙ্গিদের সাথে পুলিশের পাল্লাপাল্টি মুহুর্মুহু গোলাগুলি হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জঙ্গিরা মাত্র ৪টি পিস্তল দিয়ে কিভাবে এতক্ষণ গোলাগুলি করতে পারে কিংবা ৪ পিস্তল দিয়ে মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া কি সম্ভব?? যদিও নিহত অবস্থায় তাদের হাতে কেবল ছুরিই পাওয়া গিয়েছে।

৬। পুলিশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নিহত একজন জঙ্গি হাতে আপেল কাটার ছুরি মুষ্ঠিবদ্ধ করে আছে। আইজিপির কথামতে প্রত্যেকের হাতেই ছুরি ছিলো। প্রশ্ন হলো, একজনকেও পিস্তল মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেলো না কেনো?? তাদের কাছে কি আসলেই পিস্তল ছিলো? পুলিশের ভয়ংকর অস্ত্রের কাউন্টারে আপেল কাটার ছুরি নিয়ে প্রতিরোধ করা কতটা হাস্যকর?

৭। পুলিশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিদের সবার গায়ে আইএসের কালো পোশাখ, জিন্সের প্যান্ট এবং মাথায় পাগড়ি। প্রশ্ন হলো জঙ্গিরা কি রাতে এগুলো পরেই ঘুমায়?? এগুলা কি তাদের রাতের পোশাখ?? বিশেষ করে ঘুমানোর সময় মাথায় পাগড়ি থাকাটা কত হাস্যকর!!

৮। পুলিশ জঙ্গিদেরকে জেএমবি বললেও তাদের পরনের আইএসের পোশাখ এবং ঘরে টানানো আইএসের পতাকার ছবি ফলাও করে প্রচার করছে কেনো? আর এত গোলাগুলি আর রক্তের হোলিখেলাতেও পতাকাটিতে তার কোনো ছাপ নেই কেনো?? পতাকাটি কি আসলেই সেখানে ছিলো? নাকি পরে টানানো হয়েছে??



এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এই অভিযানকে আমি সফল অভিযান বলতে নারাজ। আটক হওয়া জঙ্গি হাসান কোথায় পড়ে কোন ভার্সিটিতে পড়ে সেসবের সন্ধান না করে সে কোন কালে রেটিনায় কোচিং করেছিলো সেটা যদি অনুসন্ধান করা হয় তাহলেতো রহস্য আরো বেড়ে যায়!! এমনকি এই সংবাদে বগুড়ায় রেটিনা ও ফোকাসের কার্যালয়ে আওয়ামী ক্যাডার কর্তৃক হামলা অগ্নিসংযোগ দেয়াটাও দু:খজনক। গুলশানের ঘটনায় যে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে জড়িত ছিলো, তখন কি আওয়ামী লীগের অফিস কিংবা আওয়ামী নেতার উপর কোনো হামলা হয়েছিলো?? এমনকি এটা কি ভাবা যায় যে এতে আওয়ামী লীগ জড়িত? তাহলে রেটিনা ফোকাসে হামলা কেনো?? এটা কি পরিকল্পিত??

গুলশান হামলাতেও জনমনে ব্যপক প্রশ্ন, এবারের কল্যাণপুরের অভিযানেও প্রশ্নের অন্ত নেই। সরকার এসবে কেনো এত প্রশ্নে জন্ম দিচ্ছে?? জঙ্গি নির্মুলই যদি টার্গেট হয় তাহলেতো এসব রহস্য থাকার কথা নয়। গুলশানের হাসনাতকে এতদিন পুলিশ অস্বীকার করলেও এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন তিনি পুলিশি হেফাযতে আছেন। পুলিশ ও রাষ্ট্রের এমন রহস্যময় আচরণের কারন কি?? জনমনে এমন রহস্য আর ধোঁয়াশা রেখে আর বিরোধী পক্ষকে দোষারোপ করে কস্ষিন কালেও কি জঙ্গি নির্মুল সম্ভব??

কল্যাণপুর সংশ্লিষ্ট উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি সরকার খোলাশা না করে তাহলে এসব অভিযানকে সাজানো ভাবতে আমরা বাধ্য হবো। প্রত্যক্ষদর্শিদের বর্ণনামতে প্রকম্পিত আল্লাহু আকবার স্লোগানের উৎস কি জঙ্গি না পুলিশ সেটাও আমাদের ভাবায়। জনমনের এসব অসংলগ্ন ভাবনা আর প্রশাসন তথা সরকারের রহস্যপূর্ন কর্মকান্ড দেশের কল্যাণ নয় কেবল অকল্যাণই বয়ে আনবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৭
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×