“রামপালের ধোঁয়া মুখের ময়লা পরিষ্কার করবে”। বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, রামপালের এই চিমনি থেকে যে ধোঁয়াটা বের হবে এটাকেও কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ব্যবহার করা যায়। এ দিয়ে কিন্তু কার্বন তৈরি করা যায় এবং সেটাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। মুখের সৌন্দর্য্য বাড়াতে এই কার্বন থেকে তৈরি ফেসিয়াল মাস্ক বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
জনৈক বৃত্তশালী তাহার নবনির্মিত বাড়ির মূত্র বিষর্জণের পাইপলাইনের মুখ উন্মুক্ত করিলেন জনৈক ব্যক্তির উঠোন বরাবর। এই ব্যক্তি বুঝিতে পারিলেন এই পাইপলাইন চালু হইলে তাহার উঠোন মূত্রের সাগরে পরিণত হইবে। এমন অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ভাবিয়া ব্যক্তি প্রতিবাদ করিলেন। তখন বৃত্তশালী জবাব দিলেন, তুমি কি জানো, মূত্র কি জিনিস? মূত্রের মধ্যে কি থাকে? তুমি কি জানো মূত্রের মধ্যে ৯৫% ই হচ্ছে পানি, যেটাকে ফিউরিপাই করে আমরা খাবারের পানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি? তুমি কি জানো, মূত্রের মধ্যে ব্যপক পরিমানে ইউরিয়া থাকে, যেটাকে ব্যবহার করে আমরা ব্যপক মাত্রায় ইউরিয়া সার তৈরি করতে পারি? তুমি কি জানো, মূত্রে যেই পটাশিয়াম থাকে সেটা আমাদের শরীরের জন্য কতটা দরকারি?? সুতরাং অন্যের কথায় কান দিয়োনা, এই মূত্রের পাইপলাইন তোমার উপকার বৈ অপকার ডেকে আনবেনা।
আমাদের একচ্ছত্র প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে এই বৃত্তশালীর মতই বুঝ দিলেন। আপনারা কি জানেন, এটা দিয়ে এই এই করা যায়? আপনারা কি জানেন, এই ধোঁয়া দিয়ে অমুক অমুক তৈরি করা যায়??
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি বলতেন, রামপালের নির্গত ধোঁয়া থেকে কার্বন তৈরি করে সেটা থেকে মুখের সৌন্দর্য বর্ধনের ফেসিয়াল তৈরি করা হবে। এ জন্য সকল বৈজ্ঞানিক প্রযু্ক্তি ও পদ্ধতিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাও আমরা কিছুটা আশ্বাস পেতাম। কিন্তু আপনি এই করা যায় সেই করা যায় বলে আমাদেরকে বুঝ দিলেন!!!!
তবে আমরা মুখের ময়লা পরিষ্কারের জন্য ফেসিয়াল পাবো কি পাবোনা সেটা অনিশ্চিত হলেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ওনার পায়ের ময়লা পরিষ্কারের জন্য বেশ কিছু চাটুকার পেয়ে গেছেন। গতকাল রামপাল সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর সংবাদসম্মেলনে কতিপয় সাংবাদিকের কতিপয় প্রশ্ন ও মন্তব্য পড়লেই সেই চাটুকারদের আপনি সহজেই চিনে ফেলবেন। আপনি চাইলে নিচের অংশটুকু পড়ে এখান থেকে সেরা চাটুকারও বাছাই করতে পারেন।
গোলাম সরোয়ার (সম্পাদক, দৈনিক সমকাল)
আমি একটা কথা বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে, আপনার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি দেশের ক্ষতি করছেন, দেশকে বিক্রি করছেন। কিন্তু, যিনি দেশের জন্য জীবন দিতে পারেন, তাকে নিয়ে এই কথা। আমি মনে করি এর জোরালো প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন।
মোজাম্মেল বাবু (প্রধান সম্পাদক, ৭১ টিভি)
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যারা ডলারে বেঁচে থাকে, তারা পরিবেশজীবী। পরিবেশ রাজনীতিবিদ এবং পরিবেশবিদদের নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, আইসিস তৈরি করেছে ইহুদিরা। সে রকম এই সব পরিবেশবাদি আন্দোলনের পেছনে কাজ করে পেট্রোল ডলার। এই সব পেট্রোল বাণিজ্য অব্যাহত রাখার জন্যই কয়লার বিরোধিতা। আমাদের এগুলো শোনার কোনও সময় নেই।
মনজুরুল আহসান বুলবুল (প্রধান সম্পাদক, একুশে টিভি)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রামপাল নিয়ে যেসব তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তার বিপরীতে আপনি যে তথ্য দিলেন, আমরা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করি তা সঠিক তথ্য। এই লড়াইটি চালু রাখতে হবে; শুধু আজকের প্রেস কনফারেন্স নয়, সব জায়গাতেই।
মোল্লা আমজাদ হোসেন (সম্পাদক, পাক্ষিক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার)
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানিখাতের উন্নতি, অগ্রগতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আজকে যে সস্তায় জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে, তার সূত্রপাত ঘটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। আমাদের এখানে পরিবেশবাদী ও বাম ধরাণার রাজনীতিবিদরা একাকার হয়ে গেছেন। যেকোনও কিছুতেই তারা বিরোধিতা করেন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না। এটা আমি আমার বিশ্বাস থেকে, হৃদয় থেকে নিশ্চিত।
শাবান মাহমুদ (বাংলাদেশ প্রতিদিন)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দেশে যখন স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল আপনার বাবার নেতৃত্বে, তখন একটি অংশ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। আবার আপনি যখন ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে বারবার কাজ করছেন, তখন আমরা দেখেছি, ওই অংশেরই একটা অংশ আপনার বিরোধিতা করে আসছে। এর ফলে আমরা দেখি, বাংলাদেশের উন্নয়নের বিপক্ষে একটি গ্রুপ বরাবরই সক্রিয় রয়েছে। তার ভেতর দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারপ্রধান হিসেবে কেবল আপনার কাছে আমি জানতে চাইব, এই অংশটি দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তারা যদি ক্ষতিকর হয়ে থাকে, দেশপ্রেমী জনগণ তাদের কিভাবে বয়কট করতে পারে? সরকারপ্রধান হিসেবে, উন্নয়নের নেত্রী হিসেবে, দেশের একজন গণমানুষের নেত্রী হিসেবে আপনি কী মনে করেন?
আনিস আলমগীর (এশিয়ান টিভি)
ব্যক্তিগতভাবে রামপাল নিয়ে আমার নিউট্রাল পজিশন ছিল। আর আজ আপনার প্রেজেন্টেশনের পরে আমার মনে হচ্ছে যে, বিদ্যুৎ প্রকল্প যে দরকার, এটা নিয়ে আমার আর কোনও সন্দেহ নেই। আমার প্রশ্ন হলো, হঠাৎ করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রামপাল বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়াতে আপনি কি মনে করেন, ভারতবিরোধী রাজনীতি বাংলাদেশে একটা ট্রামকার্ড হিসেবে ইউজ হবে?
শেখ নাজমুল হক সৈকত (এটিএন বাংলা)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রামপাল নিয়ে বাম দলগুলো বিরোধিতা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপি। তাদের এই বিরোধিতার কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যহত হবে কিনা?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:২৭