somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাড় ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা চিকিত্সা ও প্রতিকার

১৪ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব শরীরে ২০৬টি হাড় আছে। স্বাভাবিক গঠনে হাড়ে আমিষ, কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম থাকে বলে হাড় শক্তিশালী হয়। ৩০ বছর বয়সে হাড়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে এবং হাড় মজবুত থাকে। একে হাড়ের পিক (চবধশ) পরিমাণ বলে। প্রাকৃতিক নিয়মে ৩০ বছরের পর থেকে মানব শরীরে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে, হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হতে থাকে। ফলে হাড় অতি সহজেই
ভেঙে যায়। হাড়ের এই হ্রাসের পরিমাণ নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, বংশানুক্রম ও শারীরিক পরিশ্রমের ওপর। হাড়ের এই দুর্বল অবস্থা ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়। চিকিত্সা বিজ্ঞানে একে ওসটিওপোরোসিস (ঙংঃবড়ঢ়ড়ত্ড়ংরং) বলে। ওসটিওপোরোসিস রোগীর যে কোনো হাড় সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। তবে মেরুদণ্ডের হাড়, কটির (হিপ জয়েন্ট) হাড়, পাঁজরের হাড় এবং কবজির (রিস্ট জয়েন্ট) হাড় বেশি আক্রান্ত হয়। হাড় ভাঙার আগ পর্যন্ত রোগী সাধারণত কোনো অসুুবিধার কথা বলে না। আবার কিছু কিছু হাড় ভাঙার দীর্ঘদিন পর অসুবিধার সৃষ্টি করে। প্রধান অসুবিধা হলো ব্যথা এবং সেটা নির্ভর করে কোন্ জায়গার হাড় ভেঙেছে তার ওপর।
হাড়ের পরিমাণ কমে যাওয়া ও ভঙ্গুরতার প্রবণতা কাদের বেশি?
— ৪০ ভাগ ব্যক্তির হাড়ের পরিমাণ বা ঘনত্ব বংশানুক্রমিকভাবে নির্ধারিত হয়।
— ২০ ভাগ ব্যক্তির হাড়ের পরিমাণ বা ঘনত্ব নির্ধারিত হয় জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
— পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি ভোগে, বিশেষ করে যারা শারীরিক গঠনে পাতলা ও খাটো এবং বয়স্ক।
— প্রতি দু’জন মহিলার মধ্যে একজন ‘ওসটিওপোরোসিস’ রোগে ভোগে।
— প্রায় ২০ ভাগ মহিলা (ঋতুস্রাব বন্ধের পর) মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙায় ভোগে এবং পরবর্তী বছরে সাধারণত আরেকটি নতুন হাড় ভাঙে।
— কটির (হিপ জয়েন্ট) হাড় ভাঙা রোগীর ২০ ভাগ পরবর্তী বছর মারা যায়।
— মাত্র এক-তৃতীয়াংশ রোগী সুস্থ হয়ে প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে পারে।
— এশিয়া মহাদেশের মহিলারা এবং তাদের পরিবারের অন্যরা এই রোগে ভুগেছে।
— তাড়াতাড়ি বা অপারেশনের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছে যে মহিলাদের।
— ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী।
— ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
— শারীরিক পরিশ্রম কম করা।
— এন্ডোক্রাইন (গ্রন্থি) সমস্যা : পিটুইটারি, থাইরয়েড, এডরেনাল ও গোনাড।
— স্টেরয়েড ও এন্টিকনভ্যালসেন্ট ড্রাগ সেবনকারী।
— হেপারিন থেরাপি।
— রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগী।
— যক্ষ্মা রোগী।
— খাদ্যনালীর অপারেশন।
— খাদ্যনালীর রোগ—সিলিয়াক ডিজিজ।
— লিভারের (যকৃত) সমস্যা।
উপসর্গ
* প্রথমে পিঠে, কোমরে, ঘাড়ে ও পেশিতে অল্প ব্যথা হয়। পরে হঠাত্ করে তীক্ষষ্ট ব্যথা হয়। * এ ধরনের ব্যথা এক সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত বিদ্যমান হতে পারে। * অনেক ‘ওসটিওপোরোসিস’ রোগী হাড় ভাঙা না পর্যন্ত বুঝতে পারে না যে সে হাড়ের ক্ষয়, দুর্বল ও ভঙ্গুরতা রোগে ভুগছে। * মেরুদণ্ডের কশেরুকার উচ্চতা কমে যায়, রোগী সামনে ঝুঁকে থাকে এবং পেছনে কুঁজো হয় (কাইফোটিক ডিফরমিটি)। একে স্টুপেড আকৃতি বলে। * কশেরুকা ভাঙার ব্যথা মেরুদণ্ড থেকে শুরু হয়ে পিঠের দু’পাশ দিয়ে সামনের দিকে আসে এবং বুক ও পেটে অনুভূত হয়। * সাধারণত পড়ে গিয়ে হালকা আঘাতেই কটি ও কবজির হাড় ভেঙে যায়।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা
* সিরাম ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ডি এবং টেস্টটোস্টেরন, এন্ড্রোজন, ওসট্রোজেন ও থাইরয়েড হরমোন। * কিডনি ফাংশন (ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন)।
* এক্স-রে। * স্পেশাল টেস্ট : বোন মিনারেল ডেনসিটি, ডুয়াল এনার্জি এক্স-রে ও সিঙ্গেল এনার্জি এক্স-রে এবজোরসিওমেট্রি।
হাড় মজবুত রাখার উপায়
* উপযুক্ত ব্যায়াম—যেমন নিয়মিত হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা এবং ওজন বহন করা। * কিশোর বয়সে কায়িক পরিশ্রম করলে হাড়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হাড় মোটা হয়। ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড় ক্ষয় কম হয়। * সুষম খাদ্য এবং কিশোর বয়সে ১৩০০ মিলিগ্রাম, ৫০ বছর পর্যন্ত ১০০০ মিলিগ্রাম এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দৈনিক সেবন করা উচিত। * ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা। * হাড়ের পরিমাণ হ্রাস, দুর্বল ও ভঙ্গুরতা প্রতিরোধ বা চিকিত্সায় চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া এবং ওষুধ সেবন। * পড়ে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
চিকিত্সা
চিকিত্সা নির্ভর করে হাড়ের পরিমাণ হ্রাস, হাড়ের দুর্বলতা, ভঙ্গুরতা ও হাড়ের ভাঙার ওপর। এজন্য যা করা দরকার তা হলো :
— নিয়মিত ব্যায়াম করা।
— দৈনিক পরিমিত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সেবন করা।
— বিসফোসফোনেট : এলেনড্রোনেট, ইটিড্রোনেট ও রাইসড্রোনেট সেবন।
— হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি।
— রেলোক্সিফেন ও ক্যালসিটোনিন ইনজেকশন।
— হাড় ভাঙার জন্য কনজারভেটিভ বা সার্জিক্যাল চিকিত্সার প্রয়োজন হয়।
— ব্যথা নিরাময়ের জন্য এনালজেসিক ওষুধ সেবন করতে হবে।




১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×