স্বামীকে সম্মান শ্রদ্ধা করা ভাল কিন্তু অতিরিক্ত যে ভাল না, তা শুনা চাচি যানতেন না । ছোট বেলা থেকেই দেখে শুনে বড় হয়েছেন, স্বামীর নাম ধরে ডাকা নিষেধ, অমন কি মুখে উচ্চারণ করাও যেন পাপ ।
শুনা চাচি সব সময় নামাজ পড়তেন । নামাজ শেষ করতেন সালাম দিয়ে, আস সালামু আলাইকুম ওয়া করিম উল্লার বাপ ।
বড় ছেলের নাম ছিল করিম উল্লা, স্বামীর নাম ছিল রহমত উল্লা ।
শুনা চাচির সবচেয়ে বেশি সম্যসা হত নিয়ত পড়তে গিয়ে, মসজিদে ছোট বেলায় খুব কষ্ট করে নিয়ত পড়া শিখিয়ে ছিলেন, আর এখন বড় হয়ে ভুল হয়ে যায়, কোন ওয়াক্তের কোন নিয়ত পড়ছেন । ভুলের জন্য মাঝে মধ্যে দুই বার তিন বার নিয়ত পড়তে হয় ।
তবে শুনা চাচির সবচেয়ে কষ্ট হতো, সেজদার সময় । ছোট বেলায় শিখে ছিলেন, কি ভাবে মহিলারা নামাজ পড়তে হয় । কমর খুব নিচু রেখে, বুক প্রায় মাটির সাথে মিশে, হাত মাটির সাথে বিছায়ে যে ভাবে কুকুর বিছায়ে দেয় ।
এখন আমাদের সেই শুনা চাচি আগের সেই শুনা চাচি নন, এখন অনেক বদলে গেছেন । প্রথম ধাক্কা লাগে যখন বিদেশ প্রথম যান । ভিসা আনতে গিয়ে ইন্টারভিয়র সময় চাচার নাম বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছিল, এর পর থেকে চাচার নাম যেখানে বলতে হয় বলেন ।
শুনা চাচি নিয়মিত টেলিভিশন দেখেন, লাইভ অনুষ্ঠানের আলোচনা শুনেন ।
এক দিন শুনা চাচি শুনলেন, নামাজে নিয়ত পড়তে হয় না, ওই নিয়ত পড়া, ছোট বেলায় যা শিখে ছিলেন তা সব বানোয়াট বানানো, কোরান-হাদিসে এই সব নেই ।
প্রথমে শুনা চাচির কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল, পরে যখন নিশ্চিত হলেন, ওই বানানো নিয়ত পড়তে হবে না, শুধু অন্তরের মধ্যে ইচ্ছা থাকতে হবে, কোন কাজটা করবো । শুনা চাচির কি যে আনন্দ, যেন একটা ঝামেলা মুক্ত হলেন !
আর সে দিন শুনা চাচি জানলেন, যে অঙ্গভঙ্গিতে সেজদা দেন, সেই অঙ্গভঙ্গিতে সেজদা না দেওয়ার জন্য, সহী হাদিসের মাধ্যমে বলা হয়েছে ।
শুনা চাচি তো চিন্তা করে কোন কুল পান না, কেন তাঁকে এত কষ্ট করে সেজদা দিতে হত? কেন তাঁকে এভাবে শিখানো হলো যে ভাবে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ।
“সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ) ভারসাম্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়” : বুখারী-২য় খন্ড পাতা ১৪১