বিসিএস পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে হলে আপনাকে খুব ধৈর্য্যশীল হতে হবে। ফরম পূরণ থেকে শুরু করে চুড়ান্ত নিয়োগ পর্যন্ত প্রায় দুই আড়াই বৎসর লেগে যায়। এই সময়টুকু অনেকে ধৈর্য্যহারা হয়ে যান। আপনি প্রথমেই কিন্তু বিসিএসকে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা কল্পনা করে প্রস্তুতি নিতে থাকবেন। ফরম পূরণটাই একটা পরীক্ষা। অনেকে যথাযথভাবে ফরম পূরণ করে না বিধায় শুরুতেই বাদ পরে যায়। মনোযোগ দিয়ে নির্দেশাবলি পড়ে তারপর ফরম পূরণ করবেন। প্রয়োজনে আবেদনপত্রটি ফটোকপি করে নির্দেশাবলি অনুসরণে পূরণ করুন। তারপর মূল ফরমটি পূরণ করুন।
স্বপ্নের বিসিএস পরীক্ষার প্রথম বাধা হচ্ছে প্রিলিমিনারী পর্ব। ১০০ নাম্বারের মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন পদ্ধতির এ পর্বেই ৮০%-৮৫% ঝরে যায়। বর্তমানে আবার ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নাম্বার কাটা যাওয়ার বিধান যুক্ত হয়েছে। তাই নিশ্চিত না হয়ে আন্দাজে কোনো উত্তর দিতে যাওয়া আত্মহত্যার শামিল।
৬০ মিনিটে ১০০ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে বৃত্ত ভরাট পর্যন্ত প্রতিটি প্রশ্নে সময় আধামিনিটের মতো। তাই চিন্তাভাবনার সময় থাকেনা। আপনি ১ নাম্বার প্রশ্ন থেকে উত্তর দেওয়া শুরু করুন। ক্রমান্বয়ে উত্তর দিয়ে যান। কোনো প্রশ্নে আটকে গেলে স্কিপ করে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যান। সবগুলো উত্তর শেষ করে সময় থাকলে স্কিপ করে যাওয়া প্রশ্নগুলো নিয়ে আবার ভাবুন।
প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন করা হয় বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্য। এরকম কোনো প্রশ্ন থাকলে খুব সতর্কতার সাথে উত্তরগুলো দেখুন। লক্ষ্য করবেন একটি উত্তর কিছুটা ব্যতিক্রমী। এটিই প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর।
বাংলা বানান রীতি ভালোভাবে জানুন। প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় এটিতো কাজে লাগবেই, লিখিত পরীক্ষায়ও কাজে লাগবে। বানান ভুল সর্বস্ব একটি খাতা পরীক্ষকের বিরক্তির কারণ। ইংরেজির ক্ষেত্রেও নির্ভুল বানান প্রয়োগ করুন। এগুলো চর্চা করেই আয়ত্ত্ব করতে হবে।
প্রিলিমিনারী পরীক্ষা পাশ করলে আপনি লিখিত পরীক্ষার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক পরীক্ষা দিয়েছেন শিক্ষা জীবনে। বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে আপনার অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের পরীক্ষা। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন ধারাবাহিকভাবে।
আপনার জ্ঞান অর্জনের একটা স্পৃহা থাকতে হবে এ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চাইলে। মনে করুন কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন। হাতের কাছে পুরাতন একটি পেপার আছে। এটির সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় কলামগুলো পড়ুন। এটি নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবুন। নিজে নিজে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন। আন্তর্জাতিক সংবাদগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। বিশ্ব পরিস্থিতি এখন কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে তা নিয়ে ভাবুন। আপনার ভাবনা নিয়ে বন্ধু বা সহকর্মীর সাথে আলোচনা করুন। অথবা আপনি নিজেই ডায়েরী লিখতে পারেন। অনিয়মিত হলেও ডায়েরী লিখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে এ ডায়েরীর উপজীব্য হবে আপনার বিসিএস প্রস্তুতি সংক্রান্ত। ব্যক্তিজীবনের কোনো কিছু এ ডায়েরীতে না লিখাই ভালো।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশ নিবেন। এ অংশটি খুব মজার। মানসিক বুদ্ধিমত্তা যাচাই করাই এই পরীক্ষার কাজ। মানসিক বুদ্ধিমত্তা অর্জনে আপনাকে খুব সচেতন থাকতে হবে। সোজা কথায় মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় আপনার ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে সজাগ রাখতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার উপর বাজারে বিভিন্ন গাইড বই পাওয়া যায়। এগুলো থেকে চর্চা শুরু করে দিতে পারেন।
পত্রিকায় শব্দজট, ধাঁধা, পাজল- এ জাতীয় অনেক কিছু থাকে। এগুলো মিলানোর চেষ্টা করুন। বাংলা পত্রিকার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন। বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকার সাময়িকী বা বিশেষ সংখ্যা পড়ুন। কোনো লেখা ভালো লাগলে তা অনুবাদ করুন এবং ব্লগে বা ফেসবুকে শেয়ার করুন।
বিসিএস পরীক্ষায় সবচেয়ে কঠিন বৈতরনী হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। কারণ মৌখিক পরীক্ষায় আপনাকে কোন দিকে দিয়ে যে ধরবে বুঝার উপায় নাই। তবে যে ক্যাডারকে আপনি প্রথম পছন্দ করেছেন সেই ক্যাডারের বিষয় সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। যেমন- আপনার প্রথম পছন্দ যদি হয় পুলিশ ক্যাডার, তাহলে এই ক্যাডার বিষয়ে আদ্যোপান্ত জানুন। প্রশাসন ক্যাডার, ফরেন ক্যাডার, কাস্টমস ক্যাডার...এরকম ২৯ টি ক্যাডার আছে। আপনার প্রথম পছন্দের ৩/৪টি ক্যাডার বিষয়ে ভালো ধারণা রাখুন।
অনেক সময় আপনার বিষয়ের উপর কোনো প্রশ্ন ধরতে পারে। মনে করুন আপনার বিষয় দর্শন। আপনাকে দর্শনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করা হলো। আপনি একজন বিখ্যাত দার্শনিকের সংজ্ঞা মুখস্ত বলে দিলেন। প্রশ্নকর্তা আপনাকে জিজ্ঞেস করলেন এটা কার সংজ্ঞা। আপনি অবলীলায় বলে দিলেন এটা ওমুক লেখকের সংজ্ঞা। প্রশ্নকর্তার মনে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে। তাই আপনার অধীত বিষয়টি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে আপনি নিজেই সংজ্ঞা তৈরি করুন এবং সেটা বলুন। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিবেন এটা আপনার ধারণা।
মৌখিক পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে বিনয়ের সাথে জানাবেন যে আপনি তা জানেন না। উল্টাপাল্টা উত্তর দিয়ে প্রশ্নকর্তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। আপনি ভাববেন ভাইবা বোর্ডে যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই অনেক মেধাবী। ইংরেজিতে কোনো প্রশ্ন করলে ইংরেজিতেই উত্তর দিবেন আত্মবিশ্বাসের সাথে। ইংরেজিতে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারলে ইংরেজিতেই বলুন যে এটা আপনি ইংরেজিতে বলতে পারবেন না। বাংলায় বলার অনুমতি চাইতে পারেন।
মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর তেমন ঝামেলা নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন। পুলিশ ভেরিফিকেশন এর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আপনার সব তথ্য দিন। এক্ষেত্রে তারা আগেই আপনার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে রাখতে পারে। বাসায় সবাইকে বলে রাখুন যাতে আপনি না থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা এলে যাতে সহযোগিতা করা হয় তথ্য দিয়ে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত হাসপাতালে উপস্থিত থাকবেন।
শেষ কথা হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আপনার একটি কৌতুহলী বিজ্ঞানমনস্ক মন থাকতে হবে। এ মনটাকে আপনি প্রস্ফূটিত করবেন ধীরে ধীরে। দীর্ঘ দুই তিন বছরের প্রস্তুতি নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আপনি এগিয়ে যেতে থাকুন। আপনি ইষ্পাত দৃঢ় মানসিকতা রাখুন যে আপনি পারবেন। তবেই দেখবেন আপনি ক্যাডার সার্ভিসে একজন দক্ষ অফিসার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন।
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- প্রস্তুতি নিতে থাকুন এখন থেকেই