somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

পাতার জীবন

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাছ থেকে একটি পাতা ঝরে পড়ল।
‘একশ ঊনিশ, একশ ঊনিশ, একশ ঊনিশ’ গণতে লাগল পাশে পড়ে থাকা আরেকটি পাতা।
ঝরে পড়া পাতাটি বলল, কিছুই ত বুঝতে পারছি না? কী গণনা করছ এমন করে?’
‘তুমি, ঝরে পড়া একশ ঊনিশতম পাতা। মানে তোমার আগে আরো একশ আঠারোটি পাতা এখানে পড়ে আছে। আর তোমার পরে যে পাতাটি পড়বে তার নম্বর হবে একশ কুড়ি। বুঝতে পেরেছ তুমি?’
‘এভাবে ঝরে পড়া পাতাদের গণে আর লাভ কী ভাই। আমাদের জীবনের কি কোন দাম আছে?’ কষ্টের নিঃশ্বাস ফেলে বলল পাতাটি।
‘আমার মনে হয় এখনও আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।’
‘এতদিন আলো-বাতাস থেকে খাদ্য তৈরি করে দিতাম গাছকে। আমাদের ছায়ায় কত পোকা-মাকড়, পশু-পাখি এমন কি মানুষেরাও বসে আরাম পেতো। এখন মাটিতে মিশে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কী উপায় আছে বলো! কারোর কোন উপকারে আসতে না পারলে জীবনের কোন মূল্য-মর্যাদা থাকে না। এ আমার অনেক বড় কষ্ট!’ বলল পাতাটি।
সংখ্যা গণনাকারী পাতাটি বলল, ‘আহা, আমরা কারো না কারো উপকারে আসতেও তো পারি।’
‘সেটা কীভাবে, একটু খোলাসা করে বলতো ভাই।’ জানতে চাইল পাতাটি।

২.
‘শোনো, প্রতিদিন সকালে একটি ছোট্ট মেয়ে টুকরি আর ঝাড়ু নিয়ে এখানে আসে। মেয়েটি গাছের তলে পড়ে থাকা পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে যায় বাড়ি। মেয়েটি আবার সকালে আসবে। তখন আমরা মেয়েটির টুকরিতে চড়ে চলে যাব তার বাড়ি। তার কোনো না কোনো কাজে লাগব আমরা। কি মজা হবে তখন!’ খুশি হয়ে বলল পাতাটি।
‘আচ্ছা আমরা তার কী কাজে লাগতে পারি?’
‘মেয়েটি শুকনো পাতা নিয়ে চুলোয় দেয়। সেই আগুনে তাদের রান্নাবান্নার কাজ চলে। ছাইগুলো জমিতে ফেলে। আর ফসল ফলে ভাল। মানুষের কত বড় উপকার হয়, এটা কি কম কথা?’

‘তাইতো! নিজেকে পুড়ে অন্যের উপকার করা যাবে। বাহ খুব চমৎকার। তবে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তাই না? উফ্ অপেক্ষা বড়ো বাজে জিনিস, সময়গুলো মোটেও কাটতে চায় না।’
একে একে অনেক পাতা পড়ে আছে গাছের তলে। শুকনো পাতারা নিজেদের মধ্যে এমনই অনেক কথা বলাবলি করছে। তারা অন্যের উপকারে এসে নিজের জীবন ধন্য করতে চায়।

সকালে ছোট্ট মেয়েটি এসে ঝাঁট দিয়ে গাছের পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু সেই পাতাটি পড়ে রইল যে পাতাটি খুব আফছুছ করছিল। সে চিৎকার করে বলছে, ‘আমাকে নিয়ে যাও। তোমরা আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারো না, নিয়ে যাও।’
কে শোনে কার কথা?
মন খারাপ করে পড়ে রইল পাতাটি।

৩.
পাতাটি শুকিয়ে বাঁকা হয়ে আছে। একে একে আরো অনেক পাতা পড়ে আছে মাটিতে। তার মন ভাল নেই। তাই সে কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপ বসে রইল।
সে ভাবছে, ‘আমি কি এভাবেই এখানে পড়ে থাকব, আমি কি কারও কোনো উপকারেই আসতে পারব না, ছিঃ এ আমার কেমন জীবন!’
এমন সময় এক কবি যাচ্ছিল এ পথ ধরে। কবির পায়ের তলে পড়ল সেই শুকনো পাতাটি। মরমর মচ্মচ্ শব্দ হলো। থমকে দাঁড়ালো কবি। তিনি পা তুলে ধীরে ধীরে বসে পড়লেন পাতাটির কাছে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া পাতার টুকরোগুলো হাতে তুলে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন কবি। আর বলে উঠলেন,
‘শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি ভেঙ্গে দিলো আমার ধ্যান
পাতা ভাঙ্গার শব্দের ভেতরে, পেয়েছি আনন্দ জ্ঞান।’
শুকনো পাতার টুকরোগুলি কবির হাতে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। বলল হে কবি, ‘আমাকে বিচূর্ণ করে কী জ্ঞান আর আনন্দ লাভ করেছ তুমি?’
আমার মনের ভেতরে একটা দুখের স্মৃতি খেলা করছিল। মন থেকে তাকে সরাতে পারছিলাম না। কিন্তু শুকনো পাতা ভাঙ্গার শব্দে সেই দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো এবং আমি নতুন এক চিন্তার খোরাক পেয়ে গেলাম। আমি কবি, আমি শুকনোপাতার মর্মরধ্বনির ভেতরের সৌন্দর্য লেখায় প্রকাশ করে দেব। আর তুমি হয়ে যাবে অমর। ধন্যবাদ হে শুকনোপাতা।

শুকনোপাতার টুকরোরা আনন্দে টগবগ করতে করতে বলল, অতঃপর তুমি সার্থক করেছ আমাদের জীবন। ধন্যবাদ, হে মহান কবি।



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×