somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

শিশুতোষ রম্যগল্প: ভূত ঢুকেছে বইমেলাতে

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যার পর বইমেলার এক কোণে একটা গাছের তলে বসে জম্পেস আড্ডা দিচিছল কয়েকজন। তারা সবাই অংকন শিল্পী। কে কতো বইয়ে ছবি এঁকেছে এসব নিয়ে কথা বলছিল তাঁরা। আর ফাঁকে-ফাঁকে ঝালমুড়ি ছুড়ে মারছিল মুখে। তার সাথে ক্যাঁৎ ক্যাঁৎ, কোঁৎ কাঁৎ হোঃ হাঃ করে হাসি।

হঠাৎ হাসি থেমে গেল। মুড়ি চিবানো বন্ধ। সবাই হা করে উপরের দিকে তাকিয়ে রইল। ভয়ে শিল্পীদের কলজে শুকিয়ে কাঠ।
তাঁদের মাথার ওপরে গাছ, তার উপর দিয়ে মাথা বের করে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল জন্তু। এমন জন্তু এরা জীবনেও দেখেনি!
জন্তুটি গমগম আওয়াজ করে বলল, তোরা কারা?
আমরা অংকন শিল্পী, ছবি আঁকি।
কীশের ছবি আঁকস তোরা?
ভূত, পেত্নী, চান-সুরুজ এই আর কি!
তোরা ভূত দেখেছিস?
নাহ্।
তাহলে ভূতের ছবি আঁকস কিভাবে?
এই ধরেন গিয়া লেখকেরা লেখে গল্প। তা-ই পড়ে মোটামুটি একটা আইডিয়া লই। ভূতের ছবি যত ভয়ংকর ততই তার ডিম্যাণ্ড।
জন্তুটা বলল, বল আমি কে?
আপনি যে একজন অতি সম্মানিত একটা প্রাণী তাতে কোনো সন্দেহ করি না আমরা।
আমিই ভূত। এখন আমার ছবি আঁক।
এ কথা শুনে অংকন শিল্পীদের কাপড় ভিজে গেল। একজন বলল, ভয়ের মধ্যে ছবি আঁকা সম্ভব না।
তোরা ভয়ংকর ছবি এঁকে আমাদের অনেক ক্ষতি করছিস। আমরা বাইরে বেরুতে পারি না। তোদের একটু ভয়ংকর বানিয়ে দেখি কেমন মজা হয় বলেই ভূতটা মন্ত্র পড়ে ওদের পেছনে জোরে একটা ফু দিল। একি!! সাথে সাথে লেজ গজাতে শুরু করল। গরুর লেজের চেয়েও লম্বা। কারোরটা ঘোড়ার লেজের মতো। একজন আরেক জনের লেজ দেখে দুঃখের মধ্যে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। আর ভাবতে লাগল আমরা এই লম্বা লেজ নিয়ে এখন কী করব!

দুই.
ভূতটা বলল, এখন বইমেলাজুড়ে হেঁটে বেড়াবি তোরা, যা হাঁট।
ভূতের ভয়ে ওরা মেলার ভেতরে হাঁটতে লাগল।
শিশু-কিশোররা লেজওয়ালা শিল্পীদের দেখছে আর পেছনে হৈ হৈ করছে।

শিল্পীরা অভিমানে বলল, আমারা ছবি আঁকি এতেই লেজ গজিয়ে গেল। লেখকদের জন্য কী ব্যবস্থা?

ভূতটা বলল, লেখক কোথায়, দেখা আমাকে।
শিল্পীরা দুই হাতের দশ আঙুলে লেখক আড্ডার জায়গাটা দেখিয়ে দিল।

লেখকেরা তখন আড্ডা মারছে, কেউ অটোগ্রাফ দিচ্ছে। কেউ বা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে।
ভূত সেখানে গিয়ে হাজির।
লেখকেরা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভূতকে একনজর দেখে টাশকি খেয়ে গেল। যে যেভাবে কথা বলছিল, যেভাবে হাসি দিয়েছিল, যেভাবে কলম ধরেছিল সেভাবেই বসে রইল।
ভূতটি বলল, তোরা কারা?
আমরা শিশুসাহিত্যিক।
কী করিস তোরা?
শিশুদের বই লিখি। তবে ভূতের গল্পই বেশি লিখি আমরা। মেলায় ভূতের বই বেশি চলে। বিশ্বাস না করলে কয়েকটা স্টল ঘুরে দেখতে পারেন। (ভূত খুশি হবে ভেবে একটু বাড়িয়ে বললেন তাঁরা)।
ভূত দেখেছিস তোরা?
না, ভূত পাবো কই?
আমি ভূত। আমাকে নিয়ে এখন গল্প লিখ্।
কিছুতেই সম্ভব নয় জনাব। একজন হাঁটু দুটি জোরে ঝাকি দিয়ে বলল, দেখেন না, আপনার ভয়ে ক্যামনে কাঁপছি, থত্থর!
আমাদের নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখছিস আর পাবলিক আমাদের যেখানে পায় সেখানেই আগুন দেয়। ওঝা বৈদ্য ডাকে, তাবিজ কবচ করে। আর ধরতে পারলে পিটিয়ে ছাতু বানায়। তোরা মানব সমাজে আমাদের এমন ভয়ংকর আর নির্মম করে তুলেছিস যে, আমাদের চেয়ে খারাপ প্রাণি পৃথিবীতে নেই। তোদের লিডার কে বল।
সবাই যাকে দেখালো তিনি একজন সম্মানিত ও জনপ্রিয় লেখক। তাঁর প্রাণ যায় যায়!

চার.
তোরা একটু ভূত হয়ে দেখ কেমন লাগে বলেই ভূতটা নাকটা ধরে ফোঁস করে টান মেরে দেড়ফুটের মতো লম্বা করে দিল। কান দুটি টেনে কুলার মতো করলো, ভ্রু টেনে সামনে এনে বারান্দার মতো ঝুলিয়ে দিল, ঠোঁট টেনে নিচে নামিয়ে রাখল, মাথায় চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা করে ফেলল, দুই কাঁধ দুদিকে টেনে সাংঘাতিক ভয়ংকর করে দিল।
ভূত একটা ভেংচি মেরে বলল, এখন মেলাজুড়ে ঘুরে বেড়াবি, যা হাঁট।

ওরা হাঁটতে লাগল। মেলার লোকজন ভিড় ঠেলে ওদের দেখে খুব মজা করতে লাগল। লেজওয়ালা আর অদ্ভুত চেহারার দুই দল প্রাণি ঘুরছে মেলায়। আনন্দ আর ধরে না।


পাঁচ.
বইয়ের বেচা-কেনা হচ্ছে নাÑখালি হাঙ্গামা হচ্ছে।
প্রকাশকেরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের লোকসানের কাহিনী শুনিয়ে বললন, এ অব্যবস্থাপনার জন্য মেলাকর্তৃপক্ষই দায়ী। আমরা কোর্টে যাবো। আমরা এখানে মেলা করতে এসেছি, কৌতুক করতে আসিনি।

এ ঘোষণায় মেলা কর্তৃপক্ষ পড়ে গেলেন ভীষণ ফ্যাসাদে। তারা কী করবেন কিছুই ভেবে না পেয়ে শেষে লেখক-শিল্পীদের কাছে গেলেন। লেখক-শিল্পীরা বলে দিলেন, কোনো চিন্তা করবেন না আপনারা। লোকসান খালি আপনাদের না, আমাদেরও। আগামীকাল থেকে মেলায় লোকসংখ্যা হবে আরো বেশি। আপনারা নিশ্চিন্তমনে গিয়ে ঘুমান। দেখেন আমরা কী করি!
প্রকাশকেরা বলল, কী করবেন আপনারা শুনি?
দেখুন আমরা লেখক-শিল্পী মানুষ। লেখা আর আঁকা দিয়ে জগৎটাকে ওলটপালট করে দিতে পারি। ভূতকে মানুষ আর মানুষকে ভূত বানানোর বিদ্যা আর কলাকৌশল আমাদের জানা আছে। আর মেলার এ সমস্যা তো ছাই।

ছয়.
লেখক আর শিল্পীরা পরের দিন পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলেন, ’গতকাল হঠাৎ করেই বইমেলা ভূতের মেলায় পরিণত হয়েছিল। এবং আমরা ভূতের মেলায় ভূতের সাথে সাংঘাতিক রকমের আনন্দ-ফুর্তি করেছি, আমাদের সাথে পাঠক, দর্শক, শিশু, অভিভাবকেরাও মজা করেছেন, সেলফি তুলেছেন। এ বিরল আনন্দ চলবে মেলা চলাকালীন। এটা পাঠক-ক্রেতাদের জন্য আমাদের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।”
ব্যস, এ বিজ্ঞাপণ সকল পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে প্রকাশিত হলো।
পরের দিনগুলোতে মেলায় এতই ভিড় আর বিক্রি বেড়ে গেল যে কর্তৃপক্ষকে মোতায়েন করতে হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩৭
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×