somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

ছোট্ট পরী বাংবাং

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ঘরে যেদিন পরীটা এসেছিল সেদিন আমাদের আনন্দের সীমা ছিল না। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একটা পরী এসে বসে পড়লো আমাদের ড্রইং রুমের ছোট্ট চেয়ারে। আমরা তো অবাক! একটু একটু করে পা বাড়িয়ে তার কাছে গেলাম। কি তার রূপ আর কি তার রঙ! আমাদের আনন্দ দেখে কে! পাশের বাড়ির ছোট বড়ো সবাই ছুটে এলো পরী দেখতে। কেউ পরীর হাতটা, পাখাটা ছুঁয়ে দেখছে। মনে হলো নতুন বউ দেখছে তারা। আমরা পরীটাকে নিয়ে অনেক কথা বলতে লাগলাম।

পরীকে বললাম, ‘আমরা এত এত কথা বলছি আর তুমি তো কোন কথাই বলছ না। তোমার নামটাও তো জানা হলো না। ব্যাপার কি বলো তো!’
‘আমার নাম বাংবাং। বিরাট বিপদে পড়ে এখানে চলে এসেছি। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।’ পরীটা বেজার মুখে পিনপিন করে বলল আমাকে।
‘বিপদ? কী বিপদ তোমার, বলো।’ আদর করে বললাম তাকে।
‘আমি পড়ি ক্লাস এইট-এ। আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চায় আমার মা-বাবা। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। বর আসবে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবার মুখে হাসি। বিয়ে পড়ানোর আগে চাঁদের আলোতে বিয়ের পোশাক পরে গোসল করে নিতে হয়। আমি গোসল করার কথা বলে সোজা চলে এসেছি এখানে। তোমরা আমাকে যদি আশ্রয় না দাও তাহলে আমি যে দিকে চোখ যায় সে দিকে চলে যাবোÑতবুও বাড়ি ফিরব না। আমি পড়ালেখা করবো, এখন বিয়ে করতে চাই না।’ চোখের পানি ফেলে বলল পরীটা।

আমার বুকটা ধক্ করে উঠল ছোট্ট পরীর কথা শুনে। আমি মায়া করে বললাম, ‘কোন চিন্তা করো না। তুমি এখানেই থাকবে, খাবে আর পড়বে। আমরা তোমাকে মোটেও তাড়িয়ে দেব না।’
তখন পরীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। মনে হলো পরীর মুখে চাঁদ হাসছে। অনেক সুন্দর সেই হাসি।

ওম্মা, এক রাতে দেখি আমাদের বাড়িতে অনেক পরী এসে ঘোরাফেরা করছে। পরীগুলো বেশ বড়। তাদের দেখে ছোট পরী বাংবাং ভয়ে ভয়ে আমাকে ফিসফিস করে বলল, ‘এই দেখো, আমার মা-বাবা আর আতœীয়-স্বজনেরা চলে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে আমাদের পরীরাণীকেও। আমাকে নিয়ে যাবে ওরা। আমাকে বাঁচাও।’ সে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখল।
আমি বললাম, ‘তুমি এত ছটফট করছো কেন? চুপ করে বসে থাকো তো, দেখি কী বলে তারা।’

পরীর মা আর বাবা বলল, ‘আমরা মেয়েটাকে খুঁজছি কয়েকদিন ধরে। খবর পেলাম সে এখানে। আমরা তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। বিয়ের অনুষ্ঠান হতে সে পালিয়েছে। এটা খুবই অন্যায় আর অসম্মানের ব্যাপার। আমরা তাকে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবো। আমাদের সঙ্গে আমাদের রাণীও এসেছেন।’
মা বাবার মুখে এসব শুনে বাংবাং আমার কোলে মাথা লুকিয়ে চিঁচিঁ করে কাঁদতে লাগল।
আমি বললাম, ‘এই বয়সে বিয়ে দিলে কী কী ক্ষতি হয় আপনারা জানেন কি?
পরীরা চোখ বড় করে বলল, ‘ক্ষতি? বিয়ে দিলে ক্ষতি হবে কেন? এমন আচানক কথা তো জীবনেও শুনিনি আমরা!’
আমি তখন সব বুঝিয়ে বললাম। ‘এখন তার লেখাপড়া করার সময়। সে অনেক বড় হবে। এ বয়সে বিয়ে দিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তার।’
পরীরাণী বললেন, ‘আমাদের এত ভয় দেখাচ্ছ কেন? তোমাদের মধ্যেও তো বিয়ে হয় ছোট থাকতে, তখন?’
‘হয়, তবে আর হতে পারবে না,’ বললাম আমি। আমি তখন আমাদের শিশুদের অধিকার আর শিশু আইন দেখিয়ে বললাম, ‘এই দেখো কত সুন্দর আইন হয়েছে আমাদের। এখন শিশুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করানো যাবে না। বড়রা যদি জোর করে শিশুদের দিয়ে কিছু করাতে বাধ্য করে তখন অনেক বড় শাস্তির ব্যবস্থা আছে এই আইনে। শিশুদের নির্যাতন করা যাবে না। এই দেখো কত বড় শাস্তির বিধান, পাঁচ বছরের জেল আর এক লাখ টাকা জরিমানা।’
পরীরাণী মন দিয়ে আইন-কানুন দেখল। তারপর বলল, ‘আমরা তো এত কিছু জানতাম না। এ-তো দেখছি অনেক সুন্দর ও উপকারী আইন!’

‘আমরা এমন আইন করি না কেন রাণীমা!’ অন্য পরীরা রাণীর দিকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘রাণীমা, আমাদের রাজ্যে কি এমন কিছু আইন করে শিশুপরীদের ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর ও আনন্দময় করে দিতে পারি না!’

‘অবশ্যই পারি,’ বললেন রাণী, ‘না জানার কারণে আমরা শিশুদের অনেক ঠকিয়েছি, তাদের অনেক পেছনে ফেলে রেখেছি। আর নয়, শিশুদের অধিকার আর কল্যাণের জন্য নিশ্চই কিছু করব আমি। কারণ শিশুরাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ।’

পরীরা ছোট পরীকে নিয়ে চলে গেল। রাণী শিশুদের জন্য নতুন আইন জারি করে দিলেন। অনেক আনন্দে আছে পরীরাজ্যের শিশুরা ও ছোট্ট পরী বাংবাং।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×