বাংলাদেশী পোশাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোটা আরোপের চিন্তা
গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূস ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতির জের
বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিয়ন্ত্রণে কোটা আরোপের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জুলাই মাস থেকেই কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে। এর মাধ্যমে যেসব ক্যাটাগরির তৈরী পোশাক অধিক সংখ্যায় আমদানি হয় সেগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে। এ লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক ইসুøতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সম্পর্কের অবনতির জের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এখনো তেমন কিছুই জানেন না। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সবচেয়ে শ্রমঘন তৈরী পোশাক শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে, রফতানি বাণিজ্যে ৭৬ শতাংশ অবদান রাখা বাংলাদেশী তৈরী পোশাকের এককভাবে সর্ববৃহৎ বাজার আমেরিকা। মোট রফতানির ১০ শতাংশেরও বেশি আয় হয় সে দেশ থেকে। সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে রফতানি আরো বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার এবং পোশাক রফতানিকারকরা সে দেশের বাজারে কিছু শুল্ক রেয়াত সুবিধা পেতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। সাব-সাহারান দেশগুলোর মতো শুল্ক সুবিধা পেতে লবিস্ট নিয়োগ করে তাদের পেছনে খরচ করা হয়েছে লাখ লাখ ডলার। এসংক্রান্ত একটি বিল দীর্ঘদিন ঝুলে আছে মার্কিন কংগ্রেসে।
কিন্তু ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপড়েনে বাড়তি কোনো শুল্ক সুবিধা পাওয়া তো দূরের কথা, প্রতিযোগিতা করে পণ্য রফতানির সুযোগও হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন চিন্তা অনুযায়ী, যেসব এইচএস কোডের পোশাক বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যায় আমেরিকায় রফতানি হয় সেগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক নির্যাতন, কর্মপরিবেশ এবং কম মজুরিসহ বিভিন্ন ইসুø দেখানো হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজও তারা ইতোমধ্যে করেছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের পোশাক রফতানিকারকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত সস্তা শ্রমিক থাকায়ই বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা তুলনামূলক কম দামে পোশাক রফতানি করতে পারেন। গ্যাস-বিদুøৎ ও অবকাঠামো সমস্যা না থাকলে এ সুযোগ আরো বাড়ত বলে তাদের ধারণা। তাদের মতে, দুর্বল মার্কেটিং ও লিডটাইমসহ নানা জটিলতায় বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা উপযুক্ত মূল্য আদায় করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রের রাষ্ট্রের সুনামও একটি সমস্যা। ব্যবসায়ীরা জানান, উপযুক্ত ডিজাইনার ও নতুন নতুন ফ্যাশনের পোশাক তৈরিতে অভ্যস্ত না হওয়ায় আমাদের মাত্র কয়েকটি পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। পণ্যের বহুমুখীকরণ আমাদের নেই বললেই চলে। ট্রাউজার, সোয়েটার, শার্ট ও টিশার্টসহ কয়েকটি পণ্যের মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ। স্বাভাবিক কারণেই এসব এইচএস কোডের পোশাক বাংলাদেশ থেকে বেশিসংখ্যায় রফতানি হয়। এগুলোর সংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী পোশাকের সংখ্যার ওপর কোটা নির্ধারণের উদ্যোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। গত রাতে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এ ধরনের কোনো খবর এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। তবে ডাম্পিংসহ কয়েকটি কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বাংলাদেশের রফতানিবাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অপর সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুল হক গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিওটিও) নিয়মানুযায়ী কোনো দেশ চাইলেই এখন আর কোটা নির্ধারণ করে দিতে পারবে না। তবে বিশেষ কোনো কারণ দেখিয়ে আমেরিকা যদি এ কাজটি করেই ফেলে তবে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব। কারণ আমেরিকা কেবল আমাদের সবচেয়ে বড় বাজারই নয়, আমেরিকার চিন্তাভাবনার ওপর আরো অনেক কিছুই নির্ভর করে।
রফতানিকারকদের ৪২টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সদ্য বিদায়ী সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তবে তাদের হাতে অনেক সুযোগই রয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আইনে সুযোগ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র চাইলে তাদের জন্য অজুহাতের অভাব হবে না। তিনি বলেন, কমপ্লায়েনস ইসুøতে আমাদের নানা সমস্যা রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ আমাদের বড় একটি সমস্যা। স্বল্প মজুরি তো রয়েছে, বাংলাদেশে শ্রমিক নির্যাতন হয় বলে তারা বিভিন্ন সময় বলার চেষ্টা করেছে। এসবের যেকোনো একটিকে ইসুø করে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
ড. ইউনূস ইসুøতে সৃষ্ট সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে চিংড়িসহ হিমায়িত খাদ্য রফতানির ওপর নানামুখী বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে জানান তিনি। সম্পর্কের উন্নতি না হলে অপরাপর পণ্যের ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
রিপোর্টারঃ জিয়াউল হক মিজান।
Click This Link
**********************************
শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ ব্যাক্তি আক্রোশের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় উৎস গার্মেন্টস পণ্যর রপ্তানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রে কমার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে। ডঃ ইউনুসকে হাসিনার হেনস্থা ও অপমান করাকে ভাল ভাবে নেয় নি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বাইরে যেখানে শেখ মুজিবকে কেউ চিনেই না সেখানে ডঃ ইউনুসকে পৃথিবীর বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ একনামে চিনে যে তিনি বাংলাদেশী। এটা নিয়ে হাসিনার ঘুম হারাম। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হতে সরিয়ে দিয়ে ব্যাক্তিগত ঝাল মিটালেও পুরো বাংলাদেশ এর বিরুপ প্রভাব মোকাবেলা করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উৎপাদিত গার্মেন্টস পণ্যের ৬০% ক্রেতা। এখন মার্কিন কংগ্রেসে যদি সত্যি সত্যিই কোটা আরোপ করে তো বহু গার্মেন্টস বন্ধ সহ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হবে। ইতিমধ্যে চিংড়ি ও হিমায়িত খাদ্যের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে ইউরোপও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা স্রেফ ডঃ ইউনুসের জন্যই। এতে করে ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন স্বল্পন্নোত দেশ বাংলাদেশের বাজার দখল করে ফেলবে। ১৯৭২-৭৫ বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছিল মুজিব সরকার এবার তার কন্যার অহেতুক ব্যাক্তি হিংসা বাংলাদেশের রপ্তানির উপর খড়গ নামিয়ে আনছে। যদি আমেরিকা ও ইউরোপ বাংলাদেশ হতে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয় তাহলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:৩০