somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Objective, Burma! (1945) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রোমাঞ্চকর অভিযান মূলক এবং উপভোগ্য মূভি।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষের পর্যায়ে। এতদিন জাপানকে কোনমতে ভারতবর্ষে প্রবেশ এবং দখল করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছিল বৃটিশ সামরিক বাহিনী। কিন্তু এশিয়া প্যাসিফিকে মার্কিন বাহিনীর হাতে মার খেয়ে নড়বড়ে হয়ে যায় আগ্রাসী জাপানী বাহিনী। শুরু থেকে চীনের পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ হতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বার্মা পর্যন্ত দখল করে নেয় জাপানীরা। তাই বৃটিশ ও মার্কিনিদের যৌথ বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় এবার তারা এই অঞ্চলে এবার পাল্টা হামলা শুরু করে স্থল সেনা অভিযান চালিয়ে বার্মা হতে পর্যায়ক্রমে সব জাপানী দখলকৃত দেশ ও অঞ্চল মূক্ত করবে। এই মূভিটির নাম Objective, Burma! ১৯৪৫ সালের তৈরি এই মূভিটিতে দেখানো হয় যে অভিযান চালানোর প্রাথমিক বাধা হল জাপানীদের একটি রাডার ষ্টেশন। এটাই যৌথ বাহিনীর অবজেক্ট। তাই মূভিটির নাম অবজেক্টিভ বার্মা। এই ষ্টেশনের মাধ্যমে জাপানীরা যৌথ বাহিনীর আক্রমণ বিশেষ করে অনেক গুলো পরিবহন বিমান(৫০টির বেশী) গুলিকে সনাক্ত করে তাদের ফাইটার বিমান দিয়ে রুখে দিতে পারবে। অথবা যৌথ বাহিনীর যথেষ্ঠ ক্ষতি করে সাফল্যর পরিমাণ কমে যাবে। তাই এই ঝুকি এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয় উক্ত জাপানীজ রাডার ষ্টেশনকে ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু জাপানীদের দখলে থাকা সীমা হতে প্রায় ২৫০ মাইল বার্মার গভীরে রাজকীয় ফাইটার বা মার্কিন বিমান হতে সেই ষ্টেশনটি ধ্বংস করা সম্ভব না। কারণ চতুর জাপানীরা জঙ্গলের মধ্যে এই ষ্টেশনটাকে আড়াল করে রাখছে যদিও যৌথ বাহিনী জানে কোন এলাকায় এর অবস্থান। যৌথ বাহিনীর রিকনাসেন্স বিমান অনেক চেষ্টা করেও এই ষ্টেশনটির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যার্থ হইছে। এই কারণেই ঠিক হয় একদল বিশেষ বাহিনী তথা কমান্ডো ফোর্স পাঠিয়ে উক্ত জাপানী রাডার ষ্টেশনকে উড়িয়ে দেওয়া। এই মূভিতে অভিনেতা Errol Flynn যে Capt. Nelson চরিত্রে অভিনয় করেন তাকে অভিযানের অধিনায়ক করে মোট ৩২ জনকে পাঠানো হয়। এই ৩২ জন প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের অংশ। তাদের এই দলে এক জন চীনা ও দুই জন ভারতীয় থাকে গাইড হিসেবে। যাদের বার্মার সংশ্লিষ্ট অঞ্চল সমন্ধে ধারণা আছে। সাথে আছে একজন মিলিটারী প্রেসের একজন সাংবাদিক যে বয়স্ক যদিও তার যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা নাই। তার দায়িত্ব ছিল অভিযানের খুটিনাটি নিয়ে নোট করা। ৩২ জনের এই দলটিকে দুই ভাগে দুটি পরিবহন বিমানে করে প্যারাসুটের মাধ্যমে উক্ত এলাকার কাছাকাছি এলাকায় অবতরণ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর অভিযান শেষে বৃটিশ বাহিনীর পরিত্যাক্ত একটি এয়ারফিল্ড যা তখনও বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের যোগ্য এমন একটি জায়গায় আসতে বলা হয়। এইতো শুরু হল বিমানে করে অভিযান!



বিশেষ দলটি কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই সাফল্যের সাথে তাদের নির্ধারিত স্থানে প্যারাসুটের মাধ্যমে বার্মায় অবতরণে সমর্থ্য হয়। শুধু তাই নয় কোন রকম শক্ত বাধা ছাড়াই তারা ঐ জাপানী রাডার ও ষ্টেশনের অবস্থান সনাক্ত করে ঘিরে ফেলে গোটা ছোট্ট ঘাটিকে। তারপর দুইটি মেশিন গান, বন্দুকের গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে ঘায়েল করে ষ্টেশনে থাকা সকল জাপানী সেনাদের। এরপর নেলসনকে তার সহকারী বলে আমরা ভাগ্যবান নিজেদের কোন সদস্যের ক্ষতি ছাড়াই আমরা ষ্টেশনটাকে দখলে নিয়েছি। এরপর ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাডার সহ গোটা ষ্টেশনের যত স্থাপনা ছিল সব ধ্বংস করে দেয়। এরপর ফেরার পালাতে কোন বড় বাধা ছাড়াই তাদের নির্ধারতি ঐ পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ডে উপস্থিত হয় নেলসনের বাহিনী। অপেক্ষা করতে থাকে দুটি বিমান ল্যান্ড করে তাদের সবাইকে তুলে ভারতে নিয়ে যাবে। বিমান দুটিও নির্ধারিত সময়ে আকাশে উপস্থিত হয় এবং নেলসন তাদের অভিযানের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বিমান দুটিকে কোনদিক হতে অবতরণ করতে হবে সেটাই বলে রেডিওর মাধ্যমে।




বিমান দুটি যখন নামার পথে তখনই দুই ভারতীয় গাইড হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জানায় যে ২০০ জনের জাপানী সেনারা এই দিকেই আসছে। তখন নেলসন পুনরায় রেডিওতে ম্যাসেজ দেয় বিমান দুটি যেন অবতরণ না করে ফিরে যায় এবং ম্যাপ দেখে কোডে সনাক্ত করা এলাকার কথা বলে দুইদিন পরে সেখানে আসতে বলে। বোঝাই যায় জাপানীদের হামলা করে মৌচাকে ঢিল ছোড়া হইছে। নেলসন বাহিনী ও বিমান পাইলটদের ধারণায় থাকে যে সেখানে অন্যকোন অবতরণযোগ্য রানওয়ে আছে। এরপর নেলসন বাহিনী ঐ এলাকা থেকে সটকে পরে এবং নির্ধারিত জায়গার উদ্দেশ্যে রাওনা দেয়।



এর মধ্যে নেলসেন তার বাহিনীকে দুই ভাগ করে দেয় একভাগের নেতৃত্ব সে আরেক ভাগ সার্জেন্টকে দেয় এবং নির্ধারিত ঐ স্থানে যেন মিলিত হয় সেটাও সিদ্ধান্ত হয়। তাদের হাতে থাকা দুটি মেশিনগান ও দুটি রেডিও একটি করে ভাগ করা হয়। আর ঐ দিকে বিমানের পাইলটরা ভারতের ঘাটিতে গিয়ে জানতে পারে নেলসনদের ফিরার জন্য আর কোন অবতরণযোগ্য রানওয়ে নাই। ছবিতে দেখানো হয় নেলসের উপদল নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলেও তার সার্জেন্টের উপদলের কোন খবর নাই। আর এর একটু পরেই দুটির বদলে একটি বিমান হাজির হয় যারা রেডিওর মাধ্যমে নেলসনকে জানিয়ে দেয় তাদের বিশেষ বাহিনীকে পায়ে হেটে স্থলপথেই ভারত ফিরতে হবে। তারা শুধু ম্যাপে কোড করা জায়গার কথা উল্লেখ করে একটি স্থান নির্ধারণ করবে যাতে বিমান হতে তাদের খাদ্য, ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ড্রপ করে।



একেতো জঙ্গল, কাদা, জলাশয় ও মশা তার উপর কোন নিরাপদ পানি পানের ব্যাবস্থা নাই। সাফল্যের সাথে টার্গেট ধ্বংস করে সহজে ফিরে যাবে সেটি আর হচ্ছে না। এরপর কি হয় সেটা আপনার দেখেই জানুন :)



পরিচালক Raoul Walsh এবং Warner Brothers কোম্পানীর তৈরিকৃত এই মূভিটির IMDB রেটিং ৭.৪;

http://www.imdb.com/title/tt0037954/

অষ্ট্রেলিয়ান এরোল ফ্লিন যে একজন চমৎকার অভিনেতা এই মূভিতে সেটা দারুণ ভাবে ফুটে উঠছে।

যেহেতু সামুতে টরেন্ট লিংক দেওয়া মানা তাই এর কোন সুত্র দিলাম না। আপনারা খুজলেই এর টরেন্ট লিংক পাবেন। আশা করি মূভিটি অনেকেরই ভাল লাগবে।

দেখতে দেখতে সামুব্লগে ৭ বছর পার হয়ে গেল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই পোষ্টটি দিলাম B-)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×