somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন সত্যজিত রায় জীবিত থাকলে কি বলতেন?

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কলকাতার তারকারা কেন ঢাকামুখী?



সেই ১৯৮৫র কথা। তখন স্কুলে পড়াশোনা কালে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর লোকেদের বাসায় গেলে মনে হইত এটা যেন পশ্চিমবঙ্গ। সুনীল, সমরেশ সহ ভারতীয় বাঙালী লেখকদের বইয়ে ভরপুর ছোট খাট একটা লাইব্রেরীই বলা চলে। তারাই ঐ সময়ে ভিসিআরে(VCR) হিন্দি অথবা ইংরেজীর চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবিই বেশী দেখা পছন্দ করত। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতাম বাংলাদেশের লেখকদের বই এবং নাটক তারা কেন সেই পরিমাণে দেখেন না যা পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে করেন। তারা বলত পশ্চিমবঙ্গর কোলকাতাই আসল বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির কেন্দ্র। তাদের মান নাকি বাংলাদেশের চেয়ে ভাল। আমি মনে করতাম এদের পশ্চিমবঙ্গেই চলে যাওয়া উচিত। তাদের মনোভাবের সাথে ভারতের প্রথম অস্কার বিজয়ী পরিচালক সত্যজিত রায়ের সাথেই মিলে যায়।

সত্যজিত বাবুর পূর্ব পুরুষরা কিশোরগঞ্জের হলেও তার নাড়ীর টান হয়ে উঠে পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৭১র পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এর নিজস্ব বাংলা ও সংস্কৃতির প্রতি তার তেমন কদর বা আগ্রহ ছিল না। আর বাংলাদেশের সেই সকল সংস্কৃতিকমনারাতো কোলকাতা বলতে অজ্ঞান।

এই যখন অবস্থা তখন ১৯৯১ কিংবা ১৯৯২তে যখন ভারতের প্রখ্যাত বাংলা গায়িকা হৈমন্তী শুক্লা এক আয়োজিত গানের অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ফাস করে দেন। তিনি বলেন "আজকে আমার এই অনুষ্ঠানে এত শ্রোতা গান শুনতে এসেছে এটা কোলকাতাতে অনেক বছর ধরেই আর হয় না"। এটা যেন সেই সকল বাংলাদেশী সংস্কৃতিমনাদের উপর বিনা মেঘে বজ্রপাত হইল। সেই স্বাধীনতার পর থেকে বেশী কিংবা মোটামুটি হলেও আমাদের লেখক, কবি, সাহিত্যিক সহ নাটক কিংবা চলচিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একটা জায়গা করে আছেন। তাদেরকে বাংলাদেশের বাইরের মার্কেট পাওয়ার চিন্তা করতে হয় না। অন্যদিকের ভারতভূক্ত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি সিনেমা সেই ৮০র দশক থেকেই এত দাপট যে স্থানীয় বাংলা সিনেমা মার খেতে থাকে। সেই সাথে ১৯৯২-৯৪র আগে পশ্চিমবঙ্গে কি সরকারী কিংবা বেসরকারী বাংলা টিভি চ্যানেল না থাকায় নাটক কিংবা অন্যান্য বাংলা অনুষ্ঠান তেমন গড়ে উঠতে পারে নাই যেখানে জনপ্রিয় হওয়াতো দূরের কথা।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সেই ১৯৯৭র আগ পর্যন্ত কোন বেসরকারী স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আসার পূর্বেই এক বিটিভিই বহু জনপ্রিয় নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সহ আরো ভাল ভাল প্রোগ্রাম নির্মাণ করে। একেতো তখন ভারতের চলচিত্র আমদানী নিষিদ্ধ তার চেয়েও বড় কথা এখানে বিশাল দর্শক ও বাজার আছে। কাজেই ভাল মান সম্পন্ন নাটক, চলচিত্র এখানে জনপ্রিয়তা ও অর্থ দুটাই অর্জন করে। শুধু তাই না এখানে ভারতীয় বাংলা সাহিত্য তথা লেখকদের উপন্যাস-বই এবং সেখানকার চলচিত্রও ভাল ব্যাবসা করে। যদি শুধুই পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র বাজার হইত তাইলে সেখানে বছরে ১০-১৫টার বেশী চলচিত্র নির্মাণ হত না। সেই সাথে পশ্চিমবঙ্গের নাটক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানও বাংলাদেশের কারণেই ভাল বিজ্ঞাপন পায়। বেশী দর্শক না হলে কোন ভারতীয় কোম্পানীও তেমন বিজ্ঞাপন তথা স্পন্সর করে না।

পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে খোলামেলা তথা যৌনতা এমনকি নগ্নতা না হলে সেই চলচিত্র ভাল ব্যাবসা করতে পারে না। তাই সেখানকার সব নায়ক-নায়িকাদের পক্ষে ঐ সমস্ত চলচিত্রে অভিনয় করা সম্ভব না। এখানেই বাংলাদেশ তাদের জন্য অনেক বড় একটা এডভান্টেজ। বাংলাদেশে শালীন ছবির গুণগত মান ও কাহিনী ভাল হলে সেটা ভাল আয় করবে। এখানে বাংলা ছবিকে অর্থের জন্য খোলামেলা হতে হবে এমন কোন বিষয় নাই। এখনও সিংহভাগ মানুষ বাংলাদেশের চলচিত্রকে সেই শোভন ভাবেই চলতে দেখতে চায়। এখানে কোলকাতার অভিনেতা পরমব্রতের একটি কথা না উল্লেখ করলেই না;

{কলকাতার তারকাদের ঢালিউডমুখী হওয়া নিয়ে উঠে আসা আলোচনার সঙ্গে আংশিক মত দিলেন কলকাতার আরেক অভিনেতা পরমব্রত। কলকাতা থেকে মুঠোফোনে এই অভিনেতা বলেন, ‘এখানকার শিল্পীরা তাঁদের বাজার সৃষ্টির জন্য ঢাকামুখী হচ্ছেন—এটা মনে হতেই পারে। এই ভাবনাটাকে ফেলে দিচ্ছি না। তবে দুই বাংলায় বাংলা ছবির ভালো দিন ফিরিয়ে আনতে পারস্পরিক নির্ভরতার জায়গায় যেতে হবে।’}

http://www.prothom-alo.com/entertainment/article/1109107

কাজেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যতই মান সম্পন্ন বাংলা ছবি হৌক না কেন দর্শক তথা সেই রকম আয় না হলে লাভ কি? কাজেই হিন্দির দাপটে জর্জরিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গর শিল্পিী ও কলাকুশলীরা বাধ্য যে বাংলাদেশের উপর নির্ভর হওয়া। তবে এখানে পরমব্রত একটা অসত্য তথ্য দিলেন। সে শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ নির্ভরতা না বলে বলল "পারস্পরিক নির্ভরতা" তথা দুই দেশের নির্ভরতা। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বাংলাদেশের চলচিত্রকে পশ্চিমবঙ্গের উপর নির্ভর হতে হয় না। বাংলাদেশে নির্মিত চলচিত্র যদি কোন ভারতীয় শিল্পী ও ব্যাক্তিবর্গ জড়িত না থাকে তবে সেটা ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে সহজে প্রবেশ করতে পারে না। আর বাংলাদেশের প্রাইভেট স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলিতো সেখানকার ক্যাবল নেটওয়ার্কে চলে না। এখন যদি বর্তমান সরকার বাংলাদেশে ভারতের চলচিত্র না আমদানী করতে দিত তাইলে আমাদের নিজস্ব বাংলাদেশী চলচিত্র আরো বেশী ব্যাবসা করতে পারত। বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের চলচিত্র সেই সাথে সাহিত্যর মার্কেট কল্পনাই করা যায় না।

সত্যজিত রায় ছিলেন একজন বিশ্বমানের চলচিত্র ব্যাক্তিত্ব এতে কোন সন্দেহ নাই! কিন্তু উনার দূরদর্শিতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব বাংলা সাহিত্য ও চলচিত্র নিয়ে ধারণা মোটেও শক্ত ছিল না। বাংলাদেশের প্রতি তার অনাগ্রহ ছিল। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতা তার মনোভাবকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করছে। সাহিত্য, চলচিত্র যতই গুণগত বা ভাল মানসম্পন্ন হৌক না কেন তার বাজার না থাকলে সবই বৃথা। একটা লেখক, চলচিত্র প্রযোজক সময় ও অর্থ ব্যায় করে একটা কিছু তৈরি করবে কিন্তু তার কাংক্ষিত ফলাফল পাবে না সেটা স্বপ্নেও ভাবা সম্ভব না। এটাই বর্তমান পেশাদার চলচিত্রের নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভিলক্ষ।

বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের উচিত এমন কোন কাজ না করা যেটা দেশের স্থানীয় চলচিত্রর ক্ষতি করে। সেই সাথে এর আরো উন্নয়ন করে কিভাবে আরো বেশী দর্শক টানা যায় সেটা সবারই ভেবে দেখা জরুরী!


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৪৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×