somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ, নয়া জামানার দেশপ্রেম ও আমাদের বিভক্ত চেতনা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(শেষ কিস্তি)

নয়:
হয়তো আপনার মনে হবে বেশি বায়াজড কথা বলছি। তবে ঠান্ডা মাথায় ভেবে বলুনতো, আমাদের দেশের সবকটি গণকবর কি চিহ্নিত হয়েছে সরকারীভাবে? যে কয়টি চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর যথাযথ সম্মান সহকারে রক্ষনাবেক্ষনের কোনো ব্যবস্থা কি হয়েছে আজও এদেশে? আমি তো দেখি (অন্তত ঢাকায় যেগুলো আছে সেখানে) গণকবরগুলো সাধারন কবরস্থানের চেয়েও অবহেলিত ও অপমানিত হয়ে পড়ে থাকে সারাবছর। ঢাকার স্মৃতিসৌধ, ভাসানটেক, রায়েরবাজার গণকবরে যাবার হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। এমনিতে একটি পারিবারিক কবরস্থানকে পর্যন্ত আমি যতটা সম্মানের ও গাম্ভীর্যের সাথে সমীহ করতে দেখেছি, তার ছিঁটেফোটাও আমি পাইনি ততোধিক সম্মান ও মর্যাদা পাবার অধিকারসম্পন্ন গণকবরগুলোতে। প্রতিটি গণকবরে যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তা হল, হাজার হাজার তরুন কপোত-কপোতী ভয়শূন্য, সংকোচশূন্য ডেটিং এর নিরাপদ অভয়ারন্য হিসেবে গণকবরকে বেছে নিয়েছে। বাদামওলা, ফুলওলা এমনকি ডেটিং হোটেলের দালালরা নিরাপদে তাদের সওদা বিক্রি করছে। গর ছাগল চড়াবার অভয়ারন্য সব গণকবর। যাদের রক্তে, যাদের জীবনের দামে পাওয়া এদেশ, তাদের বুকের উপর দাড়িয়ে দেশের স্বাধীনতার সুযোগভোগীদের কী নিদারুন উপহাস! কী নিদারুন উপহার তাদের জন্য!

দশ:
আচ্ছা, আপনারা কি খেয়াল করেছেন, শুধুমাত্র ২১ ফেব্রূয়ারী, ২৬ মার্চ, ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর ব্যাতিত এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, বীরাঙ্গনা, স্বাধীনতা-এই শব্দগুচ্ছ খুব একটা উচ্চারিত হয়না? (’মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামে চালু একটি কমার্শিয়াল টার্ম বাদে।) শুধু বছরের ৪টি মাসের ৪টি বিশেষ দিবসে ও তার আশেপাশে মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রীক সভা, অনুষ্ঠান, টিভি অনুষ্ঠান, নাটক, জনসভা, সেমিনার, মিছিল, কুচকাওয়াজ, পতাকা উত্তোলন-এসব আনুষ্ঠানিকতা হয়। আচ্ছা বলতে পারেন, এদেশের ১০০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি জাতীয় পতাকা প্রতিদিন নিয়মমতো উত্তোলিত হয়? আমি নিশ্চিত, উত্তরটা হল-‘না’। একটি স্বাধীন দেশ তার সব ফর্মাল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কী লজ্জা! আচ্ছা, জাতীয় পতাকার মাপ, রেশিও, ডিজাইনার, প্রথম জন্ম, উত্তোলনের নিয়ম, নামানোর নিয়ম-আমাদের সব শিশুরা, সব সরকারী কর্মকর্তারা এমনকি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের সব কর্মীরা জানেন কি? জানেন কি, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের অফিশিয়াল স্বরলিপি ও সুরের কপিরাইট/ট্রেডমার্ক কোথাও রক্ষিত আছে কিনা? আজ হতে ৫০ বছর পরে কেউ যদি প্রশ্ন করে, জাতীয় সঙ্গীতের অফিশিয়াল স্বরলিপি ও সুর কোনটি-কে কিভাবে উত্তর দেবেন? এখনিতো দেখি প্রচুর বিকৃত সুরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার রেকর্ড ইউটিউবে ভাসছে।

এগারো:
আচ্ছা এদেশের কতগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা? মাসিক মাসোহারা, দিবসে দিবসে দাওয়াতি চিঠি, আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্যাতিত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঠিক কী কী আমরা পরের প্রজন্মের লোকেরা করেছি? চাকরীর কোটা বহাল করেছি বিভিন্ন সরকারী চাকরীতে যা দখল করে আছেন অসংখ্য ড্রয়ীং রুম মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার। কেউ বলতে পারেন, কোনো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কি দায় নেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকার? নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করার দায় শুধু সরকারের? সিএসআর এর ফান্ড দিয়ে দেশ উদ্ধারতো বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান করছেন। বড় বড় পুরষ্কারও পাচ্ছেন। কেউ কি আছে যে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ’র সাথে সম্পর্কিত কোনো বড় প্রজেক্ট নিয়েছেন বা ফান্ড দিয়েছেন (মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের দান ব্যাতিত?) কিছু হলেই আমরা সরকারকে গালি দিই। কেন বেসরকারী দেশপ্রেমীকদের কি কোনো দায় নেই? রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা আর মুক্তিযোদ্ধারা ফেরিওলা, রিক্সাওলা, দারোয়ান, ভিক্ষুক, ড্রাইভার-কত কী ভূমিকায়। কত চমৎকার প্রতিদান তাদের দিয়েছে এদেশ। সরকারী ভাতার অপেক্ষায় দিন গোনেন একেকজন শহীদের মা, বিধবা স্ত্রী। ওটুকু না পেলে যে ক্ষুধার অন্ন যোগাড় হয় না। এত এত বেসরকারী কংলোমারেট। তারা কি কয়েকজন করে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার দায়ীত্ব নিতে পারতেন না? একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানও কি পারতো না, এটা নিশ্চিত করতে, তাদের প্রতিষ্ঠানে মিনিমাম একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাকরী পাবেন? বা তারা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পড়াশোনার দায় নেবেন? ওহ, স্যরি! মুক্তিযোদ্ধা কে আর কে নয়-তার সংজ্ঞাই তো নির্ধারন হল মাত্র সেদিন। আমরা কী করে দায়িত্ব নিতাম? কত বয়স, কতগুলো গুলি করলে, কোন অঞ্চলে কার অধীনে, কীভাবে যুদ্ধ করে থাকলে, কী কী কাজ করে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব মিলবে, আর খেতাব থাকলে কী কী মিলবে ভাগ্যে-১৯৭১ সালে যদি মুক্তিসেনারা তাদের মায়েদের, গর্ভবতী স্ত্রীদের, প্রিয়তমা বান্ধবীদের, সন্তানদের চোখের জলে ভাসিয়ে যুদ্ধে জীবনদানের জন্য যাবার সময় ভাবতেন, তবে পেতাম কি এই সোনার বাংলা?

বারো:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তো এদেশের একসময়ের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু মানুষও বিভক্ত হয়ে গেছেন। চিহ্নিত কিছু মুক্তিযোদ্ধা পর্যন্ত এই বিচারের বিরোধিতা করে আসছেন। (তথাকথিত বিশুদ্ধ নিরপেক্ষ, মানবিক ও আন্তর্জাতিক বিচারের দাবী তুলে।) এইসব জ্ঞানপাপী যদি সত্যিই ওই তিনটি দাবীতে এটা করতেন তাও কিছুটা সান্তনা হত। অলিখিত বা অঘোষিতভাবে এদের এই অমার্জনীয় অন্যায় আবদারের কারন হল, তাবেদারী, দ্বিধাবিভক্তি, অন্ধ দলবাজি, অতি প্রগতিশীলতা, ভন্ডামী আর স্বার্থ। আমি জানি, আপনার মুখ নিশপিশ করছে প্রচলিত কিছু তর্ক শুরু করতে। দাড়ান, দাড়ান। ওই তর্কগুলো আমিও জানি। আপনি খালি বলুন, আপনার বোনের ধর্ষণকারীকে যদি ৪৬ বছর পর হাতের কাছে পান, আপনি কি অপেক্ষা করবেন কখন আপনি বাড়ি গিয়ে ইমাম সাহেবের কাছ থেকে সব মাসয়ালা জেনে, ওজু করে, পবিত্র হয়ে, গ্রামের সবলোক জড়ো করে (পারলে জাতিসংঘকে জড়িত করে) তারপর ওই ধর্ষককে একটা থাপ্পর দেবেন? আমার আর একটি প্রশ্ন মনে জাগে। ২০১০-২০১৭, মোট মামলা দায়ের, তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন এতটুকু বিবেচনায় নিলে এই বিশাল বিচার প্রক্রিয়া কতটুকু গতিতে এগোচ্ছে? বিগত ৭ বছরে মামলা রায়ে গেছে মাত্র গোটা তিরিশেক। বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আরো সামান্য কিছু। যদি স্রেফ তর্কের খাতিরেও ধরি, এদেশে বড় বড় যুদ্ধাপরাধী (পাতি রাজাকার বা দালালরা না, ধাড়ি অপরাধি) আছে শ’পাঁচেক, তাহলে তাদের বিচার শেষ হয়ে বাস্তবায়নে মোটামুটি ১০০ বছর লাগার কথা। তো সেই ১০০ বছর এইসব রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা বিচার মোকাবিলার জন্য বেঁচে থাকবে? মরে গেলে আবার আরেক বিপদ। ওদের মরনোত্তর অমরত্ব ও ইনডেমনিটি। গোলাম আযম নামক সারমেয়টার যেই মৃত্যু হল, অমনি বিচার কাজ ইনকমপ্লিট অবস্থায় এবানডন করা হল। যেহেতু আপিল অবস্থায় মামলা ক্লোজ হয়েছে, তার মানে দাড়ায় গো.আযম দোষী ও নির্দোষ কোনোটাই প্রমানিত হয়নি। ট্রাইবুনালে যদিও তাকে দোষী করা হয়েছে ‍কিন্তু আইন বলে যতক্ষন বিচার শেষ হয়ে কাউকে দোষী বা নির্দোষ না বলে দেয়া হয়, ততক্ষন সে নির্দোষ (অন্তত আইনের মারপ্যাঁচের চোখে।) তো এইরকম আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হল, যে গো.আযম মারা যাওয়ায় বিচার ইনকমপ্লিট অবস্থায় থেমে যাবে? ভবিষ্যতে যদি ২০ বছর পরে কেউ প্রশ্ন করে, তার বিচার তো শেষ হয়নি, আদালত তো তাকে দোষী করেনি, তাহলে কী জবাব দেয়া হবে প্রজন্ম?

তেরো:
প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রূয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় পর্যায়ে দিবস পালনের ঘটা চলে আসছে। আমরাও ওই দিনগুলোতে ধোয়া ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবী পাজামা পড়ে, বডি স্প্রেতে নিজেকে সুরভিত করে দিবসগুলো পালনে নানা আচার অনুষ্ঠান করি। আমি সব অনুষ্ঠানেই দেখি সমাগত সব মানুষ হাসতে হাসতে, অত্যন্ত আনন্দ মুখর পরিবেশে শোক ও সম্মান প্রদর্শন করছে (দিবসটির প্রকৃত তাৎপর্য যাই হোক)। স্মৃতিসৌধে, শহীদ মিনারে হাস্যোজ্জল মুখ ক্যামেরায় মুখখানা প্রদর্শনের জন্য হাতাহাতি, গুতোগুতি, লাফালাফির মধ্য দিয়ে শোক প্রকাশ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে যান একা একা এতিমের মতো। নয়া প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধপ্রেমিকদের ভীড়ে চ্যাপ্টা হয়ে, অপাংক্তেয় হয়ে। তাও হয়তো মানতে পারতাম। ওই বেয়াদবীর সাথে ইদানীং যোগ হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যার দিনে পর্যন্ত ঘটা করে গরু জবাই আর গরুর মাংস, পোলাও, দধিসহযোগে ফিস্ট খাবার জাতীয় কালচার। আহা শোক, আহা মুক্তিযুদ্ধ। জানেন কিনা জানি না, শহীদ আজাদের মা তার সন্তানের জন্য পাক শিবিরে শেষ ভাত রেঁধে নিয়ে গিয়েও খাওয়াতে পারেননি। সেই শোকে তিনি তার বাকি জীবন কখনো ভাত খাননি। আর আমরা গোস-পোলাও দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগ উদযাপন করছি। সন্ধ্যার পরের ডিজে পার্টির কথা না হয় নাই বললাম। যেহেতু ওগুলো ‘দিবস’ কেন্দ্রীক অনুষ্ঠান, তাই রাতে তরুন চেতনাপন্থীরা একটু আধটুতো ওগুলো করতেই পারে। (দয়া করে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ককে এখানে টেনে আনবেন না। ওগুলো আমার আলোচ্য নয়।)

চৌদ্দ:
আচ্ছা, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং বর্তমান শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলন, জাতীয় চেতনা, আমাদের সত্যি ইতিহাস জানানোর, বোঝানোর, শেখানোর, উজ্জিবিত করার সত্যি সত্যি কতটা ব্যবস্থা হয়েছে বলতে পারেন? প্রতিটি ক্লাসের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধকে কতটা যত্ন করে পড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে? আপনি জানেন কিনা জানি না, ছাত্ররা সাধারনত সেই টপিকগুলোই বই হতে পড়ে যেগুলোর প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। তো কখনো চেক করে দেখেছেন, ক্লাস ওয়ান হতে ক্লাস ১২, পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রীক বা ওভারঅল স্বাধীনতা কেন্দ্রীক প্রশ্ন কতটা থাকে? টেক্সট বইয়ে খুব ছোট করে কিছু গল্প বা প্রবন্ধ থাকার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক মুক্তিযুদ্ধ’র ইতিহাস ছাত্রদের জানানোর কী ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, এই ২০১৭ সালের বাংলাদেশে ক্লাস ওয়ান হতে ক্লাস ১২ পর্যন্ত যত শিক্ষার্থী আছে তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস কতটুকু জানে? ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্ররাতো আরো এগিয়ে। বিসিএস পরীক্ষায় না লাগলে তো আমরা বড়রাও ওই লাইনে পড়াশোনা করতাম না।

পনের:
আমাদের দেশে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার দেয়া হয়। আমার একটা বিষয় খুব খটকা লাগে। স্বাধীনতা দিবসে যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়টি জড়িত, সেখানে আমাদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম, বীর উত্তম, বীর প্রতীক, বীরাঙ্গনাকে কখনো স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার দেয়া হয়েছে কি? নিশ্চই হয়েছে!! স্বাধীনতার জন্য জীবন দান করা বা বেঁচে থাকলেও সর্বস্ব দেয়া মানুষগুলো বেঁচে থাকতে আমার মতো কাছামারা প্রোফেশনালরা কিভাবে স্বাধীনতা পুরষ্কার পায়? বলতে পারেন, স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার স্পেশালি ওদের জন্য তো না। ওটা দেশের জন্য অবদান রাখছেন এমন সকল মানুষদের জন্য। আচ্ছা? স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ, বেঁচে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৯ জন বীর উত্তম, ১৭৭ জন বীর বিক্রম, ৪২৬ জন বীর প্রতীকসহ কয়েক লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা, ৩ লক্ষ বীরাঙ্গনা এবং ভাষা আন্দোলনের কর্মী ও শহীদদের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য বেশি অবদান কে কবে রেখেছেন আর কবে রাখতে পারবেন? কোনো এক বছরের স্বাধীনতা দিবসের পুরষ্কারটি কি সম্মিলিতভাবে ওঁদের উৎসর্গ করা যেত না? নাকি এদেশে মরোনোত্তর কোনো পদক দেয়া হয়ই না? ভাল কথা, স্বাধীনতার প্রথম সূচনাটি যারা করেছেন সেই ভাষা আন্দোলনের কর্মী ও শহীদদের কোনো তালিকা কি করেছি আমরা? ধ্যুৎ, কীসব বাজে কথা বলি আমি? আরে এদেশে তো এই ৪৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাই করা হয়নি নির্ভূলভাবে। আমি খুব অবাক হব না, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে কোনো এক কালো সময়ে কোনো এক অর্বাচীন যদি গো.আযম নামক সারমেয় সন্তানের নামও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ঢোকানোর চেষ্টা করে। (আমি খোদার কাছে দাবী করি, সেই পর্যন্ত যেন না বাঁচি।) অতিকল্পনা ভাববেন না। গো.আযমের বিচার কাজতো আমরা শেষ করিনি। জানোয়ারটা মরার সাথে সাথে বিচার অসমাপ্ত রেখে শেষ করেছি। কেন, বর্বরটার ফাঁসি না দেয়া যাক, অন্তত বিচার প্রক্রিয়াটাতো চালিয়ে নিতে পারতাম যাতে অফিশিয়ালী কসাইটা যে রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধের মূল হোতা-সেটা প্রতিষ্ঠিত হত। ইস! কি বোকা আর আত্মভোলা আমরা। এতবড় ভুল কীভাবে করল পুরো একটা জাত?

ষোলো:
আসলে একটা অনুচ্চারিত সত্যি কথা বলব? নানা দিবস আর অফিশিয়াল ফর্মালিটি বাদে, মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকারভাবে গভীর আবেগে বাঙালীর মন মানসে কতটা আছে বলতে পারেন? বাংলার কত পার্সেন্ট মানুষ মুক্তিযুদ্ধ’র সঠিক ইতিহাস জানে? জর্জ হ্যারিসনের মৃত্যুতে রবিশংকর আর তার কন্যা আনুশকা শংকরের পরিবেশনায় কনসার্ট দেখেছিলাম ইউটিউবে। কই, বাংলাদেশ তো তার অকৃত্রিম বন্ধুর বিদায়ে করতে পারল না কোনো জাতীয় আয়োজন? মরণপূর্ব বা মরণোত্তর পদক বিতরনের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুদের মনে রাখার কী ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা? নতুন প্রজন্ম ও প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধকে বয়ে নিয়ে যাবার ঠিক কী কী ব্যবস্থা আমরা করেছি? আমি একটু দ্বিধাগ্রস্থ যে, এই মুহূর্তে যদি ১৯৭১ সাল আবার ফিরে আসত, বলতে পারেন, এই দেশের কত পার্সেন্ট মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যেত আর কত পার্সেন্ট যুব সমাজ তাদের বিসিএসের প্রস্তুতি কোরবানী করে, ট্যাব/মোবাইলের ফেসবুক আপডেট করা তুলে রেখে, কতজন আমলা জরুরী দেশোদ্ধারমূলক কর্মোদ্যোগ বাদ দিয়ে, কতজন কবি, লেখক বইমেলার বানিজ্য ধান্দার জন্য বই লে্খা শিকেয় তুলে, কতজন পাংক প্রেমিকা তার প্রেমিককে হাতে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধে পাঠাবে? আমার বিশ্বাস ১০০ ভাগ। তবে দুঃখের বিষয় হল, আমার বিশ্বাসটা খুব নড়বড়ে। তবু জয় বাংলা।


প্রথম পর্বের লিংক: Click This Link

দ্বিতীয় পর্বের লিংক: Click This Link

[আমার লেখায় তেমন কোনো নতুন তথ্য বা গবেষণা নেই। আমি নিছক স্কলারও নই। তাই কয়েকজন জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তাশীল লেখকের আর্টিকেল শেয়ার করলাম। আমার লেখাটি পড়ে থাকলে এই লেখাগুলোও একটু সময় করে পড়বেন।
১.http://www.bd-pratidin.com/open-air-theater/2016/01/02/118495
২.https://www.priyo.com/articles/boka-meyer-diary-21st-feb-2017221
৩.http://www.sabbir-hossain.com/2016/03/torture-of-women-in-1971-in-bd-by-pak.html
৪.https://www.facebook.com/shafiaham/posts/926897937476127
৫.https://pranerekattor.com/আমাদের-বীরাঙ্গনা-নারী-এব/
৬.http://egiye-cholo.com/war-child]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×