somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোদা যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোস্যাল মিডিয়ার কল্যানে প্রতিদিন প্রচুর চেকইনের ছবি দেখি। কেউ কক্সবাজার, কেই আমেরিকা, কেউ বালি, কেউ পাতায়া। এমনকি এখনতো গাবতলি বাস টার্মিনালেরও চেকইন দেখি।

”বিশ্বায়ন, উন্নয়নশীল দেশ, বিশাল রিজার্ভ, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে”’র সুবাদে আর ফেসবুক কেন্দ্রীক সামাজিক প্রতাপ প্রদর্শন ব্যবস্থার দাপটে বিগত কয়েক বছর ধরে মানুষ এমনকি বিমানের ডানার পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে সেটা ফেসবুকে দেবার প্রচন্ড কালচার চলে এসেছ বাংলার মাটিতে। বিমানে ভ্রমনের ভাড়া এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাসভাড়ার সমান পর্যায়ে চলে আসায় দেশের অভ্যন্তরে, স্বল্পদূরত্বের বিদেশে, তীর্থ বা বিনোদন স্পটে প্লেনে যাত্রার প্রচুর ছবি ফেসবুক চেকইনে দেখে মনটা দমে যেত।

এখনো যেই দেশের ঢাকার লোকাল বাসের যাত্রীরা দুই টাকা ভাড়া কমবেশির ন্যায্যতা নিয়ে মর্দে মুমিনের মতো বাচ্চা একটা হেলপারকে মেরে চোখ মুখ ফাটিয়ে ফেলে, সেই দেশেই উড়াল জাহাজের এত এত সেলফী মনে একটু খটকা জাগায়।
এত এত বিমানে যাত্রা’র (যা একসময় ছিল স্বপ্নেরও অতীত) ছবি দেখে যুধিষ্ঠীরেরও হিংসা হত। আমি তো কোন ছার।
স্বস্তায় প্লেনে ওঠার সুযোগ পেলে কে আর বাসে, ট্রেনে যায়? ফেসবুকে বিমান ভ্রমনের ছবি দেখে দেখে হিংসায় জ্বলে যেতাম। নিজের ফাটা কপালকে নিয়ে আফসোস করতাম।

আপনি নিশ্চই স্বীকার করবেন, বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ প্লেনে চড়ার স্বপ্ন মনে মনে হলেও দেখে। তো ভাড়া আর বেড়ানোর অপ্রতুলতার কারনে এই ২০১৮ সাল পর্যন্ত জীবনের ৪০ টি বসন্ত গেল, প্লেনে চড়ার দুর্লভ সৌভাগ্য হয়নি বিধায় মনে মনে ক্ষুন্ন ও লজ্জিত বোধ করতাম। (লিটারালি বলছি, জীবনেও প্লেন জিনিসটা সামনে থেকে দেখিনি কখনো। ১৯৯৯ সালে গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছি ভাত কাপড়ের খোঁজে-বিদেশ যাওয়া বলতে জীবনে এখন পর্যন্ত ওইটুকুই।

জীবনে একবারও উড়ালজাহাজে চড়তে না পারায় খোদার বিচার নিয়ে (না চাইতেও) অনুযোগও হয়তো করেছি মনে মনে। কিন্তু ওই যে, ”খোদা যা করেন ভাল’র জন্যই”। সস্তায় বিমানে চড়ার সুযোগ দিতে গিয়ে বাসাবাড়ির গলিতে, মোড়ে মোড়ে, ধান্দাবাজ বিজনেস ডিলারদের কল্যানে বঙ্গদেশে বেশ কিছু সরকারী ও বেসরকারী ”বিমান” কোম্পানী গড়ে উঠেছে। তারা বঙ্গদেশের মানুষকে পানির দামে বিমানে চড়ার, সেলফী তোলার সুযোগ করে দেয়ায় তার চুড়ান্ত ব্যবহার চলছে বঙ্গদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে। কিন্তু সস্তার তিন অবস্থা তো আছেই।
বাংলাদেশের কোনো সেবা সেক্টরেই মান বিষয়টা কোনো গোনার মধ্যেই ধরা হয় না। নিরাপত্তা তো কেউ চাইলে মার খেতে হয়। নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ জন হতভাগ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন যেটি বাংলাদেশের কোনো বিমানের প্রথম বড় রকম প্রানহানির ঘটনা। ওনাদের বিদেহী আত্মার সবরকম শান্তি কামনা করি, শ্রদ্ধা জানাই তাদের ’আত্মাহুতি’র প্রতি।

আত্মাহুতি বলছি এজন্য, সস্তা বানিজ্য আর চকচকে সোস্যাল স্ট্যাটাসের ধান্দায় বাতাস দেয়া বিমান সংস্থাগুলোর অমার্জনীয় নিরাপত্তা ত্রূটি, মানহীন এয়ারশীপ আমদানী, যেনতেন করে ফ্লাইট পরিচালনা, জিরো জবাবদিহীতা, যাচ্ছেতাই যাত্রীসেবা, কসাইয়ের মতো করে পয়সা কামানোর ধান্দা, লক্করঝক্কর ‍উড়ালজাহাজ দিয়ে সেলফী যাত্রা, লোভনীয় মৃত্যুবাহনে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা, অদক্ষ এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, হেলাফেলার এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট-এই সবকিছু নিয়ে যখন একটি দেশের সরকারী ও বেসরকারী উড়াল সেবা চলে-তাতে চড়াটাকে আপনি আত্মাহুতি বলতে পারেন তো?

আমি মোটেই বলছি না, ফ্লাইট BS211 যান্ত্রিক বা স্টাফদের ত্রূটিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার সত্যিকারের কারন কি-সেটা বিশেষজ্ঞ কর্তৃপক্ষের দায়ীত্বে ছেড়ে দেয়া উচিৎ। যদিও আমি মোটামুটি ধারনা করি, ওই ঘটনার সত্যিকারের কারন কোনদিনও বঙ্গবাসীরা জানতে পারবে না। (কারনটা বুঝে নিন।) কিন্তু বাংলাদেশে বিমান চলাচলের সার্বিক সক্ষমতা, প্রস্তুতি ও পরিস্থিতি কী বলে? অসংখ্য ছোটখাটো ধাক্কা, দুর্ঘটনা কি ঘটেনি নিকট অতীতে? আমাদেরকে কি নিরবে হলেও ওই ছোট ছোট ঘটনাগুলো কোনো বার্তা দেয়নি?

আমাদের কানে কি পানি গেছে তাতে?

উড়ালজাহাজগুলোর কোয়ালিটি নিয়ে, বিমান সংস্থার অমার্জনীয় মানহীনতা, এভিয়েশনের হাস্যকর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কখনোই কি পত্রিকায় কথাবার্তা হয়নি? তারপরও, এই বঙ্গদেশে ন্যুনতম কোনো আলোড়ন কি হয়েছে? কোনোরকম সাবধানতামূলক ব্যবস্থা কি নেয়া হয়েছে? কোনোরকম সতর্ক হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা, যাত্রীদের মধ্যেও কি সামান্য চিন্তা কাজ করেছে, নিরাপত্তা ও কোয়ালিটি নিয়ে? নাকি সস্তায় উড়ালজাহাজের সেলফী আমাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছে?

আমি হাড়হাভাতে হওয়ায় এখনো হয়তো বেঁচে আছি। প্লেনের টিকেট কাটার পয়সা নেই বলে কোনোদিন উড়ালজাহাজে চড়িনি। চড়ার সম্ভাবনাও দেখি না। তাই বলি, “খোদা যা করেন (আমাকে হাড়হাভাত বানানোয়), ভাল’র জন্যই করেন।

[আমি আবারও বলছি, ফ্লাইট BS211 কেন বিধ্বস্ত হয়েছে তা বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। আর ওই প্লেনের সব যাত্রীর জন্য আমি তীব্র হাহাকার অনুভব করি। আমাদের দেশীয় ওই প্লেনটির কোনো ত্রূটি বা তার স্টাফদের ত্রূটির বিন্দুমাত্র ইঙ্গিতও আমি করছি না। সত্য না জেনে একটি কথা বলাও অন্যায়। আমি শুধু আমাদের তীব্র হুজুগ প্রীতি আর গা ছাড়া সার্বিক সমাজ/রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলছি।]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×