somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষের কান্না, আর না

২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় বলে, লেবু বেশি কচলালে তেতো হয়ে যায়। বাংলাদেশে বোধহয় প্রগতি ও উদারনৈতিকতা নিয়ে ইদানিং অতিরিক্ত কচলানোর একটা প্রথা বেশ বাজার পাচ্ছে। আমি শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এই লেখাটি আপনার খুব একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট, কুপমন্ডুক, বর্ণবিদ্বেষী ও নারীবিদ্বেষী বলে মনে হতে পারে। আমিও বলে নিই, এই লেখাটিতে আমি অবশ্যই আমাদের সমাজের চলমান একটি রুঢ় বাস্তবতা নিয়ে কথা বলব। বাস্তব সত্যটি হল নারী স্বাধীনতা ও নারী অধিকার নিয়ে বাড়াবাড়ি। লেখাটি কিছুটা পড়ার পর যদি মনে হয়, আমি খুব জঘন্যভাবে নারীবিদ্বেষী, তবে আগে আমার এই লেখাটা একটু পড়ে নেবেন-https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/1745594485498551 আপনার ভুল ধারনা কিছুটা হলেও কমবে। তারপর না হয় এই লেখাটি পড়ুন।

আমি জানি, এই লেখাটি প্রকাশের পর একদল পুরুষ আমাকে বলতে থাকবেন, “তুমি কি দাম্পত্য জীবনে অসুখী?” [এই প্রশ্নটির হ্যা ও না-দুটো উত্তরই অবান্তর।]

আরেকদল পুরুষ ও নারী তীব্র ভাষায় আমাকে আক্রমন করবেন, মধ্যযুগীয়, নারীবিদ্বেষী ও বিতর্কিত মতবাদের জন্ম দিচ্ছি-এই অপবাদে।

হ্যা, বড় একদল পুরুষ এবং গুটিকয় নারী পাঠক আমাকে বাহবা ও প্রশংসাও দেবেন বলে আমার ধারনা।

কয়েকদিন আগে লাইফ ইন্সু্র‌্যান্স কোম্পানী হতে দু’জন এজেন্ট এসেছিলেন। আমাকে তারা ধৈর্য ধরে বোঝান, আমি মরলে আমার ইন্সুর‌্যান্সের টাকায় আমার পরিবার কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে। কীভাবে আমার মরার পরেও ওই টাকা আমার প্রিয়জনদের নিরাপত্তা আর কমফোর্ট দেবে। হায় পুরুষ মানুষ! সারাজীবন তো দায়ীত্ব নিতেই হয়, মরার পরেও তার পরিবারের কী হবে তার জন্য মরার আগেই মরার প্রস্তুতি নিতে হয়। পুরুষ, হে মহান পুরুষ! তোমার মরার পরে কীভাবে তোমার মৃত্যুপরবর্তি দায়ীত্ব সুন্দরভাবে চলতে থাকবে তার চিন্তাও তোমাকে মরার আগেই ভেবে ও করে যেতে হয়। তুমি স্বাধীনভাবে মরতেও পারবে না। তুমি জীবনেও স্বাধীন নও, মরণেও নও।

পুরুষের সুপ্রাচীন একতরফা কর্তৃত্ব’র অবসান আর নারীর মুক্তি নিয়ে কাজ করতে করতে আর কথা বলতে বলতে আমরা বোধহয় একটু বেশি বেশি নারীবাদী কিংবা পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছি। খুব নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে একটি কথা বলি, জগতের সব লেখক কেন যেন শুধু ‘একজন নারী’কেই নির্যাতিতার রূপে দেখাতে চান। নারী বা পুরুষ যেই লেখেন, সবার কলমেই নারীই একমাত্র নির্যাতিত ও বঞ্চিতরুপে সমবেদনার পাত্রী। আমি আমার এতবছরের পড়বার অভ্যাসে অতি অতি নগন্যসংখ্যক নারী (ও পুরুষ) লেখককে (০.০১%) দেখেছি, পুরুষের বঞ্চনা, নির্যাতন, শোষন নিয়ে লিখতে। কেন, পুরুষ কি নির্যাতিত হয় না? বঞ্চনায় পুরুষ কি ভোগে না? সেকি প্রতারিত হয় না নারীর কাছে? তবে কেন শুধু সবার কলমে একমাত্র নারীই প্রষ্ফূট? কেন সাহিত্যে, খবরে, আচারে, সংস্কৃতিতে, সেমিনারে শুরু নারীর বঞ্চনার বন্দনা? পপুলারিটি? ক্রেজ? ট্রেন্ড? মেজরিটি? লোকলজ্জা? পাবলিক এটিচুড? জড়ু কা গোলাম? পুরুষতান্ত্রিক অহংবোধ (যে, গল্পেও পুরুষ বলবান থাকবে)?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশ তার বিগত কয়েক হাজার বছরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রীক কর্তৃত্ব ও শাসনের বিপরীতে তার কাফফারা হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত রকমে নারীবাদের দিকে ঝুঁকছে। যুগ যুগ হতে চলে আসা নারীর অবদমিত সম্মান, নির্যাতন, অবনমন, শোষণ এর প্রেক্ষিতে হঠাৎ করে যেন বাংলাদেশ পশ্চিমের মতো করে নারী স্বাধীনতার ঢল নেমেছে। খুব সম্প্রতি ঢাকার রাস্তার একটি ভিডিও দেখলাম যেখানে একজন নারী একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভারের আসনে বসে থাকা একজন পুরুষকে (হয়তো মালিকও হতে পারেন) এলোপাতাড়ি থাপ্পর মারছেন, গাড়িতে লাথি দিচ্ছেন আর সমানে শাসাচ্ছেন। পোস্টের বক্তব্য আর অবস্থা দেখে বোঝা গেল, ওই ড্রাইভার বেমক্কা হর্ন দিয়ে বিরক্ত করায় ওই নারী তার গাড়ি বা রিক্সা হতে নেমে চড়াও হন ড্রাইভারের ওপর। আরো নেপথ্য ইতিহাস থাকতে পারে যা পোস্টে নেই। ভিডিওটি দেখে দু-রকম ধারনা হতে পারে।

-হয় ওই ড্রাইভার এমন কিছু করেছে যাতে ওই নারী বাধ্য হন প্রতিবাদ বা তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে।

-কিংবা ড্রাইভার যাই করুক, একজন নারী (বা পুরুষও) তাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রহার, আক্রমন করে বসতে পারেন না। খুব খেয়াল করে পড়বেন, আমি এখানে একজন নারী হয়ে কীভাবে একজন পুরুষকে মেরেছেন সেই প্রশ্ন করছি না। আমি শুধু আইন নিজের হাতে তুলে নেবার অধিকার আছে কিনা সেটা জানতে চাইছি।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। পোস্টটিতে প্রচুর নারী ও কিছু সংখ্যক পুরুষ পাঠক মন্তব্য করেছেন, মহিলাকে সাবাসী দিয়ে। অনেক রকম উৎসাহসূচক (আমি বলি উসকানীমূলক) মন্তব্য করা হয়েছে সেখানে। আমি এর বিপরীতে একটি প্রশ্ন করতে চাই, যদি ওইদিন গাড়ির ড্রাইভার একজন নারী হতেন (এখন প্রচুর নারী ড্রাইভ করেন) আর মারনেওয়ালা একজন পুরুষ হতেন, তবে কি ওই সাবাসী ও প্রশংসাসূচক বাক্যগুলো পুরুষটির জন্য বরাদ্দ হত? নাকি আমাদের ফেসবুক ম্যাপ ছি ছি ও ঢ়ি ঢ়িতে ভরে যেত? মানহানি কিংবা নারী নির্যাতনের মামলা হত কতগুলো? রীট আবেদনের ভারে উচ্চ আদালত অচল হয়ে যেত হয়তো। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে। নারী ও পুরুষ সমান হবার দাবীই যদি করি, তবে রাস্তাঘাটে, জনসমাজে একজন নারী যদি পুরুষকে, বয়ফ্রেন্ডকে থাপ্পর দিতে পারে, তবে ছেলেটি করলে আপত্তিটা কোথায়? একজন নারী যদি রিক্সাওলাকে ভাড়া নিয়ে ক্যাঁচালে থাপ্পর কসাতে পারেন, তবে রিক্সাওলা কেন নয়? প্রায়ই পাবলিক কেওজে শুনি, “ওই ব্যাটা, মেয়েমানুষের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শিখিসনি”? এর বিপরীতটা কখনো শুনি না। আমি একাধিকবার দেখেছি, বাসে ওঠার সময় হেলপার মহিলাকে হাত ধরে তুলতে যাওয়ায় মহিলাসহ বাসশুদ্ধ লোক হেলপারকে লোফার গালি দিয়ে সাইজ করতে। আবার একটু পরেই সেই বাসেই একজন নারী ওঠার সময় তাকে ধরে না তোলায় পড়ে গেলে বাসশুদ্ধ লোক হেলপারকে ‘হারামজাদা, ধরে তুলবি না” গালি দিতে। বাসে কেন মহিলাদের জন্য সীট সংরক্ষিত থাকবে সেটা আমি আজও জানি না। আপনার কি মনে হয় না, সংরক্ষন করে দেয়া অধিকার বরং নিজেই একটি অপমান। (এই রে, এবার নিশ্চই আপনি আমাকে বলবেন, ব্যাটা, নিশ্চই সুযোগ সন্ধানী। বাসে ভীড়ের সুযোগ নিতে চায়।)

কেউ কেউ বলেছেন, জগতে পুরুষ নির্যাতন হলেও সেটা পরিমানে ও তীব্রতায় খুব কম এবং নারীদের বঞ্চনার তুলনায় সেটি খুব নগন্য বিধায় সাহিত্যে, মিডিয়া সংস্কৃতিতে, পত্রিকায়, সমাজ মানসে সেটার প্রচার বা চর্চা কম হয়। তাছাড়া একজন নারীকে মানসিক, শারীরিক অত্যাচার, বঞ্চনা, প্রতারনা, প্রাণনাশ, অধিকারহীনতার বিপরীতে একজন পুরুষের ”সামান্য” মানসিক চাপ বা পীড়ন তেমন ধর্তব্যই নয়। আসলে কি তাই? একটা কথা আছে, Statistics is the biggest lie। তারপরও যদি ধরে নিই, পরিসংখ্যানের একটা গুরুত্ব আছে, তবে আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, নারীর প্রতি বৈষম্য নির্যাতনের যতটা পরিসংখ্যান মিডিয়ায়, লোকসমাজে প্রচার পায়, পুরুষের সবরকম নির্যাতনের সেই মাত্রায় ও সংখ্যায় প্রচার হয় কি? কোনো নির্যাতিত পুরুষ কি মিডিয়াতে, সমাজে, পরিবারে, বন্ধুমহলে কখনো প্রকাশ করবেন, যে তিনি স্ত্রী, মা, বোন, পার্টনার, মেয়েবন্ধু দ্বারা ব্লাকমেইল, নির্যাতন, ধর্ষন (!), প্রহার, প্রতারনার শিকার হয়েছেন? না, কখনোই বলে না। সুতরাং মাত্রাটা যে কম সেটি একটি মিথ্যা দাবী। তাছাড়া মাত্রায় কত কম হলে সেটি অপরাধ বলে গন্য হবে না-বলতে পারেন? আচ্ছা, নগন্য না হয় হলও, কিন্তু তবু দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশেষ আইন আছে, এমনকি শিশু নির্যাতনেরও, তার পাশাপাশি ব্যালেন্স করার জন্য একটি পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইন রাখার দরকার রাষ্ট্র কেন মনে করে না? একজন পুরুষ যদি মনে করেন, একজন নারী তাকে অন্যায়ভাবে প্রহার করেছেন, তাহলে তিনি কোথায় সুবিচার চাইবেন? রেগুলার আইনে, থানায়? হাহ, তাকে নিয়ে হেসেই থানার লোকেরা মরে যাবে। তারপর মামলা!

আমাদের দেশে যেমন ছেলেরা বিয়েতে যৌতুক নেয়-এই কমোন অভিযোগ আছে, যৌতুকের প্রতি সার্বজনীন মেজরিটির ঘৃনা আছে (যদিও আবার মনে মনে ভাবে, নিলে এমন ক্ষতি কী), যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের ভুুড়ি ভুড়ি অভিযোগ আছে তেমনি এর একটি বিপরীত ছবিও আছে। সেটা হল, দেনমোহর (যদিও সেটা মাত্র একটি বিশেষ ধর্ম গোষ্ঠীর)। আচ্ছা, আপনি যদি যৌতুককে না বলেন, তবে দেনমোহরকে কেন হ্যা বলছেন? দেনমোহরকে কি আপনার একরকম যৌতুক মনে হয় না? ভাই/বোন, আরেকটু পড়ুন-
১.যদি বলেন, দেনমোহর ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনমতে স্ত্রীর পাওনা: ও আচ্ছা। তো আপনি আর কোন কোন ধর্মীয় আইন সুন্দরমতো মানেন যে এটার প্রতি এত বাধ্যগত হলেন?
২.যদি বলেন, নারীর নিরাপত্তার কবচ এই মোহর তবে বলব, স্বামী কি তার নিরাপত্তার জন্য কোনো কবচ চেয়েছেন আপনার কাছ হতে? আর যদি লাভ ম্যারেজ হয়, তবে দীর্ঘকাল যার সাথে ভালবাসাবাসি করলেন, তার সাথে বিলীন হলেন, তার হাতে সবকিছু সঁপে দিলেন, যখন কোনো সামাজিক স্বীকৃতিও ছিলনা, তাকে এই ১২ বছর প্রেমের পর যেই বিয়ে করবেন তখনি নিরাপত্তা দরকার হল? যেদিন বিয়ে ব্যতিত তাকে শরীর সঁপে দিয়েছিলেন সেই প্রথম শিহরনের দিনেও নিরাপত্তা লাগেনি, লাগল আজ সেই সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক রূপ আর সামাজিক স্বীকৃতি পাবার পরে? স্টূপিডিটি মনে হচ্ছে না?
৩.যদি বলেন, দেনমোহর সামাজিক সংস্কৃতি, এটা যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে, এমন করেই বিয়ে হয়, তবে আমি বলব, ভাই/বোন, সামাজিক রীতিকেই যদি আপনি এত সমর্থন করেন, তবে সেই সমাজেই যদি আবার যৌতুক যুগ যুগ ধরে চলে এসে থাকে তবে সেটাও তো আপনার সম্মান করতে হবে তাই না?
৪.যদি বলেন, নবীজি দেনমোহর দিয়েছেন, সেজন্য আপনিও সেটা মানেন। (আমার কথা বলে রাখি, আমি ধর্মে গভীরভাবে বিশ্বাস করি।) নবীজি কত মোহর দিয়েছেন সেটাও ফলো করুন। সেটার বেশি নয়। ১০ লক্ষ/৫০ লক্ষ/১ কোটিতো অবশ্যই নয়। আপনি জানেন কিনা জানিনা, নবীজির কোনো এক বিবাহের মোহর ছিল সামান্য কয়েকমুঠো খেজুর বা কয়েকটা ভেড়া বা একটা জামা (রূপক অর্থে বললাম। বুজুর্গরা ঠিকঠাক বলতে পারবেন)। যারা ঘনঘন নবীজি (সাঃ)’র কাজকে রেফারেন্স হিসেবে হাজির করেন, তারা দয়া করে তার পুরো জীবনের সব অভ্যাসকে হুবহু মানুন। সুবিধা মতো শুধু নিজের স্বার্থে যা লাগবে সেগুলো করবেন-সেটা ভন্ডামী।
৫.যদি বলেন স্বামীদের চাপে রাখার জন্য যাতে বেয়ারা না হয় বা তালাকের কথা না ভাবে তাই মোহর: তবে তো বেহেনজী, আপনি বিয়ের আগেই জামাইকে ব্লাকমেইলের ধান্দা করছেন। বিয়েটাতো আপনার কাছে তাহলে একটা স্রেফ ডিল। স্ত্রীগণ, যদি স্বামী পাবার জন্য বিয়ে করেন, যদি সামাজিক জীব হবার জন্য বিয়ে করেন, যদি জীবনসঙ্গী পেতেই বিয়ে করেন, তবে দেন মোহরের মতো বিষয়ের পিছনে পড়ার দরকার নেই। শুধু স্বামীকেই বিয়ে করুন। তার টাকা, তার প্রতিপত্তি, তার বাধ্যতা, তার নিরুপায় অবস্থাকে না। (আমি মোটেই দেন মোহরের সমালোচনা করছি না। আমি করছি যৌতুককে ‍ঘৃনা করার বিপরীতে দেনমোহরকে পছন্দ করার বৈপরীত্যকে।)

প্রায়ই পত্রিকার পাতায় একটা খবর দেখি “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুনীর সঙ্গে সম্পর্ক। অতঃপর বিয়ে না করতে চাওয়ায় তরুণের নামে প্রতারনার মামলা।” এধরনের খবরের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কেসেই উক্ত তরুনীটি সবার সিমপ্যাথি পান। সবার মনে এই জাজমেন্ট কাজ করে-সম্পর্ক করার পরে বিয়ে না করতে চাওয়ায় পুরুষটি সর্বৈবভাবে দায়ী ও প্রতারক। অধিকাংশ কেসেই পুলিশ পুরুষটিকে ধরে নিয়ে যায় কিংবা মামলাতে পুরুষটি ফেসে যায় আর মিডিয়াও পুরুষটিকে মিডিয়া ট্রায়ালে দিয়ে দেয়। যদিও আমি জানি না, প্রেমের সম্পর্ক, যেটি দু’জন নরনারীর ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসম্মতিতে শুরু হয় তারপর যা কিছু ঘটে তাও সম্মতিতেই ঘটে ওই সময়টাতে ওই ছেলে ও ওই মেয়েটির মধ্যে কোনো চুক্তি হয় কিনা যে, তারা অবশ্যই বিয়ে করবে। আমরা তো মনে হয় মানসিক প্রেম (ও জৈবিক প্রেম) বিয়ে করার চুক্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় না। তাহলে সম্পর্কটি কোনো কারনে ভেঙ্গে গেলে বিয়ে করার বাধ্যকতার বিষয়টি কেন সামনে আসে?
আর বিয়ের বাধ্যবাধকতা কি শুধু ছেলেদের একার? ব্রেক আপের সময় গণহারে বলা হয় ছেলেটি মেয়েটিকে মিথ্যে ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে ভোগ করেছে। যদি সেটা হয়ে থাকে, তবে কি বিষয়টা এমন, ছেলেটি ইনটিমেট হবার সময় বলেছিল, “আমি তোমাকে বিয়ে করব। আসো..........”? আচ্ছা, তা যদি হয়ই, তাহলেতো মেয়েটি শুধু বিয়ে করার লোভেই ছেলেটির সব প্রস্তাবে হ্যা বলেছিল? আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় পারস্পরিক ভাল লাগা হতে প্রেমের সম্পর্ক (আজকাল অবশ্য ভালবাসার সম্পর্ক না বলে বলা ভাল জৈবিকতার চুক্তি) তৈরী হবার পরে কখনো কখনো মেয়েটি তার বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রকে বা কখনো নিজের ইচ্ছেতেই ধনী বা আপাত অধিকতর সম্পদশালী বা যোগ্যতর পাত্রের সাথে বিয়ে করতে বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে যায়। এমন ঘটনাও আকছাড় ঘটছে। এখন প্রশ্ন হল, এরকম কেসে প্রতারক পুরুষের সাথে যে আচরন করা হয় (মামলা, মিডিয়া ট্রায়াল, সোস্যাল ব্লেম) সেই একই চোখে মেয়েটিকে দেখা হয় কি? আমি তো আজ পর্যন্ত কোনো মিডিয়াতে একটাও এমন খবর দেখিনি যে, মেয়েটি বয়ফ্রেন্ড’র সাথে সবরকম সম্পর্কে জড়ানোর পরে, দু’চার বছর প্রেম করে অতঃপর ধনী পুরুষের গলায় ঝুলে পড়ার পরে তার ব্যাপারে এমন নিউজ কোথাও হয়েছে। নাকি বলবেন, মেয়েরা ছেলেকে ছ্যাঁকা দিয়ে যাবার ঘটনা বাংলাদেশে কখনোই ঘটে না।

নারীমুক্তির দূত পুরুষ ও রমনীবৃন্দ: আপনারা আমার নমস্যঃ। সিরিয়াসলি। তবে অনলাইন ও অফলাইন যত লেখা পড়ি সবগুলোতে ভিলেন ওই পুরুষ (অন্তত ৯৯% লেখায়), এটা খুব পিড়া দেয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের যুদ্ধটা পুরুষের বিরুদ্ধে না, পুরুষকে ইনফেরিয়র করে দেয়া না, পুরুষের এতদিনের ডোমিনেশনের প্রতিশোধের জন্য না। পুরুষকে নারীর বা নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রূ পরিগনিত করার জন্যও না। আমাদের লক্ষ্য নারীর মুক্তি, নারীর সত্যিকারের মর্যাদা অর্জন, তার প্রাপ্য সম্মান প্রতিষ্ঠা আর নারীকে পুরুষের মতোই একজন ব্যক্তিস্বত্ত্বা ও মানুষ হিসেবে পরিচয় প্রদান। মনে রাখবেন, নারীর মর্যাদা সমুন্নত করতে গিয়ে আমরা যেন নারীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী পুরুষকে ব্রাত্য করে না ফেলি। রবী ঠাকুর বলেছিলেন, “দুর্বলের কর্তৃত্ব ভয়ঙ্কর।” আর নারীকে ‘নারী’ হিসেবে ট্রীট না করে তাকে একজন ’মানুষ’ হিসেবে ট্রীট করলেই বরং তার মর্যাদা বাড়ে।

[এই পোস্টটি পড়ার পরে প্রচুর তীরের নিশানা হব আমি। সেগুলোর জন্য তৈরী থাকব। যেটার জন্য থাকব না, সেটা হল ’ত্যানা কমেন্ট’। আমি এখন হতে প্রতিটি লেখায় ত্যানা কমেন্ট নিজেই করে দিচ্ছি যাতে ত্যানা কমেন্টকারীদের আর কষ্ট করতে না হয়। এই পোস্টের ত্যানা কমেন্ট হল:
১.ভাই কি বাসায় নির্যাতিত?
২.ভাই, হঠাৎ করে এত পুরুষতান্ত্রীক হলেন কেন? আপনাকে তো লিবারেল জানতাম?
৩.আপনাকে অনেক আধুনিক ও উদারমনা ভাবতাম। এতটা মধ্যযুগীয় তা জানতাম না।
৪.ভাই, আপনিও সেই বুর্জোয়া পুরুষদের দলে ভীড়লেন?
৫.আপনার এত বড় সাহস, দেনমোহর নিয়ে ব্যঙ্গ করেন?
৬.বুঝেছি, নিজেকে ফোকাসে আনতে বিতর্কিত লেখা লিখছেন ইদানিং।]

ত্যানা কমেন্টের উত্তর হয় না। তাই ওই পথে হাঁটলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ৮:৫৯
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×