ভোরে ঘুম থেকে উঠেই জানালার পর্দা সরালাম, আর মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এক অতি অতি শ্বেত-শুভ্র সকাল আমাকে অভ্যর্থনা জানালো। সকালে এই চিত্র দেখবো মোটামুটি জানা ছিল, তারপরও কেমন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আগে থেকে জানা থাকলেও সত্যের মুখোমুখি হওয়া সবসময়ই ভিন্ন ব্যাপার। যতদুর চোখ যায়, যেদিকে চোখ যায়; শুধু সাদা আর সাদা। মনে হচ্ছে বাইরের পুরো জগতটাই শুভ্রতায় মোড়া এক অস্থির সৌন্দর্য। জানালার পাশ থেকে সরতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল সুপার গ্লু দিয়ে কেউ পা’দুটো ওখানেই লাগিয়ে দিয়েছে। ঘন্টাখানেক দাড়িয়ে থাকলাম। তখনও সমানে তুষারপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের ভাষ্য অনুযায়ী আজ সারাদিনই তুষার পাত হবে।
ইয়ার এন্ডিং এর জন্য এই সময়ে প্রচন্ড ব্যস্ততা থাকে। তার উপর আসন্ন বড়দিন আর নববর্ষের জন্য ২০ তারিখের পর আর তেমন কোন কাজ-কর্ম কেউ করে না। গোদের উপর বিষ-ফোড়ার মতো জানুয়ারীতে দেশে আসার প্রস্তুতি নেয়া। সব মিলিয়ে এত ব্যস্ত যে, সামুতেই ঠিক মতো আসতে পারি না, কিছু লেখা তো দুরের কথা! ভেবেছিলাম বেচে থাকলে দেশ থেকে ঘুরে এসেই লিখবো। কিন্তু এই অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি দেখে ভাবলাম, নিদেনপক্ষে একটা ছবি ব্লগ দেই। তারপর ভাবলাম, শুধুই ছবি দিবো? দু’চার কলম না লিখলে কেমন দেখা যায়!!!
কর্মস্থল ১০ মিনিটের ড্রাইভ দুরত্বে, লাগলো আধাঘন্টা! স্টিয়ারিং ঘুরাই একদিকে, গাড়ী যায় আরেকদিকে। চাকার সাথে রাস্তার কোনই যোগাযোগ নাই!
ঢোকার মুখেই জ্যাকব হৈ হৈ করে উঠলো, দেখেছো, কি সুন্দর! বড়ই দুঃখের বিষয়, তোমাদের দেশে এমনটা হয়না! উজবুকটা সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে দিল। এই পোলিশটা সবসময় বোঝানোর চেষ্টা করে, আমাদের দেশে ভালো কিছুই নাই! গাধাটাকে বললাম, চলো কফি খাই। খুশিতে নাচতে নাচতে চলে এলো।
ওকে বললাম, ঝুম বৃষ্টি দেখেছো? দশহাত দুরে দেখা যায় না এমন!
বললো, না তো! দেখিনি! এমন বৃষ্টিও হয় নাকি? হলেও তোমাদের দেশে হতে পারে কিন্তু তারপরই তো বন্যা হয়! আহা কি কষ্ট! বদমাশটার চেহারায় কোন কষ্ট নাই, খুশিতে ঝলমল করছে। ভাবখানা এমন, আইজ তোরে পাইছি! আমিও অবশ্য মনে মনে তাই বললাম।
বললাম, তুষারপাত অবশ্যই সুন্দর, কিন্তু ওই পাত পর্যন্তই। এরপরেই অসুন্দরের শুরু! সাদা তুষার লোকজনের পায়ের আর গাড়ীর চাকার চাপে কালো হয়ে যায়। শক্ত হয়ে গিয়ে লোকজনের আছাড় খাওয়া শুরু হয়। গলতে শুরু করলে চারিদিকে প্যাচপ্যাচে, থকথকে কাদার মতো হয়ে যায়, শরীর ঘিনঘিন করে।
আর বৃষ্টি!!!! সব ভালো। মুষলধারে বৃষ্টির সৌন্দর্য না দেখলে বুঝবে না। বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিউজিক। আর বৃষ্টির পরে!! চারিদিক ঝকঝকে, তকতকে। কোথাও একতিল ধুলা নাই। আর গাছ-পালা দেখলে তোমার মনে হবে এইমাত্র নতুন গাছ ফ্যাক্টরী থেকে এনে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে। শেষে শেষ পেরেকটা ঠুকলাম। বললাম, নেক্সট হলিডেতে গিয়ে ঘুরে আসো, দুনিয়াটা যদি নাই দেখলে, পার্থক্য বুঝবে কি করে? অন্ততঃ বোকার মতো কথা বলা তো তোমার বন্ধ হবে!!!
ব্যাটা মুখ ব্যাজার করে চলে গেল।
যাইহোক, এসেছিলাম ক’টা ছবি দেখাতে! বকবক করতে করতে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম। বাচাল লোকজন নিয়ে এই এক অসুবিধা, বিষয়বস্তুতে স্থির থাকতে পারে না! নিন, ছবি দেখুন।
আর হ্যা, সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা। আগামী বছরে সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সুন্দর সুন্দর লেখা পোষ্ট করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৩