somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরিয়ানীর রাজা, রাজার বিরিয়ানীঃ হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী - ২

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রথমেই প্রথম পর্বের লিংক বিরিয়ানীর রাজা, রাজার বিরিয়ানী ঃ হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী - ১

ফ্রীজে রাখা মেরিনেটেড চিকেন বের করার সময় হয়েছে। চলুন, এবার বিরিয়ানীটা রান্না করেই ফেলি, কি বলেন!!

আপনার এখন লাগবে একটা সসপ্যান জাতীয় হাড়ি, এটাকে কি বলে এগ্জাক্টলি জানিনা। হাড়ির তলা হবে ফ্ল্যাট, উপর থেকে নীচে সমান ব্যাসের, অনেকটা আগের জমানার আমাদের দেশী নায়িকাদের মতো। নাহ, একটা ছবিই দিয়ে দি, দেখুন



রান্নার সময় হাড়ি যেহেতু সীল করে দেয়া হয় তাই পাত্রের সিলেকশান টা খুব জরুরী। মনে রাখবেন, অন্যান্য রান্নার মতো একটু পর পর চেক করার উপায় কিন্তু নাই এখানে। ননস্টিক হলে ভালো, সেইফ থাকা যায়। মোটা এ্যালুমিনিয়ামের হলেও হবে। মোটা-পাতলার উপর নির্ভর করবে আপনার তাপ নিয়ন্ত্রন, অর্থাৎ, কোন তাপে কতোক্ষন রাখবেন। আমারটা ননস্টিক না, মোটা এ্যালুমিনিয়ামের। তাই আমার বর্ণনাও এই হাড়ি-কেন্দ্রিক! একটু বড় হাড়ি নিবেন। জানেন তো, ১ কেজি চাল আর তার থেকে যে ভাত তা সমান জায়গা নেয়না।

এবার মূল হাড়িতে মেরিনেটেড চিকেন অল্প আচে বসিয়ে দিন। আলাদা পানি দিবেন না। চিকেন ৫০% সিদ্ধ করবেন। তো, চিকেন হতে থাকুক, এই ফাকে আমরা চাল রেডি করি। ১ কেজি বাসমতি চাল ধুয়ে (হাল্কাভাবে নেড়ে-চেড়ে ধুতে হবে, খেয়াল রাখবেন চাল যেন না ভাঙ্গে) আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটা বুকে গারনী তৈরী করতে হবে। পাতলা রংহীন কাপড় লাগবে। আমি দেশ থেকে সাদা মশারীর কাপড় এনে সিদ্ধ (কোন ক্যামিকেল থাকলে তা ছাড়ানোর জন্য) করে রেখে দিয়েছি। ৫টা সবুজ এলাচ (দাত দিয়ে অল্প ভেঙ্গে), কালো এলাচ ৩টা (অল্প থেতলানো), লং ৫ টা, দারুচিনি ২টা মাঝারি সাইজ,২টা তেজপাতা, ২টা যাভিত্রি কাপড়ে রেখে পুটলী করে সুতা দিয়ে বাধুন, হয়ে গেল বুকে গারনী।

তো, হাতের কাছে সবকিছু রাখুন। কি কি রাখতে হবে?

ধন্যাপাতা কুচি, পুদিনাপাতা কুচি, তেল ছাড়া রোস্ট করা কাজু, কিশমিশ, ঘি, বেরেস্তা, স্যাফরন দুধ (অল্প দুধ হাল্কা গরম করে তাতে ৫/৬ টা স্যাফরন স্ট্র্যান্ড দিয়ে), ৪ টা সেদ্ধ ডিম হাফ করে কাটা, লাল ফুড কালার মেশানো পানি, গোলাপজল, কেওড়া জল, লেবুর রস, চাল সেদ্ধ করা পানি, আটা ডো করা (সীল করার জন্য)।

ইতোমধ্যে আপনার চিকেন ৫০% হয়ে যাওয়ার কথা। চিকেনের অর্ধেকটা একটা পাত্রে তুলে রাখুন। একটা পাত্রে পানি, বুকে গারনী,আস্তা জিরা (শাহী জিরা হলে ভালো), ২ টেচা তেল, গোলাপ বা কেওড়া জল দিয়ে সেদ্ধ করুন। পানি ফুটলে লবন (চিকেনেও দিয়েছেন, সেটা মাথায় রাখবেন) এবং চাল দিন। এই চাল আমরা সমান তিনভাগে তিনবার নিবো। আনুমানিক ৩০% সেদ্ধ হলে প্রথমবার, ৫০% হলে দ্বিতীয়বার আর ৭০% হলে শেষবার।

এবার মূল রান্নায় যাচ্ছি।

মূল হাড়িতে অর্ধেক চিকেন আছে, তাই না? এর উপর ধন্যাপাতা কুচি, পুদিনাপাতা কুচি আর বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন।
এর উপর ৩০% সেদ্ধ (তিন ভাগের এক ভাগ করে) চাল সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। তার উপর বাকী অর্ধেক চিকেন, ধন্যাপাতা কুচি, পুদিনাপাতা কুচি, ঘি, কাজু, কিসমিস আর বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন।
এর উপর ৫০% সেদ্ধ চাল, ডিম, ধন্যাপাতা কুচি, পুদিনাপাতা কুচি ঘি, কাজু, কিসমিস আর বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন।
ফাইনালী ৭০% সেদ্ধ চাল, কিছু অংশে স্যাফরন দুধ, বাকী অংশে লাল ফুড কালার মেশানো পানি, লেবুর রস, গোলাপজল, কেওড়া জল, ধন্যাপাতা কুচি, পুদিনাপাতা কুচি আর বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন।
আপনার চিকেনে কি পরিমান পানি ছিল, আর চাল দেয়ার সময় কি পরিমান পানি হাড়িতে গিয়েছে তার উপর নির্ভর করে রেখে দেয়া চাল সেদ্ধ পানি দিন। এবার ডো দিয়ে হাড়ি সীল করে চুলায় দিন। যেখানে টেচা/চাচা বা পরিমান বলি নাই সেখানে আপনার পছন্দমতো দিবেন।


এবার উচ্চ তাপে ৫ মিনিট, মাঝারী তাপে ১০ মিনিট, নিম্ন তাপে ১০ মিনিট, তারপর হাড়ি একটা তাওয়ার উপর রেখে মাঝারী তাপে ১০ মিনিট, নিম্ন তাপে ১৫মিনিট রান্না করেন। এর মধ্যেই ভিতরের স্টীম বের হওয়া শুরু হবে। স্টীমের পরিমান কমে গেলেই বুঝবেন যে, রান্না শেষ (স্টীম পুরো বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, তাতে করে পোলাও স্টিকি হয়ে যেতে পারে)। আটার সীল কেটে নিন। সাবধান, হাড়ির ঢাকনা নিজের দিকে খুলবেন না। মনে রাখবেন, আমার দেয়া তাপের স্কেল আপনার হাড়িতে কি পরিমান পানি আছে তার উপর ভিত্তি করে একটু উঠা-নামা করতে পারে তবে খেয়াল রাখবেন শুরুতে পানি যেন খুব বেশী না থাকে ভিতরে, বেশী থাকলে কিন্তু পোলাও ঝরঝরে হবে না।

এটুকু পড়ে আমি নিশ্চিত অনেকের মুখেই পানি চলে এসেছে! আমারও একই অবস্থা!!! বেশী ক্ষুধা লাগলে গার্নিস-ফার্নিস করে সময় নষ্ট করবেন না। গরম গরম খাওয়া শুরু করে দিন।

কেউ যদি এভাবে সীল করে রান্না করতে যথেষ্ট কনফিডেন্ট না হন তাহলে হাড়ি কিচেন টাওয়েল বা ফয়েল পেপার দিয়ে কাভার করে ঢাকনা দিয়ে তার উপর একটা খুব ভারী ওজনের কিছু দিয়ে দিবেন। এতে সুবিধা হচ্ছে, খুব সন্দেহ হলে একটু খুলে চেক করতে পারবেন। যদি দেখেন উপরের চাল পুরো সেদ্ধ এবং ঝরঝরে আবস্থায় পৌছে গিয়েছে, তাহলে নামিয়ে ফেলতে পারবেন।

এই বিরিয়ানী যেহেতু লেয়ার করা, পরিবেশনের সময় এক পাশ থেকে ফ্ল্যাট একটা চামচ ঢোকাবেন যেন এক পোরশানে সবকটি লেয়ারের রিপ্রেজেন্টেশান থাকে।

কেউ যদি সব্জী দিয়ে এটা বানাতে চান তাহলে সব্জী লাগবে গাজর, আলু, ফুলকপি, বরবটি এবং মটরশুটি। মাঝারী সাইজের কিউব করে কাটা সব্জী চিকেনের জায়গায়, বাকী সব একই রকম।

হ্যাপি কুকিং। আর হ্যা, কেউ যদি এই বিরিয়ানী বানান তাহলে ছবি দিতে ভূলবেন না। আমরা ভার্চুয়ালী তো একটু খেতে পারবো!!!

ছবি, তথ্য নেট থেকে।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৩
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×