somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইস্তান্বুলের অলি-গলিতে কয়েকটা দিন - তৃতীয় পর্ব

২১ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইস্তান্বুলের অলি-গলিতে কয়েকটা দিন - দ্বিতীয় পর্ব

আজও খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো, ফজরের আজানের শব্দে। ইংল্যান্ডে তো মসজিদের আজান শোনার সৌভাগ্য হয় না! হোটেলের কাছেই একটা মসজিদ আছে, শুয়ে শুয়েই আজান শুনলাম। মনটা অন্যরকম ভালো হয়ে গেল।

আজকে বেশ ব্যস্ত প্রোগ্রাম। সুলতান আহমেত কমপ্লেক্স এবং এর আশেপাশে যে কয়টা দর্শনীয় স্থান আছে, সবগুলোই আজ দেখতে হবে, অন্ততঃ যে কয়টা পারি! নাস্তা করে সকাল সাড়ে নয়টায় হোটেল থেকে বের হয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য হাগিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম, প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থানের আলাদা টিকেট তো কাটাই যায়, বেশীর ভাগ স্থান কাভার করে এমন কম্বাইন্ড টিকেটও করা যায়! দামও একটু সস্তা পড়ে! যেহেতু আমার ইচ্ছা যতোবেশী সম্ভব দেখা, তাই কম্বাইন্ড টিকেট টাই করে ফেললাম।

হাগিয়া সোফিয়ার তৈরীকাল ৫৩২-৫৩৭ খৃষ্টাব্দ, একটা ক্যাথেড্রাল হিসাবে। ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত এটা চার্চ বা ক্যাথেড্রালই ছিল। এরপর মুসলমানদের অধীনে আসার পর এটাকে মসজিদে রুপান্তর করা হয়, সবশেষে ১৯৩৫ সালে এটাকে মিউজিয়ামে রুপান্তর করা হয়। আমি যখন যাই, তখন এর ভিতরে রক্ষনাবেক্ষনের কাজ চলছিল, তাই প্রানভরে দেখতে পারি নাই। কয়েকটা ছবি দিলাম।

মুসলিম এবং খৃষ্টান আমলের ফ্রেসকো, পাশাপাশি



খৃষ্টান আমলে এখানে রাজ্যাভিষেক হতো



খৃষ্টান আমলের ফ্রেসকো উদ্ধারের চেষ্টা



মসজিদ সময়কালের মিম্বর



আরও তিনটি ছবি





হাগিয়া সোফিয়ার পাচটা গম্বুজের নীচের স্থাপনায় সুলতান, তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং নিকটাত্বীয়দের সমাধি রয়েছে। সমাধিগুলোর চারটা ছবি দিলাম।






পরের গন্তব্য বিখ্যাত ’ব্লু মস্ক’। কপাল অত্যাধিক খারাপ হলে যা হয়! দেখি, নোটিশ ঝুলানো, রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মসজিদ ট্যুরিষ্টদের জন্য বন্ধ। রমযানের পর খুলবে আবার। মন খারাপ করে চলে গেলাম টপক্যাপি প্যালেস দেখতে।

১৪৫৯ সালে এই প্রাসাদের নির্মানকাজ শুরু হয়। নির্মানের পর এটি সুলতানের বাসভবন হিসাবে ব্যাবহার করা শুরু হয়। ১৮৫৬ সালে সুলতান আব্দুল মেজিদ - ১ নবনির্মীত দোলমাবাহচে প্রাসাদকে বাসস্থান হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করলে টপক্যাপি এর গুরুত্ব হারায়। ১৯২৩ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৯২৪ সালে এটাকে মিউজিয়াম হিসাবে ঘোষনা করা হয়।

মূল প্রাসাদে ঢোকার তোরণ



মূল প্রাসাদের জায়গায় জায়গায় এমন পানিপানের ব্যবস্থা



প্রাসাদের ফুলের বেডের দুইটা স্যাম্পল ছবি




যুবরাজদের মুসলমানী কক্ষের ছাদের কারুকাজ। যুবরাজরা ছাদের কারুকাজ দেখে হয়তো ব্যাথা ভোলার চেষ্টা করতো!!!



এই ঘরে মহানবী (সাঃ) এর আঙরাখা সংরক্ষিত আছে। ভিতরে ঢোকা নিষেধ।



প্রাসাদের তৃতীয় আঙ্গিনাতে সুলতানের ব্যক্তিগত কয়েকটা কক্ষে মহানবী (সাঃ), বিভিন্ন নবী-রাসুল এবং চার খলিফার ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী রাখা আছে। দেখতে দেখতে কখন জানি চোখে পানি চলে এসেছিল, নিজেও জানিনা। ছবি তোলা খুবই স্ট্রিক্টলি নিষেধ, তাই আপনাদেরকে দেখাতে পারলাম না।

প্রাসাদের একটা ইন্চিও কোনরকমের কারুকাজ ছাড়া নাই। ফুটপাথ, বারান্দা সম্পূর্ণটাই শ্বেত / মার্বেল পাথরের। কয়েকটা র‌্যান্ডম ছবি দিলাম।






এবার হারেমের কয়েকটা ছবি। প্রথমেই রাণীমাতার বসার ঘরের দুইটা ছবি




হারেমে সুলতানের ব্যক্তিগত বিশ্রামকক্ষ



হারেমে একটা করিডোরের দেয়ালের কারুকাজ



প্রাসাদে চাকচিক্য আর বিলাসিতার ছড়াছড়ি দেখে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের কারন কিছুটা বুঝতে পারলাম। প্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেলাম কাছেই মহানবী (সাঃ) এর একজন সাহাবীর মাজারে। ইনার নাম হযরত আব্দুর রহমান সামী তুরবেসী (রাঃ)। খুব বেশী জানতে পারিনি উনার সম্পর্কে, শুধু জানতে পারলাম মুসলমানদের কোন একটা কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধের সময় ইনি শহীদ হন।





ছবিঃ প্রথমটা নেট থেকে, বাকিসব আমার ক্যামেরা ও ফোন থেকে।
তথ্যঃ বিবিধ।

ইস্তান্বুলের অলি-গলিতে কয়েকটা দিন - চতুর্থ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৪২
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×