somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঘমামার ইন্টারভিউ

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অনেকদিন আগে সামু কর্তৃপক্ষ আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিল। সেটা ছিল সুন্দরবনে গিয়ে সুন্দরবনের রাজা ''দ্য গ্রেট রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার'' ওরফে বাঘমামার একটা এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ নেয়া। অনেক অনেক দিনের চেষ্টা-চরিত্র আর তদবিরের পর সুন্দরবনের রাজা বাঘের ইন্টারভিউ নেয়ার এপয়েন্টমেন্ট মিললো। আমাকে বলা হলো ইন্টারভিউ এর সময় হবে খুবই সীমিত। আগেই পই পই করে আমাকে সাবধান করা হয়েছিল, দিনেরবেলা মামার বিশ্রামের সময়। বিশ্রাম ছাড়া অন্য কিছু করলে সেইসময় উনার মেজাজ তিরিক্ষী হয়ে থাকে। তাছাড়া সময়ের ব্যাপারে উনি খুবই পান্কচুয়্যাল। তাই কথা-বার্তা যেন হুশ করে বলি, আর নির্দিষ্ট সময়ে যেন উপস্থিত থাকি। সে অনুযায়ী সকাল সকাল রওয়ানা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়েই পৌছলাম। পৌছে দেখি, মামা আমার আগেই হাজির। বেশ আয়েশ করে গা এলিয়ে আধশোয়া অবস্থায় মামাকে দেখে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গিয়ে থমকালাম। মামার কোনটা হাত, আর কোনটা পা? তো মামা জিজ্ঞেস করলো, কিরে চুপ কইরা আছোস ক্যান? আমি বললাম, মামা, আপনার পা কোনটা? প্রথম দেখা। সালাম করেই ইন্টারভিউ শুরু করি। মামা মোচে তা দিয়ে মুচকি হেসে বললো, থাক, সালাম করতে হইবো না। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ! কথা শুরু কর!

আমিঃ তথাস্ত। তো মামা, প্রথমেই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান সময় আমাকে দেয়ার জন্য! সামু কর্তৃপক্ষ এইজন্য তাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার মাধ্যমে আপনাকে জানাচ্ছেন।
বাঘমামাঃ আর মুল্যবান সময়! এই সময় তো আমি হুইয়াই থাকি। আচ্ছা, কথা শুরু করনের আগে তোরে একটা কথা জিগাই। মফিজ তোগো নাম হয়, ঠিক আছে। কিন্তু নামের আগে ভুয়া লাগাইছোস ক্যান? আর প্রোপিকে আমার ফটোই বা দিছস ক্যান?
আমিঃ বাদ দেন মামা। শরম দিয়েন না। আমার কথা বাদ। আজকে শুধুই আপনার কথা।
বাঘমামাঃ হুহ্! আচ্ছা যা, বাদ। তোর জন্য বরাদ্দ সময় এমনেও কম। নে শুরু কর!

আমিঃ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান হলো গিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা। আপনাদেরতো বস্ত্র লাগে না। আপনারা উলঙ্গ থাকতেই.. ... .. ..যাই হোক, বাসস্থানের ব্যাপারে আপনারা নাকি খুবই চিন্তিত?
বাঘমামাঃ হ। চিন্তা তো হইবোই। সরকার তো আমাগো কথা ভাবে না। আমরাও তো এই দেশের-ই নাগরিক, নাকি? বিদ্যুত তোগো লাগে, আমাগো তো লাগে না। তোগো সুবিদার লাইগা আমাগো থাকনের জায়গা নষ্ট করার মানে কি?
আমিঃ কিন্তু সরকার বলেছে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। তবুও আপনারা চিন্তা করছেন কেন?
বাঘমামাঃ সরকার তো কতো কথাই কয়। সব ভোটের রাজনীতি, আমরা কি বুঝি না! আমাগো ভোটও নাই, তাই আমাগো লয়া কুনও চিন্তাও নাই।
আমিঃ শুনলাম ওপার বাংলার বাঘ সম্প্রদায় নাকি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করেছে! বেশী সমস্যা হলে আপনাদেরকে ওপারে চলে যেতে বলেছে?
বাঘমামাঃ হ। একটা মিটিং অবশ্য হইছিল। কিন্তু ওগো লগে আমাগো মিলে না। ওরা কথা কয় অন্যরকম কইরা। চাল-চলনও আলাদা। মিটিং এ খাইতে দিছে পচা মাংস! মুখেও দেওন যায় না। এইডা কুনো কথা হইলো, ক দেহি? তাছাড়া বাপ-দাদার ভিটামাটি ছাইড়া যাইতেও মন চায় না। কি যে করুম!!!

মামা উদাস চোখে দুরে তাকিয়ে রইলো। মামার মন খারাপ আমাকেও স্পর্শ করলো। লেজ টান টান করে মাটিতে হাল্কা হাল্কা বাড়ি দিতে দেখে বুঝলাম মামার মেজাজও খারাপ হচ্ছে ধীরে ধীরে। আমি চুপ করে বসে রইলাম। কিছুক্ষন পর ফোস করে বড় একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,

বাঘমামাঃ যাউক গা, এহনও সময় আছে। দেহি কি করন যায়! সবার লগে বইতে হইবো। জানোস, মাঝে মাঝে মইরা যাইতে ইচ্ছা করে। মনে কয়, ওই হারামী কুমিরগুলারে কই; আয়, আমাগোরে খাইয়া হালা!
আমিঃ মরলে কিভাবে হবে? আপনারা দেশের গর্ব। আপনাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে কতো পর্যটক সুন্দরবনে আসে।
বাঘমামাঃ এইদিন আর বেশীদিন থাকবো না। এরপরে আমাগো দেখতে মিরপুর আর শাহবাগে যাওন লাগবো। কষ্ট কইরা আর এতোদুরে আইতে হইবো না!

আমিঃ মন খারাপ করবেন না মামা। আমরাও চেষ্টা করছি সরকারকে বোঝাতে। এবার একটু অন্য প্রসঙ্গ। আমাদের ক্রিকেট টিমকে টাইগার্স বলে, জানেন তো নিশ্চয়ই। এদের ব্যাপারে আপনার মুল্যায়ন কি?
বাঘমামাঃ মুল্যায়ন আবার কি? এরা একদিন ভালো কইরা খেলে তো দশদিন খারাপ খেলে। মাঝে মইদ্যে এমন খেলে যে ওইপাড়ের হ্যাগো কাছে লজ্জায় মুখ দেহাইতে পারি না। তোরা তো কস বিলাই আর আমরা একই রকমের। তো ওগো নাম বদলাইয়া ক্যাটস রাখোছ না ক্যান? খামাখা আমাগো বদনামের ভাগীদার করার মানে কি? ওগো টাইগার কয়া ডাকতে কইছে কুন হালায়?
আমিঃ তবুও আমরা আশা করি, ওরা একদিন না একদিন আমাদের মুখ উজ্জল করবেই!
বাঘমামাঃ আর মুখ! মুখ থাকলে না উজ্জল! ওগো এইহানে পাঠায়া দে। আমরা গিয়া খেললেও ওগো থিক্যা ভালো খেলুম!

আমিঃ এইবার একটা অফটপিক প্রশ্ন। বিড়ালকে বাঘের মাসি বলা হয়। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কি?
বাঘমামাঃ তরা কস, আমরা কই না, স্বীকারও যাই না। কই শেখসাদী, আর কই ছাগলের লাদী। আমরা খাই হরিণের মাংস, হ্যারা খায় কাডা-কুডা। এক হইলো!
আমিঃ কিন্তু ওদের সাথে আপনাদের চেহারা, আচার আচরনেও তো মিল আছে!
বাঘমামাঃ চেহারা, আচার আচরনে তো তোগো লগে বান্দরেরও মিল আছে। তাই বইলা কি আমরা কই তোরা বান্দরের ভাতিজা? বিলাই গো লগে আমাগোর তুলনা! থাবড়াইয়া কানকুন ফাডানের আগেই ভাগ এইহান থিকা। ফাজিল কুনহানকার!

মামার রুদ্রমূর্তি দেখে আর কথা বাড়ানোর সাহস পেলাম না। পৈতৃক জান টা নিয়ে ইন্টারভিউস্থল থেকে চলে এলাম।


ফটো ক্রেডিটঃ গুগল।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:২৮
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×