সাম্প্রতিক দুটো ঘটনা ১) যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাসি নিয়ে পাকিস্তান সরকার এবং রাজনীতিকদের অবস্থান। ২) নিউ ইয়র্কে ভারতীয় দুতাবাসের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল দেবযানী খোবড়াগাড়ে কে গ্রেফতার।
বাংলাদেশ পাকিস্তান বিতর্ক – ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ইসলামীর শীর্ষ নেতা মীরপুরের কসাই হিসেবে পরিচিত কাদের মোল্লা কে ফাসির রায় দেন সুপ্রীম কোর্ট গত সেপ্টেম্বরে। ইতিপূর্বে দেওয়া যাবজ্জীবন কারা দন্ডের আদেশ খারিজ করে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন সুপ্রীম কোর্ট। বিরোধী দল বি এন পি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুনাল এর এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, এমনকি এক সময় দাবী করে কাদের মোল্লাহসহ অনান্যেরা নির্দোষ, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ বিচার করছে ইত্যাদি। অতঃপর ১২ ই ডিসেম্বর রাত ১০-০১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাসির আদেশ কার্যকর করা হয়। বি এন পি কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও জামায়াতে ইসলাম একে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে অভিহিত করে, হরতাল ধর্মঘটের ডাক দেয়, কাদের মোল্লাহ কে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলে ।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াঃ- পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্ট নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে “This House expresses deep concern on hanging of a veteran politician of Jamaat-e-Islami Bangladesh for supporting Pakistan in 1971 । নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী নেতা শের আকবর খান। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ট দল মুসলীম লীগ এর সমর্থনে এ নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়। পরিষদ আরো দাবী জানায় ১৯৭১ সালের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের বাড়াবাড়ি করা উচিত হবে না ।সমস্ত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাতিল করতে দাবী জানায় পরিষদ। পাকিস্তানের স্বরাস্ট্র মন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান এ ফাসিকে দুর্ভাগ্য জনক আখ্যায়িত করে জানান আব্দুল কাদের মোল্লাহ শেষদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় ক্রিকেটার এবং তেহেরিকে ইনসাফ নেতা ইমরান খান বলেন Bangladesh Jamaat-e-Islami (JI) leader Abdul Quader Molla was innocent and charges against him were false।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা আব্দুল সাত্তার বাচানী বলেন “ জামায়েত ইসলামী নেতার বিচার একান্তই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপার । পাকিস্তান সরকারের উচিত হবে না কোন এক স্বাধীন দেশের দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাক গলানো। পিপিপি, মোহাজির কওমি মুভমেন্ট এবং আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির সদস্যেরা জাতীয় পরিষদের নিন্দা প্রস্তাবে সাক্ষর করেন নি।
ঘটনা দুইঃ- আমেরিকা বনাম ভারত - কাদের মোল্লার ফাঁসির একই দিনে ১২ই ডিসেম্বর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে ভারতীয় কুটনীতিক ৩৯ বছর বয়স্ক দেবযানী খোবড়াগেড়ে কে গ্রেফতার করে নিউ ইয়র্ক পুলিস। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার গৃহপরিচারিকার ভিসা নিতে মিথ্যা তথ্য দেন এবং গৃহ পরিচারিকার প্রাপ্য সর্ব নিম্ন বেতন দিচ্ছেন না। দেবযানীকে সবার সামনে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর উলঙ্গ করে দেহ তল্লাসী করা হয় এবং মাদকাসক্তদের সাথে একসাথে হাজতে রাখা হয়। পরে তাকে আড়াই লক্ষ ডলার জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। এ অভিযোগ প্রমানিত হলে দেবযানীকে Visa fraud এর জন্য ১০ বছর এবং মিথ্যে কথা বলার জন্য ৫ বছর , সর্বমোট ১৫ বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।
ভারতের প্রতিক্রিয়াঃ- ভারত দেবযানীর গ্রেফতার এবং পরবর্তিতে তার প্রতি আচরনকে ভিয়েনা কনভেনশনের লংঘন হিসেবে অভিহিত করে যদিও আমেরিকার দাবী করে দেবযানীর সাথে ভিয়েনা কনভেনশান অনুযায়ীই ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারত সরকারের পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দীন দিল্লিতে জানান “একজন কূটনীতিকের সাথে আমেরিকার এহেন আচরনকে ভারত গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে , ভারত বিস্মিত এবং আতঙ্কিত। ওয়াশিঙটনের ভারতীয় দুতাবাস প্রতিবাদ পাঠায় আমেরিকার কাছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পররাস্ট্র মন্ত্রী সালমান খুরশীদ , বিজেপি নেতা অরুন জেঠলী এবং যশোবন্ত সিং, কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা , রাহুল গান্ধী সবাই আমেরিকার নিন্দা করেন।
নয়া দিল্লীতে আমেরিকার দুতাবাসের সামনে থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যারিকেড অপসারন করে নিয়ে যায় দিল্লী পুলিস। দিল্লীর সমস্ত আমেরিকান দুতাবাসের কর্মচারিদের তাদের হিসেব নিকেশ দিতে বলা হয়। বিমান বন্দরে আমেরিকান কুটনীতিকদের বিশেষ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে ভারত। সফর রত আমেরিকার কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সাথে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন, রাহুল গান্ধী, বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী এবং অনান্যেরা। আমেরিকান সমকামী কূটনীক ভারতীয় ভিসা নিয়ে দিল্লীতে অবস্থান করছেন কিন্তু সমকামিতা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী।
দেবযানীর গ্রেফতার নিয়ে ভারতীয় সরকার এবং বিরোধী দল বিজেপি’র অবস্থান অভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে পাকিস্তানের নাক গলানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বি এন পি’র কোন বক্তব্য নেই। উন্নয়নশীল দেশ ভারত ক্ষমতাশালীন আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিচ্ছে যেখানে ভারত আমেরিকান প্রযুক্তি এবং পুজির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের পাকিস্থানের উপর নির্ভরশীলতা খুব বেশী নেই ।
আমাদের দেশের অপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবী জানানোর কি অধিকার আছে পাকিস্তানের? কি অধিকার আছে পাকিস্তান সরকারের আমাদের আভন্তরীন ব্যাপারে নাক গলানোর, নিন্দা প্রস্তাব পাশ করার? ভারতের ক্ষমতাশীল এবং বিরোধী দল যদি অভিন্ন অবস্থান নিতে পারে তাহলে আমরা কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই অবস্থান নিতে পারি না?