somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিম মানুষ(Archaic human )।

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীতে কত বছর ধরে মানুষ বাস করছে? মানুষ কারা? আদিম যুগের মানুষদের বসবাসের কি কি সাক্ষ্যপ্রমান আবিস্কৃত হয়েছে? সেই আদিম যুগে তাদের কি কি প্রতিকুলতার মোকাবেলা করতে হত? কেমন ছিল তাদের জীবনযাত্রা প্রনালী? সে যুগের মানুষদের জীবনের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদিই বা কেমন ছিল?

সুইডেনের প্রকৃতি বিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus ) ১৭৫৩ সালে প্রানীজগতের শ্রেনীবিভাগগের যে পদ্ধতির প্রচলন করেন তার নাম হল Binomial Nomenclature । ফাইলাম, অর্ডার, ফ্যামিলি, ইত্যাদি হয়ে এসে শেষ হয় স্পিসিস এ। এই পদ্ধতিতে কোন প্রানীকে দুটো অংশ দিয়ে বোঝানো হয়ে থাকে। প্রথমটি হল জেনাস এবং দ্বিতীয়টী হল স্পিসিস। পৃথিবীর আধুনিক মানুষদের বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Homo sapiens ।ল্যাটিন শব্দ Homo এর অর্থ হল মানুষ এবং sapiens শব্দের অর্থ হল জ্ঞানী। আধুনিক মানুষের আগে পৃথিবীতে বাস করত যে মানুষেরা তারা বুদ্ধিবৃত্তিতে আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। মানুষের অর্ডার হল প্রাইমেট(Primate) এবং সুপাফ্যামিলি হল এপ(Ape)। মানুষ বানর শিম্পাঞ্জী গোরিলা লেমুর প্রভৃতি প্রানীদের বলা হয়ে থাকে প্রাইমেট। এদের বৈশিষ্ঠ্য হল এরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে,পরস্পরের সাথে শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে এবং দু’পায়ে চলাফেরা করতে পারে। প্রাইমেটদের মধ্যে আবার যে সমস্ত প্রানীদের লেজ নেই তাদেরকে বলা হয়ে থাকে Ape ।


শারীরিক গঠন বা এনাটমীগত দিক দিয়ে আধুনিক মানুষের প্রায় হুবহু দেখতে মানুষেরা কয়েক লক্ষ বছর আগে থেকে মাত্র কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে বাস করত। এই সমস্ত মানুষ এবং আধুনিক মানুষদের সবাইকে একই জেনাস হোমো( Homo) এর অন্তর্ভুক্ত বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সেই সময়ের মানুষেরা আজ বিলুপ্ত এবং তাদের রেখে যাওয়া সাক্ষ্যপ্রমান থেকে তাদের শারীরীক গঠন, জীবনযাত্রা প্রনালী এবং সেই সময়ের পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা। এই বিলুপ্ত মানুষেরাই হল Archaic human। দু’পায়ে সোজা হয়ে চলাফেরা করতে শেখা Homo erectus এর সবচে’ পুরনো জীবাশ্মের হদিস মেলে প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় , আর সবচে’ পুরোনো আধুনিক মানুষ বা Homo sapiens এর জীবাশ্মেরও দেখা মেলে আফ্রিকাতেই যার বয়স হল মাত্র এক লক্ষ পচানব্বই হাজার বছর। এ থেকেধারনা করা হয় যে আফ্রিকাতেই আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সদের উৎপত্তি এবং সেখান থেকেই মানুষেরা পৃথিবীর অনান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আবিস্কৃত সাত লক্ষ বছরের পুরোনো Homo erectus সদৃশ Hobbit দের জীবাশ্ম আবিস্কারের ফলে ধারনা করা হয়ে থাকে যে আধুনিক মানুষে বা Homo sapiens এ বিবর্তনের আগেই এরা এখানে এসে থাকবে।


পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে প্রাপ্ত Homo sapiens মানুষদের জীবাশ্ম এবং তাদের বয়সকাল
আফ্রিকা :- পূর্ব আফ্রিকা- ওমো-১- ১৯৫,০০০ বছর,
হার্ট-১৬০,০০০ বছর, লায়েতোলি- ১২০,০০০ বছর

এশিয়া- চীন- ১৬০,০০০ বছর, ১০০,০০০ বছর, লাওস- ৬০,০০০ বছর

ইউরোপ- রোমানিয়া-৩৬,০০০ বছর, চেকোস্লোভাকিয়া-৩৫,০০০, ফ্রান্স- ৩৫,০০০ বছর

অস্ট্রেলিয়াঃ- ৬০,০০০ বছর।

আমেরিকাঃ- ১৩,০০০ বছর।

ইজরায়েল -৯৫,০০০ বছর।




Homo erectus এবং Homo sapiens এর মাঝখানের মানুষেরা হল Archaic human। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন Homo erectus থেকে Archaic human এবং তাদের থেকে বিবর্তনের ফলেই আধুনিক মানুষের উৎপত্তি। Archaic human এর তালিকায় স্থান পাওয়া আদিম মানুষেরা হল Homo heidelbergensis, Homo rhodesiensis, এবং Homo neanderthalensis । দুই হাজার আট সালে সাইবেরিয়ায় আবিস্কৃত ডেনিসোভিয়ান(Denisovian) মানুষেরা এবং Homo floresiensis বা Hobbit দেরকেও এই সমস্ত Archaic human বা আদিম মানুষদের অন্তর্গত বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এরা আধুনিক মানুষদের সাথে এতটা সদৃশ ছিলেন যে তাদের আলাদাভাবে বোঝার উপায় ছিল না অনেক ক্ষেত্রে।উদাহরন স্বরুপ বলা যায় ছয় লক্ষ বছর আগে থেকে মাত্র ত্রিশ হাজার বছর পূর্বে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় বসবাসরত নিয়েন্ডারথাল মানুষদের সাথে আধুনিক মানুষের জেনোম বা ডিএনএ এর পার্থক্য মাত্র ০.১২% ভাগ। অনেক বিজ্ঞানী এই সমস্ত মানুষদেরকে Homo sapiens এর অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকেন। অতি সম্প্রতি ইউরোপে জীন ম্যাপিং এর সাহায্যে দেখা গেছে যে শতকরা ১ থেকে ৪ ভাগ মানুষদের মধ্যে নিয়েনডারথাল মুনষদের জীণ পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারনা করা হয় যে নিয়েনডারথাল দের সাথে আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সদের মেলামেশা ঘটে থাকবে।



কবে প্রানী দু’পায়ে হাটা শিখেছিল?
শিম্পাঞ্জী গোরিলা প্রভৃতি প্রানী মাঝেসাঝে দু’পায়ে সোজা হয়ে দাড়ালেও তারা প্রধানতঃ চার পায়েই চলাফেরা করে। প্রাচীনতম অর্থাৎ ষাট লক্ষ বছরের পুরোনো sahelanthropus দের জীবাশ্ম থেকে তাদের দুপায়ে চলাফেরা করার প্রমান পাওয়া যায়। ষাট থেকে ত্রিশ লক্ষ বছর পর্যন্ত মানুষ সদৃশ প্রানী গুলো কখনো দুপায়ে আবার কখনো চার পায়ে চলা ফেরা করত। প্রায় বিশ লক্ষ বছরের পুরনো Homo erectus দের মেরুদন্ড, উরুসন্ধি, পায়ের হাড় প্রভৃতি অংশের সাথে আধুনিক মানুষদের হাড়ের সাদৃশ্য থেকে ধারনা করা হয় যে শুধুমাত্র দুপায়ে চলা প্রথম প্রানী ছিল তারাই।
দুপায়ে চলাফেরা করার সুবিধাঃ- ১। হাতের সাহায্যে গাছে উঠে ফল ফুল সংগ্রহ করা ২। দুই হাত হাটাচলা করার পরিবর্তে অনান্য কাজ যেমন খাদ্য দ্রব্য বয়ে নিয়ে যাওয়া, অস্ত্রশস্ত্র বহন করা , সন্তানদের বয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কাজ করার জন্য ব্যবহার করা ৩) দুপায়ে দাড়ালে উচ্চতা বেশী হয় যাতে অনান্য প্রানী ভয় পায় এবং অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় যাতে আত্মরক্ষা করা বা আক্রমন করতে বেশী সময় পাওয়া যায়(চলবে)
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×