somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিম মানুষ (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিয়েন্ডারথাল মানুষঃ- আধুনিক মানুষ বা Homo sapiens দের নিকটতম আত্মীয় হল নিয়েন্ডারথাল মানুষেরা।
আবিস্কারঃ- ১৮৫৬ সালের আগস্ট মাসে জার্মানীর প্রুশিয়ার নিয়েন্ডার উপত্যকা বা নিয়েন্ডারথালে নির্মান শ্রমিকেরা পাথর তুলতে তলতে এক গুহার মধ্যে খুজে পেল মানুষের মাথার খুলি, হাত পা’ এবং পাজরের কিছু হাড়। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমীর অধ্যাপক Hermann Schaafhausen হাতে পড়ল সে হাড়গুলো। আপাত দৃস্টিতে সে হাড়গুলো আমাদের মত মানুষের মনে হলেও কিছু কিছু পার্থক্য নজরে পড়ল অধ্যাপকের। মাথার খুলির হাড়ে ভ্রু এর হাড় অস্বাভাবিকভাবে উচু, খুলিতে কপালের উচু অংশ নেই, মানুষের মাথার খুলির মত উচু না হয়ে কপাল সমান হয়ে চলে গেছে পেছনের দিকে, এবং থুতনী নেই বললেই চলে। ১৮৫৭ সালে অধ্যাপক Schaafhausen নিয়েন্ডার উপত্যকায় খুজে পাওয়া হাড়গুলো বিজ্ঞানী সমাজে তুলে ধরলেন। নিয়েন্ডারথাল মানুষেরা হল প্রথম খুজে পাওয়া মানুষের জীবাশ্ম। সাড়া পড়ে গেল চারিদিকে। এর আগে ভিন্নতর মানুষ প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমান কেউ তুলে ধরতে সক্ষম হন নি। জার্মান শব্দ থাল এর অর্থ হল উপত্যকা ।





৭০,০০০ বছরের পুরোনো নিয়েন্ডারথাল মানুষের মাথার খুলির উপর কম্পিউটারের সাহায্যে পূনররগঠিত মুখমন্ডল।


নিয়েন্ডার উপত্যকায় খুজে পাওয়ার কারনে ভুতত্ববিদ William King ১৮৬৪ সালে এই আদিম মানুষদের নাম দিলেন নিয়েন্ডারথাল মানুষ বা Homo neanderthalensis । এর আগে ১৮২৯ সালে বেলজিয়ামে এবং ১৮৪৮ সালে স্পেনে নিয়েন্ডারথাল মানুষদের জীবাশ্ম খুজে পাওয়া গেলেও সে গুলোকে মানুষের জীবাশ্ম হিসেবে সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি।১৮৫৯ সালে ডারউইন যখন তার বই Origin of species এ বিবর্তনবাদ তত্ব উপস্থাপন করলেন বিজ্ঞানীরা তখন ভাবতে শু্রু করলেন নিয়েন্ডারথাল মানুষদের থেকেই আধুনিক মানুষে বিবর্তন ঘটে থাকবে ।
প্রাপ্তি স্থানঃ- নিয়েন্ডারথাল মানুষদের জীবাশ্ম আবিস্কৃত হয়েছে পশ্চিমে বৃটেনের দক্ষিন উপকুল থেকে ইউরোপের বিভভিন্ন দেশে, মধ্যপ্রাচ্য, ইজরায়েল, রাশিয়া,এবং পূর্বে সিন্ধু নদ পর্যন্ত। মজার ব্যাপার হল আফ্রিকাতে এ পর্যন্ত কোন নিয়েন্ডারথাল মানুষের জীবাশ্ম খুজে পাওয়া যায় নি।



ফ্রান্সে খুজে পাওয়া নিয়েন্ডারথাল মানুষের মাথার খুলি।

নিয়েন্ডারথাল মানুষদের আবিস্কারের পর দেড়শ বছরেরও বেশী কেটে গেছে। নিয়েন্ডারথাল মানুষেরা কি পৃথক প্রজাতি না Homo sapiens এর মধ্যেরই এক উপপ্রজাতি সে প্রশ্নে বিতর্ক আজও চলছে। তাদেরকে উপপ্রজাতি বিবেচনা করে কিছু বিজ্ঞানী তাদের নামকরন করে থাকেন Homo sapiens neanderthalensis । এক ডজনেরও বেশী নিয়েন্ডারথাল মানুষের জীন বা ডি,এন,এ পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। এই ডি,এন,এ পরীক্ষা থেকে অধিকাংশ বিজ্ঞানী নিয়েন্ডারথালদের আলাদা প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে পাঁচ থেকে দুই লক্ষ বছর আগে একই পূর্বসুরী Homo heidelbergensis থেকে নিয়েন্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষের উৎপত্তি। তেরো থেকে আট লক্ষ বছর আগের Homo heidelbergensis দের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে। আফ্রিকার Homo heidelbergensis দের থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের এবং ইউরোপ ও এশিয়ার Homo heidelbergensis থেকে নিয়েন্ডারথালদের উৎপত্তি। আফ্রিকা থেকে আধুনিক মানুষ যখন ইউরোপ এবং এশিয়ায় চলে আসতে থাকে তখন প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে নিয়েন্ডারথাল এবং হোমো স্যাপিয়েন্সরা ইউরোপ এশিয়াতে একসাথে বসবাস করতে থাকে। ক্রমশঃ কমতে কমতে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায় নিয়েন্ডারথালেরা। শেষ নিয়েন্ডারথাল মানুষের জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা খুজে পেয়েছেন পশ্চিম ইউরোপে যা ২৮,০০০ বছরের পুরনো। ফলে পশ্চিম ইউরোপকেই নিয়েন্ডারথাল মানুষদের শেষ আবাসস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
কেমন ছিল নিয়েন্ডারথালেরা?
শরীরঃ- নিয়েন্ডারথাল মানুষেরা ছিল খর্বাকৃতির, আধুনিক মানুষদের চেয়ে সামান্য কম উচু। পুরুষ নিয়েন্ডারথালদের উচ্চতা হত পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি মেয়েদের গড় উচ্চতা হত ৫ ফুট এক ইঞ্চি। পুরুষদের গড় ওজন হত ৭৭ কিলোগ্রাম এবং মেয়েদের গড় ওজন হত ৫৪ কিলোগ্রাম। শরীর এবং হাত পা গুলো ছিল মোটা মোটা। থ্যাবড়ানো নাক নিয়ে মুখমন্ডল ছিল চওড়া, নীচের চোয়ালের হাড় ছিল নীচের দিকে কম কোনাকুনি, আর এদের মস্তিস্ক আকারে ছিল আধুনিক মানুষদের সমান বা কোন কোন ক্ষেত্রে বেশী। এদের গায়ে ছিল অনেক বেশী শক্তি। হাড়গোড়ে পাওয়া আঘাতের চিহ্ন থেকে বোঝা যায় যে এদেরকে বন্য প্রানীদের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করত। নিয়েন্ডারথাওলদের ব্যবহৃত কাঠের তৈরী বর্ষাও আবিস্কৃত হয়েছে।
জীবন যাত্রাপ্রনালীঃ- নিয়েন্ডারথালরা পৃথিবীতে বাস করত শেষ বরফ যুগে। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন কোন এক সময়ে নিয়েন্ডারথাল মানুষদের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৭৫,০০০ এর মত। আফ্রিকাতে হোমো স্যাপিয়েন্সদের জন্য শাকশব্জী ফলমুলের প্রাচুর্য্য থাকলেও ইউরোপে তেমন ছিল না। নিয়েন্ডারথালদের খাদ্যের জন্য নির্ভর করতে হত বরফ যুগের প্রানী যেমন বাইসন বা বল্গা হরিনের উপর। প্রধানতঃ মাংশাসী হলেও এদের খাদ্য তালিকায় ফলমুল শাকশব্জী থাকার প্রমানও পাওয়া গেছে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাদের দৈনিক খাবারের চাহিদা ছিল আমাদের চেয়ে বেশী পরিমান। তারা বসবাস করার জন্য বাড়ীঘর তৈরী করা এবং আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। রান্নাবান্না করা এবং বন্যপ্রানীদের আক্রমনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা শিখেছিল। কাঠ এবং পাথর দিয়ে তৈরী করত নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি। শিকার করা, ছিদ্র করা বা বুননের কাজে ব্যবহার করত এ সমস্ত যন্ত্রপাতি। নিয়েন্ডারথালদের অলংকার ও আবিস্কৃত হয়েছে। মৃতদেহ সৎকারের প্রাচীনতম উদাহরনও খুজে পাওয়া যায় নিয়েন্ডারথালদের মধ্যেই। নিয়েন্ডারথালেরাই প্রথম মানুষ যারা পোষাক পরিচ্ছদ পরত। শিকার করা প্রানীর চামড়া ছিদ্র করে পোষাক বানাত তারা।



নিয়েন্ডারথাল মানুষদের ব্যবহৃত পাথরের অস্ত্রশস্ত্র।

বুদ্ধিমত্তাঃ- নিয়েন্ডারথালদের অনেক বিজ্ঞানী বুদ্ধিমত্তায় পশুদের সমান দাবী করে থাকলেও সাম্প্রতিক কালে দেখা গেছে তারা বুদ্ধিমত্তায় ছিল হোমো স্যাপিয়েন্সদের সমকক্ষ। তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য ভাষার ব্যবহার করত কিন্তু তার ধরন সম্পর্কে বিজ্ঞানীসমাজ এখনো নিশ্চিত নন।
বিলুপ্তিঃ- নিয়েন্ডারথালেরা কেন বিলুপ্ত হল তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। অনেকে মনে করে থাকেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ যুগের নিয়েন্ডারথাল আদিম মানুষেরা বিলুপ্ত হয়।অনেকে বিশ্বাস করেন আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যপিয়েন্সদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা বিলুপ্ত হয়। রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম গড়ে না ওঠাকে তাদের বিলুপ্তির কারন দাবী করেন অনেক বিজ্ঞানী।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×