somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খলিফা এবং খিলাফত।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইরাক এবং সিরিয়ার এক বিশাল এলাকা দখল করে নেওয়ার পর Islamic state of Iraq and the levant(ISIS) এর নতুন নাম হয়েছে Islamic State। ২৯শে জুন ২০১৪ তে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীকে খলিফা দাবী করে তার নতুন নামকরন করা হয়েছে খলিফা ইব্রাহীম ইবনে আওয়াদ এবং সমস্ত সুন্নী মুসলীমদেরকে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার দাবী জানিয়েছে ISIS । তারা সপ্তম শতাব্দীর রাশিদুন খেলাফতের অনুকরনে নতুন খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করে স্পেন থেকে সুদুর চীন পর্যন্ত তাদের ইসলামী সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব স্থাপনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। অল্প কয়েকদিন আগে বিবিসি থেকে খলিফার এক ভিডিও বার্তা প্রচার করাও হয়েছে। ইরাকের মোসুল শহরে তারা সমস্ত খৃস্টানদের ইসলাম গ্রহন করার নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে মোসুল শহরের আনুমানিক ষাট হাজার খৃস্টান অধিবাসীর অর্ধেক মোসুল ছেড়ে পালিয়েছে। যারা অবশিস্ট আছে তাদের বাড়ীর দরজায় N অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। N শব্দ দিয়ে খৃস্টান্ বা নাসারা ( Nassarah ) বোঝানো হয়েছে।অমুসলিমদের জিজিয়া কর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম গ্রহন না করার অপরাধে ইতিমধ্যে ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। অনান্য সুত্রমতে ISIS ৫০ জনকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করে তাদের মাথা ঝুলিয়ে রেখেছে , ইউনুস নবীর মাজার বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, কাবা শরীফ উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইত্যাদি। এর আগে ১৯৭৯ সালে ২০শে নভেম্বর আব্দুল্লাহ হামিদ-আল কাহতানির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কাবা শরীফ দখল করে নিয়ে নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করে।
বিভিন্ন গনমাধ্যমে উপরের সংবাদ গুলো পড়ে মনে প্রশ্ন জাগে সবাই খলিফা এবং খিলাফত কি বা কেন?
খলিফাঃ- আরবী শব্দ khalifa হল Khalifatu Rasulil-lah এর সংক্ষিপ্ত রুপ। এ শব্দের অর্থ হল উত্তরাধিকার বা সহযোগী। খলিফা হলেন ইসলামী ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা, এবং নবীজি মোহাম্মদে(সাঃ) র উত্তরসুরী।অনেকে খলিফাকে আল্লাহ’র প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। খলিফার অধীনস্থ সাম্রাজ্য বা খিলাফত পরিচালিত হয় শরীয়া আইন অনুযায়ী। অনেক মুসলমান বিশ্বাস করেন যে নতুন একজন খলিফা আসবেন যার নেতৃত্ব সারা পৃথিবীব্যাপী একীভুত ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
খিলাফতঃ- রাশিদুন খিলাফতকে সারা পৃথিবীর মুসলমানেরা সম্মানের চোখে দেখে থাকেন এবং ইসলামের প্রথম চারজন খলিফা- হজরত আবু বক্কর(রাঃ), হজরত ওমর(রাঃ), হজরত ওসমান(রাঃ), এবং হজরত আলী(রাঃ) কে সঠিকভাবে পরিচালিত খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এই খলিফারা চারজনেই ছিলেন নবীজি মোহাম্মদ(সাঃ) এর আত্মীয়। ৬৩২ খৃস্টাব্দে নবীজি মোহাম্মদ(সাঃ) এর মৃত্যুর পর থেকে ৬৬১ খৃস্টাব্দে চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর মৃত্যু পর্যন্ত কালকেই প্রকৃত খিলাফত বা খোলাফায়ে রাশেদীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। রাশীদুন খিলাফতের পর আরো অনান্য ইসলামী খিলাফতের উদাহরন দেখতে পাওয়া যায় যেমন উম্মাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত, স্পেনের কর্ডোবা খিলাফত ইত্যাদি। সর্বশেষ খিলাফত ছিল তুরস্কের অটোম্যান খিলাফত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বৃটিশ ভারতেও মৌলানা শওকত আলী এবং মৌলানা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ১৯১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। মহাত্মা গান্ধী এবং কংগ্রেস এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। খিলাফত আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন অটোম্যান তুর্কী সম্রাট দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ। তিনি চাইছিলেন সমস্ত মুসলমানদের একত্রিত করে পশ্চিমা ইউরোপীয় শক্তি সমুহ বিশেষ করে ফ্রান্স এবং বৃটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে। খিলাফতকে পুজি করে সমস্ত মুসলমানদের সহযোগিতা পেলে পশ্চিমাদের সাথে যুদ্ধ করার পাশপাশি তুরস্কে গড়ে ওঠা গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করা তার পক্ষে সহজ হত। কিন্তু আরবেরা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে। তখন পারস্য থেকে শুরু করে আরব উপদ্বীপ সহ ইউরোপের পূর্বাংশ পর্যন্ত বিস্তীর্ন এলাকা ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যান সম্রাট জার্মানীর পক্ষ নেন। অটোম্যান তুর্কীদের সাথে আরবদের কখনই সদ্ভাব ছিল না। এর কারনও রাজনৈতিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শেষে তুরস্কে মোস্তফা কামাল আতা তুর্ক ক্ষমতা গ্রহন করলে ১৯২৪ সালে অটোম্যান খিলাফতের সমাপ্তি ঘটে এবং সম্রাট আব্দুল হামিদ বৃটিশ যুদ্ধ জাহাজে করে ইস্তাম্বুল থেকে পালিয়ে ইউরোপে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান।
রাশেদুন খলিফাদের সময় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। অধিকাংশ মুসলমান মনে করে থাকেন রাশেদুন খিলাফতে প্রজারা সুখ শান্তিতে বাস করত, খলিফারা জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করতেন , সবাই ন্যায় বিচার পেত ইত্যাদি। সম্ভবত এই কারনেই অনেকে আজও মনে করে থাকেন দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলে দেশে সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে।
রাশেদুন খলিফারাঃ-
আবু বক্করঃ- নবীজির আত্মীয়দের বাইরে প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী ব্যাক্তি আবু বক্কর ছিলেন নবীজির বিশ্বস্ত সহযোগী বা সাহাবী। ৬৩২ খৃস্টাব্দে নবীজি মোহাম্মদে(সাঃ) এর মৃত্যুর পর প্রথম খলিফা হন তিনি। আবু বক্কর সম্পর্কে ছিলেন নবীজির মোহাম্মদ(সাঃ) এর শ্বশুর , প্রিয়তমা পত্নী আয়েশা(রাঃ) ‘র বাবা। ৬৩২ থেকে ৬৩৪ সাল পর্যন্ত দুই বছর খলিফা ছিলেন আবু বক্কর (রাঃ)। খলিফা হওয়ার পরপরই তাকে আরবে গড়ে ওঠা বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে হয়। নবিজি হযরত মোহাম্মদের(সাঃ) মৃত্যুর পর আরবের বিভিন্ন বেদুইনেরা বিদ্রোহ করে যা রিদ্দা নামে পরিচিত। এই সময় মুসলিম উম্মাহ’র দুই শাখা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে। যারা মক্কা থেকে নবীজির সাথে মদীনায় যান তারা হলেন মোহাজির, আর মদীনার যারা নবীজিকে আশ্রয় দিয়ে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন তারা হলেন আনসার। বেদুইনেরা আবু বক্করের কতৃত্ব এবং ইসলামকে অস্বীকার করেন আবার অনেকে জাকাত দেওয়া বন্ধ করে দেন।এদের মধ্যে Al-Aswad Al-Ansi এবং Musaylimah. নিজেদেরকে নবী দাবী করেন। খিলাফতের প্রথম বছরে সাফল্যজনকভাবে বিদ্রোহ মোকাবেলা করার পর দ্বিতীয় বছরে পশ্চিমের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং পূর্বের পারস্যের সাসানিদ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করার পূর্বেই ৬৩৪ সালে স্বাভাবিক মৃত্যু বরন করেন।
ওমর বিন খাত্তাব(রাঃ)- দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাবও ছিলেন নবীজি মোহাম্মদের শ্বশুর। মক্কার যুদ্ধে ওমর কন্যা হাফসা’র স্বামী মৃত্যুবরন করলে নবীজি হাফসাকে বিয়ে করেন। প্রথম খলিফা আবু বক্কর(রাঃ), মৃত্যুর পূর্বে হজরত ওমরকে (রাঃ) দ্বিতীয় খলিফা মনোনীত করেন। ওমর ছিলেন একজন দক্ষ শাসক ও বিচারক। তিনি তার বিচক্ষনতার জন্য সবার কাছে “আল ফারুক” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার সময় পারস্য ইরাক প্যালেস্টাইন, সিরিয়া মিশর উত্তর আফ্রিকার বিরাট অংশ মুসলিম অধিকারে আসে। তার সময় মুস্লিম সাম্রাজ্য পূর্বের সিন্ধু নদ থেকে পশ্চিমের লিবিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। হজরত ওমর ছিলেন অনান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল। জেরুজালেমের ইহুদীরা যারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে নিগৃহীত ছিল , ওমর তাদেরকে মুক্তি দেন। হজরত ওমর যখন উটে করে জেরুজালেমে পৌছান তখন উঠের পিঠে বসা ছিল হজরত ওমরের চাকর এবং ওমর তখন উটের দড়ি টানছিলেন। জেরুজালেমের Church of the holy Sephulcre এর পাদ্রী তাকে গীর্জার মধ্যে নামাজ পড়ার অনুরোধ জানালে তিনি তা প্রত্যখ্যান করেন এবং গীর্জার পাশের ছোট জায়গায় নামাজ আদায় করেন। হজরত ওমর হিজরী ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। তিনি ইসলামী আইন সমুহকে লিপিবদ্ধ করেন। অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করার ব্যাবস্থা করেন।
৬৪৪ সালের ৩রা নভেম্বর মদিনার মসজিদএ আল নবীতে ফজরের নামাজ পরিচালনা করার সময় পিরুজ নাহবাদী নামের একজন পার্সী দাস এবং নও মুসলিম তাকে পরপর ছয়বার ছুরিকাঘাত করেন। ৭ই নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি ছয় সদস্যের শুরা নিয়োগ করে যান যাদের কাজ ছিলো পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করা।
খলিফা ওসমান ইবনে আফফান(রাঃ)ঃ- হজরত ওসমান সম্পর্কে ছিলেন নবীজি মোহাম্মদের জামাতা। হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)এর প্রথম স্ত্রী খাদিজার কন্যা রুকাইয়াকে বিয়ে করেন ওসমান(রাঃ)। ৬৪৪ সালের ১১ই নভেম্বর ৬৫ বছর বয়সে ওসমান(রাঃ) খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।ওসমান(রাঃ) ছিলেন একজন ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী। তার সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্য সামান্য কিছু বিস্তৃতি লাভ করে। তার বিশেষ কৃতিত্ব হল তিনি সর্ব প্রথম কোরান শরীফকে লিপিবদ্ধ করেন(৬৫০ সাল)। তার সময় সাম্রাজ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে। ঐ সময়ে আরবেরা গোত্র এবং উপগোত্রে বিভক্ত ছিল। ওসমান ছিলেন উম্মাইয়া উপগোত্রের। নবীজির গোত্র বানু হাশিম থেকেই একজন খলিফা হওয়া উচিত এমন মনে করতেন তার গোত্রের লোকেরা। খলিফা ওসামানের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে যখন তিনি নিজ গোত্র থেকে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে গভর্নর নিয়োগ করেন। এমনই একজন ছিলেন মিশরের গভর্নর। খলিফা ওস্মান মিশরের গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনে সাদকে মদীনায় ডেকে পাঠান। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি গভর্নর ক্ষমতা দখল করেন। একই সময়ে বসরা এবং কুফা প্রদেশগুলোতেও বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ৬৫৬ খৃস্টাব্দে মিশরের নতুন গভর্নর এক হাজার সশস্ত্র ব্যাক্তিকে খলিফা ওসমানের কাছে পাঠান। একই সময়ে কুফা এবং বসরা থেকে সশস্ত্র দলও এসে মদীনায় হাজির হয়। মদীনার অধিকাংশ অধিবাসী এই সময়ে নিরপেক্ষা থাকে এবং উম্মাইয়া গোত্রের সামান্য কিছু লোক খলিফাকে সমর্থন জানান। খলিফার অনুগত বাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি চাইলে খলিফা তাদের নিরস্ত করেন কারন তিনি বিশ্বাস করতেন একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উচিত নয়। এটি ছিল হজ্জের সময়। বিদ্রোহীরা খলিফাকে বাসগৃহে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং পরে তাকে হত্যা করে। হত্যা করার সময় খলিফা ওসমান (রাঃ) কোরান শরীফ আকড়ে ধরে ছিলেন। তার রক্তে রঞ্জিত কোরান শরী তাসখন্দের যাদুঘরে রক্ষিত আছে।
হজরত আলী ইবনে তালেব(রাঃ)ঃ- হযরত আলী ছিলেন নবীজি হযরত মোহাম্মদ(সাঃ) এর চাচা আবু তালেবের পুত্র এবং নবীজির জামাতা। নবীজির একমাত্র জীবিত উত্তরসুরী কন্যা ফাতিমাকে বিয়ে করেন হজরত আলী(রাঃ)। এই সময়ে আরবের অনেকে মনে করতেন শুধুমাত্র নবীজীর গোত্র বানু হাশিমের সদস্যই খিলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য।
তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানকে হত্যা করা হয় ৬৫৬ সালে। আরবের মুসলমানেরা তখন বিভিন্ন আনসার, মোহাজির, মিশরীয়, কুফার অধিবাসী এবং খাজীরীয় ইত্যাদি বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সময়ে বিভিন্ন বিদ্রোহী দলের নেতা ছিলেন তালহা, আল জুবায়ের এবং আরো অনেকে। হযরত আলী বার বার খলিফা হয়ার অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েও শেষ মুহুর্তে উম্মার স্বার্থে অনিচ্ছা স্বত্বেও খলিফা হতে সম্মত হন। মদীনার তালহা এবং জুবায়ের, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর প্রভৃতি ব্যাক্তি আলীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। মক্কাতে হজরত আলীর প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন নবীজির প্রিয় পত্নী হযরত আয়েশা(রাঃ) । লেভান্তের গভর্নর মোয়াবিয়া হযরত আলীর বিরোধিতা করা শুরু করেন। আলী নতুন করে বিভিন্ন প্রদেশে গভর্নর নিয়োগ করলে দামেস্কের মোয়াবিয়া সে আদেশ অগ্রাহ্য করেন। মোয়াবিয়া এবং আরো অনেকে হজরত ওসামানের হত্যকারীদের বিচার দাবী করেন। কিন্তু আলী ছিলেন অসহায় এবং বিদ্রোহী দলনেতাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন নি।
হজরত আলী বসরায় অবস্থান করার সময় ৬৫৬ সালে তালহা, আবু জুবায়ের, এবং হযরত আয়েশা মক্কায় মিলিত হয়ে সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে বসরা আক্রমন করেন। বসরার কিছু অংশ দখল করে নিয়ে কয়েক হাজার লোক হত্যা করে সম্মিলিত বাহিনী। হসরত আলী(রাঃ) তার বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুসলিমদের নিজেদের মধ্যের এই যুদ্ধ প্রথম ফিতনা হিসেবে পরিচিত। হজরত আলী(রাঃ) জয়লাভ করেন এবং রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তরিত করেন। এর পর ৬৫৭ খৃস্টাব্দে লেভান্তের গভর্নরের মোয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনে মুখোমুখী হয়। আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার সর্তে সে যুদ্ধ এড়ানো গেলেও এরপর হজরত আলী খাজীরীয়দের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন যা নাহরায়ানের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। সিফফিনের যুদ্ধের পর আরবের মুসলমানেরা সুস্পস্টভাবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পড়ে। ৬৬১ সালে ১৯ শে রমজানের দিন মসজিদে নামাজরত অবস্থায় খাজীরীয় আব্দাল রহামান ইবনে মুলজামা বিষাক্ত তরবারী দিয়ে হজরত আলীকে আঘাত করে। ২১শে রমজান তিনি মারা যান এবং নাজাফে তাকে সমাধিস্ত করা হয়। আলী খাজীরীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেওয়ার অনুরোধ জানালেও আলীর পূত্র হাসান মুলজামাকে হত্যা করেন।



৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×