অনেক অনেক দিন আগের কথা । গভীর বনের ধারে ছোট্ট কুটিরে বাস করত এক গরীব কাঠুরে। বনের কাঠ বাজারে বিক্রী করে , খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে সংসার চলত তার। একদিন গভীর বনের মধ্যে কাঠ কাটার সময় হঠাৎ কাঠুরে শুনতে পেল "বাচাও, বাচাও" চিৎকার। শুব্দ অনুসরন করে এগিয়ে গিয়ে কাঠুরে দেখতে পেল এক গভীর কুয়োর মধ্যে আটকে পড়ে আছে একজন মানুষ, একটি নেকড়ে বাঘ, একটি সাপ এবং একটী ইদুঁর। কাঠুরে ঠিক করল শুধুমাত্র মানুষটিকেই উদ্ধার করবে কারন বাকীরা সব ক্ষতিকর প্রানী। বাঘ গরু, ছাগল ,হাস মুরগী এমনকি মানুষ হত্যা করে প্রতিনিয়্ত, সাপের কাপড়ে প্রতিবছর প্রান হারায় হাজার হাজার মানুষ আর ইদুঁর জমির ফসল, ঘরবাড়ীর আসবাব পত্র, এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নস্ট করে। মানুষটাকে উদ্ধার করার পর অন্য সব প্রানীরা কান্না শুরু করল। তাদের কান্নায় কাঠুরের মন গলল। একে একে সবাইকে উদ্ধার করল সে। বাঘ , সাপ, এবং ইদুঁর কাঠুরেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিজ্ঞা করল তারা এই উপকারের প্রতিদান দেবে। তারা কাঠুরেকে আরো জানালো যে এই মানুষটিকে উদ্ধার না করলে ভাল করত কাঠুরে কারন সে লোকটি বিশ্বাসঘাতক এবং অকৃতজ্ঞ। মানুষটি কাঠুরেকে জানালো সারা পৃথিবীতে তার কেউ নেই,এবং যাওয়ার মত কোনো জায়গাও তার নেই। কাঠুরে তাকে নিজের ভাঙ্গা কুটিরে আশ্রয় দিল। দুজনের ভালই কাটছিলো দিনগুলো।
কিছুদিন পর প্রথম সাপ এসে হাজির হল তার উপহার নিয়ে। উপহারটি হল সাপে কাটা রোগীর অব্যার্থ মহৌষধ। একজন বিশ্বাসঘাতকের রক্তের সাথে ্মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালেই যে কোনো সাপে কাটা রোগী ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। এরপর বাঘ এল তার উপহার- শিকার করা হরিন নিয়ে এবং সবশেষে ইঁদুর হাজির হল মাটী খুড়ে খুজে পাওয়া হীরে জহরত নিয়ে। এরপর থাকে তারা সবাই নিয়মিত উপহার দিয়ে যেতে লাগলো কাঠুরেকে । কাঠুরের আর অভাব রইলো না। ভাল বাড়ী হল তার, গাড়ী হল এবং সুখে স্বাচ্ছন্দেই দিন কাটছিলো তাদের। কাঠূরের এ উন্নতিতে জ্বলে পুড়ে মরতে থাকল উদ্ধার পাওয়া মানুষটি।কিভাবে কাঠুরেকে জব্দ করা যায় সুযোগ খুজতে থাকল সে মানুষ এবং কিছুদিন পর সে সুযোগ পেয়েও গেল । একদিন রাজভান্ডার থেকে মূল্যবান হীরে জহরত চুরি গেল । রাজা ঘোষনা করলেন কেউ যদি সে হীরে জহরতের সন্ধান দিতে পারে তবে তাকে এর অর্ধেক পরিমান অর্থ দান করবেন তিনি। উদ্ধার পাওয়া লোকটি রাজসভায় গিয়ে জানালো কাঠুরেই হল সে চোর। সৈন্য পাঠিয়ে ধরে আনা হল কাঠুরেকে। কাঠুরের বাড়ী তল্লাশী করে কিছু হীরে জহরতও পেল সৈন্যরা। "কিভাবে হঠাৎ বড়লোক হলে? কোথায় পেলে এ হীরে জহরত গুলো? সত্যি কথা বলল কাঠূরে কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করল না । রাজা কাঠুরের মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলেন। জেলে পোরা হল কাঠুরেকে।জেলে বসে কাঠুরে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে থাকল - প্রানীদের কথা বিশ্বাস করে সেদিন মানুষটিকে আশ্রয় না দিলে আজ এই দুর্দশা হত না তার। কাঠুরের দুর্ভাগ্যের কথা একদিন পৌছালো সাপের কানে। সাপের বড়বোন ছিল একজন পরী । কিভাবে কাঠুরেকে উদ্ধার করা যায় ? সাপ পরামর্শ করলো তার বড়বোনের সাথে।
নির্দিস্ট দিনে শিরচ্ছেদ করার কন্য কাঠুরেকে হাজির করা হল ময়দানে । এমন সময় খবর এল যে সাপে কেটেছে রাজার ছেলেকে। শিরচ্ছেদ স্থগিত রেখে রাজা ফিরে গেলেন ছেলের কাছে । দেশ বিদেশের সমস্ত ওঝা হাজার চেস্টা চালিয়েও কিচ্ছু করতে পারল না, ছেলের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হতে লাগলো। রাজা তার সভাসদদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন। এমন সময় আড়াল থেকে সাপের বড়বোন পরীর দৈববানী ভেসে এলো- একমাত্র কাঠুরেই পারে রাজার ছেলেকে বাঁচাতে। অনিচ্ছাসত্বেও কাঠুরেকে নিয়ে আসা হল ময়দান থেকে । বন্দী অবস্থায় সৈন্যদের প্রহরায় বাড়ী থেকে সাপের দেওয়া মহৌষধ নিয়ে এল কাঠুরে। সে ঔষধ রাজাকে দিয়ে কাঠুরে জানালো যে একজন অকৃতজ্ঞ বিশ্বাসঘাতক লোকের রক্তের সাথে মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে।একজন সাধারন মানুষের রক্তের সাথে মিশিয়ে সে ঔষধ প্রয়োগ করা হল কিন্তু কোন উন্নতি দেখা গেলো না। কোথায় পাওয়া যাবে অকৃতজ্ঞ , বিশ্বঘাতক মানুষকে। এবার কুয়ো থেকে উদ্ধার পাওয়া লোকটিকে দেখিয়ে দিলো কাঠুরে। সে লোকের রক্তের সাথে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগানো মাত্রই সুস্থ্য হয়ে উঠলেন রাজপুত্র। রাজা কাঠুরেকে মুক্তি দিয়ে সেই অকৃতজ্ঞ মানুষের শিরচ্ছেদের হুকুম দিলেন।
Morale:- A grateful animal has more worth than an ungrateful man.
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৫