somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গ।(ষষ্ঠ পর্ব)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিউবার লোকেরা এখন কেমন আছেন? কিভাবে তাদের জীবন কাটছে তা জানার চেস্টা করেছি অনেকবার অনেক ভাবে। প্রধান সমস্যা হল ভাষা।স্প্যানিশ আমি বুঝিনা; সামান্য দু,একজন কিউবান ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে কথা বলেন। হোটেলের পাবলিক রিলেশান্ অফিসার মোটামুটি ইংরেজী জানেন। তার কাছেই শুনলাম কিউবানদের বেতন খুবই কম। অফিসার নিজের মাসিক বেতন পেয়েছেন ওইদিন যা হল মাত্র চারশ’ কিউবান পেসো বা ২০ ডলার। এই সামান্য বেতনে কিভাবে চলেন? ভদ্রলোক উত্তর দিলেন বাড়ীভাড়া দিতে হয় না, শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করেন। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানো ফ্রি কিন্তু ঔষধ কিনতে হয় ফার্মেসী থেকে। সমস্ত ঔষধই মেলে নাম মাত্র মূল্যে। কিন্তু নুন্যতম প্রয়োজনের বাইরে জিনিসপত্র কিনতে কস্ট হয়। উদাহরন স্বরুপ বললেন তার খুব শখ একটা কম্পিউটারের, কিন্তু দুর্মূল্য হওয়ায় কিনতে পারছেন না। সামনে থাকা ক্যাথোড রে মনিটরের কম্পিউটার দেখিয়ে বললেন এটা কেনা হয়েছিল ১৭০০ ডলার দিয়ে। যদিও দাম কমছে তবুও সাত আটশ’ ডলারের নীচে এখন কম্পিউটার মেলেনা কিউবাতে। কিউবার চিকিৎসা বেশ উন্নত মানের। উন্নত এবং সস্তা চিকিৎসা ব্যাবস্থার কারনে আমেরিকা কানাডা, ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকা থেকে রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। মেডিকেল ট্যুরিজম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য খাত। অনেক কিউবান ডাক্তার কাজ করছেন ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
কিউবান নাগরিকেরা বিদ্যুৎ এবং পানি পান খুব কম পয়সায়। বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় মাসিক ৫/৬ কিউবান পেসো বা পঁচিশ সেন্ট।সরকার রেশনের মাধ্যমে খা্দ্যশস্য দেন তবে তা নিতান্তই অপ্রতুল। এক মাসের জন্য বরাদ্দ খাবারে চলে মাত্র এক সপ্তাহ। বাকী তিন সপ্তাহ খাবার কিনতে হয়, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পন্য যেমন চাল, ডাল, আটা ইত্যাদি সমস্ত কিছুর দাম খুবই সস্তা। কিউবানরা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন ন্যাশনাল পেসো দিয়ে কিন্তু বিলাস সামগ্রী কিনতে হয় কুক বা সি,ইউ,সি দিয়ে। মজার ব্যাপার হল জামা জুতোও কিনতে হয়ে কনভারটিবল পেসো দিয়ে যা তাদের জন্য কস্ট সাধ্য। চাকুরী স্থলের পোষাক বা ইউনিফর্ম সবাই পান না্মমাত্রমূল্যে।সি,ইউ,সি বা কনভার্টিবল পেসোতে কিনতে হলে তো আপনাকে খরচ করতে হবে অনেক ন্যশনাল পেসো সেটা কিভাবে সম্ভব আপনাদের জন্য? এ প্রশ্ন করেছিলাম কয়েকজনকে। একজন বললেন তা্রা মাসিক কিছু সি,ইউসি পান বেতনের অংশ হিসেবে, আরেকজন বললেন এই সিইউসিতে খরচ করতে অনেকে দুটো বা তিনটে চাকরী করেন।সি,ইউসি, এবং পেসোর এই মুদ্রা নীতির অবসান ঘটবে আগামী বছরে তখন হয়ত সমস্ত কিছু আবার ঢেলে সাজাতে হবে সরকারকে।
কথা হচ্ছিল রেস্টুরেন্ট কর্মী লিলি’র সাথে। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম “এখন আপনারা কেমন আছেন?”।তিনি উত্তর দিলেন আগের চেয়ে ভাল। স্বাভাবিক কারনেই প্রশ্ন উঠল আগে খারাপ ছিলেন কেন বা এখন কেন ভাল আছেন? তিনি জানালেন পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। সরকারী চাকরী করে যা বেতন পেতেন তাতে কোনমতে চলত। এখন হোটেলে কাজ করেন।এখানে বেতন ছাড়াও অধিকাংশ ট্যুরিস্টের কাছ থেকে বখশিশ পান ডলারে বা সি,ইউসিতে। হোটেলে বিনয়োগকারী বিদেশী কোম্পানী বছরে বোনাস দেয় যা একটা বড় পাওনা। আমি আরো জানতে চেয়েছিলাম “দেশ হিসেবে কিউবা চলছে কেমন? একই রকম উত্তর দিলেন “ভাল নয় কারন এক কোটী মানুষের দেশে এত জায়গা থাকতে আমাদের খাদ্য আমদানী করতে হয়।আমরা ভেনিজুয়েলা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, প্রভৃতি দেশের সাহায্যের উপর নির্ভর শীল। তাকে বললাম" কিউবানরা ভাল নেই, কিউবা দেশ ভাল নেই কিন্তু সে কথা বলার সুযোগও তো আপনার নেই। তিনিও সম্মত হলেন তবে এটাও উল্লেখ করলেন বেসরকারীকরনের ফলে ক্রমশঃ ভাল হচ্ছে কিউবার অর্থনীতি। মজার ব্যাপার হল লিলি বা হোটেলের পাবলিক রিলেশান অফিসারকে বেশীক্ষন আমাদের সাথে কথা বলতে দেননি হোটেল ম্যানেজার। একটু পরেই ডেকে নিয়ে গিয়েছেন তাদের। কিউবানরা খেয়ে পরে বেচে আছেন। কিন্তু সুখের ব্যাপার হল অনেক কিছুর অভাবের পরও এ দেশে ঘুষ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধ নেই বললেই চলে। আরো একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে তা হল - ফিদেল ক্যাস্ট্রো এত বছর ধরে দেশ শাসন করলেও তার উল্লেখ চোখে পড়ার মত নয়। ক্যাস্ট্রোর নামে রাস্তা, মুদ্রা, স্টেডিয়াম বা বিমানবন্দরের নামকরন করা হয় নি বা হলেও খুব কম। সে তুলনায় চে’ গুয়েভারার উপস্থিতি অনেক বেশী।
কিউবার দু তিনটে প্রদেশ ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।মাঝে মাঝে কিছু অল্প উচু পাহাড়ী জায়গা ছাড়া পুরোটাই সবুজ, চাষাবাদযোগ্য। বিভিন্ন খাদ্য শস্য ফলমুলের অনেক আবাদও চোখে পড়েছে। তাহলে তাদের কেন খাদ্য শস্য আমদানী করতে হয়? অধিকাংশ বড় বড় খামার সরকারী নিয়ন্ত্রনে, কিন্ত তাতে উৎপাদনের হার করুন। কেউ ঠিকমত কাজ করে না সেখানে অথচ মাস শেষে বেতনের টাকা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেয়। কয়েক বছর হল সরকার ছোট ছোট জমি চাষাবাসের জন্য কৃষকদের মধ্যে বিতরন শু্রু করেছেন।এমনি এক ছোট খামারী মিঃ কার্লোসের সাথে কথা হল সান্তা ক্লারা শহর থেকে কিছুটা দূরে গ্রামে। কার্লোস জানালেন তার উৎপাদনের ৩০% সরকারকে দিতে হয় সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাকীটা নিজেদের খাবারের জন্য রেখে বেশ বড় অংশ বিক্রী করতে পারেন, যদিও খাবারের দাম কম তবুও এই নতুন ব্যাবস্থার ফলে তিনি আগের চেয়ে ভাল আছেন। এব্যাবস্থার ফলে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানীর পরিমানও কমছে। নব্বইয়ের দশকে যেখানে ৮০% খাদ্য শস্য আমদানী করতে হতে কিউবাকে, তা এখন ২০-৩০% এর বেশী হবে না। (চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×