somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গে (একাদশ পর্ব)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চে গুয়েভারা স্মৃতিসৌধঃ- চে কে হত্যার পর কংক্রিটের পাটাতনের উপর শোয়ানো অবস্থায় তার মৃতদেহ দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের দেখানো হয় এবং ছবি তোলা হয়।সে সাংবাদিক দলে বৃটিশ সাংবাদিক Richard Gott,ই ছিলেন একমাত্র ব্যাক্তি যিনি জীবিত অবস্থায় চে’র সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। একজন সামরিক ডাক্তার তার মৃতদেহের হাত কবজি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফরমালডিহাইডে সংরক্ষিত করেন।সে হাত আরজেন্টিনায় পাঠানো হয় হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখার জন্য।
১৯৯৫ সালের বলিভিয়ান সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল Mario Vargas চে’র জীবনী লেখক Jon Lee Anderson, কে জানান যে হত্যা করার পর চে’র মৃতদেহ Vallegrande শহরের বিমানবন্দরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।প্রায় দুই বছর ধরে কয়েক দেশের বিশেষজ্ঞেরা বিমান বন্দরের পাশে অনুসন্ধান চালান। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে কিউবার ভুতত্ববিদ এবং আরজ্জেন্টিনার নৃতত্ববিদদের দল দুটো গনকবরে সাতটি মৃত দেহের কঙ্কাল খুজে পান।এই সাতটি কঙ্কালের মধ্যে একটির হাত না থাকায় সেটিকে চে’র মৃতদেহ হিসেবে ধারনা করা হয়। এই কঙ্কালের দাতের সাথে চে’র দাতের ছাচের মিল পাওয়ার পরই বলিভিয়ার স্বরাস্ট্র মন্ত্রী নিশ্চিতভাবে জানান যে সেটি চে’র কঙ্কাল। চে’র কংকালের পাশে খুড়ে পাওয়া যায় একটি জ্যাকেটের ভেতরের পকেটে এক প্যাকেট তামাক। চে’ ধরা পড়ার পর তাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসার সময় হেলিকপ্টার চালক Nino de Guzman, এই তামাক চে’কে দিয়েছিলেন।চে’ এবং অপর ছয়জন কমরেডের কংকালের অবশিষ্ট কিউবায় নিয়ে আসা হয়। যে সান্তা ক্লারা শহরের যুদ্ধে চে’র নেতৃত্বে চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় সেই শহরেই পূর্ন সামরিক মর্য্যাদায় চে’ এবং অপর ছয়জনকে পূনরায় সমাধিস্থ করা হয় ১৯৯৭ সালের ১৭ই অক্টোবর।
স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। ১৯৮৮ সালে রাউল ক্যাস্ট্রো এটি উদ্বোধন করেন। ন্সান্তা ক্লারা শহরের বাইরে ছোট টিলার উপরের এই স্মৃতিসৌধকে স্পায়নিশ ভাষায় বলা হয় Mausoleo Che Guevara েবং ইংরেজীতে Ernesto Guevara Sculptural Complex। এখানে চে’র সাথে তার আরো ২৯ত্রিশ জন্য সঙ্গী বিপ্লবীর সমাধি আছে।চতুস্কোন বিশাল শ্বেত পাথরের বেদীর উপর রয়েছে শ্বেত পাথরের স্তম্ভ এবং দেওয়াল। বাম দিকের দেওয়ালে চে’র জীবনের বিভিন্ন সময়ের ভাস্কর্য্য, যেমন ঘোড়ার চড়া অবস্থায় চে’ ফিদেলের সাথে আলোচনারত চে’ , শিল্প মন্ত্রী হিসেবে কর্মরত চে’ গুয়াতেমালা এবং জাতিসংঘে চে, স্কুলের ছেলেমেয়েদের সাথের ভাস্কর্য্য ইত্যাদি।
মাঝখানের উচু পাথরের স্তম্ভের উপর চে’র ২২ ফুট উচু ব্রোঞ্জের মুর্তি। মুর্তির দৃস্টি দক্ষিন আমেরিকার দিকে ফেরানো,সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার শ্রমজীবি মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন তিনি, তার এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনকে বোঝাতেই এই ব্যাবস্থা। মূর্তির ডান হাতে রাইফেল এবং বাম হাত স্লিং এ ঝোলানো। যুদ্ধের সময় এই ডাক্তার বিপ্লবী যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা করতেন। যুদ্ধের সময় যখন তার বাম বাহুতে গুলি লাগে তখন কাছে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স এবং রাইফেল এই দুটোকে বহন করা সম্ভব ছিলো না। তিনি রাইফেলকেই বেছে নেন এবং ফার্স্ট এইড বক্স ফেলে রেখে পালান।পাথরের বেদীমূলে লেখা আছে চে’র বিখ্যাত উক্তি” “ "Hasta La Victoria siempre” যার অর্থ হল চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত। তিনি তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চাইতেন তার আদর্শের চুড়ান্ত বিজয়। বেদীর উপরের একদম ডাইনের চারকোনা বড় স্তম্ভের উপর খোদাই করা আছে ফিদেলকে লেখা চে’র বিদায়ের চিঠিটি। মূল বেদীর পিছনে রয়েছে উনত্রিশ জন বিপ্লবীর সমাধি এবং শিখা অনির্বান। এই শিখা জ্বালিয়ে সমাধিসৌধ উদ্বোধন করার সময় ফিদেল বলেন “ তারা চে’কে হত্যা করে ভেবেছিল বিপ্লবী হিসেবে চে’র পরিসমাপ্তি ঘটালো। কিন্তু তারা জানত না যে সমস্ত বিপ্লবের মধ্যেই খুজে পাওয়া যাবে চে’কে। ইতিহাসে তার স্থান অলেপনীয়, তার উজ্জ্বল চাহুনি বিশ্বের দরিদ্র মানুষের আশার প্রতীক হয়েই রইবে অনন্তকাল ধরে"। মূল স্থপতি ছাড়াও পাঁচ লক্ষ মানুষ স্বেচ্ছা্য চার লক্ষ ঘন্টা কাজ করেন এ স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলতে।এ সৌধ উদ্বোধনের সময় সান্তা ক্লারা এবং হাভানায় একুশবার তোপধ্বনি করা হয়।
চে’ যাদুঘর রয়েছে বেদীর ঠিক নীচে যার প্রবেশমুখ ম্যুজোলিয়ামের পেছন দিক থেকে।এ যাদুঘরে কোন প্রবেশমূল্য নেই কিন্তু ছবি তোলার অনুমতি নেই। এখানে চে’র ব্যবহৃত সামগ্রী যেমন কাপড় চোপড় ,পাইপ, তার রচনার পান্ডুলিপি, অসংখ্য ছবি, এমনকি গেরিলা যুদ্ধ থাকা কালীন সময়ে ছদ্মবেশে ব্যাবহৃত নকল দাড়ি পর্যন্ত রয়েছে। ইতিহাসের অমর বিল্পবীর মূর্তির সামনে মাথা নুইয়ে সম্মান জানিয়ে বেরিয়ে এলাম সমাধিসৌধ থেকে।(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৮
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×