somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গে (ত্রয়োদশ পর্ব)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ত্রিনিদাদের মত সিয়েনফুগোও অনেক প্রাচীন শহর। বাড়ী ঘরগুলো দুশো বা তিনশ বছরের পুরোনো পাথরের তৈরী কিন্তু বেশ সাজানো গোছানো। চওড়া কংক্রীটের রাস্তার পাশে ব্লকে সাজানো বাড়ী ঘরদোর, দোকানপাট দেখে মনে হয় ইউরোপের কোনো পুরোনো শহর। শহর কেন্দ্রের পার্ক বেশ বড় খোলা যায়গা। এর চারপাশে আছে সিয়েনফুগো ক্যাথেড্রাল, থিয়েটার হাউজ ইত্যাদি।শহরে ঢোকার সময় থেকে গুড়ি গুড়ি বৃস্টি পড়তে থাকলেও কেন্দ্রীয় পার্কে পৌছাতে না পৌছাকতেই মুষলধারে বৃস্টি শুরু হল। কিউবার সাত দিনের প্রতিদিনেই বৃস্টিতে ভিজতে হয়েছে।সারা বছর নাকি এমনি ভাবেই বৃস্টি হয় এখানে, হয়ত এ কারনেই এত সবুজ এ দেশ। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কুড়ি পঁচিশজন ট্যুরিস্টের দেখা মিলল কেন্দ্রীয় পার্কে। চুপি চুপি এগিয়ে এল সিগার বিক্রেতা।অল্প দাম দেখে কিনে ফেললাম এক বাক্স Cohiba Esplendido সিগার। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর প্রিয় এ সিগারের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। পরে ড্রাইভারের কাছে শুনেছি এখান থেকে সিগার কেনা নাকি বেআইনী, শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত দোকান থেকে সিগার কিনতে পারেন ট্যুরিস্টরা।
সিয়েনফুগো শহরঃ- ১৮২২ সালে গোড়াপত্তন সময় সে সময়ের স্প্যানিশ জেনারেলের নাম অনুযায়ী এ শহরের নাম রাখা হয় সিয়েনফুগো। সিয়েনফুগো শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল "একশত আলো"।এটি একটি বন্দরনগরীও বটে। হাভানা থেকে আড়াইশ কিলোমিটারের দক্ষিনের এ বন্দর চিনি এবং কফি রফতানীর জন্য প্রসিদ্ধ।ঠান্ডা যুদ্ধের আমলে সোভিয়েত রনতরী নোঙ্গর ফেলত এখানে। ২০০৫ সালের সাইক্লোন "ডেনিস" এ শহরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তিনশ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ শহরের লোক সংখ্যা মাত্র দেড় লক্ষ। শহরের উপকন্ঠে পাহাড়ের উপর প্রাচীন দুর্গ। ক্যারিবিয়ান পাইরেটদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৭৪৫ সালে স্প্যানিশরা হাগুয়া উপসাগর তীরে পাহাড়ের উপর দুর্গ গড়ে তুলেছিল যা হাগুয়া ফোর্ট (Jagua Fort) নামে সমধিক পরিচিত।২০০৫ সালে ইউনেস্কো এ শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষনা করে।
ঘুরে ফিরে সেন্ট্রাল হোসে মার্টি পার্ক এবং ফোর্ট হাগুয়া দেখা শেষ হতে না হতেই শুরু হল ড্রাইভারের তাড়া। ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি, কারন তখন আমরা ভারাডেরো থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে এবং ঘড়িতে বিকেল চারটা।শহরের রাস্তা ছেড়ে যখন আমরা হাইওয়েতে উঠলাম গাড়ী ছুটল একশ কিলো মিটারেরও বেশী বেগে।প্রায় সারা রাস্তা লেগে রইলো মুষলধারের বৃস্টি। রাত নয়টার কিছু আগে ফিরে এলাম হোটেল "ক্লাব কাওয়ামা"য়।
পরদিন কিউবাতে আমাদের পঞ্চমদিন।অনান্য দিনের মত ট্যুরের এ দিনও শুরু হল প্রাতঃভ্রমন এবং সৈকতে সূর্য্যোদয় উপভোগের মধ্য দিয়ে।হোটেলে ফিরে রিসিপশানের বার থেকে সামান্য কিছু খাবার এবং এক গ্লাস মোহিতো নিয়ে রুমে ফিরলাম।ভারাডেরোর দিন গুলোতে "Any time was a Mojito time।প্রাতঃভোজ সেরে হোটেল থেকে বেরিয়ে চেপে বসলাম ট্যুরিস্ট বাসে। কিউবা বেড়ানোর দিনগুলো শেষ হয়ে আসায় কিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর ঢু' মারলাম গিফট শপের বাজারে।কুটির শিল্পের এ বাজারে কাঠ, চামড়া পিতল ইত্যাদির তৈরী সামগ্রী মেলে অপেক্ষাকৃত কম দামে।পকেটের কিউবার মুদ্রা শেষ হয়ে আসায় স্মরনাপন্ন হলাম ব্লাক মার্কেটের।বেআইনী হলেও এখানে মূদ্রা বিনিময় অনেকটা ওপেন সিক্রেট।দোকানী মারিয়া'র কাছ থেকে একশ' ডলার বিনিময় করে ব্যাঙ্কের চেয়ে দশ "কুক" বেশী মিলল।এদিন চশমা নিয়ে ঘটল দুটো বিপর্যয়। দুপুরে খাওয়ার পর আবিস্কার করলাম চশমার এক দিকের স্ক্রু খুলে গিয়ে চশমা বিকল।সাথে কোনো বাড়তি চশমা না থাকায় বের হলাম চশমার দোকানের সন্ধানে।দু'তিনটে চশমার দোকান ঘুরে কোন স্ক্রু পাওয়া গেল না। এখানকার দোকানীরা জোড়া তালি মারতে শেখেনি, তাদের সবারই একই বক্তব্য "ফ্রেমটা বদলে নিন"।জোড়াতালি যে কত উপকারী তা টের পেয়েছিলাম টোরোন্টোতে।একবার গাড়ীতে ধাক্কা লেগে রঙ উঠে গিয়ে সৃস্টি হয়েছিল ছোট এক গর্তের। ভালই চলছিল সে অবস্থায় কিন্তু বাধ সাধল পুলিশ।একদিন গাড়ী থামিয়ে সাবধান করে দিল।অটো বডি শপে গচ্চা গেল ছয়শ' ডলার।বাংলাদেশ হলে জোড়াতালি দিলে বা কিছু না করলেও চলত।অতঃপর চশমাকে কাজ চালানোর উপযোগী করলাম হোটেলের রিসি্পশান থেকে এডহেসিভ টেপ লাগিয়ে।দ্বিতীয় ঘটনায় চশমা বিয়োগ ঘটল সন্ধ্যার সামান্য আগে।গরমের দিন হওয়ায় চেপে বসেছিলাম হুড খোলা ট্যুরিস্ট বাসের দোতলায়।সন্ধ্যার দিকে আকাশ অন্ধকার হয়ে ফোটা ফোটা বৃস্টির সাথে শুরু হল ঝোড়ো হাওয়া। বাস চলছিল আটলান্টিক পারের রাস্তা দিয়ে। ছবি তোলার বাসনায় উঠে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাক করতে গিয়ে হাতের ধাক্কা লেগে চশমা ছিটকে পড়ল এবং ঝোড়ো বাতাসে নিমিষেই উধাও হল আটলান্টিকে।
ষষ্ঠ দিনে আমাদের ভ্রমনসূচীতে ছিল রাজধানী হাভা্না।সকাল আটটায় ট্যুরিস্ট বাস হোটেল থেকে আমাদের তুলে নিল। খাল পেরিয়ে হাভানার মূল ভূখন্ডের সাগর পারের রাস্তা বেয়ে বাস এগিয়ে চলল। ট্যুরিস্ট গাইড মিস লিসবেথ হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর গ্রাজুয়েট,সদা হাস্যময়ী এবং সুন্দরী।এ পেশায় সুন্দরী, হাস্যময়ী এবং লাস্যময়ী হওয়া ট্যুরিস্ট গাইড পেশায় নিয়োগের পূর্বশর্ত।শ্বেতাংগীনিদের তুলনায় হিসপানিক মেয়েরা আমার চোখে বেশী সুন্দরী। দক্ষিন আমেরিকার অধিকাংশ অধিবাসী ঔপনিবেশিক যুগের স্প্যানিশদের উত্তরসুরী হিসপানিক। "হিসপানিক" শব্দটি প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের প্রদেশ "হিসপানিয়া" থেকে উদ্ভুত।তখনকার হিসপানিয়া এখনকার স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশ নিয়ে গঠিত হলেও সমস্ত স্প্যানিশ ভাষাভাষীদেরকেই এখন হিসপানিক বলা হয়ে থাকে।হিসপানিক মেয়েদের সৌন্দর্য্য নিয়ে যারা দ্বিমত পোষন করেন তাদেরকে চুপি চুপি জানিয়ে রাখি হিসপানিকদের দেশ ভেনিজুয়েলা'র সুন্দরীরা কিন্তু "বিশ্ব সুন্দরী" খেতাব জিতেছে অনেকবার।আর স্বচক্ষে যখন ভেনিজুয়েলার সুন্দরীদের দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, বয়স তখন পঞ্চাশ ছুই ছুই হলেও ইচ্ছে হয়েছিল সবকটি সুন্দরীকে বিয়ে করে ফেলি। মিস লিসবেথ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কিউবার ইতিহাস,ভূগো্‌ল, অর্থনীতি ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেওয়া শুরু করলেন। ট্যুরিস্টদের জন্য দর্শনীয় স্থান, করনীয়, সতর্কতা ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি দিয়ে জানতে চাইলেন আমাদের কোনো প্রশ্ন আছে কিনা? (চলবে)


ট্রেন লাইনচ্যুত করতে এই বুলডোজারটি ব্যবহার করেছিলেন চে'গুয়েভেরা।


চে'র গেরিলা বাহিনী কর্তৃক লাইনচ্যুত ট্রেনের বগি।


ত্রিনিদাদের পথে।



কিউবার গ্রাম।



স্প্যানিশ আমলের গীর্জা।


ত্রিনিদাদ শহর।


ত্রিনিদাদ শহর কেন্দ্রের পার্ক।


সিয়েনফুগোর পথে।


ক্যারিবীয়ান সাগর।


ক্যারিবীয়ান সাগর তীর।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×