somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিসের দেশে ( তৃতীয় পর্ব) ।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এথেন্সঃ- গ্রীসের রাজধানী এথেন্স ইউরোপের প্রাচীনতম নগর। এথেন্সকে বলা হয় গনতন্ত্র, দর্শন, অংকশাস্ত্র, বিজ্ঞান, থিয়েটার, নাটক ইত্যাদির জন্মস্থান। এ নগরীর নামকরন হয়েছে নগরীর রক্ষাকর্তা দেবী এথেনার নামে। প্রাচীন গ্রীসে দেবী এথেনাকে পুজা করা হত বিভিন্ন রুপে। যেমন এথেন্সের রক্ষাকর্তা দেবী বা Athena Polias (patron of the city),কুমারী দেবী- Virgin Godess (Athena Parthenos)। তিনি দেবতা Pallas থেকে তার ভেড়ার চামড়ার বর্ম (Aegis) লাভ করেন তাই তিনি Athena Pallas,রনকৌশলে পারদর্শী হওয়ার কারনে তিনি Athena Promachos (goddess of war), কায়িক পরিশ্রমের দেবী হিসেবে তিনি Athena Ergane (goddess of manual labour) এবং বিজয়ীনি হিসেবে Athena Nike (Victory)।

দেবী এথেনাঃ- দেবী এথেনা ছিলেন দেবরাজ জিউসের কন্যা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে মায়ের গর্ভ থেকে তার জন্ম হয় নি। তার জন্ম হয়েছিল দেবরাজের কপাল থেকে। দেবরাজ জিউস জ্ঞান এবং সুক্ষচিন্তার দেবী মেটিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু মেটিস জিউসের শয্যাসংগীনি হতে প্রস্তুত ছিলেন না। মেটিস বাজপাখী, মাছ, সাপ, ইত্যাদি বিভিন্ন রুপ ধারন করে জিউসের চোখকে ফাকি দেওয়ার চেস্টা করেন। দেবরাজ জিউস ছিলেন সর্বজ্ঞ। তিনিও রুপ পরিবর্তন করে দেবী মেটিসের সাথে মিলনের চেস্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে মেটিস আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হন। মিলনের পর ধরিত্রী দেবী গায়া জিউসের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যদবানী করেন যে মেটিসের প্রথম সন্তান হবে এক কন্যা এবং দ্বিতীয় সন্তান হবে একজন পুত্র। জিউসের এই পুত্র হবে জিউসের থেকে বহুগুন শক্তিশালী এবং তিনি জিউসকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে রাজা হবেন। জিউস তার পিতা ক্রোনাসকে উৎখাত করে রাজা হয়েছিলেন, তাই তিনিও সর্বদা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত থাকতেন। দৈববানী মনেপ্রানে বিশ্বাস করে জিউস মেটিসের সাথে প্রতারনা শুরু করেন এবং সুযোগমত মেটিসকে জীবন্ত গিলে খেয়ে ফেলেন, দেবী মেটিস তখন ছিলেন গর্ভবতী। এর কিছুদিন পর জিউস প্রচন্ড ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকেন। তার প্রচন্ড চিৎকার ধ্বনিত হতে থাকে সারা পৃথিবী জুড়ে।এগিয়ে আসেন অনান্য দেবতারা কিন্তু তারা কোনো কারন খুজে পেলেন না।অবশেষে বানিজ্য, পরলোক এবং ইহলোকের দেবতা হারমিস (Hermes) কারন নির্নয় করতে সক্ষম হন। হার্মিসের অনুরোধে দেবতা হেফেস্টাস কুড়োল দিয়ে জিউসের মাথায় আঘাত করে দুই ফাক করে ফেলেন আর জিউসের কপাল থাকে বেরিয়ে আসেন পূর্নবয়সী দেবী এথেনা। মাথা ব্যাথা থেকে আরোগ্যলাভ করেন জিউস। মাথা থেকে জন্মগ্রহন করার কারনে তিনি হলেন বুদ্ধিমত্তা এবং জ্ঞানের দেবী।
দেবী এথেনার কিছু বৈশিষ্ঠ্য হলঃ-
১) যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শী হওয়ার কারনে তিনি ছিলেন দেবতা এরিসের সমকক্ষ।
২) তিনি ছিলেন দেবরাজ জিউসের অন্যতম প্রিয় সন্তান।
৩) হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডে এথেনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে একজন নির্মন যোদ্ধা হিসেবে এবং ওডেসী মহাকাব্যে তাকে বর্ননা করা হয়েছে একজন রাগী প্রতিশোধ পরায়ান দেবী হিসেবে। ট্রয়ের যুদ্ধে দেবী এথেনা গ্রীকদের পক্ষে যুদ্ধ করেন।
৪) এথেনা তার সহমর্মিতা এবং উদারতার জন্য খ্যাতিলাভ করেন।
৫) তিনি চারুকলা এবং শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
৬) তার প্রতীক প্রানী হল প্যাঁচা এবং তিনি জলপাই গাছের শাখা ধারন করতেন। দেবী এথেনার সম্মানে প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক খেলাধুলায় বিজয়ী ক্রীড়াবিদকে জলপাই পাতার মালা পরিয়ে দেওয়া হত।
৭) দেবরাজ জিউস তার প্রধান অস্ত্র বজ্র এবং দুর্ভেদ্য বর্ম এজিস ব্যাবহারে অনুমতি দেন এথেনাকে ।
8) তিনি বাঁশী আবিস্কার করেন কিন্তু কোনোদিন বাশী বাজাননি।
৯) দানব মেডুসার সাথে যুদ্ধে বীর পার্সিয়াসকে( Perseus) প্রকান্ড আয়না সরবরাহ করেন দেবী এথেনা এবং দেবতা হার্মিস।পার্সিয়াস সে আয়নাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মেডুসাকে হত্যা করতে সক্ষম হন। আয়নাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কারন হল এই যে দানব মেডুসা যার দিকেই তাকাত সেই ব্যাক্তি পাথর পরিনত হত।
১০) দেবী এথেনা এবং অলিম্পিয়ান দেবতাদের অসম্মান করায় তিনি তাঁতী আরাচিনকে মাকড়শায় পরিনত করেন।
১১) তিনি কর্মকার দেবতা হেফেস্টাসের পূত্র ইরেকথিয়াসকে লালন পালন করতেন। একদিন তিনি ইরেকথিয়াসকে দেখাশোনা করার জন্যে একদল লোককে নির্দেশ দিয়ে বাইরে যান। ফিরে এসে ছেলের প্রতি অবহেলা করার অপরাধে তিনি সে লোকদেরকে পাগল বানিয়ে দেন।
১২) এথেনার সম্মানে এথেন্সবাসীরা বাৎসরিক যে উৎসবের আয়োজন করতো তার নাম প্যানাথানিয়া।
১৩) নগরীর প্রধান রক্ষাকর্তা দেবতা কে হবেন সে প্রশ্নে দেবী এথেনা সমুদ্র দেবতা পোসাইডনের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। দেবতা পোসাইডন তার ত্রিশুল দিয়ে আঘাত করে এক্রোপলিসের পাহাড়ে এক লবন ঝর্নার সৃস্টি করেন আর দেবী এথেনা এথেন্সবাসীদেরকে উপহার দেন জলপাই গাছ। এথেন্সবাসীরা শান্তির প্রতীক জলপাই বেছে নেন এবং নগরীর রক্ষাকর্তা দেবী হন এথেনা। পোসাইডনের সৃস্ট সে ঝর্নার আজও দেখা পাওয়া যায় এক্রোপলিসের ইরেকথিয়নে।
১৪) এথেন্সের এক্রোপলিসের অধিকাংশ স্থাপনা যেমন পার্থেনন, ইরেকথিয়ন, ইত্যাদি মন্দির ছিল দেবী এথেনার উপাসনাস্থল।
Melina Mercouri এর মূর্তির পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম Acropolis এর দিকে। রাস্তার দুইপাশে অসংখ্য গ্রীক রেস্তোরাঁ এবং বাম দিকে New Acropolis মিউজিয়াম। এথেন্সের এ এলাকার নাম প্লাকা। অটোম্যান শাসনামলে এথেন্স পরিনত হয় ছোট এক শহরে। অটোম্যানদের এথেন্স দখলের আগে যে শহরের জনসংখ্যা ছিল লক্ষাধিক তা নেমে আসে মাত্র আট হাজারে।১৮৩২ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত এথেন্স শহর সীমা বদ্ধ ছিল Acropolis এর চারপাশ ঘিরে।তারপর থেকে স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে এথেন্সের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। নতুন এবং পুরোনোর সংমিশ্রনে এথেন্স এখন ৪৫ লক্ষ লোক জনসংখ্যার এক বিশাল নগরী। ২০০৪ সালের অলিম্পিক খেলাধুলার সময় এ নগরীকে ঢেলে সাজানো হয়।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×