somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিসের দেশে ( পঞ্চম পর্ব) ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডায়োনিসসের থিয়েটার এর পাশ দিয়ে বামদিকে ঘুরে পাকা রাস্তা উঠে গিয়েছে এক্রোপোলিসের চুড়ায়। এ পথ সমান হলেও হলেও অনেক লম্বা। কিছুটা শর্টকাটের কারনে থিয়েটারের পাশের এবড়ো খেবড়ো পাথুরে রাস্তা দিয়ে হেটে উঠে চললাম আক্রোপোলিসের প্রোপাইলিয়ন বা আনুষ্ঠানিক গেট এর দিকে।এ পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক প্রাচীন দেওয়াল, মূর্তি এবং অনান্য স্থাপনার চিহ্ন।পাথরের ফলকে লেখা আছে তাদের বর্ননা এবং সেগুলোর গুরুত্ব। হামিদুরের মত অনেকেই প্রশ্ন করেন "দাদা, ঘুরতে গিয়ে আপনি এত কিছু দেখেন কিভাবে? সমস্ত রহস্য বলা ঠিক হবে না তবুও বলি, প প্রথমতঃ আমি সময় নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি এবং ভবিষয়তে লেখার ছক কেটে ফেলি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার কারনে চারদিন এথেন্সে থেকেও এ নগরীর অনেক কিছুই দেখা বাকী থেকে যায় এবং বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ফুসরত পাইনি। দ্বিতীয়তঃ আমি যত পারি ছবি তুলি ( প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর পাশের ফলকে বর্নিত বর্ননা সহ)। তৃতীয়তঃ কোনো কিছু দেখার আগে সে সম্পর্কে যথাসাধ্য অধ্যয়ন করে জ্ঞানার্জন করি। ভ্রমনকালে অধ্যয়নের কারন হল তৃতীয় বর্ষে পড়া Hamilton Bailey এর Clinical methods in Surgery বইটি, যেখানে পড়েছিলাম "Eyes do not see what mind does not know"। সুতরাং আমি সব সময় সতর্ক থাকি যাতে করে Eyes do see what My mind does know।

ডায়ানিসসের থিয়েটার ছেড়ে পাহাড় বেয়ে একটু উপরে উঠলে চোখে পড়ল পথের চারপাশে ছোট ছোট এলোমেলো পাথর খন্ড। এটি হচ্ছে পূব দিক দিয়ে এক্রোপোলিসে ঢোকার প্রবেশদ্বার বা Eastern Paradosএর ধ্বংশাবশেষ। আরো একটু উপরে এক্রোপলিসের চারপাশ ঘিরে প্রতিরক্ষা দেওয়াল যা মাঝে মাঝে ধ্বসে পড়লেও অনেক স্থানে এখনো খাড়া দাঁড়িয়ে। দেওয়াল ঘেষেই চলে গেছে চারদিকের বৃত্তাকার রাস্তা বা Peripatos। প্রতিরক্ষা দেওয়াল এবং পেরিপাটোসের মাঝে ঊঁচু বেদীর উপর স্থাপিত আছে প্রাচীন যুগের বিখ্যাত গ্রীক কবি Aeschylus (খৃস্টপূর্বাব্দ ৫২৫-৪৫৫) এর আবক্ষমূর্তি। এ আবক্ষ মূর্তির ঠিক উলটো দিকে ছিল এস্কুলেপিয়সের (Aeschulepyus) মন্দির। এক্রোপলিসের পূবদিকের ঢালু যায়গার এ মন্দিরের কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই এবং পাথরের ফলকে লেখা না থাকলে কোনোভাবেই বোঝার উপাই নেই যে একদা এখানে এক সময় শোভা পেত প্রাচীন গ্রীসের চিকিৎসা ও নিরাময়ের দেবতা এস্কুলেপিয়সের আশ্রম বা মন্দির।এ স্থান যেন শিল্প প্রদর্শনীতে টানিয়ে রাখা সাদা কাগজ। কোনো এক শিল্প প্রদর্শনীতে সমস্ত রংগীন ছবির পাশে টানিয়ে রাখা বড়সড় আকারের সাদা কাগজ দেখে এক ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে শিল্পীকে প্রশ্ন করেন " ভাই আপনার ছবির বিষয়বস্তু কিছুই বুঝলাম না, ব্যাপার কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?"। - "কেন ? এটিতো গরুর ঘাস খাওয়ার ছবি" - উত্তর দিলেন শিল্পী। ভদ্রলোক তখন জানতে চাইলেন ঘাস এবং গরু কোথায়? শিল্পী উত্তর দিলেন ঘাস তো গরুতে খেয়ে ফেলেছে, আর গরু ঘাস টাস খেয়ে চলে গিয়েছে অন্য কোথাও।
গ্রীক পৌরানিক গল্পগুলো আমার অত্যন্ত প্রিয়। বন্ধু সিরাজের অনুরোধ এবং নিজের ভালোলাগার তাগিদে সে উপাখ্যানগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি এবং পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেস্টা করি।
এস্কুলেপিয়স (Aeschulepyus)ঃ-
এস্কুলেপিয়স ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের রোগ নিরাময় এবং চিকিৎসার দেবতা। হোমার তার ইলিয়াড মহাকাব্যে তাকে একজন মরনশীল অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে উপস্থাপন করেন। স্বীয় গুনাবলির কারনে পরবর্তীকালে তিনি একজন দেবতা হিসেবে পূজিত হতে থাকেন প্রাচীন গ্রীস এবং ভুমধ্যসাগরের আশেপাশের দেশগুলোতে।তার বাবা ছিলেন সূর্য্যদেবতা এপোলো এবং মা ছিলেন ত্রিক্কিয়ানের রাজকন্যা করোনিস (Coronis)।
জন্মঃ- প্রসবকালে মা করোনিস মারা গেলে তাকে দাহ করার আয়োজন করা হয়। চিতায় আগুন ধরানোর ঠিক আগ মুহুর্তে এপোলো করোনিসের পেট কেটে শিশু সন্তানকে বের করে আনেন এবং সে কারনেই তার নাম হয় এসকুলেপিয়স। গ্রীক ভাষায় এসকুলেপিয়স শব্দের অর্থ কেটে বের করে আনা। এপোলো মাতৃহীন শিশুপুত্রকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন সেন্টর(Centaur) কিরন(chiron) কে। সেন্টর হল এক কল্পিত প্রানী যার উপরের দিক ছিল মানুষের এবং নীচের দিকটা ঘোড়ার।এস্কুলেপিয়াস সেন্টর কিরনের কাছে রোগ নিরাময় করার পদ্ধতি এবং চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা পান। এক সময় এস্কুলেপিয়াসের জ্ঞান ও খ্যাতি, এপোলো এবং কিরনকেও ছাড়িয়ে যায়। কথিত আছে যে এসকুলেপিয়াস কোন এক সময়ে এক সাপকে সারিয়ে তোলেন। বিনিময়ে সাপ এসকুলেপিয়াসকে ক্ষত সারিয়ে তোলার গোপন বিদ্যা শিখিয়ে দেয়। প্রাচীন গ্রীসে সাপদের পবিত্র এবং স্বর্গীয় হিসেবে বিবেচনা করা হত। এসকুলেপিয়াসের ছিল পাঁচ কন্যা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এইয়িয়া( Hygieia) এবং প্যানাসিয়া। ইংরাজী "Hygiene" শব্দ এসেছে এইয়িয়া থেকে। প্যানাসিয়া(Panacea) হলেন সর্বরোগের মহৌষধ দানকারী দেবী। এসকুলেপিয়াসের তত্ববধানে প্রাচীন গ্রীসে বহু রোগ নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠে যাদেরকে বলা হত এসকুলেপিয়ন (Aeschulepeon)। পৃথিবীর ইতিহাসে এস্কুলেপিয়নই হল প্রাচীনতম হাসপাতাল। যে সমস্ত চিকিৎসক এবং অনান্য সেবক সেবিকারা রোগীর চিকিৎসা এবং পরিচর্য্যা করতেন তাদেরকে বলা হত Therapeutae of Aeschulepius। প্রাচীন গ্রীসে প্রায় তিনশত বিশটি এসকুলেপিয়াসের আশ্রম বা হাসপাতালের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচে' বড়টি হল পেনিপোলিসের এপিডোরাসে। এসকুলেপিয়াসের প্রতীক হল লাঠির চারপাশে জড়িয়ে থাকা সাপ যা আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাপ যেমনি খোলস ছেড়ে দিয়ে নতুন খোলসে জীবন শুরু করে তেমনি এসকুলেপিয়াসের চিকিৎসায় রোগীরাও নতুন জীবন পেত।
মৃত্যুঃ- এস্কুলেপিয়াসের চিকিৎসায় ভাল হয়ে উঠত যে কোনো রোগী। এমনও শোনা যায় যে তিনি, মৃত ব্যাক্তিকে জীবনদান করার ক্ষমতা অর্জন করেন।তার চিকিৎসার কারনে পৃ্থিবীতে মানুষের সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে যায় এবং পরলোকে আত্মার সঙ্কট দেখা দেয়। পরলোকের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবতা হেডস আত্মার স্বল্পতা নিয়ে ভাই দেবরাজ জিউসের কাছে এস্কুলেপিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সৃস্টির নিয়ম ভঙ্গের অপরাধ এবং হেডস এর অভিযোগের কারনে দেবরাজ জিউস এসকুলেপিয়াসকে বজ্র নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। অচিরেই জিউস নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং তিনি এসকুলেপিয়াসকে আকাশে জ্বলজলে নক্ষত্র বানিয়ে রাখেন। (চলবে)।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×