somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষম চিন্তা - ৩।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওপারিন হ্যালডেন হাইপোথিসিস(Oparin-Haldane hypothesis) রুশ বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার ওপারিন( Alexander Oparin) ১৯২৪ সালে গবেষনা ভিত্তিক বই”The origin of life” এ পৃথিবীতে প্রান উদ্ভবের ধারনা দেন। ওপারিনের ধারনা ছিল অনেকটা ডারউইনের মতঃ-
সৃস্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল গ্যাসের অগ্নিকুন্ড। তা ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে গলন্ত লাভা থেকে কঠিন শিলায় পরিনত হয়, এবং জলীয় বাস্প ঘনীভূত হয়ে বৃস্টিপাতের ফলে পৃথিবী ভরে উঠে সাগর মহাসাগর দিয়ে। সেই সময়ে পৃথিবীর পানিতে থাকা পদার্থগুলোর পারস্পরিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রানের জন্য অপরিহার্য্য জটিলতর যৌগিক পদার্থ যেমন সুগার বা এমাইনো এসিড তৈরী হয়েছিল।এই সমস্ত যৌগিক পদার্থগুলো মিশে তৈরী করেছিল ক্ষুদ্র আনুবীক্ষনিক পদার্থ। কিছু কিছু যৌগিক পদার্থ পানিতে দ্রবনীয় নয় যেমন তেল। এই তেল পানির উপর ভেসে থাকে এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এলে ছোট দানার আকার ধারন করে। এদেরকে মাইক্রোস্কোপের নীচে অনেকটা কোষের মত দেখায়। এই তেলের কনা বড় হয়, একটার সাথে আরেকটা মিলিত হয় , ভেঙ্গে যায় এবং অনেক সময় পানি থেকে অন্যন্য রাসায়নিক পদার্থ শুষে নেয়। এ গুলোর নাম হল Coacervates । ওপারিন মত প্রকাশ করেন যে এরাই ছিল কোষের পূর্বসূরী। ওপারিনের পাঁচ বছর পর ইংরেজ জীববিজ্ঞানী J. B. S. Haldane একই রকম মত প্রকাশ করেন। হ্যালডেন বলেন পানির মধ্যে রাসায়নিক পদার্থগুলোকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে তেলের আস্তরন আর এর মধ্যেই প্রানের জন্ম। হ্যালডেন এবং ওপারিনের মত হল যে- জড় পদার্থ থেকেই প্রানের উৎপত্তি এবং সেখানে সৃস্টিকর্তার কোনো হাত নেই; “জীবনী শক্তি” বলে আসলে কিছু নেই। জৈব যৌগিক পদার্থ থেকে প্রানের উৎপত্তির এই মতবাদকে বলা হয় Oparin-Haldane hypothesis. জড় পদার্থ থেকে প্রানের উপকরনের সৃস্টি হওয়া যে সম্ভব তা প্রমান করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরো সিকি শতাব্দী।
মিলার উরি এক্সপেরিমেন্ট (Miller Urey Experiment )ঃ- Harold Urey হলেন ১৯৩৪ সালে্ রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভকারী আমেরিকান ভৌত রসায়নবিদ। পারমানবিক বোমা তৈরীর প্রকল্প “মানহাট্টান প্রজেক্ট” এ তার উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি বহির্বিশ্বের রসায়ন এবং পৃথিবী সৃস্টির গোড়ার রসায়ন সম্পর্কে গবেষনা শুরু করেন। একদিন তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে সৃস্টির শুরুতে পৃথিবীতে অক্সিজেন ছিলো না এবং Oparin-Haldane hypothesis অনুযায়ী পৃথিবীর তৎকালীন পরিবেশে প্রানের জন্য অপরিহার্য্য যৌগিক পদার্থের উদ্ভব হওয়া সম্ভব। সেই বক্তৃতার একজন শ্রোতা ছিলেন পোস্ট ডক্টোরাল ছাত্র স্ট্যানলী মিলার(Stanley Miller)। বক্তৃতা শেষে মিলার উরিকে পৃথিবীর শুরুতে প্রানের উদ্ভব নিয়ে পরীক্ষা করার আহবান জানান।অতঃপর
১৯৫২ সালে বিজ্ঞানী স্ট্যানলী মিলার(Stanley Miller) এবং উরি প্রানের উৎপত্তি নিয়ে যে পরীক্ষাটি করেন সেটি ছিল যুগান্তকারী। তারা গবেষনাগারে পৃথিবীর শুরুতে থাকা পরিবেশ সৃস্টি করেন এবং তখনকার রাসায়নিক পদার্থসমূহের রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। পরস্পরের মধ্যে কাচের নল দিয়ে সংযুক্ত কয়েকটি ফ্লাস্কের মধ্যে মিথেন, হাইড্রোজেন, পানি এবং এমোনিয়া রেখে মুখ বন্ধ করে দেন এবং সে গুলোতে তখনকার, পৃথিবীতে থাকা শক্তি যেমন আলো, বিদ্যুৎ, এবং তাপ প্রয়োগ করেন। কিছুদিন পর তারা দেখতে পান যে পানির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরী হয়েছে প্রোটিনের একক দুই প্রকার এমাইনো এসিড Alanine এবং Glycine। প্রোটিন দিয়েই প্রানের উল্লেখযোগ্য ভাগ তৈরী এবং এটি প্রানীর রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য্য । মজার ব্যাপার হলো ২০০৭ সালে পঞ্চাশ বছরেরও পরে বন্ধ কাচের পাত্রের পানি বিশ্লেষন করে বিজ্ঞানীরা খুজে পেয়েছেন কুড়ি প্রকার বিভিন্ন ধরনের এমাইনো এসিড।
মিলার- উরি পরীক্ষায় ভুল ছিলো কারন পৃথিবীর গোড়ার পরিবেশ তাদের পরীক্ষার পরিবেশ থেকে ভিন্ন ছিল। কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক সাদারল্যান্ড বলেন “ তবুও এটি যুগান্তকারী এই জন্যেই যে তারা প্রথম প্রমান করে দেখান যে পৃথিবীতে বিদ্যমান পদার্থ দিয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবনের অনু তৈরী হওয়া সম্ভব। বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন যে তারা ক্রমে ক্রমে জীবনের সমস্ত অনু তৈরী করে জীবন গঠন করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু জীবন শুধুমাত্র কিছু রাসায়নিক পদার্থের ব্যাগ মাত্র নয়, এটি অনেক বেশী জটিল (চলবে)।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×