somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোরোন্টোর নববর্ষ বরন।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টোরোন্টোর স্প্যাডিনা এভিন্যু এবং ডান্ডাস স্ট্রীট, কলেজ স্ট্রীট ,কিঙ্গস স্ট্রীট ইত্যাদি ইন্টারসেকশান গুলোর বেশ বড় এক এলাকা "চায়না টাউন" হিসেবে পরিচিত। বাংগালী পাড়ার স্বীকৃতি চায়না টাউনের সমান না হলেও এ পাড়া কিন্তু দ্রুত বাড়ছে। আজ থেকে ষোল বছর আগে প্রথম যখন টরোন্টো আসি তখন বাংগালী খুব একটা চোখে পড়েনি, কিন্তু আমাদের পাড়ায় এখন শতকরা প্রায় পঞ্চাশভাগ লোকই হলেন বাংগালী। টোরোন্টোর এ এলাকায় ইংরাজী না বলেও স্বচ্ছন্দে চালিয়ে দেওয়া যায়। বাংগালী পাড়ার হিসেব দুইভাবে দেওয়া যায়। প্রথমটি হল বড় কন্ডোমিনিয়াম কমপ্লেক্সগুলো দিয়ে যেমন মেসী সক্যোয়ার, ক্রিসেন্ট টাউন, টিসডেল, ডেন্টনিয়া ফার্মেসী ইত্যাদি দিয়ে। মোট পঞ্চাশটির বেশি ত্রিশতলা বা ততোধিক উচু বিশাল ভবনগুলোতে বাস করেন অধিকাংশ বাঙ্গলাদেশী। দ্বিতীয় হিসেবের পদ্ধতি হল ইন্টারসেকশান দিয়ে হিসেব দেওয়া । ৬/৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাপারার পুবের সীমানা হল ড্যানফোর্থ এভিনিউ/বার্চমাউন্ট ইন্টারসেকশান, পশ্চিমের ড্যানফোর্থ /মেইন স্ট্রীট ইন্টারসেকশান, দক্ষিনের ভিক্টোরিয়া পার্ক /জেরার্ড স্ট্রীট ইনটারসেকশান এবং পশ্চিমের সীমানা হল ভিক্টোরিয়া পার্ক /এগলিনটন এভিনিউ ইন্টারসেকশান। কানাডার মধ্যে সবচে' বেশী বাংলাদেশীর বাস টোরোণ্টোতে আর টোরোন্টোর মধ্যে সবচে বেশী বাংগালী বাস করেন এ পাড়াতেই। বাংগালীর চেয়ে বাংলাদেশী শব্দটি বেশী প্রযোজ্য কারন এখানে ওষূধ করতে ভারতীয় বাংগালী খুজে পাওয়া যায় না। প্রতিদিনই বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ছে আর গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশীরা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা ঈদ পূজা এখানে পালিত হয় বেশ জোরে শোরে। টেইলর ক্রীক পার্কে শহীদ মিনার নির্মানের জায়গা দিয়েছে টোরোন্টো সিটি করপোরেশান। আশা করা যাছে সামনের বছর বা তার পরের বছরেই এখানে শহীদ মিনার হবে।

সাধু চলিত মিশ্রনের কারনে স্কুল জীবনের বাংলা শিক্ষক শ্রীযুক্ত ননীগোপাল কর স্যারের কাছে ধোলাই খেয়েছি অনেক বার। আগের দিনের কবি সাহিত্যিকেরা সাধু ভাষায় লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্র দের লেখা সাধুভাষায় হলেও বঙ্কিমচন্দ্রের লেখাতো ছিল সাধু এবং সংস্কৃত। বর্তমানের সাহিত্যে চলিত ভাষার চলনই বেশী। তবে যে দু' একটা সাধু ভাষার শব্দ ভালমত টিকে আছে তার মধ্যে “ নব বর্ষ” শব্দটি একটি । নব বর্ষের চলিত “নতুন বছর” একেবারেই বেমানান।

বাংলা নবর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ গত হয়েছে আট নয় দিন, কিন্তু টোরোন্টোর নববর্ষ উদযাপন শেষ হলো গতকাল। এদেশে ৬৫ বছর বা তার উপরের বয়সীরা হলেন সিনিয়ার। বাঙ্গলাপাড়াতে বাংগালী সিনিয়রদের কমিউনিটি সেন্টার আছে বেশ কতক গুলো। পহেলা বৈশাখের পরিবর্তে অন্য দিন নববর্ষ উদযাপনের প্রধান কারন হল ছুটি পাওয়া। ছুটির দিন ছাড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন একদিকে যেমন কস্টসাধ্য অন্যদিকে লোকজন পাওয়াও মুশকিল। পহেলা বৈশাখের দিনেই নববর্ষ উদযাপন করেছিল বাংলাদেশ- কানাডা সেন্টার বা BCS , তারপর BCCS , তারও পর এলো হারমনি হল এবং সবশেষে গতকালের আয়োজন ছিল ওয়েস্ট স্কারবোরো নেইবার হুড সেন্টারের উদ্যোগে। হারমনি হলকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার কারন তাদের সর্ষে ইলিশের স্বাদ এখনো জিহবায় লেগে আছে। সমস্ত অনুষ্ঠানেই স্থানীয় এম,পি, এম,পি,পি এবং অন্যান্য কানাডিয়ান রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল উপস্থিত ছিলেন সাউথ স্কারবোরো আসনের , এম,পি বিল ব্লেয়ার। যারা বাংলাদেশী এম, পি দেখে অভ্যস্ত, তারা যদি কানাডার এম,পি দের দেখেন তাহলে নিরাশ হবেন। এ দেশের এম,পি একা গাড়ী চালিয়ে আসেন। পুলিশতো দুরের কথা ব্যাক্তিগত দেহরক্ষীও তার সাথে থাকে না। আপামর জনতার সাথে এম,পি রা মেশেন নির্দ্বিধায়। বিল ব্লেয়ারকে আগে দুই একবার দেখে থাকলেও গতকাল চিনতে বিদ্যুতদার সাহায্য লেগেছিল।নব বর্ষের অনুষ্ঠনগুলোতে সব এমপি, এম,পি,পি রা আমাদের বাংলায় শুভ নবর্ষ জানিয়েছিলেন।

অনান্য স্থানের মত গতকালও অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল “এসো হে বৈশাখ...” গান দিয়ে। তারপর ছোট ছেলেমেয়েদের নাচ সিনিয়রদের নাচ, বিভিন্ন শিল্পীর গান, আবৃত্তি কৌতুক ইত্যাদি দিয়ে এ অনুষ্ঠান চলেছিল দুই ঘন্টার উপর। সবচে, মজার ব্যাপার হলো BNCC( Birchmount Neighbourhood Community Centre) এর পরিচালক এবং তার সহধর্মীনিরা নেচেছিলেন ছোট বাচ্চাদের সাথে।

নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া নারীদের জন্য সুসংবাদ হলো যে সমস্ত অনুষ্ঠানেই ৭০-৮০% দর্শক শ্রোতা ছিলেন নারী। ছোট বেলায় গ্রামের নাটকগুলোতে দেখেছি ছেলেদের মেয়ে সেজে অভিনয় করতে দেখেছি। ছোটবেলায় “দেবলা দেবী” যাত্রায় দেবলা(নায়িকা)'র ভূমিকায় অভনয় করতে দেখেছিলাম কালুখালীর চিত্তদাকে। কাল দেখলাম এক ছোট মেয়ে প্রেমিক সেজে তার প্রেমিকা( আরেকটি মেয়ে)'র সাথে একত্রে গান গাইছে “ তোমার গরুর গাড়ীতে আমি যাবোনা, তোমার ঘরের ঘরনী আমি হবো না.........”। এটি পুরুষদের জন্য একটি অশনি সংকেত। কানাডার বাঙ্গালী সমাজে পুরুষ প্রাধান্য অতীত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের দিনগুলো যে নারীদের তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

সর্ব শেষঃ- নববর্ষে সবারই নতুন বছরের জন্য প্রতিজ্ঞা থাকে। আমাদের জনৈক বন্ধুর বক্তব্য ছিল “ ভাবছি সামনের বছর থেকে আর এলকোহল খাবো না” তাকে কিন্তু কয়েকদিন পরেই দেখা গেল সুরা পানের আসরে। জিজ্ঞে করলাম “ কি রে তুই না ছেড়ে দিবি” “ হ্যা গতবছর ভেবেছিলাম এ বছরে ছাড়বো, কিন্তু এখন মদ খাওয়া ছাড়তে পারি নি , ভাবাভাবি ছেড়ে দিয়েছি।

আরেক বন্ধু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নতুন বছরে সিগারেট খাবেন না । কিন্তু কয়েকদিন পর তিনি যখন সিগারেট চাইলেন তাকে স্মরন করিয়ে দিলাম যে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলন আর সিগারেট খাবে্ন না। বন্ধু উত্তর দিলো “ এত দিনের সিগারেট ছাড়া কি সজা কাজ? ধাপে ধাপে এগুতে হয়। আমি এখন প্রথমধাপ ছেড়ে দ্বিতীয় ধাপে আছি”- কেমন? “ আগে কিনে সিগারেট খেতাম , প্রথমধাপে কেনা বন্ধ করেছি , এখন দ্বিতীয় ধাপে সিগারেট চেয়ে খাই, দে একটা সিগারেট দে...।”

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×