somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা ফিরে এলেন

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাকে নিয়ে আমি যখন বাসায় ঢুকলাম তখন বিকেল গড়িয়ে গেছে।বাবা কাকারা ফেরেনি ঠাকুমা পিসীমাকেও ধারে কাছে দেখলামনা। আমি মার হাত ধরে পা টিপেটিপে উপরে উঠে এলাম।রাতে বাবা যখন অফিস থেকে ফিরলেন তখন সবাই মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো।বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন সবাই হাসছে কেন রে? আমি বল্লাম মা এসেছেতো তাই। বাবা পিসীমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছে?পিসীমা বললেন আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে বড়দা যার কাছে অপরাধ করেছে তার কাছে ক্ষমা চাক।বাবা গম্ভীর হয়ে থাকলেন। আমার কিন্তু বাবার মুখ দেখে মনে হল মা আসায় বাবা খুসীই হয়েছেন।
আমার শরীর এখন খুব দূর্বল লাগে ।স্কুলে যাওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। বাবা বড় বড় নাম করা ডাক্তার বাড়ীতে কল দিয়ে এনে দেখালেন।ডাঃ সেন বেশ নামকরা ডাক্তার।বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ।তিনি আমার বুকটা স্টেথো দিয়ে দেখবেন বলে জামাটা খুলে ফেলতে বললেন।আমি কিছুতেই জামা খুলতে চাইলামনা।ডাঃ সেন বললেন এতটুকু মেয়ে তার বেশী বেশী লজ্বা। উনি আমার বুকের এক্সরে করতে বললেন।ব্লাড এগজামিন করতে বললেন ।
বাগবাজারে প্রফুল্ল ডাক্তার ছিলেন ।উনি আমাদের গৃহচিকিৎসক ছিলেন।তাঁর সাথে বাবা পরামর্শ করলেন ।ডাক্তারার বাবু আমাকে আরো বড় ডাক্তারের কাছেনিয়ে গেলেন।সেই ডাক্তারবাবু আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে একটা ইন্জেকশান লিখে দিলেন ।মনে আছে অনেকদিন ধরে আমাকে ঐ ইন্জেকশানটা নিতে হয়েছিল। ডাঃ সেনের ছেলে আমাকে ইন্জেকশান দিতে আসত।সেও ডাক্তার। বয়স অল্প। দেখতে সুন্দর ।ব্যবহারও খুব ভাল।আমাকে বোন বোন করে ডাকতো ।কত গল্প বলত।গল্প করতে করতেই ইন্জেকশান দিয়ে দিত।আমি কিছু বুঝতেই পারতামনা।
আমার খাওয়ার ব্যবস্হাও বেশ রাজসিক হল।ডাক্তারের কথামত রোজ তিন সের দুধ,ফল,মিষ্টি ।আমার কিছুই খেতে ভালো লাগতো না ।মা বাবা আমাকে ভুলিয়ে ভুলিয়ে খাওয়াতেন আমি খেতে চাইতামনা বলে । আমি এসময় বিছানা থেকে একদম উঠতে পারতামনা। মা আমাকে কোলে করে বাথরুম নিয়ে যেতেন। এভাবে সেবা করার জন্য আমি একটু ভালোর দিকে যেতে লাগলাম। এবার ডাক্তারবাবু পথ্যও পাল্টিয়ে দিলেন।ভাত দিতে বললেন দুপুরে ।রাতে খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে ভাজা লুচি।ঘি দিয়ে ভাজা আলুভাজা।আর একটা করে মিষ্টি। মা বাড়ীতে লুচি আলুভাজা বানাতেন।আর জলযোগের দোকান থেকে আসতো বড় বিস্কুট সন্দেশ।রাতের খাবারটা আমার বেশ ভালই লাগতো।আর ঘিয়ে ভাজা সেই লুচি আর আলুভাজার স্বাদ এখনো মুখে জড়িয়ে আছে।
প্রায় সাত আট মাস পরে বিছানা থেকে উঠে হাঁটাচলা শুরু করতে পারলাম।এ সময় আমার মাথায় খুব উকুন হয়েছিল। মা সারাদিনের সব কাজ সেরে সেই উকুন বাছতে বসতেন।সংসারে এমন আজুড়ে কাজে সময় নষ্ট কার ভাল লাগে ।সকলে বলতে লাগলো ঐ উকুনে চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দিতে। সব ঝামেলাই তবে মিটে যাবে। বাবা অমন সুন্দর কোঁকড়া চুল কাটতে কিছুতেই রাজী হলেননা।সুতরাং মা সব কাজের শেষে আমার উকুন বাছা কাজ করতেন যাতে কেউ রাগ করতে না পারে । এভাবে মার ভালোবাসা আর যত্নে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।মা যে ভাবে আমার সেবা যত্ন করেছিলেন আমি হলে তা পারতাম না। কিন্তু মায়ের এই সেবার বিনিময়ে আমি না বুঝে মার সাথে এমন ব্যবহার করেছিলাম যা ভাবলে আজ লজ্জ্বা হয়।
তখন আমি বেশ অনেকটাই সুস্থ । কিন্তু ডাক্তারের কথামত ওষুধ পথ্য চলছে ।পথ্যের পরিমান বেড়েছে ,ধরনও।এমনি এক সময় বাড়ীতে মা আর বাড়ীর কাজের লোকের একই সাথে পক্স হল।দুজনকেই একটা আলাদা ঘরে রাখা হয়েছিল।তখন পক্স হলে অনেক নিয়ম মানা হত ।নিরামিষ খেতে হত ,তা ছাড়া রোগটা এমনি ছোঁয়াচে আর ভয়ের। আমি সবে রোগ থেকে উঠেছি তাই বাবা আমাকে ডেকে বললেন।আমায় ঐ অসুখের ঘরে যেতে বারন করে দিলেন ।আমি এমনিতে বাধ্য ছিলাম তাই ও ঘর মুখো আর যেতাম না।সেদিন দুপুরে বাড়ীতে কেউ ছিলনা ।আমি কোন কারণে বারান্দা দিয়ে যাচ্ছিলাম হটাৎ চোখ পড়ে গেল অসুখের ঘরের দিকে । দেখি মশারীর মধ্যে থেকে মা হাত ছানি দিয়ে আমায় ডাকছেন। কি করব ভাবছি বাবার কথা মনে পড়ল।এক এপা দু পা করে চলেএলাম। পিছনে মার কাতর ডাক শুনতে পাছ্ছিলাম ,ও ছায়া একটু জল দিবি বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু বাবা যদি জানতে পারে ,আমি দরজাটা ভেজিয়ে চুপ করে বসে রইলাম । দরজা পেরিয়ে অসুস্থ মায়ের ক্ষীণ আওয়াজ আর কানে এল না।আমার খুব যেতে ইচ্ছা করছিল মায়ের কাছে কিন্তু আমি মার কাছে গেলাম না।মা পরে আমায় বলে ছিলেন তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল ,তোর কাছে জল চেয়ে ছিলাম ,তুই দিলিনা।আমি বললাম ,আমি বুঝতে পারিনি মা ,বাবা বারণ করেছিল তাই ওঘরে যাইনি।
তখনও ডাঃ সেনের ছেলে আমাকে ইন্জেকশন দিতে আসতেন।এসময় একদিন সকালে বাড়ীর কোথাও মা কে দেখতে পেলামনা।আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, ওরা বোধহয় আবার মাকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে।বাবাকে সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম বাবা মা কোথায়? বাবা বললেন খবর এসেছে ,দাদুর শরীর খুব খারাপ।তাই ভোরেই তোমার মা মামার বাড়ী গিয়েছেন। আসলে দাদু মারা গিয়েছেন।এই খবর পেয়ে মা অসুস্থ দূর্বল শরীরেই ওখানে গিয়েছেন। মা সবে পক্স থেকে উঠেছেন। একথা গুলো বাবা ডাঃ সেনের ছেলেকে বলছিলেন আমি আড়াল থেকে শুনেছিলাম।আমি দাদুর জন্য কাঁদতে লাগলাম।বাবা বললেন ওনার ষাট বছর বয়স হয়েছিল ।ডাঃ সেনের ছেলে বললেন ৬০ বছর বয়স আজকাল কিছুই নয়।আমার খালি দাদুর কথা মনে হচ্ছিল আমার চোখ ফেটে জল এল।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×