somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী ২২৫০ : একটি ভ্রমণকাহিনী

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাইম মেশিনে চড়ে আমি গিয়েছিলাম ২২৫০ সালের পৃথিবীতে। সঙ্গে ছদ্মবেশে ছিলেন রিচার্ড ফাইনম্যান। তারই গল্প আজ আপনাদের শোনাই।

প্রথমেই গেলাম ফিজিক্স ইনস্টিটিউটে; খুব জানার ইচ্ছে এতদিনে স্ট্রিং-এর কোন বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা। ফাইনম্যানকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।

গিয়েই দেখি দুই পক্ষের মারামারি চলছে। জিজ্ঞেস করলাম "আপনারা কেন লড়ছেন ভাই ?" । একদলের নেতা জিকো দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন "আমি মহাবিজ্ঞানী ফাইনম্যানের অপমান সহ্য করতে পারি না। এই জঘন্য বিটকেল হতভাগা রায়ানটা সেই ফাইনম্যানকে অপমান করে কী বলেছে জানেন ? বলে কিনা ফাইনম্যান নাকি এম আই টি-তে দিনে দুবেলা রুটি না খেয়ে একবেলা কোক খেতেন ! ভাবুন একবার, এতবড় দুঃসাহস!!! বিজ্ঞানদ্রোহী হতভাগাকে ফাঁসিতে যদি না ঝোলাই! "

রায়ানও বত্রিশ পাটি দাঁত বার করে খিঁচিয়ে উঠল "বেল্লিকটার কথা শুনুন ! পনেরো বছর আগে তুই-ই তো ফাইনম্যানের অজুহাত দিয়ে নির্দোষ দু হাজার মানুষের ওপর ক্যানসার পরীক্ষা চালিয়ে তাদের খুন করলি, তার বিচারটা আগে করি....."।

জিকো একেবারে তেলে বেগুনে খেপে গেলেন কিন্তু রায়ানের কথাটা হক, তাই তিনি কিছু বলতেও পারলেন না, এমন সময় লবিতে একজনের পদধ্বনি শুনতে পেলাম - ইনি ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডঃ এয়ার্শ। (পরে জেনেছিলাম- এই এয়ার্শ নাকি যখন যেদিকে গ্র্যান্ট প্রপোজাল পাওয়া যায় তখন সেদিকে ঝোঁকেন। ) উনি এসেই কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের মনে আওড়াতে শুরু করলেন "বিজ্ঞানদ্রোহী হতভাগাদের ফাঁসিতে ঝোলাবার কঠোরতম দাবিতে আমার বিশাল রিসার্চ গ্রুপ আগামী কাল থেকে প্রতিবাদ সভা করবে।" তখন জিকো আর রায়ান ঝগড়া থামিয়ে একটু হাসলেন - আমাকে লক্ষ্য করে বললেন "আপনি নতুন এসেছেন, তাই জানেন না, এয়ার্শের গ্রুপে আজ ১৬ বছর হল কোন রিসার্চারই নেই।"

খেপে গিয়ে এয়ার্শ "এটাই আমার রিসার্চ গ্রুপের শেষ আন্দোলন" বলে গটগট করে চলে গেলেন। তাঁর চলে যাওয়া শেষ হতে না হতেই জিকো আর রায়ানের হাতাহাতি আবার শুরু হয়ে গেল। জিকোর ছাত্ররা "ফাইনম্যানকে অবমাননাকারী বিজ্ঞানদ্রোহী রায়ানের মুণ্ডু চাই " দাবি নিয়ে করিডরে মিছিল শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়ানের ছাত্ররা "খুনি জিকোর মুণ্ডু চাই" বলে পাল্টা মিছিল আরম্ভ করল।
মারামারিতে অনেকেরই মাথা পড়ল কাটা, হাত পা-ও খোয়া গেল অনেকেরই। জিকো আর রায়ান অবশ্য ফুড কাউন্টার থেকে চিকেন শিক কাবাব কিনে এনে পা ছড়িয়ে পাশাপাশি বসে নিজেদের ছাত্রদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

মারামারি এক সময় চরমে পৌঁছাল। আমি আর থাকতে না পেরে জিকো আর রায়ান দুজন-কেই বললাম "মহাবিজ্ঞানী ফাইনম্যান আমার সঙ্গেই আছেন, আপনারা চান তো আমি তাঁর সঙ্গে আপনাদের কথা বলাতে পারি।" দুজনেই ব্যাজার মুখে সাড়া দিলেন।

আমি ফাইনম্যানকে ডেকে নিয়ে এলাম।

জিকো এবং রায়ান বললেন "আচ্ছা, আপনি কী এম আই টি তে রুটি খেতেন না কোক খেতেন ?"

ফাইনম্যান:"আপনারা একজন ফিজিসিস্ট হয়ে আমাকে এসব ফালতু প্রশ্ন করছেন কেন ? এসব জেনে কী লাভ? এসবের থেকে আমাকে বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করুন, আমি খুশি হব। "

তখন দুজনেই তাদের অনুচর নিয়ে ফাইনম্যানকে "জালি, নকলি, বিজ্ঞানদ্রোহী" বলে পেটাতে থাকলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফাইনম্যান বিজ্ঞানদ্রোহী না বিজ্ঞানপন্থী এই বিষয়ে পোলের আয়োজন করা হয়েছে এবং সেটা নিয়ে মারামারিতে ৩৫ জন রিসার্চার মারা গেছেন। এই মারামারির মাঝে প্রোজেক্টের টাকা না পেয়ে আরও ২০০০ তরুণ রিসার্চার না খেতে পেয়ে মারা গেছেন।

অত্যধিক শিক কাবাব খাওয়ায় জিকো এবং রায়ানের পেট খারাপ হয়েছে, তাঁরা এখন পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছেন।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×