টাইম মেশিনে চড়ে আমি গিয়েছিলাম ২২৫০ সালের পৃথিবীতে। সঙ্গে ছদ্মবেশে ছিলেন রিচার্ড ফাইনম্যান। তারই গল্প আজ আপনাদের শোনাই।
প্রথমেই গেলাম ফিজিক্স ইনস্টিটিউটে; খুব জানার ইচ্ছে এতদিনে স্ট্রিং-এর কোন বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা। ফাইনম্যানকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।
গিয়েই দেখি দুই পক্ষের মারামারি চলছে। জিজ্ঞেস করলাম "আপনারা কেন লড়ছেন ভাই ?" । একদলের নেতা জিকো দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন "আমি মহাবিজ্ঞানী ফাইনম্যানের অপমান সহ্য করতে পারি না। এই জঘন্য বিটকেল হতভাগা রায়ানটা সেই ফাইনম্যানকে অপমান করে কী বলেছে জানেন ? বলে কিনা ফাইনম্যান নাকি এম আই টি-তে দিনে দুবেলা রুটি না খেয়ে একবেলা কোক খেতেন ! ভাবুন একবার, এতবড় দুঃসাহস!!! বিজ্ঞানদ্রোহী হতভাগাকে ফাঁসিতে যদি না ঝোলাই! "
রায়ানও বত্রিশ পাটি দাঁত বার করে খিঁচিয়ে উঠল "বেল্লিকটার কথা শুনুন ! পনেরো বছর আগে তুই-ই তো ফাইনম্যানের অজুহাত দিয়ে নির্দোষ দু হাজার মানুষের ওপর ক্যানসার পরীক্ষা চালিয়ে তাদের খুন করলি, তার বিচারটা আগে করি....."।
জিকো একেবারে তেলে বেগুনে খেপে গেলেন কিন্তু রায়ানের কথাটা হক, তাই তিনি কিছু বলতেও পারলেন না, এমন সময় লবিতে একজনের পদধ্বনি শুনতে পেলাম - ইনি ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডঃ এয়ার্শ। (পরে জেনেছিলাম- এই এয়ার্শ নাকি যখন যেদিকে গ্র্যান্ট প্রপোজাল পাওয়া যায় তখন সেদিকে ঝোঁকেন। ) উনি এসেই কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের মনে আওড়াতে শুরু করলেন "বিজ্ঞানদ্রোহী হতভাগাদের ফাঁসিতে ঝোলাবার কঠোরতম দাবিতে আমার বিশাল রিসার্চ গ্রুপ আগামী কাল থেকে প্রতিবাদ সভা করবে।" তখন জিকো আর রায়ান ঝগড়া থামিয়ে একটু হাসলেন - আমাকে লক্ষ্য করে বললেন "আপনি নতুন এসেছেন, তাই জানেন না, এয়ার্শের গ্রুপে আজ ১৬ বছর হল কোন রিসার্চারই নেই।"
খেপে গিয়ে এয়ার্শ "এটাই আমার রিসার্চ গ্রুপের শেষ আন্দোলন" বলে গটগট করে চলে গেলেন। তাঁর চলে যাওয়া শেষ হতে না হতেই জিকো আর রায়ানের হাতাহাতি আবার শুরু হয়ে গেল। জিকোর ছাত্ররা "ফাইনম্যানকে অবমাননাকারী বিজ্ঞানদ্রোহী রায়ানের মুণ্ডু চাই " দাবি নিয়ে করিডরে মিছিল শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়ানের ছাত্ররা "খুনি জিকোর মুণ্ডু চাই" বলে পাল্টা মিছিল আরম্ভ করল।
মারামারিতে অনেকেরই মাথা পড়ল কাটা, হাত পা-ও খোয়া গেল অনেকেরই। জিকো আর রায়ান অবশ্য ফুড কাউন্টার থেকে চিকেন শিক কাবাব কিনে এনে পা ছড়িয়ে পাশাপাশি বসে নিজেদের ছাত্রদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
মারামারি এক সময় চরমে পৌঁছাল। আমি আর থাকতে না পেরে জিকো আর রায়ান দুজন-কেই বললাম "মহাবিজ্ঞানী ফাইনম্যান আমার সঙ্গেই আছেন, আপনারা চান তো আমি তাঁর সঙ্গে আপনাদের কথা বলাতে পারি।" দুজনেই ব্যাজার মুখে সাড়া দিলেন।
আমি ফাইনম্যানকে ডেকে নিয়ে এলাম।
জিকো এবং রায়ান বললেন "আচ্ছা, আপনি কী এম আই টি তে রুটি খেতেন না কোক খেতেন ?"
ফাইনম্যান:"আপনারা একজন ফিজিসিস্ট হয়ে আমাকে এসব ফালতু প্রশ্ন করছেন কেন ? এসব জেনে কী লাভ? এসবের থেকে আমাকে বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করুন, আমি খুশি হব। "
তখন দুজনেই তাদের অনুচর নিয়ে ফাইনম্যানকে "জালি, নকলি, বিজ্ঞানদ্রোহী" বলে পেটাতে থাকলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফাইনম্যান বিজ্ঞানদ্রোহী না বিজ্ঞানপন্থী এই বিষয়ে পোলের আয়োজন করা হয়েছে এবং সেটা নিয়ে মারামারিতে ৩৫ জন রিসার্চার মারা গেছেন। এই মারামারির মাঝে প্রোজেক্টের টাকা না পেয়ে আরও ২০০০ তরুণ রিসার্চার না খেতে পেয়ে মারা গেছেন।
অত্যধিক শিক কাবাব খাওয়ায় জিকো এবং রায়ানের পেট খারাপ হয়েছে, তাঁরা এখন পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছেন।