somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসলেই তাবলীগ খারাপ [লতীফ সিদ্দিকী কি এজন্যই তাবলীগ পছন্দ করতেন না] এরা এত সৎপথে চলতে চায় কেনো ???

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই ছোট বেলার কথা বলছি সময়টা তখন ১৯৯৪-১৯৯৫ সাল । আমার বাবা খুবই ছোট মাপের একজন সরকারী কর্মচারী। সংসারে আমরা চারজন প্রানী, আমি বড় ভাইয়া বাবা এংব মা। আমি আর বড় ভাইয়া ছিলাম পিঠাপিঠি ।

খুব সামান্য বেতন দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। বাবা যা বেতন পেতেন তা দিয়ে যেখানে আমাদের চারজনেরই চলতো না সেখানে দাদা-দাদীকে আমার বাবা টাকা পাঠাতেন মাস কাবারী। যদিও দাদাজান তখন অল্প সল্প জায়গা জমি চাষাবাদও করতেন।

আমার বাবা যে দপ্তরে চাকরী করতেন সেখানকার একজন পিয়নও রাজার হালে চলতো সেখানে আমার বাবা উচ্চমান অফিস সহকারী হয়েও একটা পয়সাও বাড়তি ইনকাম করতেন না। বাবার একটাই চিন্তা ছিলো কিভাবে পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায়, ছেলে দুটিকে কিভাবে নামাজী হিসাবে তৈরী করা যায়, কিভাবে আল্লাহর রাস্তায় মানুষকে দাওয়াত দেওয়া যায়। তার বড় চিন্তা ছিলো কিভাবে চাকরী করেও তাবলীগে সময় লাগাবেন। এই একটা মাত্র ফিকির ছাড়া তার ভিন্ন কোন চিন্তা মাথায় আসতো না।

কাস্টমসে চাকরী সুবাদে আর কাস্টমসের আবাসিক এলাকায় দেখতাম এখানকার পিয়নদের মেয়ে কিংবা সিপাহীদের ছেলেদের বিলাসী জীবন যাপন। ব্যক্তি জীবনে আমার বাবাকে কখনো চার সেটের উপর জামা কাপড় দেখি নি। অফিসেও পাঞ্জাবী, বাইরেও পাঞ্জাবী আবার কোথাও বেড়াতে গেলেও পাঞ্জাবী।

সেই ছোট বেলায় আমি আর আমার বড় ভাই এমন পচাঁ কাগজে লেখা পড়া করেছি যে তা ভাবতেও এখনো চমকে চমকে উঠি। যে কাগজে লিখতাম তা ছিলো তৎকালীন বাজারের সব থেকে নিম্ন মানের নিউজপ্রিন্ট কাগজ। কালছে কালার আর বড্ড অমসৃন ছিলো সেই কাগজ। আর লেখার কাজে ব্যবহার করতাম পেন্সিল।

কখনো একটা আস্ত পেন্সিল ব্যবহার করার সুযোগ পাইনি। বাবা পেন্সিল কিনে এনে মাঝ খান থেকে কেটে দুটো অংশ করতেন একটা ভাগ দিতেন আমাকে আরেক অংশ বড় ভাইকে। সেখানেও সমস্যা ছিলো। আমি চাইতাম পেন্সিলের রাবারের অংশ। বড় ভাইয়াও চাইতো ঐ অংশ। এই অবস্থা দেখে বাবা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন একবার ফারুক নিবে রাবার লাগানো অংশ , অন্যবার ফরহাদ নিবে রাবারের অংশ।

এত অভাবের ভিতরেও মসজিদে তাবলীগের মেহমান আসলেই বাবা অন্তত একবেলা হলেও মেহমানদারী করতেন।

আমার মা এই জীবনে অভাব ছাড়া কিছুই পাননি। আমার মা এতই সুন্দর যে বলার ভাষা নেই । এখনকার জামানার মেয়ে হলে কবেই হেটে যেতেন আমার বাবার সংসার ছেড়ে। তার মুখে কোন দিনও শুনি নি কোন অভাব অনুযোগ।

টুথব্রাস যদি সূর্যমুখী ফুলের মতো না হতো তবে নতুন টুথব্রাস কোন দিন কিনতেও পারি নি। আর কত ঈদ তো শুধু আমার আর আমার বড় ভাইয়ের নতুন জামা হয়েছে আর আমার বাবা পূর্বের তুলে রাখা পাঞ্জাবী দিয়েই ঈদ উৎযাপন করেছেন।

আমার পরিবারে সব কিছুর অভাব থাকলেও সুখ শান্তি আর আমার বাবা মায়ের মুখে হাসির কমতি ছিলো না। আমার বাবা সারা জীবন আমাদের দুই ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেছেন দেখবি একদিন আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেন। তাছাড়া আমাদেরকে আল্লাহ অনেক কিছুই দিয়েছেন। আামাদের থেকেও অনেকে অনেক খারাপ অবস্থানে আছে তাদের দিকে তাকা।

আমাদের পাশের ফ্লাটে আমার বাবার আরেক কলিগ উনিও উচ্চমান সহকারী ছিলেন তাদের পরিবারকেও দেখতাম সর্বদা গান বাজনা আর মৌজ মাস্তির মধ্যে জীবন কাটিয়ে গেলেন। বর্তমানে এক জেলা শহরে কোটি টাকা মূল্যমানের বাড়িতে নাতি পুতি নিয়ে বসবাস করছেন।

আর আমার বাবা সেই আগের মতো।

আমার বড় ভাইয়া এস.এস.সিতে ২০০০ সালে ষ্টার মার্ক ইন্টার মিডিয়েটেও ষ্টার মার্ক নিয়ে পাশ করে কেমিস্ট্রিতে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করে ইসলামী ব্যাংকের আইডিবি আইটি স্কলারশীপ নিয়ে .নেটের উপর কাজ শিখেও ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় কুকুরের মতো ঘুরছে একটা কিছু করার আশায়।

আর আমি হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেও ঘুরছি রাস্তায় রাস্তায় নূন্যতম সম্মানজনক একটা পেশার অভাবে।
চোখে যেনো অন্ধকার দেখছি চারিদিকে।

মায়ের জড়ায়ুতে টিউমার ধরা পড়েছে অতি শিঘ্রিই অপারেশন করা দরকার। বাট কিছু টাকা বাকী আছে জোগাড় করতে।

আমার বাবা সেদিন ফোন করে আগাম দাওয়াত দিয়ে রাখলো আমাদের দুই ভাইকে। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে হবে তৈরী হয়ে থাকতে।

বাবাকে বললাম বাবা কিছুই তো হচ্ছে না । বাবা সেই বরাবরেই মতই হেসে বললেন আরে পাগল আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা নেন । নামাজ কালাম পড় আল্লাহর কাছে চা দিল খুলে দেখবি তিনি ভালো কিছু ই দিবেন।

টিউশুনি করে কয়টা টাকা পেয়েছিলাম, বাবাকে দিলাম কিছু আর বড় ভাইয়াকে দিলাম হাজার তিনেক মত। ভাইয়া নাকি আমিন গ্রুপে কি একটা চাকরী জুটিয়েছে কিন্তু আপাতত হাতে কোন পয়সা নেই তাই হাজার তিনেক টাকার মত নিলেন ।

আমার বড় ভাইএত দিন পর এসে উল্টা পাল্টা শুরু করেদিছে। বাবার হয়ে বিশ্ব ইজতেমার দাওয়াত আর আল্লাহর কাছে কামনার কথা বলতে বলতেই বড় ভাইয়া চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলেন।

কি হবে এসব সততা দেখিয়ে ?? আমার বাবা তো সারা জীবন করে এলেন ?? কি পেলেন তিনি ?/ আর কি দিলেন তিনি আমাদেরকে ???

ফোন কেটে দিয়ে শুয়ে আছি । আর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছি মানুষ নাস্তিক হয় কেনো???

উল্লেখ্য মাঝখানে আমার একটা ভালো সরকারী জব হয়েই গেছিলো প্রায়ই শুধু লাখ পাচেক টাকা দিলেই হয়ে যেতো। কিন্তু বাবা দিলেন না ................ বললেন আল্লাহই রিজিক দাতা। টাকা আমাদের রিজিক দেয় না, চাকরী আমাদের রিজিক দেয় না। আল্লাহেই আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন।

সারা পৃথিবীতে কত জীবের খাবারের ব্যবস্থা তিনি করেন আর তিনি্ আমার দুই ছেলের ব্যবস্থা করবেন না ?? অবশ্যই করবেন।

আমার বাবা সারাজীবন চাইলেন কি আর আমার বড় ভাই শেষে এসে বিদ্রোহোই বা করলেন কেনো ??? আমারও মাঝে মাঝে বাবার উপর বড্ড অভিমান হয় একটু ঘুষ খেলে কি আর এমন হতো । সবাই তো খায় এবং খাচ্ছেও।

ঘুষ খেয়ে কয়টা পয়সা বানালে তো আজ আমাদের দুই ভাইয়ের রাস্তায় রাস্তা ঘোরা লাগতো না । অন্তত ঘুষ দিয়ে হলেও দুইটি চাকরী জুটিয়ে আল্লাহ বিল্লাহ বলে জিকির আজগার করে দিন কাটাতাম।

এই তাবলীগ জামাতই আমার বাবার মাথা খেয়েছে। তাকে সৎপথে নিয়ে গেছে এবং এখনো সৎপথে থাকার তৌফিক দিয়েছেন সেই সাথে তিনিও আমাদেরকে সৎপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করছেন।

বাবা তুমি কি করলে ???? এখন বড় ভাইকে সামলাও . সে ক্ষেপছে
বিঃদ্রঃ আবার ভাইবেন না আপনাদের কাছে ভিগ মাগতে এসেছি।

৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×