somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক জোড়া বিচ্ছিন্ন জুতা এবং অন্যান্য

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আজ সকালে)
শায়লার ফোনে বারবার সংকেত আসছে তার জ্বালানী নেই , ফোরানোর পথে। ফোনটা আজ তার সাথে ভাল ব্যবহার করছে না। কখন এমন হয়নি আগে, ফোনটা বিপদে আপদে কিংবা অজায়গায় চার্জের জন্যে চেচায়নি আগে।আজ চেচাচ্ছে। মায়ের বাড়ির রাস্তার অর্ধেক পথ থেকে ফিরে এসেছে।শামিম অসুস্থ, ফোন এসেছে। মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আবার বের হয়েছে ।বাসে বসে আছে এখন শায়লা।




(আগে)
চার্জ শেষ হওয়া ফোন নিয়ে বসে আছে শায়লা। আন্মনে। ফোন তার আহামরি কিছু না।কিন্তু তার কাছে ফোনটা আহা আহা মরি মরি । শায়লার এই ফোন দিয়েছে তার জামায় শামিম।তখন কলরেট ছিল ৮ টাকা মিনিত।সেবার পুরো বাইশ দিন ওভারটাইম করে ফোন কিনেছিল শামিম। তখন নিজেরই ফোন ছিল না শামিমের।কারখানার ফোন থেকে ফোন করত শামিম, তার গ্রাম্য বধূর কাছে।
অনেক টানাটানি করেও যখন শামিম আর শায়লার সংসার চলছিল না, তখন বাধ্য হয়েই শামিমকে গ্রামে পাঠাতে হয় স্ত্রীকে। তারপর পুরো সাড়ে সাত কেজি ওজন কমিয়ে , চোখ গর্তে ঢুকিয়ে মোবাইল নিয়ে ফিরেছিল শামিম। দিনটা অভিমান আর দীর্ঘ পুনঃমিলনের অদ্ভুত মনঃরাসায়নিক বিক্রিয়ায় জড়িয়ে ছিল। এই দিন কি ভোলার? ভুলতেও পারেনি শায়লা। অদ্ভুত কণ্ঠে যখন ফোনটা বেজে ওঠে, তখন আশেপাশের মানুষ যা শোনে তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা শব্দ শোনে । সম্পূর্ণ আলাদা।


( বেশীদিন আগের নয় )


তারপর অনেকটা দিন কেটে গেছে। প্রমোশন হয়েছে শামিমের। বেড়েছে বেতন। ওদিকে শায়লার কোল আলো করে এসেছে তাদের মেয়ে, শুভ্রা। দুধের মত সাদা হয়েছে,যেমন শরীর তা হয়েছে ননীর মত। যখন সপ্তাহান্তে শামিম আসে, তখন তার নগ্ন বুকে ঘুমায় তার মেয়ে। আর যখন তার বাবা থাকে না,তখন পুরো বিদ্রোহ জমা হয় মায়ের উপর।সে রীতিমত এক যুদ্ধ।
এখন আনা হয়নি শুভ্রা আর তার মা’কে । প্রমোশন হয়েছে তার ঠিকই , কিন্তু শামিম চায় নি, মেয়েটার ফুলের মত ফুসফুসটা কার্বন আর শীশায় ভরে যাক। শায়লা ভালই আছে, শ্বশুর-শাশুড়ির আদরে। কেবল শামিমের উষ্ণতা নেই।




(আজ সকাল থেকে)


আজ শামিম চলে গেল।দু’তিন দিন মত ছিল এবার। একটা ট্রেনিং পেয়েছে ও।বেশ দীর্ঘ ট্রেনিং। টাকাও দিবে হাজার তিনেক। ট্রেনিং’এর দৈর্ঘ্য কারনে মুখ কালো বাবা-মা আর স্ত্রীর। কিন্তু শামিম যাবেই। নাছোড়বান্দা। হিসেব তার করায় আছে তার, ট্রেনিং’এর টাকায় আকিকা করাবে মেয়ের।
এহেন মনঃকামনা জানা নেই পরিবারের। তাই বেশ মন কষাকষির মাঝেই বিদায়ের ক্ষণ উপস্থিত হচ্ছে। বৌ এর মন খারাপ দেখে, শাশুড়ি বললেন, তুমি কদিন বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আস। শামিম মায়ের কথাই সায় দিল। বললেন তুমি তৈরি হয়ে নাও, আমি যাওয়ার সময় তমাকে বাসে তুলে দেব। শীতল দৃষ্টি বিনিময় হল দুজনের। সৃষ্টিকর্তা হয়ত এই শীতলতায় জায়া-পতির ভালবাসা যে আজন্ম জিইয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন চিরকাল।


যতক্ষণ শায়লার বাস দেখা গেল ততক্ষণ দাঁড়িয়েছিল শামিম। বাবার কোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই কান্না জুড়েছে শুভ্রা। বাসের মধ্যে বেশ বিব্রত হচ্ছে শায়লা। বাস প্রায় ফাঁকা, এক ভদ্রমহিলা গাল ভরা হাসি নিয়ে এগিয়ে আসলেন। নানা রকম শব্দ আর আদুরে মুখভঙ্গিতে শুভ্রার অভিমান প্রশমিত করতে হল।
-বাবুর আরেক পায়ের জুতা কোথায় বৌমা ?
-জি, চাচী কোথাও পড়ে গেল কি না! এদিক ওদিক দেখে শায়লা।
-তুমি, এক কাজ কর এ জুতাটা খুলে রাখ।কেমন জানি দেখায়।
-জি, চাচী খুলে রাখি। অপ্রস্তুত হয় শায়লা।


ফোন বাজছে। নাম্বারটা আননোন । সন্ত্রস্ত ভাবে ফোন তুলল শায়লা।
-হ্যালো !
-শায়লা ভাবি?
-জি! কে বলছিলেন?
-ভাবি, আমি মোবারক। শামিম ভাই আমার কলিগ।
-ও ভাই, বলুন।আপনার কথা শুনেছি।
-হ্যা! ভাবি, ভাই তো একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আপনি আসেন।
-সে কি! কেবল তো বাসে উঠল!
-হ্যা, ভাবি বাসে উঠেই একটু অসুস্থ হয়েছে। আপনি হাসপাতালে আসুন।
নিঃশব্দে ঠিকানা শুনে নেয় শায়লা।
মেয়েকে কোলে নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ল শায়লা। উৎকণ্ঠার বিশাল এক চিল, প্রকাণ্ড এক ডানা নিয়ে শায়লার আলোকিত আকাশকে ঢেকে ফেলতে চাইছে।






( মাত্র পাওয়া )


ঘনিয়ে আসা অন্ধকারটা গাঢ় থেকে, গাঢ়তর হচ্ছে। হয়ত হটাত করে মৃত্যু সংবাদ দিতে নেই বলেই, মোবারক মিথ্যে বলেছিল। সাব ইন্সপেক্টর মিথ্যা বললেন না। নিষ্ঠুরতম কথাটা বলতে মুখে বাধল না। এভাবেই তারা প্রশিক্ষিত। তাদের দুনিয়ায় আলাদা।
২৫০ বেডের হাসপাতালের মর্গে। ঘরটা শীতল। পারলৌকিক শীতলতা। সাব- ইন্সপেক্টরের পিছু পিছু এগিয়ে যাচ্ছে, শায়লা। এক ঘোরের মধ্যে হাঁটছে সে। চারিদিকে উৎকট ক্যামিকেলের গন্ধ। একটা বড় আলমারির সামনে এসে দারাতেই,একজন এসে একটা ড্রয়ার খুলে দিল। ড্রয়ার খুলতেই, আলো জলে উঠল। মুখটা একেবারে থ্যেতলে গেছে।রক্তাক্ত শার্টের পকেট থেকে দুটো ফিতে ঝুলছে, শায়লা সন্তর্পণে পকেট থেকে জিনিসটা বের করে আনে। একটা জুতা।বাচ্চাদের একটা জুতা।খুউব ছোট একটা বাচ্চাদের জুতা।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×