somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আপু

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১) আজ অনেকদিন পর বাসায় উৎসবের আমেজ । বর্ণিল সাজে সেজেছে ঘর, জগতে হাজার কোটি বর্ণিল ফুল ফুটে উঠেছে এই মুহুর্তে । এসব কিছুই টানছে না আমায় । হারিয়ে যাচ্ছি ফেলে আসা আপন ভূবনে । আনন্দ উল্লাস, কলাহল আমার এমনিতেই ভাল লাগে না, নীরব থাকতেই ভালো লাগে ।
হঠাৎ বেজে উঠল টেলিফোন ।
- কী করছো ? (আমার হবু স্ত্রীর প্রশ্ন)
- কিছু না,
জবাব দিতেই পাল্টা প্রশ্ন -
- তুমি কাঁদছো ?
- আমি পরে কল ব্যাক করব বলে কেটে দিলাম ।

(২) আমার একটা আপু আছে , সেজুঁতি । আপুও আমার মতো, চুপ থাকতে পছন্দ করে । দুজনই নীরব প্রকৃতির বলে ঝগড়াও হয় না । আপুর সাথে আমার বন্ধুত্ব চিরকালের । সম্পর্ক শব্দটার অর্থই শিখেছি আপুর থেকে । আমার সব কথাই আমি আপুর সাথে শেয়ার করি । আপুই আমার সব । আপুটা যাদু জানে, খুব সহজেই মন ভালো করে দিতে পারে । খুব কথা না হলেও জানি, আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটা । আমার আপু আমার পাশেই আছে । মাঝে মাঝে ভাবি, আপু জাতটা বড়ই অদ্ভুত । মায়া, মমতা, স্নেহ - সবকিছুর এক অপূর্ব মিশেল । আপুটাকে আমি জ্বালিয়ে মারি - কখনো আমার হতাশার গল্প বলে, আবার কখনো হেঁড়ে গলায় গান শুনিয়ে, হিহিহি D

( ৩) সেবার ছিল আমার জন্মদিন । সারাদিন দৌঁড়-ঝাপে ব্যাস্ত ছিলাম । রাতে ক্লান্ত হয়ে শ্রান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে যাই । হঠাৎ রাতে আপুর কল,
- আপু ??
- ভা..................ভা................. ভাইয়া ! একটু রুমে আয় না । আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে (হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ও)
আপুর হার্টে সমস্যা ।
দৌঁড়ে রুম থেকে বের হতেই দেখি, আপু আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে । ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, হ্যাপি বার্থডে, ভাইয়া । রাগে আমি গড়গড় করছি, এভাবে কেউ ভয় দেখায় !
হঠাৎ খেয়াল করলাম সারা ঘরে ফ্রেমে বাঁধা আমার ছবি । কোন বোন তার ভাইয়ের জন্মদিন এভাবে পালন করে ?
- আপুকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দিই, আমার সাথে আপুও ।

(৪) অনেক রাত । প্রচন্ড বর্ষায় ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী । লো ভলিঊমে শুনছি 'Cradled in Love'. ঘুম নেই । নিঃশব্দ আর্তনাদে পূর্ণ সময় । হাহাকারে প্রতিটি নিঃশ্বাস । কতোবার ভুলে যেতে চেয়েছি । যে সম্পর্ক ছিলোই না কোনদিন তার জন্য কেঁদে লাভ নেই, বলে প্রবোধ দিতে চেয়েছি নিজেকে, পারিনি ।
হঠাৎ আপু ঢুকলো । আমার পাশে বসেই বললো,
একটা থাপ্পড় মারবো । প্রেম করবে, দেবু বাবু হবে, শখ কতো !
আপুর দিকে তাকালাম না ।
- ঐ মেয়ে হাসবে, ঘুরবে, আর উনি .........? ? একটা চড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো ।
- দাও, চড় দাও । চড় খেয়ে যদি আমার শিক্ষা হয় ।
জবাব শুনে আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে । আমি আপুর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদি । জগতের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ঐ কাঁধ ।
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো । প্রত্যেক জিনিসেরই একটা Pattern থাকে,একটা Period থাকে । সময়ের স্রোতে Amplitude এর Maximum value Peak এ পৌঁছায়, আবার তা Minimum value তেও নেমে আসে । তখন Negative value Curve টায় ছিলাম আমি । যন্ত্রণাদায়ক সেই সময়ে আপু পাশে ছিলো । আগলে রেখেছিলো আমাকে ।

(৫) আপুর বিয়ে । রাণির মতো লাগছে আপুকে । নানান অজুহাতে স্টেজে উঠে আপুর সাথে কথা বলছি । আপু অনেক খুশি ।
একেবারে পাক্কা গৃহিণী হয়ে ওঠে আপু । দুলাভাইও আপুকে অনেক ভালবাসে । ভালোই চলছিলো সব । একদিন সুখের খবরটাও এলো, আপু মা হতে চলেছে ।
- আমার কিন্তু ঈর্ষা হচ্ছে, আপুকে বললাম ।
- কেন ? (আপুর চোখে বিস্ময়)
- তোমার বেবি হবে । আমার স্থানটা তো ও নিয়ে নিবে ।
- কীভাবে ?
- তুমি তো ওকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকবে, আমার কথা মনেই থাকবে না ।
- ওলে, আমার ছোট্ট বাবু ! তুই হলি আমার বড় বাচ্চা , আর ও হবে ছোট বাচ্চা ।

(৬) আপু হাসপাতালে, বেডে শোয়া । আমাকে দেখতেই হেসে দিলো । আপুকে জানানো হয়নি, আপুর হার্টে ব্লক, Abortion না করালে জীবনের ঝুঁকি আছে । আপু Abortion করায়নি । মাতৃত্বের স্বাদ পাবার অদম্য ইচ্ছা তাকে সেটি করতে দেয়নি । শেষ পর্যন্ত এক মায়ের জয় হয়, কিন্তু তা আসে চরম মূল্যে । ডেলিভারির সময় আপু শকে চলে যায় ।

আপু,

তুমি শুয়ে আছো, আর ছবির মতো ভেসে উঠছে কতো স্মৃতি । Apollo'র করিডরে আমি । আমি তোমার জেগে ওঠার প্রতীক্ষায় । তুমি কখন আবার আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে ? আমাকে জড়িয়ে আদর করবে ? তোমার প্রাণশক্তি দেখে অবাক হই, হার্টের সমস্যার পরও গড়েছো নিজের ভুবন । তোমার লড়াই দেখে আমি সাহস পাই । জেগে ওঠো তুমি ।
তোমার ভাইয়া তোমাকে ডাকছে আপু.............

(আপুকে লেখা আমার প্রথম ও শেষ চিঠি, যেটি আপু কখনোই পায়নি)

আপু জেগে ওঠেনি, চলে যায় না ফেরার দেশে । আপু এত তাড়াতাড়িই চলে যায় যে, আমাকে তার আকাশের ঠিকানাও দিয়ে যায়নি ।

(৭) মামা.........
আমার ভাগ্নি, আপুর মেয়ে, রুমা ।
ওর ডাকে খেয়াল করলাম, আমি আমার আপুর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে, দুচোখ বেয়ে অশ্রু ধারা । আমার আপু আমার দিকে নির্বাক তাকিয়ে হাসছে । হাসতেই হবে, আজ আমার আপুর একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে, তাও সেই নাঈমার সাথে যাকে আমি ভালোবাসি । অনেক অপেক্ষার পর নাঈমাকে আজ জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে যাচ্ছি ।
আমার আপুর চেয়ে বেশি খুশি আর কে হবে ?

উৎসর্গঃ বহুকাল আগের কথা, কোন এক রেডিওতে স্টেশনে তাঁর অনুষ্ঠান শুনতাম। কন্ঠের যাদুতেই ক্রাশড হয়েছিলাম। অনেক খোজার পর ফেসবুকে তাঁর সন্ধান পেলাম, তখন থেকেই তাঁর গুনমুগ্ধ পাঠক। এ সময়ের সেরা গল্পকার তিনি। বুক পাজঁরে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো আলো খুজে পায় তাঁর লেখায়।
গল্পতো অনেকেই লেখেন, লিখবেনও। কিন্তু তাঁর লেখার মতো লেখা পড়িনি, নিশ্চিত করেই বলতে পারি পড়া হবেও না। তাঁর এতোই ভক্ত যে তাঁর নাম্বার পর্যন্ত্য জোগাড় করতে চেয়েছি । পরে সাহস করে একদিন ফেসবুকেই মেসেজ পাঠালাম তাঁকে। বুঝলাম তিনি তাঁর লেখার মতোই মুগ্ধকর।

প্রিয় একুয়াপ্পু আপনাকেই।
বহুদিন বেচেঁ থাকুন আপনি, আরো বেশী জ্বালাতে চাই আপনাকে। আপনার লেখা পড়ে সমৃদ্ধ করতে চাই নিজেকে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×