জাফর ইকবাল স্যার আবার লেখায় চলে আসবেন, ভাবি নি। না ,স্যারের চৈতন্য হয়নি, স্যারের হুশ ফেরেনি।আর কত অপদস্থ,অপমান হলে তার হুশ ফিরবে তার চৈতন্য হবে , আল্লাহ মালুম !!
পোয়েটিক জাস্টিস বলে একটা কথা আছে । অবশ্য তিনি যদি বুঝতেন আওয়ামী বাকশালীদের অন্যায় অত্যাচার কতোদূর যেতে পারে, তাহলে সেই ১৯৭৪ এ যখন তাকে সহ তার পরিবারকে রক্ষীবাহিনী বাড়ি ছাড়া করেছিলো সে সময়ই তিনি বুঝতেন ।তিনি বুঝতেন ১৯৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাট, গুন্ডামি দেখে , রেপের সেঞ্চুরী দেখে , প্রতিটা সিষ্টেমে আওয়ামী লীগের নষ্টামি ঢুকানো দেখে। স্বজনপ্রীতি আর দলীয় করন দেখে । তিনি বুঝতেন ২০০৮ এর আওয়ামী লীগ সরকারের ভন্ডামি,শেয়ার বাজার লুট,ব্যাংক লুট,ঘুষ,দূর্নীতি সহ হত্যা,গুম,খুন দেখে।তিনি বুঝতেন ৫ জানুয়ারীর অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের অবৈধ সরকার গঠন দেখে আর সেই অবৈধ সরকার আর তার ছাত্র সংগঠনের দাপট দেখে। কিন্তু একচোখা নীতির কারনে তিনি দেখেও দেখেননি,বুঝেও বুঝেননি।বরং যখনই তার কলম সচল হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সমর্থক হয়ে বাকশাল বিরোধীদের পিষ্ট করতে চেয়েছে।
তিনি যদি আগে থেকে সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলার অভ্যাস করতেন", সোনার ছেলেদের প্রশ্রয় না দিয়ে মায়ের গর্ভের শিশু হত্যার প্রতিবাদ করতেন,শত শত মানুষ গুম ও খুন হতে থাকলেও নিশ্চল পানির মতো শান্ত না থাকতেন। বাতিঘর অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের পা ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিবাদ করতেন,জাতির ক্রান্তিকালে ধ্যান মগ্ন পীরের ভূমিকা না নিতেন, ৬৯‘রের গণ অভ্যুত্থানের ছাত্রনায়ক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহকে টিএসসিতে পেটানোর প্রতিবাদ করতেন ,বুয়েট শিক্ষককে জয় বাংলা দিয়েই পিটানোর খুশিতে হাততালি না দিতেন, চেতনার ফিল্টার বানিয়ে এবং লিখে লিখে আওয়ামী লীগের সব অনিয়ম,অত্যাচারকে ভ্যারিফাই না করতেন, তাহলে হয়তো আজকের এই দিন তাকে দেখতে হতোনা। এই ঘটনার জন্য উপযুক্ত পটভূমি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। অপাত্রে মুক্তা ছড়িয়েছেন।
যাহোক, আওয়ামী বাকশালীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শ কোনটাই ধারন করেনা।ধারন করার যোগ্যতাও রাখেনা। ফ্র্যানকেনস্টাইন বিবেক দিয়ে চলে না স্যার। আপনি যাকে তৈরি করেছেন, তার পথে আপনি কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে সে আপনাকেও ছাড়বে না। আপনার জন্য সত্যি কষ্ট লাগছে ,স্যার। যাদেরকে সারা জীবন বুক দিয়ে আগলে রাখলেন ,শিক্ষকদের ওপর তাদের ন্যাক্কারজনক হামলার লজ্জায়,ঘৃণায়,শোকে আর জয় বাংলা স্লোগানের অপমানে আপনি নিস্তব্ধ নির্বাক হয়ে বসে আছেন ,নিসঙ্গ বৃষ্টিতে ভিজছেন। চোখের অশ্রু লুকানোর ব্যাথর্ চেষ্টা করছেন, গলায় দড়িও দিতে চেয়েছেন। এর চেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি আর হতে পারে না। তবে কি স্যার ,পূর্বাহ্নের পাপকে প্রশয় দিলে অপরাহ্নে এরূপ কথা বলা ছাড়া উপায় থাকে না। এখনও হুশ ফেরান স্যার!! আপনাকে এই অবস্থায় দেখতে ভালো লাগেনা।আপনাকে এই অবস্থায় দেখলে আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে আর কোন মেধাবী এক বুক স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরবেনা!! দেশে ফেরার সাহসও পাবেনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি স্যার।আমাদের চেতনা,আদর্শ ,দেশ, সম্মান, অধিকার সব লুট হয়ে গেছে স্যার। আপনি উঠে দাড়ান। আপনাকে আমাদের দরকার। ভীষন দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় পার্টি অফিস নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষক নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। ভিসির নিয়োগও তাই হবে। মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। সারা পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই ভিসি হোন রাজনৈতিক যোগ্যতায়, দলীয় বিবেচনায়। ছাত্র রাজনীতির কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। পৃথিবীর কোনো দেশে আমাদের দেশের মতো ক্যাম্পাস ও হল দখল করে মূলত ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ কামানো আর রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল হিসেবে ছাত্ররা ব্যবহৃত হয় না। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকালেও এ রকম দেখা যায় না। পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্ররা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। এই দোহাই দিয়ে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী এখনো ছাত্ররাজনীতি চালু রাখার পক্ষে সাফাই গান।অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যার কোনো ভিত্তি নেই। স্যার ,আপনার কলমটা একটু ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি ব্যবচ্ছেদ করার কাজে ব্যবহার করুন। ছাত্র রাজনীতি-শিক্ষক রাজনীতি সম্পূর্ণ বন্ধ বা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জনমত গঠনে কলম ধরুন। যদি আপনার লেখনীর মাধ্যমে শক্তিশালী জনমত ও জন আন্দোলন গড়ে তোলা যায় তাহলে দেশের তিন-চারটা মৌলিক সমস্যার অন্তত একটার সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
আমরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আপনার সহধর্মিণী সহ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই ।
পুনশ্চঃ আমাদের আরেক কলামিস্ট আনিসুল হক এই অবৈধ আওয়ামী সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জনের তালিকা নিয়ে কলাম লেখেন, তিনি এই ঘটনাটিও সাথে যুক্ত করতে পারেন! অসৎ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কখনও কোনো মহৎ লক্ষ্য অর্জিত হয়না। অসৎ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে,যত মহৎ লক্ষ্যই হোক না কেন, তার ভিত থাকে দুর্বল, পায়ের তলায় মাটি থাকেনা। সেটা এক সময় তারই ভিত অসৎ চর্চার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং টিকে থাকতে হলে তখন সে সিস্টেমের অসৎ প্রক্রিয়াকে আর বদলানো সম্ভব হয়না, বরং মহৎ উদ্দেশ্যটাই বদলাতে থাকে, আর ক্রমাগত বদলাতে বদলাতে এক সময় পুরোপুরি অসৎ হয়ে যায়। এই সামান্য সত্যটা আমরা সবাই বুঝি, তারপরও নিজের গায়ে এসে পড়ার আগে আমাদের বোধোদয় হয়না, এই যা! আপনার গায়ে এলো বলে.........প্রিয় আনিসুল হক। সাবধান !
খবরের লিংক (ছাত্রলীগের হামলার প্রতিক্রিয়ায় জাফর ইকবাল-আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিৎ) : http://banglamail24.com/news/103865
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৯