আমি আজ যে ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি, তা কোন কল্পকহিনী নয়, বরং অতিবাস্তব ঘটনা। ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা আগে... কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? হওয়ার কথাও না, কিন্তু বাস্তবতা সবসময় বিশ্বাসযোগ্য হয়না, এক্ষেত্রও তাই ঘটেছে।
গতকাল রাতের ঘটনা। রাত ২:২১ বাজে আমার সেলফোনের ঘড়ির কাটায়। সাধারণত রাতে ফোন অফলাইন করে রাখি, অনাকাঙ্ক্ষীত ইনকামিং কল থেকে নিজের অতি প্রিয় ঘুমটিকে রক্ষা করার জন্য।
কিন্তু জানি না কি সে কারণ, গতকাল ফোন অফলাইন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সে রাতেই আসল জীনের কল...
(প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল ঐ রাতে)
রাত ২ টা পর্যন্ত ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাট করি, ২ টার পর ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ হয়ে যাবে, কিউবি পূর্বেই তা জানিয়ে দিয়েছিল। সময়মতই ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হল, কিন্তু রমজান মাসে রাতে ঘুমানোর অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে পারছি না, তাই সেহরী খাওয়ার পরই ঘুমাই। ইন্টারনেট চলে যাওয়ার পর কম্পিউটারেই কিছু কাজ করছিলাম। কাজ করতে করতে ২:২১ যখন বেজেছে পাশে দেখলাম সেলফোনের স্ক্রিন জ্বলে উঠল...
অচেনা এক জিপি নম্বর থেকে ফোন এসেছে। রোমান্টিক কোন ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় ফোনটি রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো.... (খরখর আওয়াজ শুনতে পেলাম) হ্যালো কে?
এবার শব্দ শুনতে পেলাম, খরখর আওয়াজের সাথে অতিপ্রাকৃত কন্ঠস্বর, কাঙ্ক্ষীত সুললিত কণ্ঠের সম্পূর্ন বিপরীত। তাতেই সম্ভবত একটু টাশকি খেলাম, আর একারণেই নিজেকে ফিরে পেতে পেতে কিছু সময় চলে গেল, তাতে যা হল, জ্বীনের কথার সূচনাটা ধরতে ব্যর্থ হলাম।
(সম্পূর্ণ কথপোকথন সিকুয়েন্স অনুযায়ী আক্ষরিক ভাবে বলতে পারব না তবে যেসব বিষয়ে কথা হয়েছিল তার একটু আবছা ধারণা দিত পারব, আশা করি তাতেই চলবে)
জ্বীন: আমরা জ্বীন-পরী, আপনার জন্য সম্পদ রয়েছে আমাদের কাছে। বল আলহামদুলিল্লাহ্
আমি: আলহামদুলিল্লাহ্
জ্বীন: বাবা কি আজকের তারাবীর নামায পড়ছ?
আমি: হ্যা....(ভাবতেছিলাম আসলেই পড়ছি কিনা) না
জ্বীন: (হ্যা টাই শুনেছিল, পড়ে যে না বলেছিলাম খেয়াল করে নাই) আলহামদুলিল্লাহ। বাবা কি কোরআন পড়তে পার?
আমি: আবার জিগায়....
জ্বীন: কোরআন পড়তে পার?
আমি: জি ভাই পারি।
জ্বীন: আহা ভাই বইলা লজ্জ্বা দিতেছ কেন? বাবা বল।
আমি: জি বাবা পারি।
জ্বীন: তোমার পিতামাতা কোরআন পড়তে পারে?
আমি: জি পারে।
(এই মুহুর্তে আমি ভাবলাম, জ্বীনের সাতে কথপোকথনটিকে রেকর্ড করলে কেমন হয়? এজন্য খুজতে ছিলাম কল রেকর্ডি অপশন, কিন্তু আফসোস আমার নতুন মোবাইলে এই ফিচারটি নাই, আর এর মধ্যে জ্বীনের একটি প্রশ্ন মিস করলাম)
আমি: জি বাবা কি বললেন?
জ্বীন: বললাম সূরা হাশর মুখস্ত আছে?
আমি: না বাবা
জ্বীন: সূরা বাকারার ৪০ নম্বর আয়াত মুখস্ত আছে?
আমি: জি না বাবা।
জ্বীন: (সূরা বাকারার ৪০ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত শুরু করল)
(আমি আবার চেষ্টা করলাম, যদি কল রেকর্ডিং অপশনটা পেয়ে যাই, কিন্তু না আসলেই নাই, এর মধ্যে তিলাওয়াত শেষ করে আরো একটা প্রশ্ন সম্ভবত করেছিল, কিন্তু সেটাও মিস হয়ে গেল)
আমি: বাবা কি বুঝি নাই?
জ্বীন: আদম-হাওয়া
আমি: জি আদম-হাওয়া?
জ্বীন: ওরা মানুষ আর আমরা জ্বীন, চিন না?
আমি: চিনি উনারা মানুষ ছিলেন।
জ্বীন: হুম, তোরা হইলি মাটি থেইকা তৈরী, আর আমরা আগুন থেইকা(জ্বীনের কথার মধ্যে স্পষ্ট আত্মাহংকার)
জ্বীন: সূরা হাশর মুখস্ত আছে?
আমি: জি না বাবা, ওটা অনেক বড়।
জ্বীন: বাবা, কি করেন?
আমি: পড়াশোনা করি...
জ্বীন: কি পড়াশোনা করেন?
আমি: ব্যবসায় শিক্ষা পরি
জ্বীন: বাবা কি মেট্রিক পাশ করছেন?
আমি: জি বাবা
জ্বীন: কত বছর আগে?
আমি: ৩-৪ বছর
জ্বীন: কোন জেলায় থাকেন?
আমি: ঢাকা জেলায়
জ্বীন: ঢাকা জেলার কোথায়?
(এতক্ষণ কথা চালায়া গেছি সমস্যা ছাড়াই, কিন্তু জ্বীন আমার ঠিকানা জানতে চায়, আর আগামুনা ঠিক করলাম)
আমি: আপনারা না জ্বীন-পরী, আপনার তো জানার কথা আমি কোথায় থাকি।
জ্বীন: আরে বাবা, আমাদের কাছে তোমার জন্য সম্পদ আছে। তোমার এই নম্বর টা ৩০০ জনের মধ্যে আছে, যাদের কে সম্পদ দিব। তো সম্পদ পৌছানোর জন্য তো ঠিকানা লাগবে। (জ্বীনের সব কথা বুঝি নাই)
আমি: জি বাবা বুঝলাম না।
জ্বীন: বোঝ না কেন বাবা, আমরা জ্বীন-পরী, আমাদের কথা কি বোঝা যায় না?
আমি: জি বোঝা তো যায়, কিন্তু মাঝে মাঝে গোলমাল হয়ে যায়।
(আমি আর আগাইতে দিলাম না জ্বীণ রে, আমি এমনিতেই জন্মগত আহমদীয়া মুসলিম কমিউনিটির একজন। জ্বীন এর কনসেপ্ট সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস সনাতন সুন্নীদের অনুরূপ নয়। তাছাড়া আমার কাছে রয়েছে একটি নেয়ামতের সংবাদ, আমরা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ) কে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী হিসেবে মানি, ভাবলাম আমার জ্বীন ভাইকে এই নেওয়ামতের সংবাদটা পৌছে দেই, বেচারার মোবাইল ব্যালেন্সটারও তো একটা মূল্য আছে)
আমি: বাবা, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর আসার কথা
জ্বীন: (আমার কথা সে বোঝে নাই, ভাবছে আমি কোন প্রশ্ন করছি) হ্যা, কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পার।
আমি: বললাম, এখন তো আখেরী জামানা, ইমাম মাহদীর আসার কথা আখেরী জামানায়।
জ্বীন: বোঝলাম না।
আমি: ইমাম মাহদীর কথা শোনেন নাই? ইমাম মাহদী (আলাইহিস সালাম)
জ্বীন: (এবার বুঝতে পারছে) হ্যা... টুট টুট টুট(ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেওয়ার শব্দ)
৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড কথা হয় জ্বীনের সাথে। ফোন কাটার পর আর আমি ব্যাক করি নাই, কি দরকার অযথা নিজের মোবাইল ব্যালেন্স শেষ করার? তবে কাহীনিটিতে আমি খুব মজা পাই। বেচারা জ্বীণ ইমাম মাহদীর কথায় এত ভয় পাইল কেন বুঝলাম না। আমার নেয়ামতের সংবাদটাও সম্পূর্ণরূপে দেওয়ার সুযোগই দিল না।
যাই হোক, ঐ মুহুতেই ব্লগটি লেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পূর্বেই বলেছি ঐসময় কিউবির ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট ছিল। তাই একদিন দেরি হয়ে গেল।
আপনারা যারা জ্বীনের সাথে যোগাযোগে ইচ্ছুক তারা ০১৭৪৪৬৪০০৮৪ নম্বর এ ফোন করে দেখতে পারেন। আমার ফ্রেন্ডরা ফোন করেছিল, ওয়েলকাম টিউন এর কোরআন তিলাওয়াত হয়, কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। বিকালে একজন ফোন করেছিল, তখন নম্বর বিজি ছিল। রাতে একজন করল, ফোন বন্ধ।
আপনারা কি জানতে পারলেন, আমাকেও জানাবেন। আপনাদের কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম....
আপডেট (১৫ আগস্ট ২০১২) : যে রাতে এই পোস্ট দেই সেই রাতেই আমার আরেক ফ্রেন্ড জ্বীন এর নম্বর এ ফোন দেয়, প্রথমে ফোন ধরে নাই, তারপর জ্বীন এর মজা নেওয়ার খায়েশ হইল, নিজের নম্বর ডাইভার্ট কইরা আমার ফ্রেন্ড রে মিসকল দেওয়া শুরু করল। জ্বীন এর মশকরায় অতিষ্ট হইয়া আমার ফ্রেন্ড এসএমএস দিল যে নম্বর টা র্যাবকে দিবে। অতঃপর জ্বীনের ফোন বন্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:৪৯