ভেবেছিলাম রাজনীতিতে সক্রিয় হবো! দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করবো। ভাবতাম এক সময়, কিন্তু সেই ভাবে রাজনীতি করা হয়নি। তাই বিভিন্ন সময়ে তর্ক-বিতর্কতে যোগদান, পরে লেখালেখি শুরু করি।
কিন্তু এখন দেশের মানুষের যে একটা চিন্তা ভাবনা দেখছি; তা দেখে রাজনীতি বা এ নিয়ে লেখালেখি তো দূরে থাক, কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলতেও ভালো লাগে না।
কাদের জন্য লিখবো, করবো, বলবো? যে দেশের মানুষ নিজেদের অধিকারের বিষয়ে নিজেই সচেতন নয়। যে দেশের মানুষের মেরুদন্ড দুর্বল!
বলা হয় এ জাতি ক্রিকেট ক্র্যাজি ন্যাশন। ক্রিকেট নিয়ে অনেক উন্মাদনা এ জাতির। উদাহরন দেয়া যাক, একবার জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদকে অবৈধ একশনের জন্য খেলা থেকে সাময়িক ব্যান করে দেয়া হলো। সে সময় দেশের মানুষের ভেতর প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মালো, অনেক আন্দোলন হলো, ফেসবুক গরম করে ফেলা হলো! সবাই #iamtaskin লিখে পোষ্ট দিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার করা হলো! এরকম অনেক ঘটনাই আছে ক্রিকেট নিয়ে। কিন্তু চালের দাম ৭০ টাকা হলো কেউ কোনো সাড়া শব্দও করলনা!! ঐ ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ডিউটি, বাড়িওয়ালার সেই একই ভাব, মুখে একই কথা, দাম বাড়লে বাড়ুক, আমি তো একলা চাল কিনে খাবো না! সবাই খাবে সবারই উপর প্রেসার পরবে। সমস্যা হলে সবার হবে, আমার একার তো হবে না।
কিন্তু যে লোকটা দিন আনে দিন খায় তার কি অবস্থা হবে!? এখানে কোনো লীগ নেতা বা মন্ত্রী মহোদয় নিশ্চিত বলবেন, ভাই দেশে কেউই না খেয়ে এখনও মরে নাই!
কোনো একদিন হয়তো চালের মূল্য ১৭০ টাকা কেজি হবে সেই সময়ের কথা কেউ কি ভাবে?! নেতা ও মন্ত্রী মহোদয় না খেয়ে না মরলেও, না খেতে পেয়ে একদিন কিন্তু মারতে আসবে। সেদিনের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। না খেতে পেয়ে মারতে আসবে! নেতার অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই, কারণ আমার এই কথা কল্পনা মাত্র! এই দেশের মানুষ মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করে যাবে, কিন্তু মৌলিক অধিকার আদায়ে সচেতন হবে না! সেদিন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই নেতার মাথা ব্যাথাও নেই।
এরকম তো প্রতি নিয়তই হচ্ছে যে, সব ধরণের দ্রব্য মূল্য খুব করে বৃদ্ধি পাচ্ছে! রাস্তা ঘাট কোনো কিছুরই অবস্থা ভালো না, জ্যামে দুর্ভোগ বাড়ছে, বাসের ভাড়া জুলুম করে বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাস বিল বাড়ছে, বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে! ঢাকা উন্নয়ন কর্মকান্ডে এতো বেশি বিনিয়োগ যে এখন একটা বিশৃঙ্খলা পূর্ণ অবস্থা! রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও মন্ত্রী মহোদয়দের একই ভাষণ, দেশ উন্নতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। হ্যা, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে(!) এটা বুঝা যায় যখন ঢাকা শহরে ভারী বর্ষণ হয় তখন।
এ সব বিষয়ে কারও কোনো জোরালো আওয়াজ নেই। আওয়াজ থাকবে কোথা থেকে, কারও মাঝে একটুও দুশ্চিন্তার ছাপও দেখা যায় না, এমন ভাব মনে হয় যেন এ তেমন কিছুই না!
এর কারণ কি?
জাতির মেরুদন্ড নিশ্চই দুর্বল! যাদের মেরুদন্ড নেই বললেই চলে তাদের আবার দুর্বল মেরুদন্ড! দুর্বল থাকলে সবল হয়, কিন্তু না থাকলে কেঁচোর মত অসহায় জীবন যাপন করতে হয়।
এখন জনগণ সবার অবস্থা মূলত ওই বিএনপি'র মতো হইছে, ঈদের পর তুমুল আন্দোলন হবে বলে আর খবর নেই, কেউ যদি আন্দোলনের ডাক দেয় আছি বলে আর খবর পাওয়া যায় না! আমাদের দেশের মানুষের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। দেশের মানুষ এখন জড় অপদার্থ হয়ে যাচ্ছে। আমি মারামারি কাটাকাটির কথা বলছিনা, বলতে চাইতেছি যে, অন্তত নিজের যে মৌলিক অধিকার আছে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য, ভালো থাকার জন্য , নিরাপদ ভাবে চলাফেরা করার জন্যে যা প্রয়োজন তার জন্যেও তো জাগ্রত হওয়া উচিত! পাগলও তো নিজের বুঝ বুঝে তাই না!
আমি এই সব লিখে হয়তো দেশদ্রোহী ট্যাগ খেতে পারি, এই ব্লগের কতিপয় ব্লগার আছে যারা বলবেন আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধপরাধীদের বিচার করে দেশ উন্নয়ন করে ফেলেছে! আর একটা কমন ডায়ালগ, স্বাধীনতার চেতনায় দেশ উদ্বুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, স্বাধীনতার চেতনা ধরে রাখলে দেশ আরও উন্নতি হবে। ঢাকায় আরও দশটা ফ্লাইওভার হবে। পদ্মা সেতুর মত আরও দশটা সেতু হবে। দেশ তো উন্নত হচ্ছেই, আপনি কোথায় উন্নতি দেখেন না!
আসলেই তো দেশের তো উন্নতি হচ্ছেই! তবে উন্নতিটা হচ্ছে "অবনতির"। বিশ্বাস করেন না!! একটু মনোযোগ দিলেই বুঝবেন। ভালো কথা, মনোযোগ দেয়ার জন্যেও মন থাকা জরুরী। এবং স্বার্থপরতা ত্যাগী হতে হবে! এই যে স্বাধীনতার চেতনা স্বাধীনতার চেতনা করে মুক্তিযুদ্ধের যে আসল প্রেক্ষাপট তা হারিয়ে ফেলেছে। একচুলি হারায় নাই, স্বাধীনতার যে মূল চেতনা ছিলো তা নষ্ট বা ধ্বংস করে ফেলছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে পেরেছে সরকার। বলা বাহুল্য, সরকার ও সরকার পক্ষের লোকজনই দুর্নীতি করছেন, এবং প্রতিনিয়তই। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নিজের সুইস ব্যাংক একাউন্টে কত টাকা আছে তা উনি নিজেও জানে না!! জানবে কি করে, প্রশ্রয় পেলে আকাশও চুরি করা যায় এটাতো সামান্য টাকা, মরে গেলে সাথে নিয়েও যেতে পারবে না!
আমাদের দেশের মানুষ ও সরকারি চাকুরীজীবীদের মুখের কথা, উনি দুর্নীতি করলে করুক আমার কি!? আমিতো সুখে আছি, উনি যা ইচ্ছে তাই করুক। বুঝেন প্রশ্রয় পায় কিভাবে।
দুর্নীতি করাটা এখন এমন একটা কাজ হয়ে গেছে যে দুর্নীতি না করলে সমাজের লোকজন মদন মনে করে, মানে মানুষই মনে করে না! এরকম কোন নিউজ পেলো যে, সরকারি লোক ঘুষ খায় না। তাদের মুখে একটা প্রশ্ন ফুটে উঠে, কি, সরকারি চাকুরী করে ঘুষ খায় না!? আর ঘুষ না খেলে সমাজে দামও নেই, এক কথায় মানুষই মনে করে না!(একদম বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলছি)
কিন্তু আমিতো ভাই টেনশনে পরে গেলাম, আওয়ামীলীগ সরকার আর স্বাধীনতার চেতনার বিপক্ষে কথা দুর্নীতির কথা এই ভাবে কি বলা উচিত ছিল! আমার এখন কি হবে? ৭১এ না জন্মেও কি আমাকে রাজাকার ট্যাগ খেতে হবে কি? আমার তো কেউ প্রভাবশালী ব্যক্তি নাই যে ক্ষমতার জোর দেখাবো আমি।
এদেশের মানুষ কিন্তু ক্ষমতার জোর খুব ভালো ভাবেই দেখাতে পারে। যেমন ধরেন, রাস্তার মাঝখানেই গাড়ি পার্ক করে রাখা, উল্টো পথে গাড়ি চালানো, ক্ষমতা দিয়ে টেন্ডার পাশ, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস, আদালতের রায় বদলে ফেলা! দারুন, অসাধারণ প্রতিভা।
এগুলোর সাথে হয়তো ক্রিকেট জড়িয়ে থাকলে হয়তো(!) দেশের মানুষ খুব জোরালো আন্দোলন করতো।
যেমন-
"ক্রিকেট পিচের উপর কেন গাড়ি চালানো হলো?"
"এদেশের যুব সমাজ একটু ক্রিকেটও খেলতে পারবে না মাঠে?"
"ক্রিকেটের রায় রাতারাতি কেন বদলে গেলো?" ইত্যাদি ইত্যাদি...!
একটা বিষয় ভেবে দেখুন বিজ্ঞ ব্লগার ভাই বোনেরা, চালের দাম ৭০ টাকা কেজি হয়েছে, বিদ্যুতের বিল বাড়ছে! অথচ এই দেশের মানুষের কোনো দুশ্চিন্তা নেই, এদের মাথা ব্যাথা মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অনুষ্ঠান নিয়ে। কে আমিনা থেকে এভরিল হলো, নতুন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ সাজিয়া ইসলামের দাঁত বাঁকা কেন, উনার নাম জরিনাও হতে পারে এগুলো নিয়ে!
এখন একটা নতুন ইস্যু বের হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলো কেন? নাকি উনাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে? এগুলো কিন্তু করার সুযোগ পাচ্ছে বিধায় করেই যাচ্ছে। মানে যা ইচ্ছে তাই করার সুযোগ!
রাজনীতি করার চিন্তা তো বহু আগেই ছেড়ে দিছি, এখন ভাবতেছি এই দেশের মানুষের জন্য কলমও চালাবো না। কি লাভ চালিয়ে, যে দেশের মানুষ নিজের দিক থেকেই সচেতন না তাদের জন্য বলে কি লাভ!
৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সময় তো কেউ এমন করে বলে নাই যে, আমি কেন যুদ্ধে যাবো? পাকিস্তান থাকুক আর না থাকুক তাতে আমার কি? আমি তো ভালো আছি! তখন কিন্তু সবাই এক ছিলো! এক সাথে যুদ্ধ করেছে। আর এখন..!!
"একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা"
গানের কথাটা একটু পরিবর্তন হবে-
"একটি বাংলাদেশ তুমি ঘুমন্ত জনতা" ল
.
.
এই পোষ্টের পর সম্ভবত ব্লক হয়ে যেতে পারে এই নিক আর নাহলে জেনারেলে পরে যেতে পারি! হা,, হা ,,, হা...
শিরোনামের কথাটা যদি কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত! আর যদি আমার কথা গুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয় কোনোদিন, তাহলে আমাকে এসে এর জন্যে নিশ্চয় শাস্তি দিবেন। এই জাতি সবসময় একটা ঘোরের মধ্যে থাকে, আছে, কি জানি কোনোদিন বের হতে পারবে কি? আমি সবসময় কথা বলি যেন দেশের জনতা জাগ্রত হয়! এই অভ্যাসটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।
পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী, আমার মৃত্যু যেকোনো সময়ই হয়ে যেতে পারে! আমি মারা গেলে আমার সব আবেগ শেষ। মরতে একদিন সবাইকেই হবে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এখন এ কথাখানি ভুলে বসে আছে!
ছবি- নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৫