somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্তিত্বের একুশ

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



থুতু তোদের ওই বন্দুকের নলে
তোদের হিংস্র বুলেট
বারুদ ভরা আমার বুক বিদ্ধ করে না
বারে বারে ফিরে যায়
আমার বুকের পাশ দিয়ে সাই করে চলে যায়
গিয়ে বিধে শান্ত বরকতের বুকে
পিছনে তাকিয়ে দেখি লুটিয়ে পড়েছে অজ্ঞাৎ এক বালক
একটু অদূরেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ
করুণ রক্ত ধুলায় গোধুলী আলো ছড়ায়
যে আলোয় আজ বাংলাভাষা
যে আলোয় আজ আমরা।
সে আলো আরো রক্তের নেশায় কখন হয়ে যায় আলেয়া।
ভয় পাস কেন মূর্খ্যের দল?
তোদের বুকে তো বুলেট বিধে না
হৃদয়হীন বুকে তো বুলেট বিধে না।
বেঁচে থাক তোরা,
দানব, থেকে থেকে দেখ
মানবের আত্মা কখনো মরে না
ওরা অমর ওরা একুশ
ওরা আসবে ওরা আসে।
তোরা বেঁচে থাক, বেনিয়ারা বেঁচে থাক!
মরে, ওরা মরে
কোত্থেকে ওরা উড়ে এসে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে
কোনদিন যারা আসেনি সামনে
চাইনি যারা নাম তারাই শহিদ
ওরাই রফিক জব্বার শফিউর
ওরা দিয়ে যায় ভাষা, দিয়ে যায় দেশ
ওরা অনি:শেষ।

সেই কবে শুরু হয়েছিল পথচলা আজথেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৫২ সালো। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি, একুশের রক্তস্নাত গান শুনতে শুনতে ’৭১ এ পৌছানো। ভাষা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম অত:পর বিজয়। একুশ আমাদের বহমান অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশণা। ত্যাগের মহিমায় চির উজ্জ্বল বাঙ্গালী বীর সন্তানদের পূন্যস্নাত আমাদের ভাষাদিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক রূপ (১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ , ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়) লাভ করেছে। এটা আমাদের মহত্বম অর্জন, এ অর্জনের পিছনে লুকিয়ে আছে দির্ঘ্য এক ইতিহাস যার ফলশ্রুতিতে, অ আ ক খ; অত:পর “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ”, একটি স্বাধীন ভুখন্ড ‘বাংলাদেশ’। ভাষার নামে পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম কোন দেশের নাম হল। ২১ এর চেতনাকে সমুন্নত রেখেই হয়েছিল পরবর্তি সব আন্দোলন। শুধু দেশের নাম বাংলাদেশ হয়েছিল তা নয়, ১৯৭১ এ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিচয়ও হয়েছিল ভাষার পরিচয়ে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের একক পরিচয় হল আমরা বাঙ্গালী।

আসলে ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙ্গালী জাতীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আন্দোলন, যার মধ্যে একাকার হয়ে আছে তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের শোষন আর দেশীয় (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ) প্রতিক্রিয়াশীলদের দেশদ্রোহিতা।

“একদল চাচ্ছে খাঁটি বাংলাকে ‘বলি ’ দিতে,
আর একদল চাচ্ছে ‘জবে ’করতে।
একদিকে কামারের খাঁড়া
আর একদিকে কসাইয়ের ছুরি..”

-জ্ঞানতাপস ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ভাষা আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখনী দিয়ে। ১৯৪৭ সালের ২৯শে জুলাই “পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা” শিরোণামে তিনি স্বনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বাংলা ভাষার পক্ষে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এরপর ছাত্রসমাজ, বিরোধীদলসহ বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এই আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থি মহলে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃস্টি হলেও, ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদের বলিষ্ট নেতৃত্ব, এবং অন্যন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও সর্বোচ্চ ত্যাগের ফলে ভাষার দাবী সফল হয়েছিল।

প্রথম ছাত্রসভা : ’৪৭ এর ৫ই ডিসেম্বর করাচীতে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।৬ই ডিসেম্বর ঢাকার ইংরেজী দৈনিক ‘মর্নিং নিউজে’ প্রকাশিত হয়- “শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে প্রতিয়মান হয় যে সম্মেলনে উপস্থিত পূর্ব পাকিস্তানী প্রতিনিধিরাও উর্দুর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছন।”
এ সংবাদটি ঢাকার ছাত্রদের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে । সে দিনই ঢাকা কলেজ , জগন্নাথ কলেজ ও অন্যন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দলে দলে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় (পুরাতন কলাভবনের কাছে অর্থাৎ যেখানে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অবস্থিত তার কাছে ঐতিহাসিক আমতলার অদূরেই একটি বেল গাছ ছিল) ঐতিহাসিক এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এটাই ছিল প্রথম ছাত্রসভা।



গনপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব : ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি মাসে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গনপরিষদের অধিবেষনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা পশ্নে সরকারি প্রস্তাবের উপর একটি সংশোধনী পেশ করেন।পরিষদে সংশোধনী আনতে গিয়ে তিনি বলেন “…..রাষ্ট্রভাষা সেই ভাষাই হওয়া উচিৎ রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করে এবং ….. আমি মনে করি যে, বাংলাভাষাই আমাদের রাষ্ট্রের লিংগুয়া ফ্রাংকা (বেশীরভাগ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে) …..যদি ২৯নং বিধিতে (১৮৩৫ সালে ভারত শাষন বিধির ২৯ নং উপধারা ) ইংরেজী ভাষা সম্মানজনক স্থান পেতে পারে ….. যদি পরিষদের কার্যাবলী উর্দু অথবা ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে চলতে পারে তাহলে বাংলা যা চার কোটি চল্লিশ লক্ষ লোকের ভাষা কেন সম্মান জনক স্থান পেতে পারে না? কাজেই এ ভাষাকে প্রাদেষিক ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ নয়। এ ভাষাকে রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ । সুতরাং, …… আমি প্রস্তাব করি যে, ২৯নং বিধিতে ইংরেজী শব্দটির সাথে “অথবা বাংলা” কথাটি যোগ করা হোক। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংসধনী প্রস্তাবটি সরকারী বিরোধীতার মুখে অগ্রাহ্য হয়।এ সর্ম্পকে প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টি ভংগির পরিচয় পাওয়া যায় প্রস্তাবের বিরোধিতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি লিয়কত আলী খানের দেওয়া ভাষণ থেকে। অথচ পূর্ব বাংলা থেকেই তিনি গনপরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৪৮ সালের ২ রা মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ। ১১ মার্চ কর্ম পরিষদ সারা পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহবান করে। বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে এর ভয়ানক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ১৯৪৮ সারর ১১ মার্চ শুধু ঢাকায় নয় সারা বাংলাদেশে (তখনকার পূর্ববাংলা ) আন্দেলনে ফেটে পড়েছিল। তারপর থেকে ছাত্ররা প্রতিবছর ১১ মার্চ দিনটি পালন করতেন । আসলে ঐ দিনটিই ভাষা আন্দোলনের মূল উপলক্ষ হয়েছিল। ১৯ মার্চ ১৯৪৮ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম ঢাকায় আসেন। ২১মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বক্ততায় বলেন, ‘আমি ষ্পটভাবে বলে দিতে চাই , “উর্দু, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”, অ্যন কোন ভাষা নয় । ২৩ মার্চ এ কে ফজলুল হক জিন্নাহর বক্তৃতার সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করেন।

প্রধান মন্ত্রির নিকট স্মারকপত্রপেষ : উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হতে যাচ্ছে এই আশংকায় ছাত্র, শিক্ষক এবং সমাজের সচেতন শ্রেণি এ সময় খুবই তৎপর হয়ে ওঠে। ’৪৮ এর ২৩ শে মার্চ বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোদ জানিয়ে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মি: জিন্নার নিকট একটি স্মারকপত্র দাখিল করা হয়। পুর্ব পাকিস্তানের শত শত নাগরিক এই স্মারকপত্রে সাক্ষর করেন। সাক্ষরকারীদের মধ্যে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি, আইনজীবী, শিক্ষক, ওলামা, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতা, ডাক্তার, সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোক ছিলেন। স্মারকপত্রে উল্লেখিত রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাবটি পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মন্ত্রিরাও সমর্থন করেন বলে জানা যায়।

স্মারকপত্রে উপস্থিত সাত দফা দাবী :

(১) পাকিস্তানের মোট জনসংখার দুই-তৃতিয়াংশ পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব পাকিস্তানের ষোল আনা অধিবাসিই অধিকাংশের মঙ্গলের জন্য বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী করেছে;
(২) পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের বিশ্বাস এই যে , পাকিস্তানের অধিবাসীদের লইয়া একটি সুদৃড় ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন করিতে হইলে, বাংলা ভাষাকে একটি রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে গ্রহণ করিলে জাতী গঠনের দৃড় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হইবে;
(৩) এই বিশ্বে এমন সব রাষ্ট্র আছে যেখানে একাধিক রাষ্ট্র ভাষা প্রচলিত, যেখানে একাধিক রাষ্ট্র ভাষা প্রচলিত শাসন কার্য পরিচালনায় সেখানে কোন সমস্যা হয় না;
(৪) ভাষার স্বাতন্ত্র আন্তরিক সৌভাত্র ও ঐক্যের অন্তরায় নহে;
(৫) আমরা উর্দু ভাষা বাদ দেয়ার দাবী করছি না , কিন্তুু বাংলা ও উর্দু উভয়কেই রাস্ট্রভাষা করতে বলছি;
(৬) জগতের প্রত্যেক রাষ্ট্রেই অধিকাংশ অধিবাসীর কতিথ ভাষাই রাষ্ট্রবাষারূপে গৃহীত হয়েছে;
(৭) যে ভাষা জনসাধারনের বোধগম্য নহে, সেই ভাষার পরিবর্তে, জনসাধারনের অস্তিমজ্জাগত পরিচিত ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারপে গ্রহন করিলেই পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর, রাজনৈতিক, শিক্ষাননৈতিক ও অর্থনেতিক উন্নয়ন সম্ভব হইবে, ইহাই আমাদের সর্বাধিক উন্নতি সাধনের একমাত্র উপায়।

কিন্তুু গনপরিষদে লিয়াকত আলী খান কতৃক রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবী অগ্রাহ্য হয়। ২৪ মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ সাহেব ভাষা সম্পর্কে তার বক্তব্যের পূনরাবৃত্তি করেন। এ সময় ছাত্ররা “নো নো” বলে তার বক্তব্যের তিব্র প্রতিবাদ করে।

যার ফলশ্রুতিতে রাস্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ প্রতিবছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস রূপে পালিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রচনায় অচলাবস্থার সংগে সংগে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটিররও কোনো সুরাহা হয়নি। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যান এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলী খানের মৃত্যু অস্বাভাবিকভাবে। অ:তপর খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল এবং নূরুল আমীন হন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রি। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লিগের ঢাকা অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিম উদ্দীন চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করেন যে “উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।”

ঐ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ৩০ জানুয়ারি, ১৯৫২ ঢাকায় প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়, ঐদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট এবং বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটির উদ্যোগে কলাভবন (পুরাতন) প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে। ১৯৫২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিমউদ্দীনের রাস্ট্রভাষা সম্পর্কিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ কমিটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং এই কমিটির উদ্যোগেই ’৫২ সালের রাস্ট্রভাষা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটে যেখান থেকে পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে রক্তাত্ব বাংলা ২১ শে ফেব্রুয়ারি।

১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত : ২০ শে ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩ টায় মাইক দিয়ে ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার কথা। খবর শুনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হয় । সভায় ১৪৪ ধারা এবং তা ভাংগা হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করা হয়। নিরপেক্ষ, পক্ষ, বিপক্ষ মিলে সর্বশেষ ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাংগার সিদ্ধান্ত হয়। এই ভোটাভুটির ফলাফল থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ঘোষণা করা হয় ২১ তারিখ আহুত জনসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে এবং সর্বসাধারনের মতামত অনুসারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কয়েক জন সদস্য (তরুন ছাত্র নেতা) ১৪৪ ধারা ভাংগার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং রাত ১২ টায় ওরা ১১ জন ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) পুকুরের পূর্ব ধারের সিঁড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়,সিদ্ধান্ত হয় ২১ তারিখের সভায় (আগে থেকেই রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে হরতাল এবং জনসভা আহবান করা হয়েছিল) গাজীউল হক সভাপতিত্ব করবেন এবং তিান গ্রেফতার হলে সভাপতিত্ব করবেন যথাক্রমে এম আর আখতার মুকুল অথবা কমরুদ্দীন শহুদ।

অত:পর ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিশাল ছাত্রসমাবেশে (সাধারণ জনতাও ছিল) প্রথম মত (১৪৪ ধারা ভংগ না করা ) উত্থাপন করা হয় এর পর দ্বিতীয় মত (১৪৪ ধারা ভংগ করার কথা) বললে জনতা হর্ষ ধ্বনি করে ১৪৪ ধারা ভাংগার মতামতকে গ্রহন করে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। তবে সত্য কথা হচ্ছে ১৪৪ ধারা ভাংগা বা রাখা প্রশ্নে দ্বিমত থাকলেও সভা থেকে যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন দল মত নির্বিশেষ সবাই আন্দেলনে শামিল হয়েছিল।

সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ১০ জনি মিছিল বের করা হবে এবং নেতারা যথাসম্ভব গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারিদিকে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের সেল, ধোঁয়ার মধ্যে ভিজা রুমাল চোখে দিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংর্ঘষ বেধে যায় এবং কোনরকম পূর্বসংকেত ছাড়াই মেডিক্যাল হোষ্টেলের পিছন থেকে একদল সশস্ত্র পুলিশ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোরেশীর নির্দেশে, নির্মমভাবে ছাত্রদের উপর গুলি চালায়,ঝরে যায় কয়েকটি অমূল্য জীবন, আহত হয় অনেকে। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে নিহত ছাত্ররা হচ্ছ বরকত, জব্বার, রফিক ও ছালাম। এর মধ্যে ছালাম অনেকদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন অবশেষে ৪ঠা মার্চ ১৯৫২ মারা যান।

ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে মোট চারজন মারা গিয়েছিলেন সেদিন তবে আরো অনেক মৃতদেহ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চাকুরিরত ইংরেজ ডাক্তার এলিংসন না থাকলে নিহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেত কারন তিান অত্যন্ত দক্ষতা এবং দ্রুততার সাথে একটার পর একটা অপেরেশন করেছিলেন বলে জানা যায়। গুলিবর্ষণের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটাদেশ একসাথে ফুঁসে ওঠে । যার ফলশ্রুতিতে ২২ শে ফেব্রুয়ারি হরতাল অবরোধ পালিত হয়। ২২ তারিখ ও পুলিশ গুলি চালায়, ঐদিন পুলিশের গুলি এবং গাড়ি (পুলিশের ) চাপায় নবাবপুর রোড, হাইকোর্টের সামনে এবং কার্জন হল সংলগ্ন রাস্তায় আরো কয়েকজন জনতা নিহত হন যার মধ্যে একজন অঞ্জাত বালকও ছিলেন।

মূলত ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাংগার মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষার দাবীটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। পরবর্তিতে ’৫৪ এর নির্বচনে যুক্তফ্রন্টের একছত্র বিজয় যার ধারাবাহিকতায় ’৫৬ সালে গনপরিষদের অধিবেশনে লিখিতভাবে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বালা ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়।

শহীদের কবর : ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিহত ছাত্রদের মৃতদেহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ছাত্ররা বিশেষ প্রহরায় রেখেছিল। পরের দিন মৃতদেহ নিয়ে শোকমিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু রাত আনুমানিক ২ টার সময় সশস্ত্র পুলিশ একদল পাঞ্জাবী সৈন্যের সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করে মৃতদেহগুলি নিয়ে যায়। মেডিক্যাল কলেজের ২ জন ছাত্র কারফিউর মধ্যে সৈন্যদের পিছন পিছন বেরিয়ে পড়ে। আজিমপুর কবরস্থানে সৈন্যরা মৃতদেহ কবর দিয়ে চলে যাবার পর ঐ ২ জন ছাত্র শহীদদের কবর চিহ্নিত করে রাখে।



প্রথম শহীদ মিনার : ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটের সময় ভাষা আন্দোলনকারীদের উপর ঢাকা মেডিকেল হোষ্টেল প্রাঙ্গনের যে জায়গায় প্রথম গুলি হয়েছিল, ঠিক সে জায়গায় নির্মিত হয় প্রথম শহীদ মিনার। ২২শে ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২৩তারিখ বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত কাজ হয় (কার্ফ্যু থাকা সত্বেও)। ২জন রাজমিস্ত্রি আর ছাত্ররা মিলে সম্মিলিতভাবে ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে (মেডিকেল কলেজ সম্প্রসারনের জন্য অদূরেই প্রচুর ইট বালি ছিল।) প্রথম শহীদ মিনারের কাজ সম্পন্ন করেছিল। শহীদ মিনারটির নকশায় সাড়ে ৯ ফুটের পরিকল্পনা থাকলেও কাজ শেষে তা প্রায় ১১ ফুট উচ্চতা হয়েছিল। শহীদ মিনারের নিচের অংশ লাল কাপড়ে জড়িয়ে উপরের অংশে দুটি হাতে লেখা পোষ্টার লাগিয়ে দেওয়া হয় । একটি পোষ্টারে লেখা ছিল “শহীদ স্মৃতি অমর হোক” আর একটিতে লেখা ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। শহীদ মিনারের সামনের অংশ দড়ি দিয়ে ঘিরে একটি বড় কাপড় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বনিতা প্রতিদিন লাইন করে দাঁড়িয়ে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো ছাড়াও বিছিয়ে রাখা কাপড়ে সাধ্যমত টাকাপয়সা দিয়েছিল। এমনকি অনেক গৃহবধু তাদের গায়ের গয়না পর্যন্ত দান করেছিল। ’৫২ ’র ভাষা আন্দোলনের এই শহীদ মিনার মোট ২ বার উদ্বোধন করা হয়েছিল।

প্রথমবার শহীদ শফিউর রহমানের পিতাকে এনে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। পরবর্তি সময়ে মুসলিম লিগ থেকে পদত্যাগকারী নেতা জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন কে দিয়ে আবার উদ্বোধন করা হয়েছিল হয়ত বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানীকতার জন্য। ১৯৫২ সালর ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে একদল পুলিশ ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়।

বাায়ান্ন সালের ২১ শে ফেব্রয়ারি বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে (আনুমানিক ৩টা ১০ মিনিটে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোষ্টেল প্রাঙ্গনে বা পাশ্ববর্তী এলাকায়, ২২ শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় আর দুপুরে নওয়াবপুর রোডে, বংশাল রথখোলার মোড়ে, জনসন রোডে বাংলা ভাষার দাবীতে অথবা ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন শহীদ হয়েছিলেন তাদের সংখ্যা কত, কি তাদের পরিচয়? আজো আমরা তা সঠিক জানি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে শহীদদের সম্মন্ধে নিম্নোক্ত তথ্য পরিচয় পাওয়া যায়।

রফিক উদ্দিন আহমদ (শহীদ-২১/০২/’৫২
পরিচয়: মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের
বানিজ্য বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র।
জন্ম: ১৯৩২
জন্মস্থান: পারিল
থানা: সিংগাইর
জেলা: মানিকগঞ্জ
পিতা: মরহুম আব্দুল লতিফ
মাতা: রাফিজ খান

আব্দুল বরকত (শহীদ ২১/২/১৯৫২)
পরিচয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
এম এ ক্লাসের ছাত্র
জন্ম: ১৬জুন, ১৯২৭
জন্মস্থান: বাবলা, ভরতপুর
জেলা: মুর্শিদাবাদ (ভারত)
ঢাকার ঠিকানা: বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন, পুরন পল্টন,ঢাকা

আব্দুল জব্বার (শহীদ ২১/০২ /৫২)
পরিচয়: ১৯৫১ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল
গার্ড পি.এন.জি এর সদস্য
জন্ম: সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি
জন্মস্থান:পাঁচাইরা
থানা: গফরগাঁও
জেলা: ময়মনসিংহ
পিতা: মরহুম আব্দুল কাদের

শফিউর রহমান
(শহীদ ২২/ ০২/৫২, নবাবপুর রোড)
পরিচয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী
জন্ম: ১৯১৮ (তথ্য : সাপ্তাহীক সনৈক)
জন্মস্থান:কোন্নাগর, হুগল ী (ভারত)
পিতা:মরহুম মাহবুবুর রহমান
ঢাকার ঠিকানা: হেমেন্দ্র দাস রোড, ঢাকা

আব্দুস সালাম
এবং হাসপাতালে মৃত্যু ৭/০৪/৫২
ঈরিচয়: শিল্প বিভাগের পিয়ন
জন্ম: সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি
জন্মস্থান: লক্ষণপুর
জেলা: ফেনী
পিতা: মরহুম মোহম্মদ ফাজিল মিঞা

অহিউল্লাহ (শহীদ ২২/০২/৫২, নবাবপুর)
গুলিবিদ্ধ হন ২১/০২/৫২
পরিচয়: শিশু শ্রমিক
জন্ম:১৯৪২(আনুমানিক)
পিতা: রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান
(সাপ্তাহীক নতুন দিন পত্রিকার মতে অহিউল্লাহ ২১/২২ ফেব্র“য়ারী নবাবপুর রোডে গুলিতে নিহত হন এবং পুলিশ লাশ অপসারণ করে।)

আব্দুল আওয়াল (শহীদ ২২/০২/৫২)
পরিচয়: অঞ্জাত
পিতা: মোহম্মদ হাশিম

বেসরকারী তথ্যানুসারে জনাব আওয়াল ২২ ফেব্রুয়ারি বিশাল শোক মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। উক্ত মিছিল কার্জন হলের সামনের রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি ট্রাক মিছিলটির উপরে চালিয়ে দেওয়া হয়। এই ট্রাকের নিচে জনাব আওয়ালের মৃত্যু হয়। অবশ্য সরকারী ভাষা অনুসারে ২২ ফেব্রয়ারি মোটর দূর্ঘটনায় আব্দুল আওয়াল নিহত হন। উল্লেখ্য যে এ সময় পাকিস্তানী আর্মির ১৪তম ডিভিশনের একটি প্লাটুন হাইকোর্টের পিছনের তাবুতে অবস্থান করত ।

অজ্ঞাত বালক (শহীদ ২২/০২/৫২)
তবে এই বালকের মৃত্যু সর্ম্পকে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ সরকারের জারিকৃত প্রেসনোটে কিঞ্চিত উল্লেখ আছে।আলোচ্য প্রেসনোটে বলা হয় যে সম্ভবত মোটর দুর্ঘটনায় বালকটি মারা গিয়াছে তাহার মৃত্যু সম্পর্কে আরো তদন্ত চলিতেছে। উল্লেখ্য পরবর্তিকালে এই তদন্তের রিপোর্ট আর প্রকাশিত হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে একথা বলা যায়, ২২ ফেব্রয়ারি ১৪৪ ধারা ভংগ করে যে শোক শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল অঞ্জাতনামা বালক তাতে অংশ নিয়েছিল। শোভাযাত্রাটি ছত্রভংগ করার উদ্দেশ্য সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাক মিছেলের মাঝ বরাবর চালিয়ে দিলে এই অঞ্জাত বালকটি নিহত হয়।

মূর্ত স্মৃতি : ভাষা শহীদদের স্মৃতি তাঁদের ত্যাগের মহিমা এতদিন মিনারের মাঝে একাত্ব হয়েছিল।স্বভাবতই আমাদের বিক্ষিপ্ত মন এবং ব্যস্ত জীবন থেকে তারা হারিয়ে যায় বারে বারে ।অনেকদিন ধরেই আমরা আশা করছিলাম শহীদ মিনারের পাশাপাশি বরকতদের পোর্টেট থাক সারা বাংলাজুড়ে। উদ্যোগের অভাবে হোক আর উদ্দিপনার অভাবেই হোক, কয়েক যুগ অতিক্রান্ত হলেও ভাষা শহীদদের দেখা মেলে না কোথাও। অথচ বাংলার অস্তিত্বের লড়াইয়ে তারাই ছিলেন প্রথম আত্মত্যাগী বীর সেনা ।

ভাষা শহীদদের নিয়ে প্রথম একক স্থাপনাটি ডাকসু সংগ্রহশালার দেয়ালে স্থাপিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে (উদ্বোধন)। মাতৃভাষার প্রতি প্রবল ভালবাসা থেকে প্রায় এক যুগ আগে ডাকসু সংগ্রহশালার সামনের দেয়ালে চারূকলার ছাত্র শিল্পী আব্দুল আযীয (বর্তমানে চারুকলার শিক্ষক) বায়ান্নর মহান ভাষা শহীদের একটি প্রতিকৃতি একেছিলেন। এরপর ডাকসু সংগ্রহশালার সংগ্রাহক, আলোকচিত্রী গোপাল দাস’র উদ্যোগে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় চিত্রকর্মটি টাইলস মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ম্যুরাল চিত্রে রুপান্তর করা হয়েছে।
চিত্রকর্মটির নামকরন (চেতনায় একুশ) করেছেন রাষ্ট্রবিঞ্জান বিভাগের ছাত্র মিজানুর রহমান। চিত্র স্থাপনাটি উদ্বোধন করেছেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন।



ভাষা শহীদদের নিয়ে প্রথম ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে বাংলা একাডেমি চত্বরে। আবক্ষ আস্কর্যটি ভাষা সৈনিক সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরকে নিয়ে। ভাস্কর্যটির ভাস্কর অখিল পাল। ভাষা সৈনিকদের মূর্তি ছাড়াও রয়েছ ভাষা আন্দোলন, বর্ণমালা ও বাংগালি সংস্কৃতি নিয়ে টেরাকোট। দুই ধাপে সাড়ে ১৭ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটিতে ৬ ফুট উপরে তৈরি করা হয়েছে আবক্ষ মূর্তিগুলো। নিচের প্রথম ধাপ গোলাকার ফুলের পাঁচটি পাপড়ির আদলে গড়া। তার উপরে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। টেরাকোটায় ফুটে উঠেছে ’৫২ ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহুর্ত।

বরকত যাদুঘর : ভাষা শহীদ আবুল বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র । শহীদ বরকতের স্মৃতি বিজড়িত সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি যাদুঘর ও সংগ্রহশালা। যাদুঘরটি সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।



শেষ কথা : ইতিহাস অনেকভাবে লেখা য়ায় তবে সত্য সতই। ভাষা শহীদ অঞ্জাত বালক এর মৃত্যুর মত সত্য, শান্ত নিরীহ বরকতের চলে যাওয়ার মত সত্য, জীবনের দাম দিয়ে রক্ষা করা মায়ের ভাষার মত সত্য,শহীদ মিনারের সত্য,বাঙ্গালীর সত্য ,বাংলা ভাষার সত্য, চির অম্লান সত্য।

“ পাগল ছেলে”
মা পড়ে আর হাসে ,
“তোর উপরে রাগ করতে পারি!”
নারকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কি!
তার থোকা যে বাড়ী ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!

– আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ


তথ্যসূত্র :

ডাকসু সংগ্রহশালা

এশিয়াটিক সোসাইটি

বাংলাপিডিয়া

একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস : আহমদ রফিক

ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি : বদরুদ্দিন ওমর
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×