somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিয়ানা তিয়ানা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বহুকাল আগের কথা। ছোট্ট একটি দেশ। দেশের নাম যাপিয়াত। যাপিয়াতের একটি ছোট্ট গ্রাম কোবেংটা। সেই গ্রামে ছিল একজন চোর, অদ্ভূত সে চোর। সাজা দিয়ে কোনো লাভ হত না। জেলে রাখলে জেলের মধ্যে বসেই সে চুরি করত।

বিচার চলাকালীনও সে চুরি করত। একবার তো বিচারকের কলম চুরি করে ফেলল, ফলে বিচারক আর রায় লিখতে পারল না। অবশেষে তাকে চেক করে কলম পাওয়া যায় তার পকেটে।

লোকটির নাম হুগ্গিসা। বিচারক হুগ্গিসাকে ঐদিন অার কোনো সাজা দেয় না। বিচারের জন্য অাবার একটা তারিখ নির্ধারণ করে দেয়। তারিখের আগেই হুগ্গিসার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ জমা পড়ে।

হুগ্গিসা এক অদ্ভুত চোর, কিছুই যখন চুরি করতে পারে না, তখন নিজের ঘর থেকে জিনিসপত্র চুরি করে মানুষকে দিয়ে আসে। ফলে তার স্ত্রী পুত্ররাও তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছে।

এক সপ্তাহ পর বিচারের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বিচারক ভাবছে, কী করা যায়, হুগ্গিসার মাথায় সবসময় নিশ্চয় চুরি ঘোরে, চুরি ছাড়া সে আর কিছু ভাবতে পারে না। তার মাথাটা ব্লক করে দিতে হবে। তাহলে হয়ত সে চুরি করা বন্ধ করব।

বিচারক ভাবতে থাকে, কীভাবে কারো মাথা ব্লক করে দেওয়া যায়, ভাবনা বন্ধ করে দেওয়া যায়। বিচারক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখে, আদীবাসীদের সাথে মিশতে থাকে।

জুয়ানো নামে একটি আদীবাসী এলাকায় গিয়ে দেখে, সেখানে এক লোক ডানে বায়ে মাথা নাড়াচ্ছে আর কী জানো বলছে। লোকটির নাম ওনাও।

“কী বলছে সে” বিচারক বোঝার চেষ্টা করে। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেও কিছু বুঝতে পারে না। শুধু কিছু শব্দ শুনতে পায়- তিয়ানো তিয়ানা, তিয়ানো তিয়ানা ...
-এই জাতীয় একটি শব্দ শুনতে পায়।

লোকটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিচারক। পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারে, লোকটি ছিলু দুর্ধর্ষ, নানান অপরাধে সে অপরাধী ছিল। তবে যেহেতু সাইলাং এলাকায় কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না, তাই তাকে জেলে রাখতে হত। কিন্তু জেলে রেখে কোনো লাভ হত না, সে আরো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠত।

এই অবস্থায় নিয়াংজো এলাকা থেকে এক লোক এসে একটা দাওয়াই দেয়। লোকটি ওনাওকে বেঁধে ফেলতে বলে, তারপর টানা চব্বিশ ঘণ্টা ওনাওকে ফেলে রাখা হয় কিছু না খাইয়ে।

লোকটি ওনাওকে এক জাতীয় পানীয় খেতে দেয়। পানীয়টি খাওয়া হলে কিছু শক্ত খাবার দেওয়া হয়। এরপর ওনাও-এর চারপাশে একটি শব্দ (তিয়ানা তিয়ানা) অনবরত করা হতে থাকে।

এভাবে তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর। ওনাও-এর বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। বাঁধন খুলে দেওয়ার পরও ওনাও “তিয়ানা তিয়ানা” করতে থাকে।

ওনাও এখন অার কোনো অপরাধা করে না, শুধু “তিয়ানা তিয়ান” করে, এবং অন্যকে করতে বলে। ওনাও চিন্তা করে, বিষয়টিকে আরেকটু পরিশিলিত করা যায় কীভাবে।

ওনাও এক ধরনের জপমালা তৈরি করে। যেটি টিপে টিপে গুণে গুণে সে এখন “তিয়ানা তিয়ানা” বলে। ওনাও সকল অপরাধীদের উদ্ধার করতে চায়। সবাইকে মালা দিয়ে বলে “তিয়ানা তিয়ানা” করো।

সাইলং এলাকায় অনেকে এটি দেখে মালার ব্যবসা শুরু করে, অনেক ভালো মানুষও মালা কিনতে থাকে, এবং “তিয়ানা তিয়ানা” করে।

বিচারক একশো পঞ্চাশ বছর বয়শের একজন লোকের কাছ থেকে জানতে পারল, বিষয়টিতে শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে অপরাধীরা আর “তিয়ানা তিয়ানা” করে না, তারা ভাণ করে, ফলে মালা বিক্রি হয় প্রচুর। সরল মানুষ এগুলো কেনে, এবং সারাক্ষণ “তিয়ানা তিয়ানা” করে।

এখন সবার মাথা ব্লক হয়ে গেছে। চিন্তা-ভাবনার আর কোনো প্রসার নেই এই রাজ্যে। বিচারক গভীরভাবে বিষয়টি ভাবতে থাকে।

ফিরে এসে বিচারের দিন কঠোরভাবে সে রায় লেখে। রায়ে লেখে, হুগ্গিসার তিন দিনের সাজা হল!

এত বড় অপরাধীর তিন দিনের সাজায় সবাই হতবাক হয়। এরপর বিচারক বলে, হুগ্গিসাকে তিনদিন একটি সংর্কীর্ণ কক্ষে রেখে একটি অডিও চালিয়ে দিতে হবে, যেখানে একটি শব্দ বারে বারে উচ্চারিত হবে।

শব্দটি হচ্ছে, “তিয়ানা তিয়ানা।” হুগ্গিসার হাতে একটি মালা থাকবে। মালার বুটিগুলো গুণে গুণে সে “তিয়ানা তিয়ানা” বলবে। প্রতি ঘণ্টায় ৩৬০০ বার। রুমে একটি পানীয় রাখা হয়, এই তিনদিন সে এই পানীয় খাবে।

এভাবে বিশ ঘণ্টায় ৭২০০০ বার এবং তিনদিন “তিয়ানা তিয়ানা” করলে তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে।

একইসাথে সবাই মনে রাখবেন, শুধুমাত্র বাতিকগ্রস্থ অপরাধীদের ব্রেন ব্লক করতে “তিয়ানা তিয়ানা” সাজা প্রযোজ্য হবে। অন্য কেউ কোনোভাবে কাউকে মালা হাতে “তিয়ানা তিয়ান” বলতে এমনকি উৎসাহিত করাও যাবে না। সেটি হবে দণ্ডণীয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×