অনার্স পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের বিষয় থাকে ‘ইংরেজি’। ইংরেজি শব্দটি ইনভার্টেড কমার মধ্যে রেখেছি কারণ, ইংরেজিতে পড়তে চাওয়া মানে এক্ষেত্রে ভাষা বা সাহিত্যের প্রতি ভালোলাগা ভাবার কোনো সুযোগ নয়। বরং কারণটা ঔপনিবেশিক, অর্থাৎ ইংরেজি পড়লে রুজির ব্যবস্থা হবে এই ভাবনাটা কাজ করে সর্বাগ্রে।
বাস্তবতা আগের মত এতটা প্রকট না হলেও একথা সত্য যে ইংরেজি পড়লে এবং ইংরেজি পারলে চাকরির বাজারে তার কদর বাড়ে। কিন্তু গলদটা রয়েছে অন্যখানে। ইংরেজিতে পড়তে চাওয়া মানে প্রথমে সকলে বোঝে ইংরেজিতে তারা অনর্গল কথা বলতে পারবে, লিখতে এবং পড়তে পারবে। কিন্তু অনার্সের প্রথম ক্লাস করতে গিয়ে কিংবা তারও আগে সিলেবাসটা হাতে পেয়ে যখন দেখে যে পড়তে হচ্ছে শেক্সপিয়রের দাঁত ভাঙ্গা কবিতা তখনই ভ্রম ভাঙে এবং শুরু হয় প্রশ্নোত্তরের বই কেনার পালা।
মাত্র একটি কবিতাও দরদ দিয়ে পড়েনি ইংরেজি সাহিত্যের এমন শিক্ষার্থী প্রচুর, কারণ, তারা তো সাহিত্য পড়তে যায়নি। ফলে পাশ করে বেরোলেও ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে আসলেই কিছু জানা হয় না, যেহেতু পরীক্ষা দিতে হয় ইংরেজিতে তাই ভাষাটা একটু আধটু শেখা হয়, তাও খুব বেশি না।
এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর জানতে হবে, তাকে জানাতে হবে যে ইংরেজি অনার্স পড়া মানে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়া। এজন্য তাকে একটি সাহিত্য অনুরাগী মন প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে, তাহলে পড়াশুনাটা ভালো লাগবে, না হলে ভালো লাগবে না।
সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ একটি সার্বজনীন বিষয়, এটি ইংরেজি সাহিত্য বা বাংলা সাহিত্য বলে কোনো কথা নয়, সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থাকলে সকল সাহিত্যই পড়তে হবে, সেক্ষেত্রে ইংরেজি সাহিত্য পড়া ভালো, কারণ তাতে বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা হয়।
আমি নিজে সাহিত্য নিয়ে পড়িনি, সায়েন্সর ছাত্র ছিলাম, কিন্তু ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থেকে সাহিত্যের উপর বই কিনতাম, পড়তাম, একসময় পড়াতামও। মজার বিষয় হচ্ছে সায়েন্সে পড়েও আমি ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী পড়িয়েছি।
পড়তে পড়তে এক সময় ইচ্ছে হল বই লিখি। এ ভাবনা থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর প্রাথমিক ধারণা দেয়ার জন্য প্রথমে লিখলাম “প্রিলিমিনারি ইংরেজি সাহিত্য” নামে একটি বই। বইটি বাজারে ভালো কাটতি হলেও বইটি আমার মনপুত হল না। মনে হল অনেক কিছু স্বল্প পরিসরে আলোচনা করতে গিয়ে বইটি ঠিক পরিচ্ছন্ন এবং সাবলীল হয়নি।
সন্তুষ্ট হতে না পেরে খুব সাদামাটাভাবে এরপর লিখলাম “লামিয়া” নামে ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস। এ বইটি আমার পছন্দ হয়েছে। যেহেতু প্রথম বইটি করতে গিয়ে অনেক বেশি পড়াশুনা এবং গবেষণা হয়েছে তাই দ্বিতীয় বইটি অনেক সুন্দর এবং সাবলীল হয়েছে।
বইটি ইংরেজি সাহিত্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদে বিশেষভাবে কাজে আসবে, যারা ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ছেন তাদের তো কাজে লাগবেই। বইটি পড়ে কারো ভালো লাগলে জানাবেন। আমার ভালো লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০২