somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: কোথাও নেই (প্রথম পর্ব)

২০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টাকার স্তুপ শুধু ক্লান্তিই বাড়াচ্ছে এখন। এত কষ্ট করে এত টাকা কেন যে আয় করেছি! জীবনের প্রতি পদে পদে যার যা প্রাপ্য দিয়ে দিলে এত জমত না নিশ্চয়ই। কিন্তু কেউই তা দেয় না, আমিও দিইনি।

ব্যাংকের হিসেব দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয়, এ যেন পাপ জমছে রোজ। তবু নেশা, এ নেশা ভয়ঙ্কর। প্রতিদিন দশ লক্ষ টাকা ব্যাংক একাউন্টে যোগ না হলে মাথা ঝিম ঝিম করে, মনে হয় কোম্পানির সকল কর্মচারীদের ডেকে বিদায় করে দিই আজই।

ছেলে-মেয়ে-জামাই সবাই বাপের কোম্পানির মালিক হয়ে বসেছে আরো দশবছর আগে থেকে। আমি বেঁচে আছি বলে কেউ শুধু এখনো প্রধান হতে পারেনি।

বেঁচে আরো কিছুদিন থাকব মনে হয়। কিছু পাপের প্রায়শ্চিত্য করব ভাবছি। মাঝে মাঝে মনে হত আগে, এখন সবসময় মনে হয়, মৃত্যুর পরে কিছুই নেই, কিন্তু পাপ মোচন করে না মরলে ভূত হয়ে থাকতে হবে আজীবন। ভূতের বিশ্বাসটা আমার যায় না কিছুতে। আমি ভূত হতে চাই না। পাপ মোচন করতে চাই।

পাপের হিসেব কেউ না জানলেও আমি তো সব জানি, রতনও অনেক জানে। দারোয়ানের বেতন মাসে এক লাখ টাকা শুনেছেন কেউ কোনোদিন? অফিশের সবাই জানে রতনের বেতন পনেরো হাজার টাকা, কিন্তু ওর চাহিদামত প্রতি মাসে লাখ টাকা পুরোয়ে দিই আমি।

না দিয়ে উপায় আছে কিছু? সেই কুট্টিকাল থেকে ও আমার সাথে আছে, জানে অনেককিছু! ও শিক্ষিত শয়তান হলে ব্লাকমেইল করে এতদিন কোম্পানির একটা অংশই আমার কাছ থেকে বাগিয়ে নিত।

ইদানিং শুধু আমি পাপ মোচনের উপায় খুঁজছি। গত পঞ্চাশ বছর যে পাপ করেছি তা কি আগামী পাঁচ বছরে কাটাতে পারব আমি? পাঁচ বছর সময় কি আমার হাতে আছে?

গত পরশুদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম, পাপ করলে সাতদিনের মধ্যে কাটাতে হয়, না হলে কোনোভাবে আর তা মোচন হয় না! তাহলে আমার কী হবে? আমার পুরনো পাপ কি সব তাহলে রয়ে যাবে? এত টাকা পয়শা দিয়ে কিছুই তাহলে হবে না?

এক গুরুর কাছে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। সে বলল, স্বামী-স্ত্রী একসাথে যেতে হবে। স্ত্রী তো দুজন, ভাবছি কাকে নিয়ে যাই। দুজনকেই নিয়ে গেলাম। গুরুদেব স্ত্রীদের হাত দেখে বললেন, বড় স্ত্রীর কোনো ফাড়া নেই, ছোটজনের আছে।

আমি তার সাথে গোপন আলোচনায় বসলাম, উনি শুধু মাথায় হাত দিয়ে থাকেন, কিছুই বলেন না। জিজ্ঞেস করলাম, গুরুদেব, আপনি তো কিছুই বলেন না, বিষয়টা কী?

বলল, কেমন করে বলি! আমি অভয় দিলে উনি বলতে শুরু করলেন, বললেন, ছোট স্ত্রী আমার জন্য অভিশাপ, ধীরে ধীরে আমার পতন হবে ওর জন্যে। এছাড়া ছোট স্ত্রীর নাকি পরপুরুষের সঙ্গ আছে।

আমি বললাম, গুরুদেব আমি তো পাপ মোচনের উপায় জানতে এসেছি, পাপের সন্ধান করতে তো আসিনি। গুরুদেব বললেন, এ তো তোমার পাপ নয়, স্ত্রীর পাপের কিংদংশ তোমার, তাই এখনই সতর্ক হলে মুক্তি পেতে পারো। বলুন, তাহলে কী করতে হবে?

না, আমি এখনই তোমায় ওকে ত্যাগ করতে বলব না। তুমি একটা কাজ করো, ওর জন্য আমি কিছু ওষুধ দিই, এটা মাস খানেক খাক, দেখ কাজ হয় কিনা। গুরুদেব এক ব্যাগ ওষুধ দিলেন। বুঝলাম, এরকম সমস্যা নিয়ে তার কাছে অনেকেই আসে, বেশ পরিপাটি ব্যাগে ওষুধগুলো গোছানো।

আমি দাম জিজ্ঞেস করতেই উনি রেগে গেলেন, বিড়বিড় করে উপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন মন্ত্র পড়ে হোমের আগুন জ্বালালেন। ওনার শিষ্যরা আমাদের কিছুক্ষণের জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিলেন।

আবার আমাদের ডাকলেন। ছোট স্ত্রীকে অনেকক্ষণ নিরীক্ষণ করে মাথায় জোরে জোরে তিনটে ফুঁ দিলেন। আমাকে বললেন, চোখ বন্ধ করে দুই স্ত্রীর মাঝখানে বসতে। এরপর মনে মনে ভাবতে বললেন, চোখ খুলে আমি কাকে দেখতে চাই।

অনুমান করে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট পর আমাকে চোখ খুলতে বললেন। এখন প্রতি এক মিনিট পর পর পর্যায়ক্রমে ছোট স্ত্রী এবং বড় স্ত্রী উঠে যাবে, চোখ খুলে আমি যাকে দেখতে চেয়েছি তাকে দেখছি কিনা, এটাই হচ্ছে খেলা।

এভাবে কয়েক দিন গুরুদেবের কাছে গিয়েছি, কিন্তু আমার এতদিনের পাপ মোচনের জন্য কিছুই করতে পারিনি, বরং নতুন নতুন পাপ আবিষ্কৃত হচ্ছে। গুরুদেবকে জোর করে পাঁচহাজার টাকা দিলাম, উনি টাকা নিতে চান না কিছুতে।

ক্লান্ত-বিরক্ত হয়ে অন্য কিছুতে মন দিতে ইচ্ছে করলাম। ইদানিং ফেসবুকে দেখি বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। আমিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি ব্যবসার প্রয়োজনে, নিয়মমাফিক কাজ সেরে চলে এসেছি।

ভালো থেকেছি, ভালো খেয়েছি, কিন্তু ওরা যেভাবে বলে ওরকম কিছু দেখিনি কোথাও কোনোদিন। হতে পারে সেরকম কোথাও আমি যাইনি হয়ত!

দেশ-বিদেশের এরকম সব জায়গায় ঘুরব ভাবলাম, একাই যাব। ধ্যানী-জ্ঞানী হতে গেলে নাকি একাই থাকতে হয়। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন মনে পড়ে গেল,

বহুদিন ধরে’ বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্ব্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভাবলাম, দূরে কোথাও তাহলে যাব না, গ্রামে যাব। খুব সাধারণভাবে ঢাকার পাশ্ববর্তী নবাবগঞ্জের একটি গ্রামে গেলাম। ওখানে নাকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে, আবার রাজাদের পোড়ো বাড়িগুলোও দেখা যায়।

সামান্য কিছু পোশাক পরিচ্ছদ একটি সাধারণ ব্যাগে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করে গেলাম কলাকোপা নামক জায়গায়।

ইছামতির পাড়ে বসে থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতার সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করলাম, জমিদারদের পোড়ো বাড়িগুলো দেখলাম। কিছুই সুখ হল না! ওগুলো আমার ভেতরের হাহাকার আরো বাড়িয়ে দিল বরং।

আবার ইছামতির পাড়ে গিয়ে বসলাম, অনেকক্ষণ বসে থাকলাম, জীবনের অধ্যায়গুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম। অর্থ-বিত্ত ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না জীবনে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, একটি থাকার জায়গা তো লাগবে। খুব ভালো খুঁজছি না, ফকির দরবেশদের মত সাধারণ হতে চাচ্ছি। সাধারণ মানুষ নাকি সুখী, আমিও সুখী হতে চাই।

একটা রেস্ট হাউস মত পেয়ে ওখানেই রাত কাটাতে মনস্থির করলাম। যা খাবার ওখানে! রাতে ঠিকমত খেতে পারলাম না, ঘুমোতেও পারলাম না তেমন।

সকাল সকাল আবার বেরিয়ে পড়লাম, সকাল বেলায় হাঁটতে ভালোই লাগছে। শূন্য গ্রাম্য রাস্তা, মাঝে মাঝে দুএকটা বাড়ি, হঠাৎ আমার শৈশবের কথা মনে পড়ল।

ছোটবেলায় যে গ্রামটিতে আমরা থাকতাম, রামগঞ্জের ঘরিয়া নামক একটি গ্রাম, অনেকদিন গ্রামে যাইনি, সেই যে বারো বছর বয়সে বাবার সাথে গ্রাম ছেড়ে এসেছি আর কখনো যাওয়া হয়নি।

তখন গ্রামে কত কী আয়োজন ছিল! এখন গ্রামেও কোনো নির্ভেজাল আয়োজন নেই, খেলাধুলা নেই, গল্প-আড্ডাও আর হয় না।

এখানে কালকে সন্ধ্যেয় দেখলাম, মানুষ টিভি দেখছে, যুবকরা একসাথে বসে আছে যে যার মত মোবাইল হাতে নিয়ে। একটু দূরে দরিদ্র শ্রেণির কয়েকটি বাচ্চা ছেলেকে দেখলাম, নদীতে ডুবোডুবি করতে।

মৈনটঘাট নামে একটি জায়গার নাম শুনেছি ঢাকায় থাকতে। ওখানে ছেলেপেলে আজকাল খুব যায় দেখি। অনেকে মারাও গিয়েছে পদ্মা নদীতে সাঁতার দিতে গিয়ে। ওখানেই তাহলে যাই। একটা অটোরিক্সা নিয়ে চলে আসলাম।

সকালের সোনা রোদ নদীতে পড়ে চিকচিক করছে, এত সকালে এখানে কেউ ঘুরতে আসেনি, দুএকজন গেরস্থ এসেছে গরু বাঁধতে, দুএকটি জেলে নৌকা দেখতে পাচ্ছি।

দেখে বোঝা যায়, এটা একটি নির্জন নিরিবিলি স্থান ছিল, মানুষ এসে এসে জায়গাটিকে সরগরম করেছে, দুএকটি দোকান হয়েছে, যদিও সেগুলো এখনো খোলেনি।

নদীর ধারে অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি, বেশ ক্লান্ত লাগছে। এখানে আশেপাশে খাওয়ার কোনো জায়গা আছে মনে হচ্ছে না।

না, “চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া” কিছুই আমি দেখতে পাচ্ছিনে, সময়টা বর্ষাকাল ছুইছুই করছে, এখন ধানের শীষের উপর শিশিরবিন্দু দেখা সম্ভব নয়। কবি কি তাহলে শুধু শীতকালের কথা বলেছেন!

এখানে আর থেকে লাভ নেই। মাওয়া ঘাটে যাই, ওখানে তাজা ইলিশের ডিম দিয়ে এক প্লেট ভাত খাব, এরপর চিন্তা করব কোথায় যাওয়া যায়। যতক্ষণ না সাধারণ মানুষের মত সুখ খুঁজে পাই ততক্ষণ আমি ঘুরতেই থাকব।

মাওয়া ঘাট একটা অদ্ভূত জায়গা, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন যাওয়া-আসা করছে এখান দিয়ে, কিন্তু রেস্টুরেন্টগুলো ফাঁকা। খুব বেশি মানুষ খায় না এখানে, এত দাম দিয়ে খাবেই বা কেন? তাছাড়া বাঙ্গালী পথে দাঁড়ায় না, শুধু গন্তব্য খোঁজে, পথই যে মানুষের সর্বপ্রধান গন্তব্য আমরা এটি বুঝতে পারলাম না কোনোদিন। আমি এই শেষ বয়সে এসে একটু উপলব্ধি করতে শুরু করেছি।

রেস্টুরেন্ট মালিকদের ক্রেতার সংখ্যা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। জায়গার কোনো ভাড়া আছে বলে মনে হয় না, তাছাড়া বেশি ক্রেতা ডিল করে কম লাভ করার চেয়ে কম ক্রেতা ডিল করে বেশি লাভ করাই তো মালিকের জন্য ভালো। এত লোকের মধ্যে কিছু না কিছু লোক বেশি দাম দিয়ে খাবেই।

রেস্টুরেন্টগুলো এখানে প্রায় একই মানের, উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে বাঁশের অস্থায়ী ঘর তোলা হয়েছে। মজা হচ্ছে, সামনেই ওরা ইলিশ ভেজে দেয়, এটা এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।

মাঝারি সাইজের এক জোড়া ইলিশের ডিম ভাজার অর্ডার দিয়ে একটু কোণায় সরে বসলাম। ইলিশ মাছের ডিম, শুকনো মরিচ ভাজা, এক প্লেট ভাত, এমন বুভুক্ষুর মত খেলাম! কে বলবে যে আমি কয়েক শো কোটি টাকার মালিক!

পরিব্রাজক হয়ে বেরিয়েছি, কিছুই ভাবতে চাই না। বাড়ি-ঘর, পরিবার, ব্যবসা, সবকিছু ভুলে থাকতে চাই। নতুন একটি মোবাইল নম্বর কিনে নিয়েছি। খুব দায় না ঠেকলে কাউকে ফোন করব না। সময়টুকু নিজের, একান্তই নিজের। এখন শুধু মনে হয়, টাকার মালিক নয়, সময়ের মালিকই আসল মালিক। আমি তো এর আগে কোনোদিন সময়ের মালিক হতে পারিনি। এ এক নতুন জীবন!

খাওয়া শেষ করে পদ্মার পাড় ঘেষে হাঁটতে থাকলাম, অসাধারণ দৃশ্য–কত কী যে ধারণ করে আছে প্রমত্ত পদ্মা! সকলে আপন বেগে আপন কাজে ধাবমান। কত লোক এ জায়গা দিয়ে গিয়েছে কতবার, কয়জন একটু আশেপাশে তাকিয়েছে? কী অদ্ভূত আমাদের জীবন, শুধু ছুটছি, তাকাচ্ছি না কোনোদিকে, অথচ জীবন তো শুধু লম্বা এক পথ, পাড়ি দেয়া শেষ তো জীবন শেষ, জীবন শেষ তো পথ শেষ।

“পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি
সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ধেঁধেছি।”

সলিল চৌধুরীর লেখা গানের এ লাইনটি যেন আমার এখন বিশেষ পাথেয় হয়ে উঠেছে। ‘সোজা পথের ধাঁধা’ আমার চেয়ে ভালো আর কে চেনে?

অর্থ-বিত্ত হওয়ার পর থেকে জীবন নিয়ে ভাবার এতটুকু ফুসরত পাইনি কোনোদিন, অথচ গত দেড়দিনে জীবন পথের অনেকটাই আমি দেখতে পাচ্ছি।

ভ্রমণে একাকীত্ব অসাধারণ, কোনো তাগাদা নেই কারো কাছ থেকে, চারপাশের সবটুকু আপন চোখে দেখা যায়। অনেকের মাঝে থেকে যখন আমরা কিছু দেখি তখন সম্ভবত দেখাটা নিজের হয় না পুরোপুরি।

বেশ কতক্ষণ কাটালাম এখানে, ভাবছি ওপার যাব কিনা, ভাবতে ভাবতেই একটা ছোট্ট ট্রলারে উঠে বসলাম। ট্রলারটি অঘাটায় বাঁধা রয়েছে। ওরা ভাবল আমি ভ্রমে অাছি, বুঝিয়ে বলল, ঘাট থেকে কীভাবে কীসে ওপার যাওয়া যায়। আমি ওদের সাথে চুক্তি করে ট্রলারেই ওপার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এক হাজার টাকা খরচ করা আমার জন্য কিছু না, তাই বলে এভাবে বেহিসেবে খরচ করিনি কোনোদিন, আজ মনে হল, আমার জন্য যেটি বেহিসেব কারো জন্য সেটি দুর্দান্ত একটা হিসেব। এই নৌকার মাঝি তো ভাবে নাই, এভাবে তার এক হাজার টাকা উপার্জন হবে। মাত্র এই একহাজার টাকা হয়ত ওর বাড়িতে বিশেষ আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেবে আজ।

পদ্মা বেশ শান্ত আজকে, পটপট করে ধীরে ধীরে ট্রলার এগোচ্ছে। হঠাৎ আমার কী জানো হল! মন্দিরের সেই গুরুদেবের কথা মনে পড়ল, আচ্ছা আমার ছোট স্ত্রী আসলে কি তাই! তবে সত্য হলো সে স্ত্রী নয়, সবাইকে ‘স্ত্রী’ বলতে হয়। আবার ভাবি, স্ত্রীই বা কী আর না-স্ত্রীই বা কী, প্রেমটাই আসল! প্রেমিক হতে কি পেরেছি আমি?

কোনো নিয়মেই আমরা বিয়ে করিনি, ওর দিক থেকেও কোনো তাগাদা নেই। যেহেতু আমি বিবাহিত, তাই এ নিয়ে মানুষের মাথা ব্যাথাও নেই, তাছাড়া মানুষ আমার কাছে আসে টাকার জন্য, এসব জানতে আসে না। যারা না পেয়ে খেপে যায় তারা বড়জোর “শালার দুই বউ” বলে দুই লাফ মেরে চলে যায়। টাকাওয়ালা মানুষের সাথে এদেশে সহজে লাগতে আসে না কেউ।

হঠাৎ মাথায় চক্কর দিচ্ছে, পুরুষ এমনই হয় বোধহয়, মুক্তি মেলে না তার সহজে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার সত্যতা উপলব্ধি করতেছিলাম, হঠাৎ করে যৌন ঈর্ষাে এসে সব গোলমাল করে দিচ্ছে।

একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গেল। সাত অাট বছরের একটা শিশু এই বিশাল পদ্মায় ডিঙ্গি নৌকা বাইছে! মানুষের কী অসাধারণ ক্ষমতা খাপ খাওয়ানোর! কে ধনী আসলে, ঐ শিশুটি না আমি?

এই মুহূর্তে আমি যতটা না উপভোগ করছি প্রকৃতি, বাইরের এই প্রাণ চাঞ্চল্য, তার চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছি মুক্তির স্বাদ। বুঝেছি, বাঁধতে গেলে শুধু নিজেই বাঁধা পড়তে হয়। ছেড়ে দেওয়া ভালো, তাতে মুক্তি মেলে আপনারই।

অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পত্তি, স্ত্রী সবই ছাড়তে হবে মন থেকে, তবেই শুধু মুক্তি মিলবে। এ যাবতে বুঝেছি, পুরুষ যদি অহংকার, আর স্বত্ত্ব ছাড়তে পারে তবেই শুধু মুক্তি। সকল মানুষের জন্যই এ বোধহয় চির সত্য।

ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে, ঠিক ঘাটে নয়, একটু দূরে নিজস্ব জায়গা করে ট্রলারটা কাওড়াকান্দি ঘাটে ভিড়েছে। অামার তো কোনো গন্তব্য নেই, তাই তাড়াহুড়াও নেই। ধীর পায়ে পাড়ে উঠে একটা ইটের উপর বসলাম। কিছু দূরেই অসংখ্য মানুষ, অথচ এই জায়গাটা ভীষণ একাকী! ঠিক যেন মানুষের মত, সবার মাঝে আমরা একা থাকি সবসময়। হাহাকার পিছু ছাড়ে না মানুষের, কোনো মানুষের না।

#দ্বিতীয় পর্ব ঠিক সাতদিন পর। মোট ছয় পর্বে গল্পটি শেষ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×