somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাপ ছেলের সাথে একটি অসুখ

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফিজিওথেরাপি অনেক বড় প্রফেশন। প্রতিদিনই নতুন নতুন জিনিস শিখছি । মাত্র তিন বছর হল পাশ করে রোগি দেখতেছি। এর মাঝে সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি। তবে মাঝে মাঝে খুব কঠিন রোগিও পেয়েছি। যাদেরকে দেখে প্রথমে ভাবছি ভাল করা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আল্লাহর রহমতে তারাও ভাল হয়েছে।

এবার পেলাম অন্য রকম এক কন্ডিশন। যা আগে আমি দেখি নাই। অন্যরা হয়তো পেয়ে থাকবেন। এ মাসের প্রথম দিকে এক বাবা তার ছেলেকে ভিশনে নিয়ে আসেন আমাকে দেখানোর জন্য। আমি ভিশনে ছিলাম না। আমাদের ফিজিও স্টাফ “ইমন চৌধুরী” ছিল। সে তাকে তার মত একটু দেখে বলল, আপনি কাল আসেন সব রিপোর্ট নিয়ে। আমাদের স্যার কাল দেখবেন।

পরের দিন বাপ-ছেলে সব রিপোর্ট নিয়ে হাজির। ছেলের নাম সাকিব। বয়স ১১ বছর।
আমি যথারীতি বাপ-ছেলের সব কথা শুনলাম, দেখলাম এবং সব রিপোর্ট চেক করলাম। কিন্তু রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলাম।এই রকম ব্যর্থ মাঝে মাঝেই আমাকে হতে হয়। তারপর রাতজেগে পড়াশুনা , পরেরদিন রোগ নির্নয় করার আনন্দ। সাকিবের ক্ষেত্রেও তাই হল ।

২ মাস আগে সাকিবের টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল এবং সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। জ্বর ভাল হয়েছে কিন্তু বড়সড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে। দুই কাঁধ উপরের দিকে এবং সামনের দিকে (Shoulder- Elevated & Protected) চলে আসছে। নড়াচড়া করলে অনেক ব্যথা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, কিন্তু তারা খুব হতাশ। এখন শুধু দেশের বাহিরে যাওয়া বাকি। জমি-জমা বিক্রি করে মাদ্রাজ যাবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখছে । যাওয়ার আগে মেডিসিনের এক স্বনামধন্য মহান প্রফেসরের কথা শুনে আমাদের এখানে আসছে। বলছে ভিশনে গিয়ে দেখেন, ওরা হয়তো ফিজিওথেরাপি দিয়ে কিছু করতে পারবে। উনি সেই ভরসায় এসেছেন আমাদের কাছে।
.
বাপ ছেলের এমন মধুর সম্পর্ক আমি খুব কম দেখেছি। মনে হয় যেন দুজন বন্ধু।কে আগে কথা বলবে এই নিয়ে প্রতিযোগিতা । এত বিপদে বাপ ছেলের এই রকম সম্পর্ক আমাকে বিমোহিত করছে । বাপ তো ছেলেকে নিয়ে মহা টেনশনে আছে ভিতরে ভিতরে। কি করবে না করবে, একমাত্র ছেলে তার। মেধাবী ছাত্র সাকিব ক্লাস ফাইভে পড়ে। রোল নম্বর ১। তাই বাবার অনেক স্বপ্ন ছেলেকে নিয়ে। বাপ ছেলের এমন সম্পর্ক দেখে আমি নিজেই আবেগ আপ্লুত। আর রোগ নির্ণয় না করতে পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হলাম।

ইমনকে বললাম আপাতত শুধু মুভমেন্ট করান (Active, Passive, Mobilization)। ঐ দিন অর্ধরাত পযর্ন্ত পড়াশুনা করলাম। আমার ডাক্তার ফ্রেন্ডদের সাথে আলাপ করলাম। ডা. সোয়েব,পিটি, তার কাছ থেকে বেশ উপকৃত হলাম । টাইফয়েডের সময় ভুল ইনজেকশনে বা এমনিতে (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি-Peripheral Neuropathy) হতে পারে। তাই সাকিবেরও এই সমস্যা হতে পারে। এটা ধরে এগোলাম।

প্রথম এক সপ্তাহে খুব একটা উন্নতি হয় নাই। সাকিবের বাবা হতাশ হলেও সাকিব হতাশ হচ্ছে না। আনন্দের সহিত চিকিৎসা নিচ্ছে। যদিও চিকিৎসার সময় একটু আধটু কান্নাকাটি করেছে। ওরা বাপ-ছেলে সাধরণত দুপুর আড়াইটার দিকে আসার কথা। কিন্তু প্রতিদিন আধা ঘন্টা-এক ঘন্টা আগে এসেই হাজির। দুপুর ১-২ টা আমাদের খাবার বিরতি থাকে। তাই ওদেরকে এসে অযথা বসে থাকতে হয়। অনেক বলেও কাজ হয় নাই। বাপ-ছেলে আগে এসেই হাজির। একদিন দুপুর বেলা বিরতির পর আমি ভিশনে আসতেছি। বাপ-ছেলে রিকসা দিয়ে ভিশন খুজতেছে। বাপ বলতেছে, ভিশন সামনে, ছেলে বলতেছে পিছনে , ভিশন ছিল তাদের পাশেই। আমি দেখে হাসতে লাগলাম । তারা মাঝে মাঝেই নাকি পথ হারিয়ে ফেলে। আমার খুব মায়া হল, ছেলেটাকে কিভাবে ভাল করব। বাপ প্রতিদিন হাফ বেলা কাজ করে ছেলেকে গাজিপুর থেকে উত্তরায় নিয়ে আসে। আসতে দুই আড়াই ঘন্টা লাগে। শুধু ছেলেটার ভালোর জন্য। কবে ছেলেটা স্কুলে যাবে। আবার পড়াশুনা করবে।
কয়েকদিন আগে বলতেছে, স্যার ছেলেটা আমার ভাল হবে তো? আমি বললাম, অবশ্যই হবে!! এই কথা বলেই বুকের নিচে চাপ পড়ল। আসলেই ভাল হবে তো! যাই হোক সৃষ্টিকর্তার রহমতে গত দুই সপ্তাহ যাবত সাকিবের উন্নতি চোখে পড়তেছে।
.
আজকে আবার অ্যাসেস করে দেখলাম ৯০% ভাল..!! আমাদের ফিজিও স্টাফরা অনেক ভাল কাজ করছে। বিশেষ করে সাকিব তো ইমনের ভক্ত। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ! গত এক সপ্তাহ যাবত বাপ-ছেলের চোখে দেখতেছি আনন্দের ঝিকমিক। আমাদেরও আনন্দ কম না , হিমালয় জয়ের চেয়েও বেশি।
.
ফিজিওথেরাপি পড়া আসলেই সার্থক হয়েছে। বাবা-মা কে আজই ফোন দিয়ে বলা দরকার।
ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা , ভাই-বোন , বন্ধু-বান্ধব , রোগি , শুভাকাক্ষী সবাইকে , যারা চলার পথে অজস্র সহযোগিতা করেছেন এবং মানুষের খুব কাছ থেকে একটু সেবা করা সুযোগ দিয়েছেন।
.
ডা. সাইফুল ইসলাম (পিটি)
বি.এস.সি ইন ফিজিওথেরাপি (ঢাবি-সিআরপি)
প্রতিষ্ঠাতা এবং কো-অর্ডিনেটর
ভিশন ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাব সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×