সা.ই. ব্লগে আছি প্রায় আড়াই বছর। এ আড়াই বছরে ভার্চুঢাল জগতের অনেকের সাথে ভার্চুয়াল পরিচয় হয়েছে। তাদের পোস্টে তমেন্ট করেছি, আমার পোষ্টে তাদের কমেন্টের জবাব দিয়েছি, এভাবে কখন জানি এদেরকে খুব বেশী আপন ভাবতে শুরু করেছি। আর এখন এমন একটা অবস্থা দাড়িয়েছে একদিন সামু তে হাজিরা না দিতে পারলে মনে হয় কি যেন একটি কাজ বাকি রয়ে গেলো।
প্রথমে যীশুর পোষ্ট এ ইফতার পার্টির প্রস্তাব এবং পরে রাতমজুর, রোহান ও মনসুরের ইফতার পার্টি বিষয়ক পোষ্ট ও রিপোষ্টে সাড়া দিলাম অনেক আগ্রহ নিয়ে। কারন আড়াই বছর ব্লগের বাসিন্দা হয়ে ও আমি কখন ও ব্লগারদের কোন আড্ডায় হাজিরা দিতে পারিনি তাই স্বভাবতই কারো সাথে সরাসরি পরিচয়ের সুযোগ হয়ে উঠেনি।
গতপরশু এক ব্লগারের সাথে চ্যাট করতে করতে রাত পার (সে কাহিনী পরের পোষ্টে জানাচ্ছি) হয়ে গেল, কাজেই ঘুম আর কপালে জুটবে না বুঝতে পেরে সেহরী খেয়ে কিছুক্ষন নিজের কাজ করলাম এই ভেবে যে এখন যদি এখন ঘুমিয়ে পড়ি তো আর অফিসে যাওয়া হবে না। কিন্তু আমার ভাবায় আর কি এসে যায়! সাড়ে ছয়টার দিক ঘুমিয়ে পড়লাম আর ঘুম ভাংলো ১২ টায়, উঠে মেজাজ খারাপ করে গেলাম অফিসে, কারন আমার রিপোর্ট জমা দেয়ার ডেডলাইন ক্রস করি করি অবস্থা, আর মোবাইলে দেখলাম অফিসের আমার টিম থেকে ৪৭ মিস্ড কল এবং ২ টা এসএমএস আর এইচ আর থেকে ৫ টা মিস্ডকল।
অফিসে গিয়ে রিপোর্ট শেষ করে বের হব হব করছি এমন সময় ব্লগার মুহিব ভাই কল দিলেন প্রথম রিসিভ করতে পারছিলাম না, ২ মিনিট পরে রিসিভ করলাম আবার কল দিলে এর মধ্যে দেখলাম ৫:৪০ বাজে, প্রমাদ গুনলাম জ্যামে পড়ব না তো! অফিস থেকে বের হচ্ছি এমন সময় নতুন ব্লগার 'সবার প্রিয়' (যে এখন ও ৯ দিন হয়ে গেলেও পাতায় একসেস পায়নি) ফোন করল এবং জানাল সে আমার অফিসের পাশেই আছে তাকে জানালাম ইফতার পার্টির কথা রাজী হলো যেতে। মোহাম্মাদপুর থেকে দু'জনে মিলে রিক্সায় উঠেই রাতমজুরকে ফোন করে জানালাম আমরা দ'জনে আসছি। নিলক্ষেত মোড় পার হচ্ছি তখন আবার মুহিব ভাই এর ফোন পেলাম আবার জানালাম প্রায় পৌছে গেছি। এরপর ছবির হাটের সামনে নেমে প্রথমে মুহিব ভাইকে ফোন দিলাম দেখি আমার ডান পাশে দাড়িয়ে তিনি ফোনে কথা বলছেন, পরিচিত হলাম তার সাথে এবং সাথে নীল ভোমরার সাথে। এরই মধ্যে রাতমজুরের মোবাইল থেকে বৃত্তবন্দির ফোন কিন্তু রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো, ব্যাক করতেই পাইরাম রাতমজুরকে। জানলাম তারা আমাদের জন্য পানি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত। এরপর একে একে পরিচয় হলো রোহান, ভেবে ভেবে বলি, ক্যামেরাম্যান ও চাচামিয়ার সাথে। চাচামিয়া পরিচয় পেয়ে প্রথমেই জানতে চাইল অপরাজিতা কই, আমার ও পাল্টা প্রশ্ন ছিল চাচী আম্মা কই। এরপর পরিচয় ঢাকা শহরে বাসে ভ্রমনের কাহিনী নিয়ে ব্লগে বিখ্যাত হওয়া স্পর্শহীণ কিছুদিনের সাথে, আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল বাসে নতুন ১৮+ কি ঘটল।
এরপর ইফতার পার্টির মূল অতিথী শান্তির দেবদূত এর সাথে পরিচয়। আস্তে আস্তে পরিচয় হলো আর ও বেশ কয়েকজনের সাথে। এরই মধ্যে পরিচয় হয় সাইকেল ভ্রমনকারী ও শামষীরের সাথে কিন্তু আমি খুজে ফিরছি রাতমজুর আর বৃত্তবন্দিকে, আর সাথে সাথে অন্যদের সাথে পরিচয় পর্ব ও চলছে। এরই এক ফাকে এলেন রাত মজুর আর বৃত্তবন্দি, পরিচয় হলো তাদের সাথে। তাদের সাথে মেসেঞ্জারে আর মোবাইলে মাঝে মধ্যে কথা হওয়ার কারনে তাদের সাথে পরিচিত হবার একটা তাড়া ছিল। রাতমজুরের সাথে গল্পের এক ফাকে এসে গেলেন কালপুরুষ দা আর তার পরেই একরামুল হক শামীম ভাই ও মাতব্বর পরিচয় হলো তাদের সাথে। এর মধ্যে ইফতারীর সময় হলো, পানি খেজুর জুস আপেল জীলাপি এসব দিয়ে ইফতার শুরু করলাম, শামীম ভাই ও মাতব্বর সবাই কে পৌছে দিল ইফতারী, আর মুহিব ভাই এবং বৃত্তবন্দি লেগে পড়ল ভাজা ভুজি আর মুড়ির পিছনে।
মজা করে সবাই ইফতারী কররাম, সাথে শুরু হলো আড্ডা, গল্প। ইফতারী শেষ হবে হবে এমন সময় এলেন মনসুর ভাই। ইফতারী শেষ করে সবাই টং দোকান থেকে চা খেতে খেতে সবাই আবার মেতে উঠলাম আড্ডায় আর সাইকেল ভ্রমণকারী এবং বৃত্তবন্দির ক্যামরার ফ্লাসে রাতের আধার মুহুর্তের জন্য কেটে যেতে লাগল। ৮ টা পর্যন্ত চলল আড্ডা তারপর একে এক সবাই যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
সত্যি ব্লগে আমরা যে যে মন্তব্য করি না কেন, আড্ডায় যে সবাই খুবই প্রানবন্ত আর আন্তরিক তা কাল ইফতার পার্টিতে গিয়ে বুঝলাম এবং আর ও বুঝতে পারলাম এতদিন আড্ডাতে না এসে কত কিছুই না মিস করেছি।