ঘুম থেকে উঠে মনটা খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। গাড়ির হর্ন, মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণ এগুলো আমাদের দৈনন্দিন ব্যাপার-স্যাপার। ধুলোবালি, যানজট প্রতিদিনের রুটিন। যান্ত্রিক শহরের বুকে সবুজের দেখাটা যেন এখন অসম্ভব হয়ে উঠেছে। শহরের বুকে সময় কাটানোর মত অনেক পার্ক থাকলেও নোংরামী আর অশ্লীলতার কারণে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবা যায়না। ছুটির দিন কাটে ইট-পাথরের ছোট কারাগারে, ছোট একটি যান্ত্রিক বস্তু নিয়ে।
ইচ্ছে হল সবুজ দেখার, সাথে সময় ছিল সারাদিন। ঘুরে আসলাম রূপগঞ্জের 'জিন্দা পার্ক' থেকে। একটুখানি নয় বরং সবুজের সমরহে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলাম সারাবেলা
ঢাকা শহরের যানজট, কোলাহল, ধুলোবালি, গাড়ির হর্ণ আর যান্ত্রিকতা থেকে কিছুক্ষণের জন্যে মুক্তি পেতে অবশ্যই ঘুরে আসা উচিৎ ‘জিন্দা পার্ক’ থেকে। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে পার্কটি। নামকরণ ‘জিন্দা পার্ক’ হলেও এটি মূলত একটি কমিউনিটি ভিলেজ। এটি কোন সরকারী উদ্যোগ নয় কিংবা কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোগ নয়। ‘জিন্দা পার্ক’ তৈরি হয়েছে স্থানীয় মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে।
১৯৮০ সালে পাঁচ হাজার সদস্য নিয়ে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই ‘জিন্দা পার্ক’। এমন উদ্যোগ, এত মানুষের অংশগ্রহণ, ত্যাগ স্বীকার এবং এত সুদীর্ঘ প্রয়াস দেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। বর্তমানে অপস ক্যাবিনেট, অপস সংসদ এবং অপস কমিশন নামে তিনটি পরিচালনা পরিষদ রয়েছে।
১৫০ একর জায়গা বিস্তৃত পার্কটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত। পার্কটির চারদিকে সন্নিবেশিত রয়েছে পাঁচটি বিশাল জলধার,দুটি জলধারের মধ্যে অসাধারণ দুটি ছোট দ্বীপ। যদিও দ্বীপগুলো খুবই ছোট, তবুও অসাধারণ। ট্রি হাউসের উপর বসে চারিদিকে একনজর না তাকালে সবকিছু মিস করবেন আপনি। চাইলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন ট্রি হাউসেই। হয়ত পাহাড় নেই এখানে, রয়েছে টিলা, যা আপনাকে কিছুটা পাহাড়ি অনুভূতি এনে দিবে। নানা প্রজাতির ফুল গাছের বেষ্টিত ফুলের বাগান মুগ্ধ করবে যে কোন কাউকেই। আর লেকের উপর অসাধারণ ভাসমান ব্রিজ। সবকিছুই মুগ্ধ করেছে আমায়। এ যেন একটি জীবন্ত গ্রাম।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল ২৫০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে পার্কটিতে এবং গাছপালার সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। চারিদিকে শুধুই সবুজ, পরিপূর্ন অক্সিজেন। শান্তির অবেশে মিশে যেতে পারেন সবুজের মাঝে।
অসাধারণ এই পার্কটিতে প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০০টাকা। তবে খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে অতিরিক্ত আরো ২৫টাকা গুনতে হবে আপনাকে। পার্কের ভিতরে খাওয়ার জন্যে আছে মহুয়া স্নাকস এবং মহুয়া রেস্টুরেন্ট। দেশীয় খাবারের সব ধরনের সমাহারই পাবেন এখানে। লোকশিল্প পণ্যও নিয়ে নিতে পারেন মনের মত। পরিবার নিয়ে থাকার জন্যে আছে মহুয়া গেস্ট হাউজ। ইচ্ছে করলে পিকনিক স্পট হিসেবে 'জিন্দা পার্ক'কে বেছে নিলে মন্দ হয়না। বরং এর থেকে পারফেক্ট স্থান খুজে পাবেননা ঢাকাতে। তবে তার জন্যে আগে থেকেই বুক করতে হবে।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে উত্তরা হয়ে টঙ্গী ফ্লাইওভার পার হয়ে মিরেরবাজার চৌরাস্তা থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পার হওয়ার পর কিছুদূর যেতেই দেখা পাবেন জিন্দা পার্কের।
অথবা, ঢাকা থেকে কাচপুর ব্রিজ পার হয়ে ভুলতা গাউসিয়া পার হয়ে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জিন্দা পার্ক। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে পাচ মিনিটের পথ জিন্দা পার্ক।
সবচেয়ে সহজ উপায় হল, কুড়িল বিশ্বরোড এর পূর্বাচাল হাইওয়ে রোড থেকে, পুর্বাচাল- ৩০০ফিট রাস্তা থেকে লেগুনা বা সিএনজি করে খুব সহজেই জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়।
এখানে গাড়ি পার্কিং এর সুবিধা রয়েছে। সপ্তাহের সাতদিনই পার্কটি খোলা থাকে। মাগরীবের আজানের পর পার্কটি বন্ধ হয়ে যায়।
তবে আর দেরী করছেন কেন? আজই আপনার পরিবার নিয়ে কিছু সময় মেতে উঠুন সবুজের আবেশে। একটুখানি সবুজ ঘাসের ঊপর মাথা রেখে অনুভব করুন হৃদয়ের স্পন্দন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০