somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই চোর

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি কোন বই কিনলে সেই বই সাতদিনের বেশি টিকত না। প্রথম দিকে বুঝতে পারতাম না যে বইগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম এত বই কেনার পরেও বইগুলো কই যায়? অতঃপর একদিন কঠিন গবেষণা, পরীক্ষণ–নিরীক্ষণের পর অনুধাবন করতে পারলাম যে উক্তকৃত কর্ম আর কারো নয়, আমার পাজি, বদের হাড্ডি বন্ধুদের। ওরা আমার অবর্তমানে আমার বাসায় আসে, সুযোগ বুঝে বুকশেলফ কিংবা টেবিল থেকে হাতে বাজিয়ে নিয়ে যায়। এটা কখনো বুঝতে পারতাম না যদিনা আমি সেদিন জুবায়েরের অবর্তমানে ওর আলমিরা খুলেছিলাম। পুরো আলমিরা বইয়ে ভরা। অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে আমার ক্রয়কৃত বইও ছিল। বাকি বইগুলোও যে জুবায়ের অন্য কারো থেকে চুরি করে এনেছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কারন নাম যখন তার জুবায়ের, একটা বই কিনলে সারা দুনিয়া বলে বেড়াবে আজ হুমায়ন আহমেদ কিনেছি, আজ আহমেদ ছফা কিনেছি। তাই বলাবাহুল্য এতগুলো বই সে কিনবে আর তা আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করবে না তা ভাবাটাও অন্যায়। তবে আসল কথা হল জুবায়ের আলমিরাতে আমার খুব অল্প সংখ্যক খোয়া যাওয়া বই রয়েছে। বাকীগুলোর হদিস না পাওয়া গেলেও ওগুলো যে হুমায়ন আর রাতুলের ঘরে তা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।

একদিন জুবায়েরকে বললাম, তুই আমার বইগুলো নিয়ে আর ফেরত দেসনি কেন?
আকাশ থেকে পড়ার মত করে জুবায়ের বলল, তোর বই! আমি নিয়েছি! নিয়ে আবার ফেরত দেইনি! এমন গাঁজাখুরি কথা কোথায় পেলি? কিছু খেয়েছিস নাকি?
আমি বললাম, দেখ জুবায়ের, আমি তোর আলমিরাতে অনেকগুলো বই দেখেছি। তার মধ্যে আমার চার-পাচটাও ছিল।
জুবায়ের একটু থতমত খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ওগুলো তোর বই তার প্রমাণ কি? নিজ হাতে টাকা গুনে প্রদান করে অবশেষে বইগুলো কিনেছি আর তুমি ঘুঘুচান বললেই হল বই তোমার।
আমি আর কিছুই বললাম না, উপযুক্ত প্রমাণ না থাকার কারনে বই বঞ্চিত হয়ে থাকতে হল সময়টাতে।

এরপর আমি বইয়ের দিকে একটু নজরদারি করা শুরু করলাম। প্রত্যেকটা বইয়ের প্রথম সাদা খালি পৃষ্ঠাতে আমার নাম লিখে রাখতাম। এবার চোর কোথায় পালাবা? ধরাতো পড়তেই হবে তোমায়। ভেবেছিলাম এবার অন্তত কোন বই খোয়া যাবেনা। হন্তদ্যমে বই পড়তে শুরু করলাম টেবিলে, বিছানায়। বুকশেলফে রাখারও প্রয়োজন মনে হয়নি। দুদিন না ফুরোতেই আবার হাওয়া। সোজা গিয়ে জুবায়েরের বাসায়। ওর সামনেই আলমিরা খুললাম এবং খুজে বের করলাম হাওয়া হওয়া বইটি। জুবায়েরের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম এটা কি?
নিরলস ভঙ্গিতে জবাব দিল, বই!
আমি এবার আরো গরম হয়ে বললাম, হ্যা বই, তবে আমার বই। চোর জানি কোথাকার।
জুবায়ের আবারো স্বভাবসুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, এটা তোর বই তার প্রমান কি?
এবার আমি হাসতে হাসতে প্রমাণ দেখানোর জন্যে বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে ওর দিকে ফিরালাম। মনে মনে বলতে লাগলাম চান্দু তুমি ধরা খেয়ে গেছ। কিন্তু জুবায়েরের মুখের ভাষা স্বাভাবিক দেখে আমার কিঞ্চিৎ চিন্তা হল। কি যেন মনে করে বইয়ের দিকে ফিরে তাকালাম। কতবড় খ”চর প্রাণী হলে এমন কাজ করতে পারে তার অন্ত নেই। মেজাজটাই গেল খারাপ হয়ে। নিজের নাম লেখা পৃষ্ঠাগুলো ছিড়ে ফেলেছে জুবায়ের। যার কারনে আমার প্রমাণের বাকী আর কিছুই রইলোনা। আমি একবার হা করে তাকাই বইয়ের দিকে, আরেকবার জুবায়েরের দিকে। এতদিন পর্যন্ত বইয়ের গায়ে কোন আচড়ও লাগতে দেইনি সেখানে পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলা! জুবায়ের যেন আমার কাটা গায়ে নুনেরছিটে দিল। বলল, বইটা আলমিরাতে রেখে যাস। রাগে ক্ষোভে বই ছুড়ে ফেলে বাসায় চলে আসলাম।

সেদিনের পর সব বইয়ের সূচিপত্রের বিপরিত সাদা পৃষ্ঠায় নাম। লিখলাম নিজের নাম। এবারতো কোনভাবেই এই পৃষ্ঠা ছিঁড়তে পারবেনা। এবার দেখবো মজা কি করে। বই চুরি করা এখন নেশায় পরিণত হয়ে গেছে, খুব শীঘ্রই এই স্বভাব ছাড়তে পারবে না। এবার হাতে নাতে ধরা পরবেই।

অনেকদিন হয়ে গেল, ব্যাস্ততার কারনে টের পাইনি কোন বই খোয়া গেছে কিনা। বই হিসেব করতে গিয়ে দেখলাম তিনটে বই নেই। কোন কথাবার্তা না বলে সোজা জুবায়েরের বাসায়, ওকে সরিয়ে আলমিরা খুলে তন্নতন্ন করে খুজতে লাগলাম বইগুলো। দূর্ভাগ্যক্রমে পেলাম না কোথাও। উল্টো সবকিছু অগুছালো করার জন্যে জুবায়ের আমাকে দিয়েই সবকিছু পরিষ্কার করিয়ে ছাড়ল।
জুবায়েরের বাসা থেকে বেড়িয়ে দৌড় দিলাম হুমায়নের বাসায়। হুমায়ন ঘরে না থাকার।কারনে আমার ওর রুম পিঁপড়ার মত খুজতে সমস্যা হলনা। আবিষ্কার করলাম আমার অতীতে হারিয়ে যাওয়া বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার হুমায়নের খাটের নিচের ট্রাংকে। রাগে ক্রোধে শরীরটা ছ্যাঁত করে উঠল। কোন বইতেই নিজের নাম না থাকায় প্রমাণের নিদর্শন নেই কোন। তাই বাধ্য হয়ে নতুন বই তিনটি খুজতে লাগলাম। সবকিছু খুঁজাখুঁজি শেষ করেও খুজে পেলাম না বই তিনটি।

হুমায়নের বাসা থেকে বেড়িয়ে গন্তব্য রাতুলের বাসা। রাতুল টিউশনিতে যাওয়ার কারনে রাতুলের রুমে হানা দিলাম। অতঃপর ওখানে আমার বাকি সব বইগুলোর সন্ধান পেলাম। বইচোরগুলোকে হাতেনাতে ধরা পরারও ব্যাবস্থা করা হচ্ছে প্রায়। কারন হারিয়ে যাওয়া নতুন তিনটি বইয়ের সন্ধানও পাওয়া গেছে। একটি বই হাতে নিয়ে অনেক ভয়ে ভয়ে পৃষ্ঠা খুললাম, না জানি আবারও পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে সব তথ্য প্রমাণ নষ্ট করে দেয়। সূচিপত্র দেখে হাফ ছেড়ে বাচলাম। তার মানে পৃষ্ঠা ছিড়েনি। এবার হাতেনাতে ধরা নিশ্চিত। কিন্তু আমি অপর পৃষ্ঠা উলটে থ হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। অনুভূতিশূন্য হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ঠায়। পৃষ্ঠাটির কিছু হয়নি, আমার লেখা নামটাও স্পষ্ট লেখা আছে। তবে যেটা হয়েছে সেটা হল নতুন কিছু শব্দ যোগ হয়েছে। পৃষ্ঠাটিকে তিনবার মূদ্রন করা হয়েছে। লেখাছিল শুভ। জুবায়ের সর্বপ্রথম চুরি করার পর নামের পাশে যোগ করল, ‘শুভ কর্তৃক জোবায়েরকে ভালবাসার নিদর্শনস্বরুপ’। অতঃপর জুবায়েরের থেকে চুরি করে বইটি গেল হুমায়নের হাতে। হুমায়ুন দ্বিতীয় মুদ্রনে আমার এবং জুবায়েরের লেখার পাশে যোগ করল, ‘শুভ কর্তৃক জুবায়েরকে ভালবাসার নিদর্শনস্বরুপ উপহার দেয়ার ফলে হুমায়ুনকে এই ভালবাসার অংশীদার করা হল’। অতঃপর সর্বশেষবার হুমায়ুনের কাছ থেকে রাতুল বইটি চুরি করে তার সাথে যোগ করল, ‘শুভ কর্তৃক জুবায়েরকে ভালবাসার নিদর্শনস্বরুপ উপহার দেয়ার ফলে হুমায়ুনকে এই ভালবাসার অংশীদার করা হল। কিন্তু হুমায়ুন এই ভালবাসার যোগ্য নয় বলে উক্ত উপহার জনাব রাতুলকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে দান করা হইলো। উক্ত উপহারের একমাত্র ন্যায্য অংশীদার একমাত্র জনাব মোহাম্মদ তানভীর মেহেদী রাতুল'।
অতঃপর এই সাহিত্য চোরদের সাহিত্যিক চুরি দেখে আমি দাত কটা বের করে হোহো করে ঘন্টাখানেকের মত হাসতে লাগলাম।

পুনশ্চঃ ইহা একটি গল্প হইলেও কিছুটা সত্যের মিশ্রণ রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×