অর্জনে বিসর্জনে স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অর্জনে বিসর্জনে স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর
ফকির ইলিয়াস
______________________________________________
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন একাডেমিক কাজে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন অতি সম্প্রতি। ২৪ মার্চ ২০১৫ নিউইয়র্কে আয়োজিত ‘স্বাধীনতার কবিতা’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন তিনি। প্রগতিশীল চিন্তক জানালেন বাংলাদেশ বিষয়ে বেশ আশার কথা। বললেন- বৈদেশিক মুদ্রা, গার্মেন্টস শিল্প ও কৃষি খাত এখন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আয়ের সেক্টর। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মেধাবী প্রজন্মই আমাদের শক্তির উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স চার দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ আরো অনেকভাবে এগিয়ে যেতে পারত। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ হতে পারত একটি মডেল। যার জন্য বেশি দরকারি ছিল রাজনৈতিক ঐক্য। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়েছিল তার সিকিভাগও এখনো পূরণ হয়নি- এ কথাটি অনেকেই বলেন। এর প্রধান কারণ হলো- রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে রাজনীতিকদের ব্যর্থতা। বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় থাকেন- তারা নিজের মতো করেই ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠেন ক্রমশ। আর যে রাজাকারদের দেশে কোনো অস্তিত্বই থাকার কথা ছিল না তারাই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে। না, এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। আমরা অপশক্তির হাত থেকে আরেক অপশক্তির হাতে ক্ষমতার হাতবদল দেখতে চাইনি কোনোকালেই। তারপরও দেশটিকে পুরোপুরিই তাদের চারণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল জঙ্গিবাদীরা। যারা এ দেশে ড. হুমায়ুন আজাদ, ড. অভিজিৎ রায়ের মতো উজ্জ্বল মানুষদের হত্যায় মদদ দিয়েছে- দিচ্ছে।
আমরা দেখছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার পরও জাতি নানাভাবে প্রতারিত হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে। এরা কারা? কি প্রকৃত মতলব ছিল তাদের? এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান এবং বিবেচনার দাবি রাখে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এর পূর্বাপর ইতিহাস নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। এমন অনেকেই আছেন যারা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী। মরহুম মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম তাদের একজন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। মহান স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে তার একটি বিশ্লেষণধর্মী বই আছে। ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক’- শিরোনামের বইটি ২০০০ সালে বের করে মাওলা বাদার্স। ওই বইয়ে মে. জে. মইনুল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে। তিনি জানাচ্ছেন-
ক. ‘ডিসেম্বর মাসেরই শেষের দিকে মেজর জলিলকে খুলনা থেকে ধরে এনে বন্দি করার জন্য আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন ক্যাপ্টেন কে এস হুদা (পরে কর্নেল ’৭৫-এর সাত নভেম্বর অভ্যুত্থানে নিহত) তাকে ধরে নিয়ে আসেন। মেজর জলিলের বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খলতা ও অন্যান্য সামরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জলিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও গ্রেপ্তার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। যদিও প্রচার করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। (পৃষ্ঠা ২২- মেজর জলিলের গ্রেফতার)। খ. ওই রাতেই প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, যিনি একজন ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে প্রথম সামরিক অফিসার্স কোর্সে (শর্ট সার্ভিস-১) সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ও যুদ্ধের সময় কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। তিনি ধানমণ্ডি এলাকায় তার সাতজন সমবয়সী বুকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে শহরে টহলে বের হন। এক পর্যায়ে সিরাজ সিকদারের খোঁজে টহলরত স্পেশাল পুলিশ তাদের মাইক্রোবাসটি দেখতে পায় এবং সন্দেহ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কোনো সতর্ক সংকেত না দিয়েই অতর্কিতে মাইক্রোবাসের ওপর গুলি চালায়। এতে কামালসহ তার ছয় সঙ্গী আহত হন।… প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব, কামালের ওই রাতের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মনোক্ষুণœ হন।… এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা এ ঘটনাকে ভিন্নরূপে প্রচার করে। ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে কামাল পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তারা প্রচারণা চালায়। এবং দেশে-বিদেশে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে। যদিও এসব প্রচারণায় সত্যের লেশমাত্র ছিল না। (পৃষ্ঠা-৬৫, ৬৬, গুলিবিদ্ধ শেখ কামাল)।
এভাবেই একজন জেনারেল লিখেছেন নানা ঘটনার ইতিবৃত্ত। বইটি আমি প্রথম যখন পড়ি তখনই মনে হয়েছে এভাবে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমেই লিখিত হতে পারে আমাদের মহান স্বাধীনতার প্রাপ্তি, প্রত্যাশা এবং পরবর্তী সময়ের সব রোজনামচা। এমন অনেক ঘটনা আছে, যেসব ঘটনার মিথ্যা চিত্র তুলে ধরে প্রজন্মের ব্রেন ওয়াশ করা হয়। একটি পক্ষকে দাঁড় করানো হয়, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ যে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেছে, সেই সময়টি কি খুব সুখকর ছিল জাতির জন্য? খুব অনুক‚ল ছিল রাষ্ট্র গঠনের জন্য? না ছিল না। কেন ছিল না, সে উত্তর খোঁজার প্রয়োজন মনে করি। ১৯৪৭ সালে যখন পাক-ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয় তখন ধর্মীয় সম্বরে দোহাই দিয়ে উর্দুভাষী পাকিস্তানিরা দল বাঁধতে আগ্রহী হয় বাঙালিদের সঙ্গে। এই ঐক্যের মূলমন্ত্র কি ছিল, তা পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আজো আসছে। জাতিসত্তার পরিচয় নয় বরং ‘আমরা মুসলমান’ এই ডঙ্কা বাজিয়ে উর্দুভাষীরা ‘বিগব্রাদার’ সেজেছিল বাঙালিদের। কেন বাঙালিরা সেদিন এই নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন- যে প্রশ্ন আমি আজো করি নিজেকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমকক্ষ নেতা কি ছিলেন না- সেদিন বাঙালিদের মাঝে? হ্যাঁ, ছিলেন। তারা কেন সেদিন বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ডাক দেননি- তা এখনো আমার বোধে আসে না। ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ- এই তিনটি রাষ্ট্র ১৯৪৭ সালেই জন্ম নিতে পারত। কিন্তু তা নেয়নি। পাকিস্তানি নেতারা সে সময়েই নিজেদের স্বার্থ চাপাতে ব্যস্ত ছিলেন বাঙালিদের ওপর। ভাষার দাসত্ব চাপিয়ে দেয়ার কাজটি ছিল প্রথম প্রচেষ্টা। তাতে তারা সফল হননি। এরপর সামরিকতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে যে শিকল পরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল তার প্রধান লক্ষ্য ছিল সেই বাঙালি জাতিই। পাকিস্তানিরা আসলেই গণতন্ত্রমনা ছিল না। এবং তাদের গণতন্ত্রমনস্কতা যে এই ২০১৫ সালেও গড়ে ওঠেনি তার প্রমাণ আমরা পেয়েই যাচ্ছি।
সেই পাকিস্তানিরা ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাঙালিদের সঙ্গে যে আচরণ করেছিল, এখন তারা সে আচরণ করছে নিজ দেশের মানুষের সঙ্গেই। পাঞ্জাব, বেলুচ, সিন্ধিরা যে একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছে না- তা স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমেই। আর অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছে পাকিস্তান। ঠিক একইভাবে পাকিস্তানিরা, বাঙালি জাতিকে অনিশ্চয়তায় ডুবিয়ে রেখে শোষণ করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি জাতি। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আদায় করে নিজেদের স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়াটাই কি শেষ কথা ছিল? না, ছিল না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এর জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি। বাড়েনি ভূমি। কিন্তু মানুষ ঠিকই বেড়েছে। যে ভূমি, শক্তি, সামর্থ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এই দেশটিও উন্নতির বরমাল্য পেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি।
আবারো বলি, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে না পারার প্রথম কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার বীজ কারা বুনেছিল এবং কিভাবে বুনেছিল তা সচেতন মানুষের অজানা নয়। ১৯৭২ থেকে পঁচাত্তরের আগস্ট, মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যতই সমালোচনা করার চেষ্টা করা হোক না কেন, রাষ্ট্র গঠন এবং জাতির স্বপ্নপূরণে তার চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। অথচ ঠিক সে সময়ে সেই শকুনরা ছিল তৎপর। তারা সর্বহারা, সমাজবাদী, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিপ্লবীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর এরা নিজ চরিত্রে বেরিয়ে আসে প্রত্যক্ষরূপে। সেনা শাসকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা গোটা বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে যারা তথাকথিত ‘দেশ গড়া’র যে প্রত্যয় (?) ব্যক্ত করেছিল- তারা কি আসলেই জাতিসত্তার প্রতি অনুগত ছিল? না ছিল না। মুখে তারা ‘মিলেমিশে’ কাজ করার কথা বললেও মূলত ছিল সেই পাকিস্তানি পরাজিতদের প্রেতাত্মা। যারা বাংলাদেশের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। আর পারেনি বলেই ছলে-বলে-কৌশলে তারা সেই পাক প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। তাদের জয়গান গেয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার খাম্বা হিসেবে তারা কাজে লেগেছে সামরিক শাসকদের। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের সংগঠিত করেছেন নানাভাবে আবির্ভূত হয়েছে সস্তা বুলি আওড়িয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বের জন্য এখনো প্রধান হুমকি হচ্ছে সেই মৌলবাদীরাই। যারা ধর্মীয় জোশ কাজে লাগিয়ে জনগণের চোখে ধুলা দিতে চায়। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি মাসেই নতুন নতুন ধর্মীয় জঙ্গিবাদী দলের অস্তিত্বের খবর পত্রপত্রিকায় বেরুচ্ছে। এরা কারা? তারা কি নতুন? না তারা নতুন নয়। তারা বহু নামে আবির্ভূত হচ্ছে। বহু পরিচয়ে। একই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। আর সেই তত্ত্বটি হচ্ছে ধর্মীয় উন্মাদনা ভরা মৌলবাদ। যা ক্রমশ পাকিস্তান-আফগানিস্তানকে গ্রাস করেছে। যে আলকায়েদা তত্ত্ব হরণ করতে চাইছে গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের পরিশুদ্ধ চেতনার উৎস। বাংলাদেশে এখনো দুটি পক্ষ। একটি গণমানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী। আর অন্যটি ‘মিলেমিশে’ কাজ করার প্রত্যাশী। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেখা গেছে, এই ‘মিলেমিশে’ কাজ করার প্রবক্তারা ক্রমশ গ্রাস করেছে বিএনপির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। মীর শওকত, কর্নেল অলি, মেজর আখতারুজ্জামানের মতো বিএনপির নেতারা কোণঠাসা হয়েছিলেন রাজাকারদের হাতে। এর কারণ কী? কারণটি হচ্ছে, জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব পরাজিত রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়ার পরিণতি।
বাংলাদেশের এই চুয়াল্লিশ বছর বয়সে অনেক অর্জন-বিসর্জন আছে। অনেকে কিছুই পারেনি, কিংবা মনোযোগী হয়নি বাংলাদেশ। এগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভেবে অবাক হতে হয় দেশের প্রতিটি সরকারই গেল চার দশকে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মনোযোগী না হয়ে বরং পাশ কাটিয়ে গেছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন এগুলোর মতো বড় ইস্যুর কথা যদি বাদই দিই তবে তো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো দায়িত্ব থাকে না। তারপরও আছে আরো অনেক ছোট ছোট জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরই এক একটি মিনি স্বৈর কেন্দ্র। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যাংকিং, ডাক, তার, টেলি, সড়ক, পরিবহন সবকটি গণপ্রয়োজনীয় সেক্টরই নিয়ন্ত্রণ করছে এক একটি স্বৈর পেশিশক্তি। কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে আগে তার পকেট গুনে দেখার চেষ্টা করা হয় রোগীটি ধনী না গরিব। ধনী হলে তাকে চিকিৎসকদের পছন্দমতো (যেগুলো নেপথ্য পার্টনার তারা নিজেরাই) ক্লিনিকে ভর্তির উপদেশ (!) দেয়া হয়। আর রোগীটি গরিব হলে তার স্থান হয় হাসপাতালের বারান্দায়। একই অবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রেও। মন্ত্রী-আমলা-বড় কর্তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হয় বিদেশে। আর গরিব মধ্যবিত্তদের সন্তানদের রাজনীতিকরা ব্যবহার করেন তাদের হাতিয়ার হিসেবে। শিক্ষকরা পরামর্শ দেন প্রাইভেট কোটিং সেন্টার, প্রাইভেট স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার। বৈষম্য আর কতটা নগ্ন হতে পারে? বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরটিও এখন দখল হয়ে গেছে রাজনীতিকদের দ্বারা। বড় বড় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালক নিয়োগগ্রাপ্ত হন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
তারপরও বাংলাদেশ এগিয়েছে- তা মানতে হবে। আইটি সেকশনে বাংলাদেশ এগিয়েছে বেশ জোরেশোরে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের মানুষের বিশাল অর্জন আছে- কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ, গার্মেন্টস সেক্টর, বৈদেশিক বাণিজ্য, জনশক্তি রপ্তানি বিভিন্ন ফিল্ডে। এসব অর্জনকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আগেই বলেছি, আমাদের প্রধান প্রয়োজন হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা। যারা জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে নৈরাজ্য কায়েম করতে চাইছে এরা মূলত একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি পক্ষেই কাজ করছে। এই প্রজন্মের কাছে বিনীত অনুরোধ করি, সত্যের অনুসন্ধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আপনারা পড়ুন। জানুন স্বাধীনতা-পরবর্তী সত্য ইতিহাসগুলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন, তারা তাদের শেষ মেধা-শ্রম দিয়ে এই প্রজন্মকে এগিয়ে নেবেন এটাই হোক মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা।
-------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৮ মার্চ ২০১৫ প্রকাশিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(
আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন